সুরা আল-গাশিয়াহ তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর || তেলাওয়াত: কারী শেখ আব্দুল বাাসিত ||

সুরা আল-গাশিয়াহ তেলাওয়াত, উচ্চারণ, অনুবাদ ও তাফসীর

তেলাওয়াত: কারী শেখ আব্দুল বাাসিত

সূরা আল-গাশিয়াহ আরবী উচ্চারণ

Surah Al-Ghashiyah in Arabic

১. هَلْ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ٱلْغَٰشِيَةِ    
২. وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ خَٰشِعَةٌ    
৩. عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ    
৪. تَصْلَىٰ نَارًا حَامِيَةً     
৫. تُسْقَىٰ مِنْ عَيْنٍ ءَانِيَةٍ     
৬. لَّيْسَ لَهُمْ طَعَامٌ إِلَّا مِن ضَرِيعٍ     
৭. لَّا يُسْمِنُ وَلَا يُغْنِى مِن جُوعٍ     
৮. وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاعِمَةٌ     
৯. لِّسَعْيِهَا رَاضِيَةٌ     
১০. فِى جَنَّةٍ عَالِيَةٍ     
১১. لَّا تَسْمَعُ فِيهَا لَٰغِيَةً    
১২. فِيهَا عَيْنٌ جَارِيَةٌ     
১৩. فِيهَا سُرُرٌ مَّرْفُوعَةٌ     
১৪. وَأَكْوَابٌ مَّوْضُوعَةٌ     
১৫. وَنَمَارِقُ مَصْفُوفَةٌ     
১৬. وَزَرَابِىُّ مَبْثُوثَةٌ     
১৭. أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى ٱلْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ     
১৮. وَإِلَى ٱلسَّمَآءِ كَيْفَ رُفِعَتْ   
১৯. وَإِلَى ٱلْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ     
২০. وَإِلَى ٱلْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ    
২১. فَذَكِّرْ إِنَّمَآ أَنتَ مُذَكِّرٌ     
২২. لَّسْتَ عَلَيْهِم بِمُصَيْطِرٍ     
২৩. إِلَّا مَن تَوَلَّىٰ وَكَفَرَ     
২৪. فَيُعَذِّبُهُ ٱللَّهُ ٱلْعَذَابَ ٱلْأَكْبَرَ     
২৫. إِنَّ إِلَيْنَآ إِيَابَهُمْ      
২৬. ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا حِسَابَهُم

সূরা আল-গাশিয়াহ বাংলা উচ্চারণ

Surah Al-Ghashiyah in Bangla

১. হাল আতা-কা হাদীছুল গা-শিয়াহ।   
২. উজূহুইঁ ইয়াওমাইযিন খা-শি‘আহ।   
৩. ‘আ-মিলাতুন না-সিবাহ।    
৪. তাসলা-না-রান হা-মিয়াহ।    
৫. তুছকা-মিন ‘আইনিন আ-নিয়াহ।   
৬. লাইছা লাহুম তা‘আ-মুন ইল্লা-মিন দারী‘ই।    
৭. লা-ইউছমিনুওয়ালা-ইউগনী মিন জু‘ই।    
৮. উজূহুইঁ ইয়াওমাইযিন না-‘ইমাহ।    
৯. লিছা‘ইহা-রা-দিয়াহ।    
১০. ফী জান্নাতিন ‘আ-লিয়াহ।     
১১. লা-তাছমা‘উ ফীহা-লা-গিয়াহ।     
১২. ফীহা-‘আইনুন জা-রিয়াহ।     
১৩. ফীহা-ছুরুরুমমারফূ‘আহ।     
১৪. ওয়া আকওয়া-বুম মাওদূ‘আহ।     
১৫. ওয়া নামা-রিকুমাসফূফাহ।     
১৬. ওয়া ঝারা-বিইয়ুমাবছূছাহ।     
১৭. আফালা-ইয়ানজু রুনা ইলাল ইবিলি কাইফা খুলিকাত।     
১৮. ওয়া ইলাছ ছামাই কাইফা রুফি‘আত।    
১৯. ওয়া ইলাল জিবা-লি কাইফা নুসিবাত।    
২০. ওয়া ইলাল আরদি কাইফা ছুতিহাত।    
২১. ফাযাক্কির ইন্নামাআনতা মুযাক্কির।     
২২. লাছাতা ‘আলইহিম বিমুসাইতির।    
২৩. ইল্লা-মান তাওয়াল্লা-ওয়া কাফার।     
২৪. ফাইউ‘আযযিবুহুল্লা-হুল ‘আযা-বাল আকবার।     
২৫. ইন্না ইলাইনাইয়া-বাহুম।     
২৬. ছু ম্মা ইন্না ‘আলাইনা-হিছা-বাহুম।

