বিশ্ববিখ্যাত কারী আব্দুল বাসিতের সাথে কুরআন পড়ুন || সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ || কারী শেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ ||






সূরা আল-ওয়াকিয়াহ

কারী শেখ আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ


বিস্ময়কর সুন্দর তেলাওয়াত
আল কুরআন শুনুন এবং কণ্ঠ মিলিয়ে পড়ুন
সহী ভাবে কুরআন তেলাওয়াতের চমৎকার সুযোগ

সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর পরিচয়, নাযিলের সময়কাল, শানে নুযুল, নাযিলের পটভূমি ও সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর আলোচ্য বিষয়সমূহ-

সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর পরিচয়

সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্‌ (الواقعة) আল কুরআনের ৫৬ তম সূরা। এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৯৬ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ৩। সূরা আল ওয়াক্বিয়াহ্‌ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর নামকরণ

এই সূরাটির প্রথম আয়াতের الواقعة বাক্যাংশে থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ, যে সূরার মধ্যে واقعة (‘ওয়াক্বিয়াহ্‌’) শব্দটি আছে এটি সেই সূরা। ওয়াকিয়াহ শব্দটির অর্থ "ঘটনা" বা বলা যেতে পারে "কিয়ামত দিবসের ঘটনা"।

সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর নাযিলের সময়কাল

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস সূরাসমূহ নাযিলের যে পরম্পরা বর্ণনা করেছেন তাতে তিনি বলেছেনঃ প্রথমে সূরা ত্বহা নাযিল হয়, তারপর আল ওয়াকি’আহ এবং তারও পরে আশ’শুআরা । ইকরিমাও এ পরম্পরা বর্ণনা করেছেন।

হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ইবনে হিশাম ইবনে ইসহাক থেকে যে কাহিনী বর্ণনা করেছেন তা থেকেও এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়। কাহিনীতে বলা হয়েছে হযরত উমর (রা:) যখন তাঁর বোনের ঘরে প্রবেশ করলেন তখন সূরা ত্বাহা তেলাওয়াত করা হচ্ছিলো। তাঁর উপস্থিতির আভাস পেয়ে সবাই কুরআনের আয়াত লিখিত পাতাসমূহ লুকিয়ে ফেললো। হযতর উমর (রা:) প্রথমেই ভগ্নিপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাকে রক্ষা করার জন্য বোন এগিয়ে আসলে তাকেও এমন প্রহার করলেন যে, তাঁর মাথা ফেটে গেল। বোনের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখে হযরত উমর (রা:) অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। তিনি বললেন, তোমরা যে সহীফা লুকিয়েছো তা আমাকে দেখাও। তাতে কি লেখা আছে দেখতে চাই। তাঁর বোন বললেন, শিরকে লিপ্ত থাকার কারণে আপনি অপবিত্র, “কেবল পবিত্র লোকেরাই ঐ সহীফা হাতে নিতে পারে”। একথা শুনে হযরত উমর (রা) গিয়ে গোসল করলেন এবং তারপর সহীফা নিয়ে পাঠ করলেন। এ ঘটনা থেকে জানা যায় যে, তখন সূরা ওয়াকি’আ নাযিল হয়েছিল। কারণ ঐ সূরার মধ্যেই (واقعة) আয়াতাংশ আছে। আর একথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, হযরত উমর (রা:) হাবশায় হিজরতের পর নবুওয়াতের ৫ম বছরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
সূরা ওয়াক্বিয়াহ্‌ এর আলোচ্য বিষয়
এ সূরার বিষয়বস্তু হচ্ছে, আখেরাত, তাওহীদ ও কুরআন সম্পর্কে মক্কার কাফেরদের সন্দেহ-সংশয়ের প্রতিবাদ। এক দিন যে কিয়ামত হবে, পৃথিবী ও নভোমণ্ডলের সমস্ত ব্যবস্থা ধ্বংস ও লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। তারপর সমস্ত মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করে তাদের হিসেব নিকেশ নেয়া হবে । এবং সৎকর্মশীল মানুষদেরকে জান্নাতের বাগানসমূহে রাখা হবে। আর গোনাহগারদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে-এসব কথাকে তারা সর্বাধিক অবিশ্বাস্য বলে মনে করতো। তারা বলতোঃ এসব কল্পনা মাত্র। এসব বাস্তবে সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। এর জবাবে আল্লাহ বলেছেনঃ এ ঘটনা প্রকৃতই যখন সংঘটিত হবে তখন এসব মিথ্যা কথকদের কেউ-ই বলবে না যে, তা সংঘটিত হয়নি তার আগমন রুখে দেয়ার কিংবা তার বাস্তাবতাকে অবাস্তব বানিয়ে দেয়ার সাধ্যও কারো হবে না। সে সময় সমস্ত মানুষ অনিবার্যরূপে তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত হয়ে যাবে। এক, সাবেকীন বা অগ্রগামীদের শ্রেনী। দুই, সালেহীন বা সাধারণ নেককারদের শ্রেণী। এবং তিন, সেই সব মানুষ যারা আখেরাতকে অস্বীকার করতো এবং আমৃত্য কুফরী, শিরক ও কবীরা গোনাহর ওপর অবিচল ছিল। এ তিনটি শ্রেণীর সাথে যে আচরণ করা হবে ৭ থেকে ৫৬ আয়াত পর্যন্ত তা সবিস্তরে বর্ণনা করা হয়েছে।

