সূরা আদিয়াত তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || ক্বারী শেখ আব্দুল বাসিত ||

সূরা আদিয়াত তেলাওয়াত

সূরা আদিয়াত আরবী উচ্চারণ

১  وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا
২  فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا
৩  فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا
৪  فَاَثَرۡنَ بِهٖ نَقۡعًا ۙ
৫  فَوَسَطۡنَ بِهٖ جَمۡعًا
৬  اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّهٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ
৭  وَ اِنَّهٗ عَلٰی ذٰلِکَ لَشَهِیۡدٌ
৮  وَ اِنَّهٗ لِحُبِّ الۡخَیۡرِ لَشَدِیۡدٌ
৯  اَفَلَا یَعۡلَمُ اِذَا بُعۡثِرَ مَا فِی الۡقُبُوۡرِ
১০  وَ حُصِّلَ مَا فِی الصُّدُوۡرِ 
১১  اِنَّ رَبَّهُمۡ بِهِمۡ یَوۡمَئِذٍ لَّخَبِیۡرٌ 

সূরা আদিয়াত বাংলা উচ্চারণ

১) ওয়াল ‘আ-দিয়া-তি দাবহা-।
২) ফাল মূরিয়া-তি কাদহা-।
৩) ফাল মুগীরা-তি সুবহা-।
৪) ফাআছারনা বিহী নাক‘আ-।
৫) ফাওয়াছাতানা বিহী জাম‘আ-।
৬) ইন্নাল ইনছা-না লিরাব্বিহী লাকানূদ।
৭) ওয়া ইন্নাহূ‘আলা-যা-লিকা লাশাহীদ।
৮) ওয়া ইন্নাহূলিহুব্বিল খাইরি লাশাদীদ।
৯) আফালা-ইয়া‘লামুইযা-বু‘ছিরা মা-ফিল কুবূর।
১০) ওয়া হুসসিলা মা-ফিসসুদূর,
১১) ইন্না রাব্বাহুম বিহিম ইয়াওমাইযিল্লাখাবীর।

সূরা আদিয়াত অনুবাদ

১ কসম ঊর্ধশ্বাসে ছুটে যাওয়া অশ্বরাজির,
২ অতঃপর যারা ক্ষুরাঘাতে অগ্নি-স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়,
৩ অতঃপর যারা প্রত্যুষে হানা দেয়, 
৪ অতঃপর সে তা দ্বারা ধুলি উড়ায়, 
৫ অতঃপর এর দ্বারা শত্রুদলের ভেতরে ঢুকে পড়ে;
৬ নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।
৭ আর নিশ্চয় সে এর উপর (স্বয়ং) সাক্ষী হয়।
৮ আর নিশ্চয় ধন-সম্পদের লোভে সে প্রবল। 
৯ তবে কি সে জানে না যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে?
১০ আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশিত হবে।
১১ নিশ্চয় তোমার রব সেদিন তাদের ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।

সূরা আদিয়াত তাফসীর

১. শপথ উধৰ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির(১),
(১) الْعَادِيَات শব্দটি عدو থেকে উদ্ভূত। অর্থ দৌড়ানো। ضبح বলা হয় ঘোড়ার দৌড় দেয়ার সময় তার বক্ষ থেকে নিৰ্গত আওয়াজকে। কোন কোন গবেষকের মতে এখানে দৌড়ায় শব্দের মাধ্যমে ঘোড়া বা উট অথবা উভয়টিও উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে ইমাম কুরতুবী ঘোড়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।


২. অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ বিচ্ছুরিত করে(১),

(১) موريات শব্দটি إيراء থেকে উদ্ভূত। অর্থ অগ্নি নিৰ্গত করা। যেমন চকমকি পাথর ঘষে ঘষে অথবা দিয়াশলাই ঘষা দিয়ে অগ্নি নির্গত করা হয়। قدح এর অর্থ আঘাত করা, ঘর্ষন করা; যার কারণে আগুন তৈরী হয়। লৌহনাল পরিহিত অবস্থায় ঘোড়া যখন প্রস্তরময় মাটিতে ক্ষুরাঘাত করে দৌড় দেয় তখন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়। [ফাতহুল কাদীর]

৩. অতঃপর যারা অভিযান করে প্রভাতকালে(১),

(১) مغيرات শব্দটি أغارة থেকে উদ্ভূত। অর্থ হামলা করা, হানা দেয়া। صبحاً বা ‘ভোর বেলায়’ বলে আরবদের অভ্যাস হিসেবে প্রভাতকালের উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, আরববাসীদের নিয়ম ছিল, কোন জনপদে অতর্কিত আক্রমণ করতে হলে তারা রাতের আঁধারে বের হয়ে পড়তো। এর ফলে শত্রুপক্ষ পূর্বাহ্নে সতর্ক হতে পারতো না। এভাবে একেবারে খুব সকালে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। প্রভাতে আলো যেটুকু ছড়িয়ে পড়তো তাতে তারা সবকিছু দেখতে পেতো। আবার দিনের আলো খুব বেশী উজ্জ্বল না হবার কারণে প্রতিপক্ষ দূর থেকে তাদের আগমন দেখতে পেতো না। ফলে তারা মোকাবেলার জন্য প্ৰস্তুতিও গ্ৰহণ করতে পারতো না। [দেখুন: কুরতুবী] এখানে অবশ্য জিহাদে আল্লাহর পথে ব্যবহৃত ঘোড়সওয়ারদের বুঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]