সূরা আল-গাশিয়াহ বাংলা অনুবাদ

Surah Al-Ghashiyah Bangla Translate

১. আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?    
২. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,   
৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত।    
৪. তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।    
৫. তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে।     
৬. কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই।    
৭. এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না।     
৮. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব,  
৯. তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট।    
১০. তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে।     
১১. তথায় শুনবে না কোন অসার কথাবার্তা।     
১২. তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।     
১৩. তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন।    
১৪. এবং সংরক্ষিত পানপাত্র    
১৫. এবং সারি সারি গালিচা 
১৬. এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।    
১৭. তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?    
১৮. এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে?    
১৯. এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কিভাবে স্থাপন করা হয়েছে? 
২০. এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কিভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?     
২১. অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা,    
২২. আপনি তাদের শাসক নন,    
২৩. কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়,     
২৪. আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন।     
২৫. নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট,    
২৬. অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।

সূরা আল-গাশিয়াহ তাফসীর

Surah Al-Ghashiyah Tafseer

১. আপনার কাছে কি আচ্ছন্নকারীর (কিয়ামতের) সংবাদ এসেছে?

২. সেদিন অনেক চেহারা হবে অবনত(১),

(১) কিয়ামতে মুমিন ও কাফের আলাদা আলাদা বিভক্ত দু' দল হবে এবং মুখমণ্ডল দ্বারা পৃথকভাবে পরিচিত হবে। এই আয়াতে কাফেরদের মুখমণ্ডলের এক অবস্থা এই বর্ণিত হয়েছে যে, তা خَاشِعَةٌ অর্থাৎ হেয় হবে। خشوع শব্দের অর্থ নত হওয়া ও লাঞ্ছিত। হওয়া। [ইবন কাসীর]

৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত(১),

(১) দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থা হবে (عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ) বাক পদ্ধতিতে অবিরাম কর্মের কারণে পরিশ্রান্ত ব্যক্তিকে عَامِلَةٌ এবং ক্লান্ত ও ক্লিষ্ট ব্যক্তিকে বলা হয় نَاصِبَةٌ। [ফাতহুল কাদীর] কাফেরদের এ অবস্থা কখন হবে? এ নিয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কাফেরদের এ দুরাবস্থা দুনিয়াতেই হবে। কেননা, আখেরাতে কোন কর্ম ও মেহনত নেই। [ফাতহুল কাদীর] কেননা, অনেক কাফের দুনিয়াতে মুশরিকসুলভ ইবাদত এবং বাতিল পন্থায় অধ্যবসায় ও সাধনা করে থাকে। হিন্দু যোগী ও নাসারা পাদ্রী অনেক এমন আছে, যারা আন্তরিকতা সহকারে আল্লাহ্ তা'আলারই সন্তুষ্টির জন্যে দুনিয়াতে ইবাদত ও সাধনা করে থকে এবং এতে অসাধারণ পরিশ্রম স্বীকার করে। কিন্তু এসব ইবাদত মুশরিকসুলভ ও বাতিল পন্থায় হওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে সওয়াব ও পুরস্কার লাভের যোগ্য হয় না।

অতএব, তাদের মুখমণ্ডল দুনিয়াতেও ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত রইল এবং আখেরাতে তাদেরকে লাঞ্ছনা ও অপমানের অন্ধকার আচ্ছন্ন করে রাখবে। খলীফা ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন শাম সফর করেন তখন জনৈক নাসারা বৃদ্ধ পাদ্ৰী তাঁর কাছ দিয়ে যেতে দেখলেন। সে তাঁর ধর্মীয় ইবাদত সাধনা ও মোজাহাদায় এত বেশী আত্মনিয়োগ করেছিল যে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে চেহারা বিকৃত এবং দেহ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। তার পোশাকের মধ্যেও কোন শ্ৰী ছিল না। খলীফা তাকে দেখে অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। ক্ৰন্দনের কারণ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেনঃ এই বৃদ্ধার করুণ অবস্থা দেখে আমি ক্ৰন্দন করতে বাধ্য হয়েছি। বেচারী স্বীয় লক্ষ্য অজর্নের জন্যে জীবনপণ পরিশ্রম ও সাধনা করেছে কিন্তু সে তার লক্ষ্য অজর্নে ব্যর্থ হয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুটি অর্জন করতে পারেনি। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। [ইবন কাসীর]

* হাশরের মাঠে পাপীদের অবস্থা:

