সূরা আবাসা তেলাওয়াত || সূরা আবাসা বাংলা উচ্চারণ || সূরা আবাসা বাংলা অনুবাদ || সূরা আবাসা শানে নুযুল || সূরা আবাসা তাফসীর || Surah Abasa || কারী শেখ আব্দুল বাসিত


সূরা আবাসা তেলাওয়াত 

কারী শেখ আব্দুল বাসিত

সূরা আবাসা তেলাওয়াত  || সূরা আবাসা বাংলা উচ্চারণ || সূরা আবাসা বাংলা অনুবাদ || সূরা আবাসা শানে নুযুল || সূরা আবাসা তাফসীর || Surah Abasa || কারী শেখ আব্দুল বাসিত ||
সূরা আবাসা কোরআন মাজিদের ৮০ তম সূরা। 
এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৪২ টি। 
সূরা আবাসা এর বাংলা অর্থ- সে অমত করেছিলো। 
সূরা আবাসা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। 

সূরা আবাসা আরবী

Surah Abasa Arabi Uchcharon

1. عَبَسَ وَتَوَلَّىٰٓ
2. أَن جَآءَهُ ٱلْأَعْمَىٰ
3. وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُۥ يَزَّكَّىٰٓ
4. أَوْ يَذَّكَّرُ فَتَنفَعَهُ ٱلذِّكْرَىٰٓ
5. أَمَّا مَنِ ٱسْتَغْنَىٰ
6. فَأَنتَ لَهُۥ تَصَدَّىٰ
7. وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّىٰ
8. وَأَمَّا مَن جَآءَكَ يَسْعَىٰ
9. وَهُوَ يَخْشَىٰ
10. فَأَنتَ عَنْهُ تَلَهَّىٰ
11. كَلَّآ إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ
12. فَمَن شَآءَ ذَكَرَهُۥ
13. فِى صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ
14. مَّرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍۭ
15. بِأَيْدِى سَفَرَةٍ
16. كِرَامٍۭ بَرَرَةٍ
17. قُتِلَ ٱلْإِنسَٰنُ مَآ أَكْفَرَهُۥ
18. مِنْ أَىِّ شَىْءٍ خَلَقَهُۥ
19. مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُۥ فَقَدَّرَهُۥ
20. ثُمَّ ٱلسَّبِيلَ يَسَّرَهُۥ
21. ثُمَّ أَمَاتَهُۥ فَأَقْبَرَهُۥ
22. ثُمَّ إِذَا شَآءَ أَنشَرَهُۥ
23. كَلَّا لَمَّا يَقْضِ مَآ أَمَرَهُۥ
24. فَلْيَنظُرِ ٱلْإِنسَٰنُ إِلَىٰ طَعَامِهِۦٓ
25. أَنَّا صَبَبْنَا ٱلْمَآءَ صَبًّا
26. ثُمَّ شَقَقْنَا ٱلْأَرْضَ شَقًّا
27. فَأَنۢبَتْنَا فِيهَا حَبًّا
28. وَعِنَبًا وَقَضْبًا
29. وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا
30. وَحَدَآئِقَ غُلْبًا
31. وَفَٰكِهَةً وَأَبًّا
32. مَّتَٰعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَٰمِكُمْ
33. فَإِذَا جَآءَتِ ٱلصَّآخَّةُ
34. يَوْمَ يَفِرُّ ٱلْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ
35. وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ
36. وَصَٰحِبَتِهِۦ وَبَنِيهِ
37. لِكُلِّ ٱمْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ
38. وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُّسْفِرَةٌ
39. ضَاحِكَةٌ مُّسْتَبْشِرَةٌ
40. وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ
41. تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ
42. أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَفَرَةُ ٱلْفَجَرَةُ

