বিষয় ভিত্তিক আয়াত || মুমিনের গুণাবলী সম্পর্কিত আয়াতসমূহ || (৪র্থ পর্ব)






মুমিন অপরের নিন্দা করে না, ব্যঙ্গ করে না কিংবা ঠাট্রা-বিদ্রুপ করে না



 সূরাঃ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء 

 সূরাঃ আন-নিসা, আয়াত ৬৫ 

৬৫ فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

 সূরাঃ আন-নিসা, আয়াত ৬৫ এর অর্থ 

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। 

But no, by your Lord, they will not [truly] believe until they make you, [O Muhammad], judge concerning that over which they dispute among themselves and then find within themselves no discomfort from what you have judged and submit in [full, willing] submission.

 সূরাঃ আন-নিসা, আয়াত ৬৫ এর তাফসীর 

৬৫. কিন্তু না, আপনার রবের শপথ তারা মুমিন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের(১) বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে(২) এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।(৩)

রাসুলুল্লাহ (সা:) ও তাঁর সুন্নাহ অনুযায়ী সকল বিবাদের বিচার করতে হবে

(১) আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের বলেন, আনসারী এক ব্যক্তির সাথে খেজুর গাছে পানি দেয়া নিয়ে তার ঝগড়া হয়। আনসারী বলল, পানির পথ পরিস্কার করে দাও যাতে তা আমার জমির উপর যায়। যুবায়ের তা দিতে অস্বীকার করলে তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শালিসের জন্য আসলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব শুনে বললেনঃ যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তোমার পড়শীর জমিতে পানি দিয়ে দিও। লোকটি তা শুনে বলল, আপনার ফুফাত ভাই তো তাই। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা রক্তবর্ণ ধারণ করল এবং তিনি বললেন, যুবায়ের তুমি তোমার জমিতে পানি দেয়ার পর তা দেয়াল পর্যন্ত আটকে রাখ। যুবায়ের বলেন, আল্লাহর শপথ, আমার মনে হয় এ আয়াতটি এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নাযিল হয়েছে। [বুখারীঃ ২৩৫৯, ২৩৬০, মুসলিমঃ ২৩৫৭]

এ দ্বারা এ বিষয়ও প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর রাসূলের আদেশ-নিষেধ নিদ্বিধায় মেনে নেয়া শুধু আচার অনুষ্ঠান কিংবা অধিকারের সাথেই সম্পৃক্ত নয়; আকীদা এবং অপরাপর বৈষয়িক বিষয়েও ব্যাপক। অতএব, কোন সময় কোন বিষয়ে পারস্পারিক মতবিরোধ দেখা দিলে বিবাদ পরিহার করে উভয় পক্ষকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এবং তার অবর্তমানে তার প্রবর্তিত শরীআতের আশ্রয়ে গিয়ে মীমাংসা অন্বেষণ করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয।

(২) এতে এ কথাও জানা গেল যে, যে কাজ বা বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক কথা বা কাজের মাধ্যমে প্রমাণিত, তা সম্পাদন করতে গিয়ে মনে কোন রকম সংকীর্ণতা অনুভব করাও ঈমানের দূর্বলতার লক্ষণ। উদাহারণতঃ যে ক্ষেত্রে শরীআত তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করার অনুমতি দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে যদি কেউ সম্মত না হয় তবে একে পরহেযগারী বলে মনে করা যাবে না, বরং এটা একান্তই মানসিক ব্যাধি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা কেউ বেশী পরহেযগার হতে পারে না। যে অবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে সালাত আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং নিজেও বসে সালাত আদায় করেছেন, কারো মন যদি এতে সম্মত না হয় এবং অসহনীয় পরিশ্রম ও কষ্ট সত্ত্বেও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তবে তার জেনে রাখা উচিত যে, তার মন ব্যাধিগ্রস্ত।

