আল কুরআনে আল্লাহর কুদরতের নির্দশন
আল্লাহর কুদরতের নির্দশন
পাঠ্যসূচীঃ জগৎসমূহের মালিক আল্লাহ পাকের পরিচয়
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১০
১৬:১০ هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً
لَّکُمۡ مِّنۡهُ شَرَابٌ وَّ مِنۡهُ شَجَرٌ فِیۡهِ تُسِیۡمُوۡنَ
আয়াতের
অর্থঃ ১০. তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান
থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিত, যাতে
তোমরা জন্তু চরাও। আল-বায়ান
তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন যাতে আছে তোমাদের জন্য পানীয় আর তাতে
জন্মে বৃক্ষ লতা যা তোমাদের পশুগুলোকে খাওয়াও। তাইসিরুল
তিনিই
আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। ওতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ
যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাক। মুজিবুর
রহমান
It
is He who sends down rain from the sky; from it is drink and from it is
foliage in which you pasture [animals]. Sahih International
|
|
আয়াতের
তাফসীরঃ ১০. তিনিই আকাশ থেকে
বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে
তোমরা পশু চারণ করে থাক।(১)
(১)
পূর্বের আয়াতসমূহে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যমীনে যে সমস্ত প্রাণী চলাফেরা করে তাদেরকে
মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে ঘোষণা দিয়েছেন। এখানে আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল
করার মাধ্যমে মানুষের কি উপকার সাধিত হয় সেটা বর্ণনা করছেন। [ইবন কাসীর] এর মধ্যে
প্রথমেই হচ্ছে পানি। তিনি আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেন সেগুলোকে তিনি সুমিষ্ট করেছেন,
লবনাক্ত করেন নি। [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে মানুষের জন্য বৃক্ষের ব্যবস্থা করেছেন।
شجر শব্দটি প্রায়ই বৃক্ষ
অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা কাণ্ডের উপর দণ্ডায়মান থাকে। কোন কোন সময় এমন প্রত্যেক বস্তুকেও
شجر বলা হয় যা ভূ-পৃষ্ঠে
উৎপন্ন হয়। ঘাস, লতা-পাতা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত থাকে। আলোচ্য আয়াতে এ অর্থই
বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী] কেননা, এর পরেই জন্তুদের চলার কথা বলা হয়েছে। ঘাসের সাথেই
এর বেশীর ভাগ সম্পর্ক। (تُسِيمُونَ) শব্দটির অর্থ জন্তুকে
চারণক্ষেত্রে চরার জন্য ছেড়ে দেয়া। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] অর্থাৎ তোমাদের জন্য এমন
গাছের ব্যবস্থা করেছেন যাতে তোমাদের জীব-জন্তু চরে বেড়াতে পারে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে
জাকারিয়া |
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১১
১৬:১১ یُنۡۢبِتُ لَکُمۡ
بِهِ الزَّرۡعَ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ النَّخِیۡلَ وَ الۡاَعۡنَابَ وَ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ
ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ
আয়াতের
অর্থঃ ১১. তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য
উৎপন্ন করেন ফসল, যাইতুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সকল ফল-ফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন
রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। আল-বায়ান
তিনি তা দিয়ে তোমাদের জন্য জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর, আঙ্গুর এবং
সর্বপ্রকার ফল। এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
তিনি
তোমাদের জন্য ওর দ্বারা উৎপন্ন করেন শস্য, যাইতূন, খেজুর বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার
ফল; অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। মুজিবুর রহমান
He
causes to grow for you thereby the crops, olives, palm trees, grapevines, and
from all the fruits. Indeed in that is a sign for a people who give thought. Sahih International |
|
আয়াতের
তাফসীরঃ ১১. তিনি তোমাদের