কাতাদাহ রাহেমাহুল্লাহর মতে, তাদের অবিরাম কষ্ট ও ক্লান্তি দু’টোই আখেরাতে হবে। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ, যারা দুনিয়াতে আল্লাহর ইবাদত করতে অহংকার করেছিল তাদেরকে সেদিন কর্মে খাটানো হবে এবং তাদেরকে জাহান্নামে প্রতিষ্ঠিত করা হবে; এমতাবস্থায় যে তারা তাদের ভারী জিঞ্জির ও ভারী বোঝাসমূহ বহন করতে থাকবে। অনুরূপভাবে তারা হাশরের মাঠের সে বিপদসংকুল সময়ে নগ্ন পা ও শরীর নিয়ে কঠিন অবস্থায় অবস্থান করতে থাকবে, যার পরিমান হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। হাসান বসরী ও সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহেমাহুমাল্লাহ বলেন, তারা যেহেতু দুনিয়াতে আল্লাহর জন্য কোন নেক আমল করেনি, সেহেতু সেখানে তারা জাহান্নামে কঠিন খাটুনি ও কষ্ট করবে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তাদেরকে কঠিন কঠিন পাহাড়ে ওঠা-নামার কাজে লাগানো হবে। পরে কষ্ট ও ক্লান্তি উভয়টিরই সম্মুখীন হবে। [ফাতহুল কাদীর]

৪. তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে(১);

(১) حامية শব্দের অর্থ গরম উত্তপ্ত। অগ্নি স্বাভাবতই উত্তপ্ত। এর সাথে উত্তপ্ত বিশেষণ যুক্ত করা এ কথা বলার জন্যে যে, এই অগ্নির উত্তাপ দুনিয়ার অগ্নির ন্যায় কোন সময় কম অথবা নিঃশেষ হয় না। বরং এটা চিরন্তন উত্তপ্ত। সে আগুন তাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে ধরবে। [সা’দী]

৫. তাদেরকে অত্যন্ত উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে পান করানো হবে;

৬. তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত গুল্ম ছাড়া(১),

(১) ضَرِيعٌ শব্দের অর্থ করা হয়েছে, কাঁটাযুক্ত গুল্ম। অর্থাৎ জাহান্নামীরা কোন খাদ্য পাবে না কেবল এক প্রকার কণ্টকবিশিষ্ট ঘাস। পৃথিবীর মাটিতে এ ধরনের গুল্ম ছড়ায়। দুৰ্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত কাঁটার কারণে জন্তু-জানোয়ার এর ধারে কাছেও যায় না। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত যে, ضَرِيعٌ হচ্ছে জাহান্নামের একটি গাছ। যা খেয়ে কেউ মোটা তাজা হবে না এবং এতে ক্ষুধা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে না। [ফাতহুল কাদীর]

লক্ষণীয় যে, কুরআন মজীদে কোথাও বলা হয়েছে, জাহান্নামের অধিবাসীদের খাবার জন্য “যাক্কূম” দেয়া হবে। কোথাও বলা হয়েছে, “গিস্‌লীন” (ক্ষতস্থান থেকে ঝরে পড়া তরল পদাৰ্থ) ছাড়া তাদের আর কোন খাবার থাকবে না। আর এখানে বলা হচ্ছে, তারা খাবার জন্য কাঁটাওয়ালা শুকনো ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। এ বর্ণনাগুলোর মধ্যে মূলত কোন বৈপরীত্য নেই। এর অর্থ এও হতে পারে যে, জাহান্নামের অনেকগুলো পর্যায় থাকবে। বিভিন্ন অপরাধীকে তাদের অপরাধ অনুযায়ী সেই সব পর্যায়ে রাখা হবে। তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের আযাব দেয়া হবে। আবার এর অর্থ এও হতে পারে যে, তারা “যাক্কূম” খেতে না চাইলে “গিস্‌লীন” পাবে এবং তা খেতে অস্বীকার করলে কাটাওয়ালা ঘাস ছাড়া আর কিছুই পাবে না। মোটকথা, তারা কোন মনের মতো খাবার পাবে না। [কুরতুবী]


৭. যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত করবে না।
৮. অনেক মুখমণ্ডল সেদিন হবে আনন্দোজ্জ্বল,
৯. নিজেদের কাজের সাফল্যে পরিতৃপ্ত(১),

(১) অর্থাৎ দুনিয়ায় তারা যেসব প্রচেষ্টা চালিয়ে ও কাজ করে এসেছে আখেরাতে তার চমৎকার ফল দেখে তারা আনন্দিত হবে। [ফাতহুল কাদীর] এটা তাদের প্রচেষ্টার কারণেই সম্ভব হয়েছে। [ইবন কাসীর]