(৩) এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহত্ত্ব ও সুউচ্চ মর্যাদার বিষয় প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে কুরআনের অসংখ্য আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের অপরিহার্যতার বিষয়টি সবিস্তারে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা শপথ করে বলেছেন যে, কোন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন কিংবা মুসলিম হতে পারে না যতক্ষণ না সে ধীরস্থির মস্তিস্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এভাবে স্বীকার করে নেবে যাতে রাসূলের কোন সিদ্ধান্তেই মনে কোন রকম সংকীর্ণতা না থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাসূল হিসেবে গোটা উম্মতের শাসক এবং যে কোন বিবাদের মীমাংসার যিম্মাদার। তার শাসন ও সিদ্ধান্ত অপর কাউকে বিচারক সাব্যস্ত করার উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি শুধুমাত্র একজন শাসকই নন, বরং তিনি একজন নিষ্পাপ রাসূল, রাহমাতুল্লিল আলামীন এবং উম্মতের জন্য একান্ত দয়ালু ব্যক্তিত্ব। কাজেই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, যখনই কোন বিষয়ে, কোন সমস্যার ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেয়, তখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক সাব্যস্ত করে তার মীমাংসা করিয়ে নেয়া উচিত এবং অতঃপর তার মীমাংসাকে স্বীকার করে নিয়ে সেমতে কাজ করা উভয় পক্ষের উপর ফরয।

মনে রাখতে হবে যে, কুরআনের বাণী ও রাসূলের হাদীসসমূহের উপর আমল করা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের সাথেই সীমিত নয়। তার তিরোধানের পর তার পবিত্র শরীআতের মীমাংসাই হল তার মীমাংসা। কাজেই এ নির্দেশটি কিয়ামত পর্যন্ত তেমনিভাবেই বলবৎ থাকবে, যেমন ছিল তার যুগে। তেমনি তার পরে তার প্রবর্তিত শরীআতের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এটা প্রকৃতপক্ষে তারই অনুসরণ।

তাফসীরে জাকারিয়া

 সূরাঃ আল-হুজুরাত | Al-Hujurat | سورة الحجرات 

 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১০ 

১০ اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ 

 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১০ এর অর্থ 

নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। 

The believers are but brothers, so make settlement between your brothers. And fear Allah that you may receive mercy. 


 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১০ এর তাফসীর 

১০. মুমিনগণ তো পরস্পর ভাই ভাই(১); কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।

মুমিন কখনও অন্য মুমিনের ক্ষতির কারণ হবে না

(১) এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটাও এ আয়াতের বরকতে সাধিত হয়েছে। এ নির্দেশের দাবী ও গুরুত্বসমূহ কি, বহুসংখ্যক হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করেছেন। ঐ সব হাদীসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে। জারীর ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে “বাই’আত” নিয়েছেন। এক, সালাত কায়েম করবো। দুই, যাকাত আদায় করতে থাকবো। তিন, প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো।” [বুখারী: ৫৫]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফারী।” [বুখারী: ৬০৪৪, মুসলিম: ৬৩] অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।” [মুসলিম: ২৫৬৪, কিতাবুল বিরর ওয়াসসিলাহ, তিরমিযী: ১৯২৭]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই। [মুসনাদে আহমাদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৪০]

অপর একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে ৷ [বুখারীঃ ৬০১১, মুসলিম: ২৫৮৬]

আরো একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুমিনগণ পরস্পরের জন্য একই প্রাচীরের ইটের মত একে অপরের থেকে শক্তিলাভ করে থাকে। [বুখারী: ২৬৪৬, মুসলিম: ২৫৮৫] অন্য হাদীসে এসেছে, একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করতে পারে না আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না। [বুখারী: ২৪৪২, মুসলিম: ২৫৮০]

অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে। [মুসলিম: ২৬৯৯] হাদীসে আরো এসেছে, কোন মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোআ করে তখন ফেরেশতা বলে, আমীন। (কবুল কর।) আর তোমার জন্যও তদ্রূপ হোক। [মুসলিম: ২৭৩২]

তাফসীরে জাকারিয়া

 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১১ 

১১ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا یَسۡخَرۡ قَوۡمٌ مِّنۡ قَوۡمٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا خَیۡرًا مِّنۡهُمۡ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنۡ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُنَّ خَیۡرًا مِّنۡهُنَّ ۚ وَ لَا تَلۡمِزُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ ؕ بِئۡسَ الِاسۡمُ الۡفُسُوۡقُ بَعۡدَ الۡاِیۡمَانِ ۚ وَ مَنۡ لَّمۡ یَتُبۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ 

 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১১ এর অর্থ 

হে ঈমানদারগণ, কোন সম্প্রদায় যেন অপর কোন সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোন নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো যালিম।

O you who have believed, let not a people ridicule [another] people; perhaps they may be better than them; nor let women ridicule [other] women; perhaps they may be better than them. And do not insult one another and do not call each other by [offensive] nicknames. Wretched is the name of disobedience after [one's] faith. And whoever does not repent - then it is those who are the wrongdoers.