জন্য তা (১) দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সব রকমের ফল। নিশ্চয়
এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। (২)
(১)
অর্থাৎ একই পানি দিয়ে আল্লাহ তা'আলা বহু প্রকার ফল-ফলাদি, ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে ও
গন্ধে, ভিন্ন ভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতিতে উৎপন্ন করেন এটা নিশ্চয়ই এক বিস্ময়কর ব্যাপার।
[এ ব্যাপারে আরো দেখুন সূরা আন-নামলঃ ৬০]
(২)
এসব আয়াতে আল্লাহ তা'আলার নেয়ামত ও অভিনব রহস্য সহকারে জগত সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
যারা এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে, তারা এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ পায়, যার ফলে আল্লাহ্
তা'আলার তাওহীদ যেন চোখের সামনে ফুটে উঠে। এ কারণেই নেয়ামতগুলোর উল্লেখ করে বার
বার এ বিষয়ের প্রতি হুশিয়ার করা হয়েছে। এ আয়াতের শেষে বলা হয়েছে যে, এতে চিন্তাশীলদের
জন্য প্রমাণ রয়েছে। কেননা, ফসল ও বৃক্ষ এসবের ফল ও ফুলের যে সম্পর্ক আল্লাহ তা'আলার
কারিগরি ও রহস্যের সাথে রয়েছে তা কিছুটা চিন্তা-ভাবনার দাবী রাখে। মানুষের চিন্তা
করা দরকার যে, শস্য কণা কিংবা আঁটি মাটির নিচে ফেলে রাখলে এবং পানি দিলে আপনা-আপনি
বিরাট মহীরূহে পরিণত হতে পারে না এবং তা থেকে রঙ-বেরঙয়ের ফুল-ফল উৎপন্ন হতে পারে
না। যা হয়, তাতে কোন কৃষক-ভূস্বামীর কর্মের দখল নেই। বরং সবই সর্বশক্তিমানের কারিগরি
ও রহস্য।
তিনি
একই পানি দ্বারা সেগুলোকে উৎপন্ন করেন, অথচ সেগুলোর প্রকার, স্বাদ, গন্ধ, রং, প্রকৃতি
সম্পূর্ণ ভিন্ন। এগুলো সবই প্রমান করছে যে, তিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই। [ইবন
কাসীর] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নাকি তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও যমীন
এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, তারপর আমরা তা দ্বারা মনোরম উদ্যান
সৃষ্টি করি, তার গাছ উদগত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে
কি? তবুও তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা (আল্লাহর) সমকক্ষ নির্ধারণ করে।” [সূরা আন-নামল: ৬০]
তাফসীরে
জাকারিয়া |
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১২
১৬:১২ وَ سَخَّرَ لَکُمُ
الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ ۙ وَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ وَ النُّجُوۡمُ مُسَخَّرٰتٌۢ
بِاَمۡرِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ
আয়াতের
অর্থঃ ১২. আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে
এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয় এতে অনেক নিদর্শন
রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা বুঝে। আল-বায়ান
তিনিই রাত ও দিনকে তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন। আর সুরুজ ও চাঁদকেও;
এবং তারকারাজিও তাঁরই নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত; বিবেকসম্পন্ন লোকেদের জন্য এতে অবশ্যই
বহু নিদর্শন রয়েছে। তাইসিরুল
তিনিই
তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রী, দিন, সূর্য এবং চাঁদকে। আর নক্ষত্ররাজিও
অধীন হয়েছে তাঁরই আদেশে; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
মুজিবুর রহমান
And
He has subjected for you the night and day and the sun and moon, and the
stars are subjected by His command. Indeed, in that are signs for a people