৪. ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে(১);

(১) أثرن শব্দটি إثارة থেকে উৎপন্ন। অর্থ ধূলি উড়ানো। نقع ধূলিকে বলা হয়। আর به শব্দের অর্থ, সে সময়ে বা শক্ৰদের সে স্থানে। অর্থাৎ অশ্বসমূহ যুদ্ধক্ষেত্রে এত দ্রুত ধাবমান হয় যে, তাদের ক্ষুর থেকে ধূলি উড়ে চতুর্দিক আচ্ছন্ন করে ফেলে। [আদওয়াউল বায়ান]

৫. অতঃপর তা দ্বারা শত্রু দলের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।(১)

(১) وسطن শব্দটির অর্থ কোন কিছুর মধ্যভাগে পৌছে যাওয়া। جمعاً অর্থ, দল বা গোষ্ঠী। আর به অর্থ, তা দ্বারা। এখানে তা বলতে আরোহীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ অশ্বসমূহ ধূলিকণা উড়িয়ে তাদের আরোহীদের নিয়ে শক্ৰদের মধ্যভাগে পৌছে যায়। [তাবারী]

৬. নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ(১)

(১) এত বড় শপথ করার পরে এখানে যে উদ্দেশ্যে শপথ করা হয়েছে তা বর্ণনা করা হয়েছে। শপথের মূলকথা হচ্ছে এটা বৰ্ণনা করা যে, মানুষ তার প্রভুর অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে থাকে। كنود বলতে এখানে মূলত বোঝানো হয়েছে যে, মানুষ তার রবের নেয়ামতের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। হাসান বসরী বলেন, كنود এর অর্থ সে ব্যক্তি, যে বিপদ স্মরণ রাখে এবং নেয়ামত ভুলে যায়। [ইবন কাসীর]

৭. আর নিশ্চয় সে এ বিষয়ে সাক্ষী(১)

(১) এখানে ‘সে’ বলে বোঝানো হচ্ছে, মানুষ নিজেই এ বিষয়ে সাক্ষী। এ সাক্ষ্য নিজ মুখেই প্রকাশ করতে পারে, আবার কাজ-কর্ম ও অবস্থার মাধ্যমেও প্রকাশিত হতে পারে। এর আরেকটি অর্থ হতে পারে যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের এ অকৃতজ্ঞতার ব্যপারে সাক্ষী। [ইবন কাসীর]

৮. আর নিশ্চয় সে ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল(১)

(১) خير এর শাব্দিক অর্থ মঙ্গল। এখানে ব্যাপক অর্থ ত্যাগ করে আরবের বাকপদ্ধতি অনুযায়ী এ আয়াত ধন-সম্পদকে خير বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। যেমন, অন্য এক আয়াতে আছে (إِنْ تَرَكَ خَيْرًا) “যদি কোন সম্পদ ত্যাগ করে যায়”। [সূরা আল বাকারাহ: ১৮০] এ আয়াতটির অর্থও দুরকম হতে পারে। এক. সে সম্পদের আসক্তির কারণে প্রচণ্ড কৃপণ; দুই. সম্পদের প্রতি তার আসক্তি অত্যন্ত প্রবল। দ্বিতীয় অর্থটির মধ্যেই মূলত প্রথমটি চলে আসে; কেননা সম্পদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তিই কৃপণতার কারণ। [আদওয়াউল বায়ান]

৯. তবে কি সে জানে না যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে,

১০. আর অন্তরে যা আছে তা প্ৰকাশ করা হবে?(১)

(১) অর্থাৎ অন্তরের ভালো-মন্দ পৃথক করে প্রকাশ করে দেওয়া হবে। ফলে গোপনগুলো প্রকাশ হয়ে পড়বে; মানুষের কর্মফল তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে। [সা’দী] এ-বক্তব্যটিই অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “যেদিন গোপন রহস্য যাচাই বাছাই করা হবে।” [সূরা আত-তারিক: ৯] এ দু আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ তা'আলা কবর থেকে উত্থিত করে, গোপন বিষয় প্রকাশ করার পর যে বিচার ও প্রতিদান প্ৰদান করা হবে, মানুষ কি তা জানে না? [মুয়াসসার]

১১. নিশ্চয় তাদের রব সেদিন তাদের ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।(১)

(১) অর্থাৎ তাদের রব্ব্‌ তাদের ব্যাপারে অবশ্যই যথেষ্ট অবহিত, তাদের কোন কাজই তার নিকট গোপন নয়। তাদের প্রকাশ্য-অপ্ৰকাশ্য বা গোপন সব কাজ-কর্মই তিনি জানেন। তিনি তাদেরকে এগুলোর উপযুক্ত প্রতিদানও দেবেন। আল্লাহ্ তা'আলা সমসবময়েই তাদের ব্যাপারে জানা সত্বেও এখানে শুধুমাত্র হাশরের দিন তাদের ব্যাপারে অবহিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ কারণে যে, এ-দিন তার জ্ঞানের মাধ্যমেই তিনি সকল গোপন প্রকাশ করে দেবেন, কাফেরদের শাস্তি দেবেন, কাজকর্মের প্রতিদান দেবেন। [সা’দী, ফাতহুল কাদীর, আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া




************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url