সূরা আবাসা বাংলা উচ্চারণ

Surah Abasa Bangla Uchcharon

১) ‘আবাছা ওয়া তাওয়াল্লা-।
২) আন জাআহুল আ‘মা-।
৩) ওয়ামা-ইউদরীকা লা‘আল্লাহু ইয়াঝঝাক্কা-।
৪) আও ইয়াযযাক্কারু ফাতানফাআহুযযিকরা-।
৫) আম্মা-মানিছ তাগনা-।
৬) ফাআনতা লাহূতাসাদ্দা-।
৭) ওয়ামা-‘আলাইকা আল্লা-ইয়াঝঝাক্কা-।
৮) ওয়া আম্মা-মান জাআকা ইয়াছ‘আ-।
৯) ওয়া হুওয়া ইয়াখশা-।
১০) ফাআনতা ‘আনহু তালাহহা-।
১১) কাল্লাইন্নাহা-তাযকিরাহ।
১২) ফামান শাআ যাকরাহ ।
১৩) ফী সুহুফিম মুকাররামাহ
১৪) মারফূ‘আতিম মুতাহহারাহ।
১৫) বিআইদী ছাফারাহ।
১৬) কিরা-মিম বারারাহ।
১৭) কুতিলাল ইনছা-নুমা-আকফারাহ।
১৮) মিন আইয়ি শাইয়িন খালাকাহ।
১৯) মিন নুতফাতিন খালাকাহূফাকাদ্দারাহ।
২০) ছু ম্মাছ ছাবীলা ইয়াছছরাহ।
২১) ছু ম্মা আমা-তাহূফাআকবারাহ।
২২) ছু ম্মা ইযা-শাআ আনশারাহ।
২৩) কাল্লা-লাম্মা-ইয়াকদিমাআমারাহ।
২৪) ফালাইয়ানজুরিল ইনছা-নুইলা-তা‘আ-মিহ।
২৫) আন্না-সাবাবনাল মাআ সাব্বা-।
২৬) ছু ম্মা শাকাকনাল আরদা শাক্কা-।
২৭) ফাআমবাতনা-ফীহা-হাব্বা-।
২৮) ওয়া ‘ইনাবাওঁ ওয়া কাদবা-।
২৯) ওয়া ঝাইতূনাওঁ ওয়া নাখলা-।
৩০) ওয়া হাদাইকা গুলবা-।
৩১) ওয়া ফা-কিহাতাওঁ ওয়া আব্বা-।
৩২) মাতা-‘আল্লাকুম ওয়ালি আন‘আ-মিকুম।
৩৩) ফাইযা-জাআতিসসা-খখাহ।
৩৪) ইয়াওমা ইয়াফিররুল মারউ মিন আখীহ।
৩৫) ওয়া উম্মিহী ওয়া আবীহ।
৩৬) ওয়া সা-হিবাতিহী ওয়া বানীহ।
৩৭) লিকুল্লিম রিইম মিনহুম ইয়াওমাইযিন শা’নুইঁ ইউগনীহ।
৩৮) উজূহুইঁ ইয়াওমাইযিমমুছফিরাহ।
৩৯) দা-হিকাতুমমুছতাবশিরাহ।
৪০) ওয়া উজূহুইঁ ইয়াওমাইযিন ‘আলাইহা-গাবারাহ।
৪১) তারহাকুহা-কাতারাহ।
৪২) উলাইকা হুমুল কাফারাতুল ফাজারাহ।

সূরা আবাসা বাংলা অনুবাদ

Surah Abasa Bangla Onubad

১) তিনি ভ্রূকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
২) কারণ, তাঁর কাছে এক অন্ধ আগমন করল।
৩) আপনি কি জানেন, সে হয়তো পরিশুদ্ধ হত,
৪) অথবা উপদেশ গ্রহণ করতো এবং উপদেশ তার উপকার হত।
৫) পরন্তু যে বেপরোয়া,
৬) আপনি তার চিন্তায় মশগুল।
৭) সে শুদ্ধ না হলে আপনার কোন দোষ নেই।
৮) যে আপনার কাছে দৌড়ে আসলো
৯) এমতাবস্থায় যে, সে ভয় করে,
১০) আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন।
১১) কখনও এরূপ করবেন না, এটা উপদেশবানী।
১২) অতএব, যে ইচ্ছা করবে, সে একে গ্রহণ করবে।
১৩) এটা লিখিত আছে সম্মানিত,
১৪) উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে,
১৫) লিপিকারের হস্তে,
১৬) যারা মহৎ, পূত চরিত্র।
১৭) মানুষ ধ্বংস হোক, সে কত অকৃতজ্ঞ!
১৮) তিনি তাকে কি বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
১৯) শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।
২০) অতঃপর তার পথ সহজ করেছেন,
২১) অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান ও কবরস্থ করেন তাকে।
২২) এরপর যখন ইচ্ছা করবেন তখন তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
২৩) সে কখনও কৃতজ্ঞ হয়নি, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে তা পূর্ণ করেনি।
২৪) মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুক,
২৫) আমি আশ্চর্য উপায়ে পানি বর্ষণ করেছি,
২৬) এরপর আমি ভূমিকে বিদীর্ণ করেছি,
২৭) অতঃপর তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য,
২৮) আঙ্গুর, শাক-সব্জি,
২৯) যয়তুন, খর্জূর,
৩০) ঘন উদ্যান,
৩১) ফল এবং ঘাস
৩২) তোমাদেরও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের উপাকারার্থে।
৩৩) অতঃপর যেদিন কর্ণবিদারক নাদ আসবে,
৩৪) সেদিন পলায়ন করবে মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে,
৩৫) তার মাতা, তার পিতা,
৩৬) তার পত্নী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।
৩৭) সেদিন প্রত্যেকেরই নিজের এক চিন্তা থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।
৩৮) অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে উজ্জ্বল,
৩৯) সহাস্য ও প্রফুল্ল।
৪০) এবং অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে ধুলি ধূসরিত।
৪১) তাদেরকে কালিমা আচ্ছন্ন করে রাখবে।
৪২) তারাই কাফের পাপিষ্ঠের দল।