who reason. Sahih International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১২. আর তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত, দিন(১), সূর্য ও চাঁদকে; এবং নক্ষত্ররাজিও তারই নির্দেশে নিয়োজিত। নিশ্চয় এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে অনেক নিদর্শন।(২) (১) এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কিছু নেয়ামত হিসেব করে দেখিয়ে দিচ্ছেন। [ইবন কাসীর] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ বর্ণনা করছেন যে, তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ নেয়ামত নিয়োজিত করেছেন। এগুলোতে যে বিরাট উপকারিতা রয়েছে সেটা তিনি ব্যতীত কেউ পুরোপুরি জানে না। বিবেকবানদের কাছে এগুলোই স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে যে, তিনি একজনই একমাত্র ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত। সে পাঁচটি নেয়ামত হচ্ছে, রাত, দিন, সূর্য, চন্দ্র ও তারকা। কুরআনে বারবার এ নেয়ামতগুলোকে নিয়োজিত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে এগুলো উল্লেখ করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে। যেমন, “নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য, চাদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তারই হুকুমের অনুগত, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তারই সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত বরকতময়।” [সূরা আল-আরাফ: ৫৪] আরও বলেছেন, “আর তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চাঁদকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে।” [সূরা ইবরাহীম: ৩৩] আরও বলেছেন, “আর তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত, তা থেকে আমরা দিন অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। আর চাঁদের জন্য আমরা নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনযিল; অবশেষে সেটা শুষ্ক বাঁকা, পুরোনো খেজুর শাখার আকারে ফিরে যায়।” [সূরা ইয়াসীন ৩৭–৩৯] আরও বলেন, “আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।” [সূরা আল-মুলক: ৫] অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথনির্দেশ পায়।” [সূরা আন-নাহ্ল: ১৬] [আদওয়াউল বায়ান] (২) এখানে বলা হয়েছে যে, দিনরাত ও তারকারাজি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশের অনুগত হয়ে চলে। শেষে বলা হয়েছে যে, এগুলোর মধ্যে বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক প্রমাণ রয়েছে। যারা আল্লাহ যে সমস্ত ব্যাপারে সাবধান করতে চেয়েছেন সেগুলো বুঝে, যাদেরকে আল্লাহ সেটা বুঝার তাওফীক দিয়েছেন তাদের জন্য এতে আল্লাহর প্রচণ্ড ক্ষমতা ও অপার শক্তির অনেক নিদর্শন রয়েছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৩
১৬:১৩ وَ مَا ذَرَاَ لَکُمۡ
فِی الۡاَرۡضِ مُخۡتَلِفًا اَلۡوَانُهٗ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّذَّکَّرُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ১৩. আর তিনি তোমাদের জন্য যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন,
বিচিত্র রঙের করে, নিশ্চয় তাতেও নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা উপদেশ গ্রহণ
করে। আল-বায়ান
আর তিনি তোমাদের জন্য যমীনে বিভিন্ন রং-এর বস্তুরাজি সৃষ্টি করেছেন।
এতে ঐ সমস্ত লোকেদের জন্য নিশ্চিতভাবে নিদর্শন আছে যারা উপদেশ গ্রহণ করতে চায়। তাইসিরুল
আর বিবিধ প্রকাশ্য বস্তুও,
যা তোমাদের জন্য পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন। এতে রয়েছে নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্য
যারা উপদেশ গ্রহণ করে। মুজিবুর রহমান
And
[He has subjected] whatever He multiplied for you on the earth of varying
colors. Indeed in that is a sign for a people who remember. Sahih International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৩. আর তিনি তোমাদের জন্য যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন, বিচিত্র রঙের
করে, নিশ্চয় তাতে সে সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা উপদেশ গ্রহণ করে।(১)
(১)
আসমানের বিভিন্ন চিহ্ন ও নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহবান জানানোর পর এখানে
মাটিতে যে আশ্চর্যজনক বিষয়াদি ও বিভিন্ন বস্তু রয়েছে যেমন, জীবজন্তু, খনিজ সম্পদ,
উদ্ভিদরাজি ও নিশ্চল রং-বেরং এর ও বিভিন্ন প্রকৃতির সৃষ্টিসমূহ রয়েছে, সেগুলোর যে
উপকারসমূহ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ রয়েছে এর মধ্যে অবশ্যই তাদের জন্য প্রমাণ রয়েছে, যারা