 সূরাঃ আল-হুজুরাত, আয়াত ১১ এর তাফসীর 

(১১) হে বিশ্বাসীগণ! একদল পুরুষ যেন অপর একদল পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয়, তারা উপহাসকারী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং একদল নারী যেন অপর একদল নারীকেও উপহাস না করে; কেননা যাদেরকে উপহাস করা হয়, তারা উপহাসকারিণী দল অপেক্ষা উত্তম হতে পারে।[1] আর তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না[2] এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না;[3] কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ।[4] যারা (এ ধরনের আচরণ হতে) নিবৃত্ত না হয় তারাই সীমালংঘনকারী।

ব্যঙ্গ, ঠাট্রা, বিদ্রুপ ও উপহাস করা হারাম

[1] এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে উপহাস বা ঠাট্টা-বিদ্রূপ তখনই করে, যখন সে নিজেকে তার চাইতে উত্তম এবং তাকে নিজের চেয়ে হীন ও ছোট মনে করে। অথচ আল্লাহর কাছে ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে কে উত্তম, আর কে নয় --এ জ্ঞান কেবল তাঁরই কাছে। কাজেই নিজেকে উৎকৃষ্ট এবং অপরকে নিকৃষ্ট মনে করার কোনই বৈধতা নেই। তাই আয়াতে অপরকে উপহাস করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। আর চারিত্রিক এ রোগ মহিলাদের মধ্যে অধিকহারে বিদ্যমান থাকায় তাদের কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করে বিশেষভাবে তাদেরকে এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। রসূল (সাঃ)-এর হাদীসে মানুষকে তুচ্ছ মনে করাকে ‘অহংকার’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, (الْكِبْرُ بَطَرُ الْحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ) (মুসলিম ৯১নং, তিরমিযী, হাকেম ১/২৬) আর অহংকার ও অহংকারীকে আল্লাহ চরম ঘৃণা করেন।

[2] অর্থাৎ, কোন দোষ বা ত্রুটি ধরে একে অপরকে খোঁটা দিও না। যেমন বলা, তুই তো অমুকের বেটা না, তোর মা তো এ রকম ও রকম, তুই তো অমুক বংশের না! ইত্যাদি।

[3] অর্থাৎ, ব্যঙ্গ ও তুচ্ছজ্ঞান করে মানুষের এমন নাম রেখো না (বা এমন খেতাব বের করো না), যা সে পছন্দ করে না। অথবা তার ভাল ও সুন্দর নামকে বিকৃত করে ডেকো না।

[4] অর্থাৎ, এইভাবে নাম বিকৃত করে অথবা মন্দ নাম বা খেতাব রেখে সেই নামে ডাকা, কিংবা ইসলাম গ্রহণ বা তওবা করার পর তাকে অতীত ধর্ম বা পাপের সাথে সম্পৃক্ত করে সম্বোধন করা; যেমন, এ কাফের! এ ইয়াহুদী! এ লম্পট! এ মাতাল! ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা অতীব মন্দ ও গর্হিত কাজ। الاسْم এখানে الذِّكْرُ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, بِئْسَ الاسْمُ الَّذِيْ يُذْكَرُ بِالفِسْقِ بَعْد دُخُوْلِهِمْ فِي الإِيْمَانِ (فتخ القدير) অবশ্য কোন কোন গুণগত নাম কারো কারো নিকট এ নিষেধের আওতাভুক্ত নয়, যা লোক মাঝে প্রসিদ্ধ হয়ে যায় এবং সে এ নামে স্বীয় অন্তরে কোন দুঃখ বা রাগও অনুভব করে না। যেমন, খোঁড়া নামে প্রসিদ্ধ কোন খোঁড়াকে ‘খোঁড়া’ বলে ডাকা, কালিয়া অথবা কালু নামে প্রসিদ্ধ কোন কালো রঙের লোককে ‘কালিয়া’, ‘কালো’ বা ‘কালু’ বলে ডাকা ইত্যাদি। (কুরতুবী)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান



সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url