সূরা আবাসা তাফসীর

Surah Abasa Tafseer

১. তিনি ভ্ৰকুঞ্চিত করলেন এবং মুখ ফিরিয়ে নিলেন(১),
(১) عبس শব্দের অর্থ রুষ্টতা অবলম্বন করা এবং চোখে মুখে বিরক্তি প্ৰকাশ করা। تولى শব্দের অর্থ মুখ ফিরিয়ে নেয়া। [জালালাইন]

২. কারণ তার কাছে অন্ধ লোকটি আসল।
৩. আর কিসে আপনাকে জানাবে যে, —সে হয়ত পরিশুদ্ধ হত,
৪. অথবা উপদেশ গ্ৰহণ করত, ফলে সে উপদেশ তার উপকারে আসত।(১)
(১) অর্থাৎ আপনি কি জানেন এই সাহাবী যা জিজ্ঞেস করেছিল তা তাকে শিক্ষা দিলে সে তা দ্বারা পরিশুদ্ধ হতে পারত কিংবা কমপক্ষে আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ করে উপকার লাভ করতে পারত। [দেখুন: মুয়াস্‌সার; সাদী]

৫. আর যে পরোয়া করে না,
৬. আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন।
৭. অথচ সে নিজে পরিশুদ্ধ না হলে আপনার কোন দায়িত্ব নেই,
৮. অপরদিকে যে আপনার কাছে ছুটে এলো,
৯. আর সে সসঙ্কচিত্ত,
১০. আপনি তার থেকে উদাসীন হলেন;
১১. কখনো নয়, এটা তো উপদেশ বাণী(১),
(১) অর্থাৎ এমনটি কখনো করবেন না। যে সব লোক আল্লাহকে ভুলে আছে এবং যারা নিজেদের দুনিয়াবী সহায়-সম্পদ ও প্রভাব-প্রতিপত্তির অহংকারে মত্ত হয়ে আছে, তাদেরকে অযথা গুরুত্ব দিবেন না। ইসলাম, আহি বা কুরআন এমন কিছু নয় যে, যে ব্যক্তি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তার সামনে নতজানু হয়ে তা পেশ করতে হবে। বরং সে সত্যের যতটা মুখাপেক্ষী নয় সত্যও তার ততটা মুখাপেক্ষী নয়। বরং তাদেরই ইসলামের মহত্তের সামনে নতজানু হতে হবে। [তাতিম্মাতু আদওয়াউল বায়ান]
১২. কাজেই যে ইচ্ছে করবে। সে এটা স্মরণ রাখবে,
১৩. এটা আছে মর্যাদা সম্পন্ন লিপিসমূহে
১৪. যা উন্নত, পবিত্ৰ(১),
(১) مكرمة অর্থ সম্মানিত, মর্যাদাসম্পন্ন। مرفوعة বলে এর মর্যাদা অনেক উচ্চতা বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] আর مطهرة বলে বোঝানো হয়েছে হাসান বসরীর মতে, যাবতীয় নাপাক থেকে পবিত্র। সুদ্দী বলেন, এর অর্থ কাফেররা এটা পাওয়ার অধিকারী নয়। তাদের হাত থেকে পবিত্র। হাসান থেকে অপর বর্ণনায় বলা হয়েছে, এর অর্থ মুশরিকদের উপর নাযিল হওয়া থেকে পবিত্ৰ। [কুরতুবী] ইবন কাসীর বলেন, এর অর্থ এটি বাড়তি-কমতি ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ও মুক্ত।