উপদেশ গ্রহণ করে। যারা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ করে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়।
[ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৪
১৬:১৩ وَ مَا ذَرَاَ لَکُمۡ
فِی الۡاَرۡضِ مُخۡتَلِفًا اَلۡوَانُهٗ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّذَّکَّرُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ১৪. আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন,
যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশ্ত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি,
যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা
তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর। আল-বায়ান
তিনিই সমুদ্রকে কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন যাতে তোমরা তাত্থেকে তাজা
গোশত খেতে পার, আর তাত্থেকে তোমরা রতœরাজি সংগ্রহ করতে পার যা তোমরা অলংকার হিসেবে
পরিধান কর। আর নৌযানগুলোকে তোমরা দেখতে পাও ঢেউয়ের বুক চিরে তাতে চলাচল করে, যাতে
তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করতে পার আর শোকর আদায় করতে পার। তাইসিরুল
তিনিই সমুদ্রকে অধীন
করেছেন যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পার
রতœাবলী যা তোমরা ভূষণ রূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখতে পাও, ওর বুক চিরে নৌযান চলাচল
করে এবং তা এ জন্য যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ কর। মুজিবুর রহমান
And
it is He who subjected the sea for you to eat from it tender meat and to
extract from it ornaments which you wear. And you see the ships plowing
through it, and [He subjected it] that you may seek of His bounty; and
perhaps you will be grateful. Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৪. আর তিনিই সাগরকে নিয়োজিত করেছেন (১) যাতে তোমরা তা থেকে
তাজা (মাছের) গোশত খেতে পার এবং যাতে তা থেকে আহরণ করতে পার রতœাবলী যা তোমরা ভূষণরূপে
পরে থাক(২); এবং তোমরা দেখতে পাও, তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে(৩) এবং এটা এ জন্যে
যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; (১)
নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টবস্তু এবং এগুলোতে মানুষের উপকার বর্ণনা করার পর এখন সমুদ্রগর্ভে
মানুষের উপকারের জন্য কি কি নিহিত রয়েছে, সেগুলো বর্ণনা করা হচ্ছে। সমুদ্রে মানুষের
খাদ্যের চমৎকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখান থেকে মানুষ টাটকা গোশত লাভ করে। [দেখুন,
ইবন কাসীর] (২)
এটা সমুদ্রের দ্বিতীয় উপকার। ডুবুরীরা সমুদ্র থেকে মূল্যবান অলঙ্কার সামগ্ৰী বের
করে আনে حِلْيَةً এর শাব্দিক অর্থ শোভা, সৌন্দর্য। এখানে ঐসব রতœরাজি ও মণিমুক্তা
বোঝানো হয়েছে, যা সমুদ্রগর্ভ থেকে নির্গত হয় এবং মহিলারা এর দ্বারা অলঙ্কার তৈরী
করে বিভিন্ন পন্থায় ব্যবহার করে। এ অলঙ্কার মহিলারা পরিধান করে থাকে; কিন্তু কুরআন
পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করে تَلْبَسُونَهَا বলেছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, মহিলাদের অলঙ্কার পরিধান করা প্রকৃতপক্ষে
পুরুষদের দেখার স্বার্থে। [ফাতহুল কাদীর] (৩) এটা সমুদ্রের তৃতীয় উপকার। (فُلْكَ) শদের অর্থ
নৌকা। مَوَاخِرَ শব্দটি ماخرة এর বহুবচন। مخر এর অর্থ পানি ভেদ করা। অর্থাৎ ঐসব নৌকা ও সামুদ্রিক জাহাজ, যেগুলো
পানির ঢেউ ভেদ করে পথ অতিক্রম করে। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ্
তা'আলা সমুদ্রকে দূর-দূরান্তের দেশে সফর করার রাস্তা করেছেন এবং দূর-দূরান্তে সফর
করা ও পণ্যদ্রব্য আমদানী-রপ্তানী করা সহজ করে দিয়েছেন। একে জীবিকা উপার্জনের একটি
উত্তম উপায় সাব্যস্ত করেছেন। কেননা, সমুদ্রপথের ব্যবসা-বাণিজ্য করা সর্বাধিক লাভজনক
তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৫
১৬:১৫ وَ اَلۡقٰی فِی الۡاَرۡضِ رَوَاسِیَ اَنۡ تَمِیۡدَ
بِکُمۡ وَ اَنۡهٰرًا وَّ سُبُلًا لَّعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ
আয়াতের
অর্থঃ ১৫. আর যমীনে তিনি স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা,
যাতে তোমাদের নিয়ে যমীন হেলে না যায় এবং নদ-নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা পথপ্রাপ্ত হও।
আল-বায়ান
তিনি যমীনে সুদৃঢ় পর্বত সংস্থাপিত করেছেন যাতে যমীন তোমাদেরকে নিয়ে
আন্দোলিত না হয়, আর সংস্থাপিত করেছেন নদী নির্ঝরিণী আর পথ যাতে তোমরা পথের সন্ধান
পেতে পার। তাইসিরুল
আর
তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না
হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।
মুজিবুর রহমান
And
He has cast into the earth firmly set mountains, lest it shift with you, and
[made] rivers and roads, that you may be guided, Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৫. আর তিনি যমীনে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে যমীন তোমাদের
নিয়ে হেলে না যায়(১) এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথসমূহ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে
পৌছতে পার(২); (১)
رَوَاسِي শব্দটি رٰاسِيَة এর বহুবচন। এর অর্থ ভারী পাহাড়। تَمِيد শব্দটি ميد থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ আন্দোলিত হওয়া
এবং অস্থিরভাবে টলমল করা। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা অনেক
রহস্যের অধীনে ভূ-মণ্ডলকে নিবিড় ও ভারসাম্যবিহীন উপাদান দ্বারা সৃষ্টি করেননি। তাই
এটা কোন দিক দিয়ে ভারী এবং কোন দিক দিয়ে হাল্কা হয়েছে। অন্যথায় এর অবশ্যম্ভাবী
পরিণতি ছিল, ভূ-পৃষ্ঠের অস্থিরভাবে আন্দোলিত হওয়া। এই অস্থিরতাজনিত নড়াচড়া বন্ধ
করা এবং পৃথিবীর উৎপাদনকে ভারসাম্যপূর্ণ করার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা পৃথিবীতে পাহাড়ের
ওজন স্থাপন করেন- যাতে পৃথিবী অস্থিরভাবে নড়াচড়া করতে না পারে। তাই এখানে (أَنْ تَمِيْدَ) এর পূর্বে كَرٰاهِيَة বা أن
এর পরে لاٰ
শব্দটি উহ্য ধরে নিয়ে অর্থ করতে হবে। [ফাতহুল কাদীর] এ
আয়াত থেকে জানা যায়, ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণী স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর
আবর্তন ও গতি সুষ্ঠ ও সুশৃংখল হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা
সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত
উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত
হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মুখ্য উদ্দেশ্য। [আত-তাহরীর ওয়াত
তানওয়ীর] (২) অর্থাৎ নদ-নদীর সাথে যে পথ তৈরী
হয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকাসমূহে এসব প্রাকৃতিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন
করা যায়। অবশ্যি সমতল ভূমিতেও এগুলোর গুরুত্ব কম নয়। উপরে বাণিজ্যিক সফরের কথা
বলা হয়েছে। তাই এসব সুযোগ-সুবিধার কথা এখানেও সমীচীন মনে হয়েছে, যেগুলো আল্লাহ
তা'আলা পথিকদের পথ অতিক্রম ও মন্যিলে-মকসুদে পৌছার জন্য ভূ-মণ্ডল ও নভোমণ্ডলে সৃষ্টি
করেছেন। তাই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে وَعَلَامَاتٍ অর্থাৎ আমি অনেক চিহ্ন স্থাপন করেছি। [ইবন কাসীর] বলাবাহুল্য,
ভূ-পৃষ্ঠ যদি একটি চিহ্নবিহীন পরিমণ্ডল হতো তবে মানুষ কোন গন্তব্যস্থানে পৌছার জন্য
পথিমধ্যে কতই না ঘুরপাক খেত। তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৬
১৬:১৬ وَ عَلٰمٰتٍ ؕ وَ بِالنَّجۡمِ هُمۡ یَهۡتَدُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ১৬. আর (দিনের) পথ-নির্দেশক চিহ্নসমূহ,
আরা (রাতে) তারকার মাধ্যমে তারা পথ পায়। আল-বায়ান
আর দিক-দিশা প্রদানকারী চিহ্নসমূহ; আর তারকারাজির সাহায্যেও তারা
পথনির্দেশ লাভ করে। তাইসিরুল
আর
পথ নির্ণায়ক চিহ্নসমূহও; এবং নক্ষত্রের সাহায্যেও মানুষ পথের নির্দেশ পায়। মুজিবুর রহমান
And
landmarks. And by the stars they are [also] guided. Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৬. এবং পথ নির্দেশক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও
পথনির্দেশ পায়।(১) (১)