এরপর ৫৭ থেকে ৭৪ আয়াত পর্যন্ত তাওহীদ ও আখেরাতের ইসলামের এ দুটি মৌলিক আকীদার সত্যতা সম্পর্কে পরপর যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে।এ দুটি বিষয়কেই কাফেররা অস্বীকার করে আসছিল । এ ক্ষেত্রে যুক্তি-প্রমান হিসেবে পৃথিবী ও নভোমন্ডলের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে মানুষকে তার নিজের সত্ত্বা প্রতি, যে খাবার সে খায় সে খাবারের প্রতি, যে পানি সে পান করে সে পানির প্রতি এবং যে আগুনের সাহায্যে সে নিজের খাবার তৈরী করে সে আগুনের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষন করা হয়েছে । তাকে এ প্রশ্নটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে বলা হয়েছে যে, যে আল্লাহর সৃষ্টির কারণে তুমি সৃষ্টি হয়েছো, যার দেয়া জীবনযাপনের সামগ্রীতে তুমি প্রতিপালিত হচ্ছো, তাঁর মোকাবিলায় তুমি স্বেচ্ছাচারী হওয়ার কিংবা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাঁসত্ব করার কি অধিকার তোমার আছে? তাঁর সম্পর্কে তুমি এই ধারণা করে বসলে কি করে যে, তিনি একবার তোমাকে অস্তিত্ব দান করার পর এমন অক্ষম ও অর্থব হয়ে পড়েছেন যে, পুনরায় তোমাকে অস্তিত্ব দান করতে চাইলেও তা পারবেন না?
তারপর ৭৫ থেকে ৮২ আয়াত পর্যন্ত কুরআন সম্পর্কে তাদের নানা রকম সন্দেহ-সংশয় নিরসন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এ উপলব্ধি সৃষ্টিও চেষ্টা করা হয়েছে যে, হতভাগারা তোমাদের কাছে যে এক বিরাট নিয়ামত এসেছে। অথচ এ নিয়ামতের সাথে তোমাদের আচরণ হলো, তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছো এবং তা থেকে উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপই করছো না। কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে দুটি সংক্ষিপ্ত বাক্যে অনুপম যুক্তি পেশ করা হয়েছে । বলা হয়েছে যদি কুরআন নিয়ে কেউ গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখে তাহলে তার মধ্যেও ঠিক তেমনি মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা দেখতে পাবে যেমন মজবুত ও সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা আছে মহাবিশ্বের তরকা ও গ্রহরাজির মধ্যে । আর এসব একথাই প্রমাণ করে যে, যিনি এই মহাবিশ্বের নিয়ম-শৃংখলা ও বিধান সৃষ্টি করেছেন কুরআনের রচয়িতাও তিনিই। তারপর কাফেরদের বলা হয়েছে, এ গ্রন্থ সেই ভাগ্যলিপিতে উৎকীর্ণ আছে যা সমস্ত সৃষ্টির নাগালের বাইরে। তোমরা মনে করো শয়তান মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ গ্রন্থের কথাগুলো নিয়ে আসে। অথচ ‘লওহে মাহফূজ’ থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত যে মাধ্যম এ কুরআন পৌছায় তাতে পবিত্র আত্মা ফেরেশতারা ছাড়া আর কারো সামান্যতম হাতও থাকে না।

সর্বশেষ মানুষকে বলা হয়েছে, তুমি যতই গর্ব ও অংহাকর করো না কেন, এবং নিজের স্বেচ্ছাচারিতার অহমিকায় বাস্তব সম্পর্কে যতই অন্ধ হয়ে থাক না কেন, মৃত্যুর মুহূর্তটি তোমার চোখ খুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সে সময় তুমি একান্তই অসহায় হয়ে পড়ো। নিজের পিতা-মাতাকে বাঁচাতে পার না। নিজের সন্তান-সন্তুতিকে বাঁচতে পার না। নিজের পীর ও মুর্শিদ এবং অতি প্রিয় নেতাদেরকে বাঁচাতে পার না । সবাই তোমার চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আর তুমি অসহায়ের মত দেখতে থাক। তোমার ওপরে যদি কোন উচ্চতর ক্ষমতার অধিকারী ও শাসক না-ই না থেকে থাকে, এবং পৃথিবীতে কেবল তুমিই থেকে থাক, কোন আল্লাহ না থেকে থাকে, তোমার এ ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে কোন মৃত্যুপথযাত্রীর বেরিয়ে যাওয়া প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পার না কেন? এ ব্যাপারে তুমি যেমন অসহায় ঠিক তেমনি আল্লাহর সামনে জবাবদিহি এবং তার প্রতিদান ও শাস্তি প্রতিহত করাও তোমার সাধ্যের বাইরে। তুমি বিশ্বাস কর আর নাই কর, মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে তার পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে। “মুকাররাবীন” বা নৈকট্য লাভকারীদের অন্তরভুক্ত হলে ‘মুকাররাবীনদের’ পরিণাম ভোগ করবে। ‘সালেহীন’ বা সৎকর্মশীল হলে সালেহীনদের পরিণাম ভোগ করবে এবং অস্বীকারকারী পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত হলে সেই পরিণাম লাভ করবে যা এ ধরনের পাপীদের জন্য নির্ধারিত আছে।



********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url