১৫. লেখক বা দূতদের হাতে।(১)
(১) سفرة শব্দটি سافر এর বহুবচন হতে পারে। তখন অর্থ হবে লিপিকার বা লেখক। আর যদি سفرة শব্দটি سفارة থেকে আসে, তখন এর অর্থ দূতগণ। এই শব্দ দ্বারা সাহাবীদেরও উদ্দেশ্য হতে পারে। প্রথমটিই অধিক শুদ্ধ। সহীহ হাদীসে السَّفَرَةُ الْكِرامُ البَرَرَةُ এর তাফসীর ফেরেশতাদেরই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘কিরাতে বিশেষজ্ঞ কুরআন পাঠক সম্মানিত নেককার দূতদের (ফেরেশতাদের) সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি বিশেষজ্ঞ নয় কিন্তু কষ্টে সৃষ্টি পড়ে সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে। [বুখারী: ৪৯৩৭, মুসলিম: ৭৯৮] [ইবন কাসীর]

১৬. (যারা) মহাসম্মানিত ও নেককার।
১৭. মানুষ ধ্বংস হোক! সে কত অকৃতজ্ঞ!(১)
(১) এর অর্থ, সে কত বড় সত্য-অস্বীকারকারী। তাছাড়া এ আয়াতের আর একটি অর্থ হতে পারে অর্থাৎ “কোন জিনিসটি তাকে সত্য অস্বীকার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে? [তাবারী]
১৮. তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
১৯. শুক্রবিন্দু থেকে, তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, পরে তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন(১),
(১) قدّره অর্থাৎ সুপরিমিত করেছেন, তার গঠন-প্রকৃতি, আকার-আকৃতি সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছেন। قدّره শব্দের এরূপ অৰ্থও হতে পারে যে, মানুষ যখন মাতৃগর্ভে সৃষ্টি হতে থাকে তখন আল্লাহ তা'আলা তার কাজ, বয়স, রিযিক, ভাগ্য ইত্যাদি তকদীর নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাছাড়া পূর্ব থেকেই প্রতিটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে তার গায়ের রং কি হবে, সে কতটুকু উচু হবে, তার দেহ কতটুকু কি পরিমাণ মোটা ও পরিপুষ্ট হবে। এত সব সত্বেও সে তার রবের সাথে কুফরী করে। [দেখুন: কুরতুবী]

২০. তারপর তার জন্য পথ সহজ করে দেন(১);
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় ক্ষমতা-বলে মাতৃগর্ভে মানুষকে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনিই তার অপার শক্তির মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে জীবিত ও পুর্নাঙ্গ মানুষের বাইরে আসার পথ সহজ করে দেয়। ফলে দেহটি সহী-সালামতে বাইরে চলে আসে এবং মায়েরও এতে তেমন কোন দৈহিক ক্ষতি হয় না। এছাড়া আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ায় তিনি তার জন্য নিজের জন্য ভালো বা মন্দ, কৃতজ্ঞতা বা অকৃতজ্ঞতা আনুগত্য বা অবাধ্যতার মধ্যে সে কোন পথ চায় তা তার সামনে খুলে রেখে দিয়েছেন এবং পথ তার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। ফলে সে শুকরিয়া আদায় করে সৎপথ গ্রহণ করতে পারে, আবার কুফরী করে বিপথে যেতে পারে। [দেখুন: ইবন কাসীর]

২১. এরপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন।
২২. এরপর যখন ইচ্ছে তিনি তাকে পুনর্জীবিত করবেন।(১)
(১) অর্থাৎ মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তা'আলাই মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। একমাত্র তিনিই এগুলো করার ক্ষমতা রাখেন। তারপরও মানুষ তাঁকে অস্বীকার করে, তাঁর হক আদায় করে না। [সা’দী] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুই ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী সময় হবে চল্লিশ। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথীরা বলল, চল্লিশ দিন? আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এটা বলতে অস্বীকার করছি, তারা বলল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি এটা বলতেও অস্বীকার করছি। তারা বলল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি এটাও বলতে অস্বীকার করছি। তবে মানুষের সবকিছু পঁচে যায় একমাত্র মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের একটি ছোট্ট কোষ ব্যতীত। তার উপরই আবার সৃষ্টি জড়ো হবে।” [বুখারী ৪৮১৪, মুসলিম: ২৯৫৫]
২৩. কখনো নয়, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে এখনো তা পূর্ণ করেনি।
২৪. অতঃপর মানুষ যেন তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করে!(১)
(১) মানবসৃষ্টির সূচনা উল্লেখ করার পর মানুষ যে খাদ্যের নেয়ামত ভোগ করে, এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য সম্পর্কে তার একবার চিন্তা করা প্রয়োজন- কিভাবে এই খাদ্য উৎপন্ন হয়। আল্লাহ যদি এর উপকরণগুলো সরবরাহ না করতেন তাহলে কি জমি থেকে এই খাদ্য উৎপন্ন করার ক্ষমতা মানুষের ছিল? এসব নেয়ামতসমূহ তিনি মানুষকে দিয়েছেন যাতে মানুষ কিয়ামতের প্রস্তুতির জন্য এর সাহায্যে আল্লাহর ইবাদত করে। [কুরতুবী]