অর্থাৎ দিনের বেলায় পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি যেমন কিছু নিদর্শন রেখেছেন, তেমনি
রাতের বেলায় পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য রেখেছেন তারকাসমূহ। দিনের বেলায় বিভিন্ন নিদর্শন
দেখে আর রাতের বেলায় তারকাদের অবস্থান দৃষ্টে মানুষ বলতে পারে যে, তার গন্তব্যস্থল
কোথায় হতে পারে। [জালালাইন, মুয়াসসার] আল্লাহ সমগ্র যমীনকে একই ধারায় সৃষ্টি করেননি।
বরং প্রত্যেকটি এলাকাকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। এর অন্যান্য উপকারিতার
মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে এই যে, মানুষ নিজের পথ ও গন্তব্য আলাদাভাবে চিনে
নেয়। সুতরাং তারকারাজি সৃষ্টি করার অন্যতম
উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাস্তার পরিচয় লাভ। এগুলোর দ্বারা কোন প্রকার ভাগ্য বা সৃষ্টিজগতের
পরিচালনার নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করা কুফরী। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা
এ তারকাসমূহ তিনটি কারণে সৃষ্টি করেছেন, আকাশের সৌন্দর্য, শয়তানদের বিতাড়নকারী
এবং কিছু আলামত যা দ্বারা পথের দিশা পাওয়া সম্ভব হয়। সুতরাং যে কেউ এর বাইরে অন্য
কিছু দিয়ে এগুলোর ব্যাখ্যা করবে সে অবশ্যই ভুল করবে, তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে,
এবং এমন বস্তুর পিছনে অযথা দৌড়াবে যার ব্যাপারে তার কোন জ্ঞান নেই। [বুখারীঃ ৬/৩৪১]
তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৭
১৬:১৭ اَفَمَنۡ یَّخۡلُقُ کَمَنۡ لَّا یَخۡلُقُ ؕ اَفَلَا
تَذَکَّرُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ১৭. সুতরাং যে সৃষ্টি করে, সে কি তার মত, যে সৃষ্টি
করে না? অতএব তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না? আল-বায়ান
যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তার মত যে সৃষ্টি করে না? তবে কি তোমরা
শিক্ষা গ্রহণ করবে না? তাইসিরুল
তবে কি যিনি সৃষ্টি করেন
তিনি তারই মত যে সৃষ্টি করেনা? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবেনা? মুজিবুর রহমান
Then
is He who creates like one who does not create? So will you not be reminded? Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৭. কাজেই যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার মত যে সৃষ্টি করে না?
তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? (১) (১) অর্থাৎ যদি তোমরা একথা মানো (যেমন
বাস্তবে মক্কার কাফেররাও এবং দুনিয়ার অন্যান্য মুশরিকরাও মানতো) যে, একমাত্র আল্লাহই
সব কিছুর স্রষ্টা বরং এ বিশ্বজগতে তোমাদের উপস্থাপিত শরীকদের একজনও কোন কিছুই সৃষ্টি
করেননি, তাহলে স্রষ্টার সৃষ্টি ব্যবস্থায় অস্রষ্টাদের মর্যাদা কেমন করে স্রষ্টার
সমান হতে পারে? যদি তা না হয় তবে তার ইবাদাত ব্যতীত অন্যের ইবাদাত কেন করা হবে?
তিনিই তো তোমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিযকদাতা, তাঁর সাথে এই যে মূর্তিগুলোর ইবাদাত করা
হয় সেগুলোও তো সৃষ্ট। সেগুলো কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। যারা সেগুলোর ইবাদাত
করে তাদের জন্যও এরা সামান্যতম লাভ বা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে না। [ফাতহুল কাদীর] তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৮
১৬:১৮ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا
ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
আয়াতের অর্থঃ ১৮. আর যদি তোমরা আল্লাহর নিআমত গণনা কর, তবে তার ইয়ত্তা
পাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
তোমরা আল্লাহর নি‘মাতসমূহকে গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে
না; আল্লাহ অবশ্যই বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ
গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবেনা; আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা পরায়ণ, পরম দয়ালু।
মুজিবুর রহমান
And
if you should count the favors of Allah, you could not enumerate them.
Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ১৮. আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে
পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।(১) (১)
আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করার পরপরই তাঁর ক্ষমাশীল ও করুণাময় হবার
কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তার যে নেয়ামত মানুষের উপর আছে তা দাবী করছে যে মানুষ সর্বদা
তাঁর শোকরগুজার হবে। কিন্তু আল্লাহ তাঁর অপার মহিমায় তাদের অপরাধ মার্জনা করেন।
যদি তোমাদেরকে তার প্রতিটি নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে বাধ্য করা হতো, তবে তোমরা
কেউই সেটা করতে সক্ষম হতে না। যদি এ ধরণের নির্দেশ আসতো তবে তোমরা দুর্বল হয়ে যেতে
এবং তা করা ছেড়ে দিতে আর যদি তিনি এর জন্য তোমাদেরকে আযাব দিতেন তবে তিনি যালেম
বিবেচিত হতেন না। কিন্তু আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। অনেক
কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন, অল্প কিছুরই শাস্তি দিয়ে থাকেন। [ইবন কাসীর] তোমরা যদি
তার কোন কোন নেয়ামতের শোকর আদায় করতে কিছুটা কসূর করে ফেল, তারপর তাওবাহ করো এবং
তাঁর আনুগত্য ও সস্তুষ্টির দিকে ফিরে আসো তবে তিনি তোমাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন।
তাওবাহ ও তার দিকে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি তো তোমাদের জন্য অতিশয় দয়ালু। [তাবারী] তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-১৯
১৬:১৯ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تُسِرُّوۡنَ وَ مَا تُعۡلِنُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ১৯. আর আল্লাহ জানেন তোমরা যা গোপন কর এবং যা প্রকাশ্যে
ঘোষণা কর। আল-বায়ান আল্লাহ জানেন তোমরা যা গোপন কর আর যা তোমরা প্রকাশ কর। তাইসিরুল তোমরা যা গোপন রাখ এবং
যা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন। মুজিবুর রহমান
And
Allah knows what you conceal and what you declare. Sahih
International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ
১৯. আর তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা ঘোষণা কর আল্লাহ তা জানেন।
তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-২০
১৬:২০ وَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ لَا
یَخۡلُقُوۡنَ شَیۡئًا وَّ هُمۡ یُخۡلَقُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ২০. আর তারা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা কিছু সুষ্টি
করতে পারে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। আল-বায়ান তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তারা
(নিজেরাই) সৃষ্ট। তাইসিরুল তারা আল্লাহ ছাড়া অপর
যাদেরকে আহবান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করেনা, তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। মুজিবুর রহমান
And
those they invoke other than Allah create nothing, and they [themselves] are
created Sahih International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ২০. আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদেরকে
ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।(১) (১) আগের আয়াতে বলা হয়েছিল যে, এ সমস্ত
উপাস্যগুলো নিজেরা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। এ আয়াতে তা আরও স্পষ্ট বর্ণনা
দিচ্ছে যে, কাফেরদের উপাস্যগুলো ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ, সেগুলো কাউকে সৃষ্টি
যেমন করতে পারে না। তেমনি নিজেরাও অন্যদের দ্বারা সৃষ্ট। পূর্বের আয়াতে শুধু তাদের
ভাল গুণ অস্বীকার করা হয়েছিল। এখানে ভাল গুণ অস্বীকার করার সাথে সাথে খারাপ গুণও
সাব্যস্ত করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া
|
সুরা আন নাহল, আয়াত নং-২১
১৬:২১ اَمۡوَاتٌ غَیۡرُ اَحۡیَآءٍ ۚ وَ مَا یَشۡعُرُوۡنَ
ۙ اَیَّانَ یُبۡعَثُوۡنَ
আয়াতের অর্থঃ ২১. (তারা) মৃত, জীবিত নয় এবং তারা জানে না কখন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত
করা হবে। আল-বায়ান
তারা প্রাণহীন, জীবিত নয়, তাদের কোনই চেতনা নেই কবে তাদেরকে (পুনর্জীবিত
করে) উঠানো হবে। তাইসিরুল
তারা নিস্প্রাণ নির্জীব
এবং পুনরুত্থান কবে হবে সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। মুজিবুর রহমান
They
are, [in fact], dead, not alive, and they do not perceive when they will be
resurrected. Sahih International |
|
আয়াতের তাফসীরঃ ২১. তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুথিত করা হবে
সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।(১) (১) অর্থাৎ অতি ভক্তের দল এসব সত্তাকে
সংকট নিরসনকারী, অভিযোগের প্রতিকারকারী, দরিদ্রের সহায়, ধনদাতা এবং আরো কত কিছু
মনে করে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য ডাকতে থাকে। অথচ এরা আসলে মৃত নিশ্চল বস্তু
এগুলোতে কোন রূহ নেই। এগুলো কোন কথা শুনে না, দেখে না, বুঝেও না। আরও অতিরিক্ত হচ্ছে
যে, এগুলো জানে না কখন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, তাহলে তাদের কাছে কিভাবে কোন উপকারের
আশা করা যেতে পারে? কিভাবে সওয়াব ও প্রতিদানের আশা তাদের কাছে করা যায়? এটা তো
শুধু তার কাছ থেকেই জানা যায় যে সবকিছু জানে এবং সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। [ইবন কাসীর] তাফসীরে জাকারিয়া
|
|| ★★সমাপ্ত★★ ||
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url