দৌড়ে নামাজে যাওয়া || দৌড়ে রুকু রাকাত ধরা || ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নত পড়া || এগুলো ঠিক নয়


নামাজের জন্য দৌড়াবেন না


তিনটা কাজ আমরা অনেকেই করে থাকি বা দেখে থাকি,

 

নামাজের জন্য দৌড়ে আসা।

রুকু ধরার জন্য দৌড়ে আসা।

ফজরের জামাত শুরুর পরেও পিছনে কেউ সুন্নত নামাজ আদায় করছে।

 

হ্যাঁ, এই দুইটা বিষয় আমরা সব সময়ই দেখে থাকি। হয় নামাজের জন্য দৌঁড়াই আর না হয় রুকু বা রাকাত ধরার জন্য দৌড়াই। এর পর দৌড়ানোর কারণে নামাজে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে থাকি।

 

কিন্তু, আমরা কি জানি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পছন্দ করতেন না? আমরা কি জানি উনি এমন করতে নিষেধ করেছেন?

 

নামাজের জন্য দৌড়ানো কি ঠিক?

হজরত আবু কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নামাজ পড়ছিলাম, নামাজরত অবস্থায় তিনি লোকের ছুটাছুটির শব্দ অনুভব করলেন। নামাজা শেষে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কী করছিলে? তারা আরজ করল, ‘আমরা নামাজের জন্য তাড়াতাড়ি আসছিলাম’। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, ‘এরূপ কখনো করো না। শান্তিশৃঙ্খলা ও ধীরস্থিরভাবে নামাজের জন্য আসবে, তাতে যে কয় রাকাত ইমামের সঙ্গে পাবে পড়ে নেবে, আর যা ছুটে যায় তা ইমামের নামাজের পর পূর্ণ করে নেবে [বুখারী শরীফ : ১/ ৩৮৭]

 

এছাড়াও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, “আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামাআতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। (বুখারীঃ -৯০৮)

 

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, আবু বকরা (রা.) বলেন, তিনি রাসুল (সা.)-এর কাছে এমন সময় পৌঁছালেন যখন তিনি রুকুতে ছিলেন। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই তাকবিরে তাহরিমা বেঁধে রুকুত চলে যান। এ ঘটনা রাসুল (সা.)-এর কাছে ব্যক্ত করা হলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন। তবে সামনে থেকে আর এমন করবে না। (বুখারি, হাদিসঃ - ৭৮৩)

 

মসজিদের দিকে দৌঁড়ানোর এই দৃশ্যটা ফজরের নামাজের সময় বেশি দেখা যায়। কারণ, ফজরের ফরজের আগে সুন্নত রয়েছে। হড়বড় করে রুকু সেজদা সংক্ষিপ্ত করে সুন্নত শেষ করে তারপর ফরজ জামাতে ইমামের সঙ্গে দাঁড়াতে হবে। ততোক্ষণে দেখা যায়, কেউ জামাতের হয় এক রাকাত পান বা শেষ রাকাতে বৈঠকে জামাতে শামিল হন। ফজরের জামাতের আগে এমন চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। কিন্তু আল্লাহর রাসুলের (সা.) হাদিসে এর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং এটাই মান্য।

 

যদি কেউ ফজরের জামাতের আগে মসজিদে যেতে পারেন তাহলে প্রথমে সুন্নত দুই রাকাত পড়ে জামাতের জন্য অপেক্ষা করবেন। আর যদি দেরি হয়েই যায় এবং জামাত শুরু হয়ে যায় তাহলে প্রথমে মসজিদে গিয়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে শামিল হতে হবে এবং জামাতের পর বাকি নামাজ (যদি থাকে) শেষ করতে হবে।

 

ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে কি করবেন?

মোনাজাত করে অপেক্ষা করবেন সূর্য উদয়ের জন্য এবং সূর্য উদয়ের পর নামাজের নিষিদ্ধ সময় (সাধারণত সূর্য উদয়ের পর ২০ মিনিট) পার হওয়ার পর আপনি ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করবেন। মধ্যবর্তী যে সময় সে সময় আপনি হয় মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে পারেন অথবা ঘরেও ফিরে আসতে পারেন এবং সময় হওয়ার পরই আপনি ফজরের সুন্নত আদায় করে নেবেন। এটাই আল্লাহর রাসুল (সা.) নির্দেশিত নিয়ম। কিন্তু আমরা কয়জন সেটা করি? 

হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ফরজের পূর্বে পড়তে পারেনি সে সূর্য ওঠার পর তা পড়বে। তিরমিজি ১ম খণ্ড,হাদিস নম্বর-৩৯৮।

 

আব্দুল্লাহ ইবনে বোহায়না (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘‘একদিন আল্লাহর রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের একামত হলে এক ব্যক্তিকে ভিন্ন নামাজ পড়তে দেখলেন। (ওই ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত পড়ছিলেন) । নামাজ শেষে যখন সবাই রাসুল (সা.) এর নিকটবর্তী হয়ে ঘিরে বসলো, তখন নবী (সা.) ওই ব্যক্তিকে বললেন, ‘‘ফজরের ফরজ নামাজ কি চার রাকাত হয়? অর্থাৎ একামতের পর ফরজ নামাজ ভিন্ন অন্য নামাজ পড়া যায় না, তুমি ভিন্নভাবে দুই রাকাত ও জামাতে দুই রাকাত পড়েছ, তুমি কি ফরজ চার রাকাত পড়লে? (বোখারি শরীফ, খণ্ড-১, হাদিস নম্বর-৪০২)।

 

তাই, এক্ষেত্রে আপনি হয় সময় নিয়ে নামাজ পড়তে যাবেন অথবা ধিরস্থির ও শান্তভাবে হেঁটে গিয়ে যতোটুকু জামাতে শরিক হতে পারেন হবেন এবং বাকি নামাজ পরে নিজে শেষ করবেন।

 

আল্লাহ সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুক।

 

ট্যাগঃ

গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা

নামাজের জন্য দৌড়ানো

জামাত ধরার জন্য দৌড়ানো

রাকাত বা রুকু ধরা

দৌড়ে জামাত ধরা

দৌড়ে রুকু ধরা

 

 

****************************************

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url