১০. সুউচ্চ জান্নাতে—
১১. সেখানে তারা অসার বাক্য শুনবে না(১),

(১) অর্থাৎ জান্নাতে জান্নাতীরা কোন অসার ও মর্মম্ভদ কথাবার্তা শুনতে পাবে না। মিথ্যা, কুফৱী কথাবার্তা, গালিগালাজ, অপবাদ ও পীড়াদায়ক কথাবার্তা সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا) “সেখানে তারা ‘শান্তি’ ছাড়া কোন আসার বাক্য শুনবে না এবং সেখানে সকালসন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।” [সূরা মারইয়াম: ৬২] আরও এসেছে, (لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا) “সেখানে তারা শুনবে না কোন অসার বা পাপবাক্য”। [সূরা আল-ওয়াকি'আহ: ২৫] আরও বলা হয়েছে, (لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا كِذَّابًا) “সেখানে তারা শুনবে না অসার ও মিথ্যা বাক্য” [সূরা আন-নাবা: ৩৫] এ থেকে জানা গেল যে, দোষারোপ ও অশালীন কথাবার্তা খুবই পীড়াদায়ক। তাই জান্নাতীদের অবস্থায় একে গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

১২. সেখানে থাকবে বহমান প্রস্রবণ,
১৩. সেখানে থাকবে উন্নত(১) শয্যাসমূহ,

(১) এ উন্নত অবস্থা সার্বিক দিকেই হবে। এ সমস্ত শয্যা অবস্থান, মর্যাদা ও স্থান সবদিক থেকেই উন্নত। সাধারণত মানুষ এ ধরনের শয্যা পছন্দ করে থাকে। আল্লাহর বন্ধুরা যখন এ সমস্ত শয্যায় বসতে চাইবে, তখনি সেগুলো তাদের জন্য নিচু হয়ে আসবে। [ইবন কাসীর]

১৪. আর প্রস্তুত থাকবে পানপত্র,
১৫. সারি সারি উপাধান,
১৬. এবং বিছানা গালিচা;
১৭. তবে কি তারা তাকিয়ে দেখে না উটের দিকে, কিভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে?


১৮. এবং আসমানের দিকে, কিভাবে তা ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে?
১৯. এবং পর্বতমালার দিকে, কিভাবে তা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে?
২০. এবং ভূতলের দিকে, কিভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?(১)

(১) কেয়ামতের অবস্থা এবং মুমিন ও কাফেরের প্রতিদান এবং শাস্তি বর্ণনা করার পর কেয়ামতে অবিশ্বাসী হঠকারীদের পথপ্রদর্শনের জন্যে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর কুদরতের কয়েকটি নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার কথা বলেছেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীতে অসংখ্য। এখানে মরুচারী আরবদের অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যশীল চারটি নিদর্শনের উল্লেখ করা হয়েছে। আরবরা উটে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্তের সফর করে। তখন তাদের সর্বাধিক নিকটে থাকে উট, উপরে আকাশ, নিচে ভূপৃষ্ঠ এবং অগ্র-পশ্চাতে সারি সারি পর্বতমালা। এই চারটি বস্তু সম্পর্কেই তাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। [কুরতুবী]

২১. অতএব আপনি উপদেশ দিন; আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা(১),

(১) এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সান্ত্বনার জন্যে বলা হয়েছে, আপনার বর্ণিত ন্যায়সংগত যুক্তি মানতে যদি কোন ব্যক্তি প্ৰস্তুত না হয়, তাহলে মানা না মানা তার ইচ্ছা। আপনি তাদের শাসক নন যে, তাদেরকে মুমিন করতেই হবে। আপনার কাজ শুধু প্রচার করা ও উপদেশ দেয়া। লোকদেরকে ভুল ও সঠিক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য জানিয়ে দেয়া। তাদেরকে ভুল পথে চলার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা। কাজেই এ দায়িত্ব আপনি পালন করে যেতে থাকুন। এতটুকু করেই আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তাদের হিসাব-নিকাশ, শাস্তি ও প্রতিদান আমার কাজ। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]


২২. আপনি তাদের উপর শক্তি প্রয়োগকারী নন।
২৩. তবে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে ও কুফরী করলে
২৪. আল্লাহ তাদেরকে দেবেন মহাশাস্তি।(১)

(১) আবু উমামাহ আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খালেদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়ার নিকট গমন করলে খালেদ তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনি সবচেয়ে নরম বা আশাব্যঞ্জক কোন বাণী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “মনে রেখ! তোমাদের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে মালিক থেকে পলায়ণপর উটের মত পালিয়ে বেড়ায়”। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৮৫, মুস্তাদরাকে হাকিম: ১/৫৫]

২৫. নিশ্চয় তাদের ফিরে আসা আমাদেরই কাছে;
২৬. তারপর তাদের হিসেবা-নিকেশ আমাদেরই কাজ।

তাফসীরে জাকারিয়া




সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url