বিষয় ভিত্তিক আয়াত || আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা সম্পর্কিত আয়াতসমূহ || আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই || (৩য় পর্ব)




আল্লাহ ছাড়া প্রভু হিসাবে অন্য কাউকে ডাকার কোন সুযোগ নেই


 সূরাঃ সাবা | Saba | سورة سبإ   

 সূরাঃ সাবা, আয়াত ২২ 

২২ قُلِ ادۡعُوا الَّذِیۡنَ زَعَمۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ۚ لَا یَمۡلِکُوۡنَ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا لَهُمۡ فِیۡهِمَا مِنۡ شِرۡکٍ وَّ مَا لَهٗ مِنۡهُمۡ مِّنۡ ظَهِیۡرٍ

 সূরাঃ সাবা, আয়াত ২২ এর অর্থ 

বল, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে আহবান কর। তারা আসমানসমূহ ও যমীনের মধ্যে অণু পরিমাণ কোন কিছুর মালিক নয়। আর এ দু’য়ের মধ্যে তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সাহায্যকারীও নয়।

Say, [O Muhammad], "Invoke those you claim [as deities] besides Allah." They do not possess an atom's weight [of ability] in the heavens or on the earth, and they do not have therein any partnership [with Him], nor is there for Him from among them any assistant. 

 সূরাঃ সাবা, আয়াত ২২ এর তাফসীর 

২২. বলুন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে ইলাহ মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা আসমানসমূহে অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, যমীনেও নয়। আর এ দুটিতে তাদের কোন অংশও নেই এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ তাঁর সহায়কও নয়।(১)

(১) এ আয়াত ও এর পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদাতের মুলোৎপাটন করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয়, তারা কেউই কোন কিছুর মালিক নয়। যদি মালিক না হয় তবে কিভাবে কোন কিছু দাবী করতে পারে? আর তাছাড়া ইবাদাতের অন্য কারণ এটাও হতে পারত যে, তারা মালিক না হলেও অংশীদার। কিন্তু আসমান ও যমীনে কোন কিছুতেই তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই। সুতরাং তাদের ইবাদাত কেন করা হবে? তাছাড়া ইবাদাতের আরও একটি কারণ হতে পারত যে, তারা মালিক বা অংশীদার না হলেও আল্লাহ্ তাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তিনি তাদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ্‌র তো কোন সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই। সুতরাং তাদের ইবাদাত কেন করা হবে? আর যদি বলা হয় যে, তারা কোন কিছুর মালিক নয়, তারা অংশীদার নয়, তারা সাহায্যকারীও নয়, কিন্তু তারা নেক বান্দা, তাদের সুপারিশ গ্ৰহণ করা হবে। এ শেষোক্ত সন্দেহটির উত্তর পরবর্তী আয়াতে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাদের কারও কারও যদি সুপারিশ থেকেও থাকে, তবে তা একমাত্র আল্লাহর অনুমতিক্রমেই হবে। তিনি তাদেরকে সেটার অনুমতি না দিলে তারা সেটার জন্য অগ্রণী হয়ে কিছু করবে না। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমে শির্কের মুলোৎপাটন করা হয়েছে। [ইবন তাইমিয়্যা, আল-জাওয়াবুস সহীহ, ৩/১৫৪; আর-রাদ্দু আলাল মানতিকিয়্যীন, ৫২৯; দারয়ু তাআরিযিল আকলি ওয়ান নাকল ৫/১৪৯] বরং যাদের সুপারিশ কামনা করা হয়, তাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে, ফেরেশতাগণ। আল্লাহর সামনে তাদের অবস্থা কি তা পরবর্তী আয়াতে বৰ্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

 সূরাঃ ফাতির | Fatir | سورة فاطر 

 সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪০ 

৪০ قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ شُرَکَآءَکُمُ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ؕ اَرُوۡنِیۡ مَاذَا خَلَقُوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ اَمۡ لَهُمۡ شِرۡکٌ فِی السَّمٰوٰتِ ۚ اَمۡ اٰتَیۡنٰهُمۡ کِتٰبًا فَهُمۡ عَلٰی بَیِّنَتٍ مِّنۡهُ ۚ بَلۡ اِنۡ یَّعِدُ الظّٰلِمُوۡنَ بَعۡضُهُمۡ بَعۡضًا اِلَّا غُرُوۡرًا

 সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪০ এর অর্থ 

বল, ‘তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক, সেই শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ কি? আমাকে দেখাও তারা যমীনের কী সৃষ্টি করেছে? অথবা আসমানসমূহের মধ্যে কি তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে? অথবা আমি কি তাদেরকে কোন কিতাব দিয়েছি, যার কোন সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর তারা আছে’? বরং যালিমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক ওয়াদাই দিয়ে থাকে। 

ay, "Have you considered your 'partners' whom you invoke besides Allah? Show me what they have created from the earth, or have they partnership [with Him] in the heavens? Or have We given them a book so they are [standing] on evidence therefrom? [No], rather, the wrongdoers do not promise each other except delusion." 

 সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪০ এর তাফসীর 

৪০. বলুন, তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে তোমাদের যে সব শরীকদের ডাক, তাদের কথা ভেবে দেখেছ কি? তারা যমীনে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও; অথবা আসমানের সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশ আছে কি? না কি আমরা তাদেরকে এমন কোন কিতাব দিয়েছি যার প্রমাণের উপর তারা নির্ভর করে?(১) বরং যালিমরা একে অন্যকে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুরই প্রতিশ্রুতি দেয় না।

(১) কাতাদাহ এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, আল্লাহ্‌ বলেন, “বলুন, তোমরা আল্লাহ্‌র পরিবর্তে তোমাদের যে সব শরীকদের ডাক, তাদের কথা ভেবে দেখেছি কি? তারা যমীনে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও, তারা এর মধ্য থেকে কিছুই সৃষ্টি করে নি। ‘অথবা আসমানের সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশ আছে কি? না, তারা আসমান সৃষ্টিতেও শরীক নয়। এতে তাদের কোন অংশীদারীত্ব নেই। না কি আমরা তাদেরকে এমন কোন কিতাব দিয়েছি যার প্রমানের উপর তারা নির্ভর করে”। অর্থাৎ নাকি তাদেরকে আমরা কোন কিতাব দিয়েছি যা তাদেরকে শির্ক করতে নির্দেশ দেয়? [তাবারী]

 সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪১ 

৪১  اِنَّ اللّٰهَ یُمۡسِکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ اَنۡ تَزُوۡلَا ۬ۚ وَ لَئِنۡ زَالَتَاۤ اِنۡ اَمۡسَکَهُمَا مِنۡ اَحَدٍ مِّنۡۢ بَعۡدِهٖ ؕ اِنَّهٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا 

সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪১ এর অর্থ 

নিশ্চয় আল্লাহ আসমানসমূহ ও যমীনকে ধরে রাখেন যাতে এগুলো স্থানচ্যুত না হয়। আর যদি এগুলো স্থানচ্যুত হয়, তাহলে তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে এগুলোকে ধরে রাখবে? নিশ্চয় তিনি পরম সহনশীল, অতিশয় ক্ষমাপরায়ণ। 

Indeed, Allah holds the heavens and the earth, lest they cease. And if they should cease, no one could hold them [in place] after Him. Indeed, He is Forbearing and Forgiving

সূরাঃ ফাতির, আয়াত ৪১ এর তাফসীর 

(৪১) আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে (ধরে) স্থির রাখেন, যাতে ওরা কক্ষচ্যুত না হয়। [1] ওরা কক্ষচ্যুত হলে তিনি ব্যতীত কেউ ওগুলিকে স্থির রাখতে পারে না। [2] তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।[3]