২৫. নিশ্চয় আমরা প্রচুর বারি বর্ষণ করি,
২৬. তারপর আমরা যমীনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি;
২৭. অতঃপর তাতে আমরা উৎপন্ন করি শস্য;
২৮. আঙ্গুর, শাক-সবজি,
২৯. যায়তুন, খেজুরগাছ,
৩০. অনেক গাছবিশিষ্ট উদ্যান,
৩১. ফল এবং গবাদি খাদ্য(১),
(১) أبّ শব্দটির উপরোক্ত অর্থ ইবনে আব্বাস ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। [সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ২১৭২]
৩২. এগুলো তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের ভোগের জন্য।(১)
(১) অর্থাৎ কেবল তোমাদের জন্যই নয়, তোমাদের যেসব গবাদি-গৃহপালিত পশু রয়েছে, তাদের জন্যও। এসব নেয়ামতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মহান আল্লাহর ইবাদত, তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করা ও তার নির্দেশাবলি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা ফুটে ওঠে।

৩৩. অতঃপর যখন তীক্ষ্ণ আওয়াজ আসবে(১),
(১) আয়াতে বর্ণিত الصاخة শব্দটির মূল অর্থ হলো, “এমন কঠোর ডাক যার ফলে মানুষ শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে।” এখানে কিয়ামতের দ্বিতীয় শিংগাধ্বনির কথা বলা হয়েছে। যা পুনরুত্থানের শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া বোঝায়। এই বিকট আওয়ায বুলন্দ হবার সাথে সাথেই মরা মানুষেরা জীবিত হয়ে উঠবে এবং কেয়ামতের মাঠে উপস্থিত হবে। [মুয়াস্‌সার, জালালাইন]

৩৪. সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে,
৩৫. এবং তার মাতা, তার পিতা,
৩৬. তার পত্নী ও তার সন্তান থেকে(১),
(১) এখানে হাশরের ময়দানে সকলের সমাবেশের দিন বোঝানো হয়েছে, সেদিন প্রত্যেক মানুষ আপন চিন্তায় বিভোর হবে। সেদিন মানুষ তার অতি-নিকটাত্মীয়কে দেখলেও মুখ লুকাবে এবং পালিয়ে বেড়াবে। [ইবন কাসীর] প্ৰায় এই একই ধরনের বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে সূরা মা'আরিজের ১০ থেকে ১৪ পর্যন্ত আয়াতে।
৩৭. সেদিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।(১)
(১) কাতাদা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, প্ৰত্যেক মানুষ তার ভ্রাতার কাছ থেকে এবং পিতা মাতা স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে সেদিন মুখ লুকিয়ে ফিরবে। দুনিয়াতে পারস্পরিক সাহায্য ও সহযোগিতা ভ্ৰাতাদের মধ্যে হয়। এর চেয়ে বেশী পিতা-মাতাকে সাহায্য করার চিন্তা করা হয়। এবং স্বভাবগত কারণে এর চেয়েও বেশী স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। আয়াতে নীচ থেকে উপরের সম্পর্ক যথাক্রমে উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুন: ইবন কাসীর] হাদীসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ একেবারেই উলংগ হয়ে উঠবে। একথা শুনে তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের মধ্য থেকে কোন একজন ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের লজ্জাস্থান কি সেদিন সবার সামনে খোলা থাকবে? জবাবে রাসূলুল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেন, সেদিন অন্যের দিকে তাকাবার মতো হুশ ও চেতনা কারো থাকবে না। [নাসাঈ: ২০৮৩, তিরমিযী: ৩৩৩২, ইবনে মাজাহ: ৪২৭৬, মুসনাদে আহমাদ: ৬/৮৯]।

৩৮. অনেক চেহারা সেদিন হবে উজ্জ্বল,
৩৯. সহাস্য ও প্রফুল্ল,
৪০. আর অনেক চেহারা সেদিন হবে ধূলিধূসর।
৪১. সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালিমা।
৪২. এরাই কাফির ও পাপাচারী।
তাফসীরে জাকারিয়া


**********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url