[1] كراهة أن تزولا، لئلا تزولا এটি আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টিনৈপুণ্যের বর্ণনা। অনেকে বলেন, উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর সাথে শিরক করা এত বড় অপরাধ যে, তার ফলে আকাশ ও পৃথিবী নিজ নিজ অবস্থাতে টিঁকে থাকতে পারে না; বরং তা যেন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। যেমন অন্যত্র বলেছেন, (تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا * أَنْ دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا) অর্থাৎ, এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা পরম দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারয়্যাম ৯০-৯১ আয়াত)

[2] অর্থাৎ, এটা আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতার সাথে সাথে তাঁর অসীম দয়া এই যে, তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে ধারণ করে রেখেছেন এবং তা আপন স্থান হতে নড়াচড়া করতে ও হিলতে দেন না; নচেৎ চোখের পলকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ তিনি যদি তাকে ধারণ না করেন ও তার স্থান থেকে নড়াচড়া করতে দেন, তাহলে তিনি আল্লাহ ছাড়া এমন কোন শক্তি নেই, যে তাকে ধারণ করে রাখবে। إن أمسكهما শব্দটিতে إن নাফিয়াহ (নেতিবাচক)। আল্লাহ তাআলা তাঁর উক্ত অনুগ্রহ ও নিদর্শনের বর্ণনা অন্য স্থানেও দিয়েছেন। যেমন (وَيُمْسِكُ السَّمَاءَ أَنْ تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ) অর্থাৎ, তিনিই আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্ঠে পতিত না হয়। (সূরা হজ্জ ৬৫) (وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ تَقُومَ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ بِأَمْرِه) অর্থাৎ, তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছে।’’ (সূরা রূম ২৫)

[3] অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি বড় সহনশীল। নিজ বান্দাদেরকে কুফরী, শিরক ও পাপ করতে দেখেও তিনি তাদেরকে পাকড়াও করার জন্য তাড়াতাড়ি করেন না; বরং আরো ঢিল দেন। তিনি বড় ক্ষমাশীলও। যখন কেউ তওবা করে তাঁর দরবারে ফিরে আসে এবং লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার সাথে অনুতাপ প্রকাশ করে, তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

 সূরাঃ গাফির (আল মু'মিন) | Ghafir | سورة غافر 

সূরাঃ গাফির (আল মু’মিন), আয়াত ৪৪ 

৪৪ فَسَتَذۡکُرُوۡنَ مَاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ ؕ وَ اُفَوِّضُ اَمۡرِیۡۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَصِیۡرٌۢ بِالۡعِبَادِ 

সূরাঃ গাফির (আল মু’মিন), আয়াত ৪৪ এর অর্থ 

‘আমি তোমাদেরকে যা বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে। আর আমার বিষয়টি আমি আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি; নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সর্বদ্রষ্টা।’

And you will remember what I [now] say to you, and I entrust my affair to Allah. Indeed, Allah is Seeing of [His] servants."

সূরাঃ গাফির (আল মু’মিন), আয়াত ৪৪ এর তাফসীর 

(৪৪) আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা অচিরেই তা স্মরণ করবে[1] এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহকে সোপর্দ করছি।[2] নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন।’[3]

[1] অর্থাৎ, অতি সত্বর সে সময় এসে যাবে, যখন আমার কথার সত্যতা এবং যেসব জিনিস থেকে বাধা দিতাম, তার জঘন্যতা তোমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন অনুতাপ প্রকাশ করবে, কিন্তু সে সময়টা এমন হবে যে, তখন অনুতপ্ত হওয়া কোন উপকারে আসবে না।

[2] অর্থাৎ, তাঁরই উপর ভরসা করি এবং তাঁরই কাছে সদা সাহায্য প্রার্থনা করি। আর তোমাদের সাথে বয়কট এবং সম্পর্ক ছিন্নতার কথা ঘোষণা করি।

[3] তিনি তাদেরকে দেখছেন। যে হিদায়াতের যোগ্য তাকে হিদায়াত দানে ধন্য করেন এবং ভ্রষ্টতার উপযুক্তকে ভ্রষ্ট করেন। এ সব ব্যাপারে যে কি হিকমত ও কৌশল নিহিত আছে, তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান


**************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url