হাদিসে কুদসী সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদিস, পর্ব- ২১




আল কুরআনের পরে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দলিল হাদিসে কুদসী



 হাদিসে কুদসী নং     ১৫১ 

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে কারা


১৫১. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা কি জান আল্লাহর মখলুকের মধ্যে কে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে? তারা বলল: আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বললেন: আল্লাহর মখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে অভাবী ও মুহাজির, যাদের দ্বারা সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পূর্ণ করা হয় ও যাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাদের কেউ মারা যায় কিন্তু তার ইচ্ছা তার অন্তরেই থাকে পূর্ণ করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা তার ফেরেশতাদের থেকে যাকে ইচ্ছা বলবেন: তাদের কাছে যাও, তাদেরকে সালাম কর, অতঃপর ফেরেশতারা বলে: আমরা আপনার আসমানের অধিবাসী, আপনার সর্বোত্তম মখলুক, আপনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের কাছ যাব এবং তাদেরকে সালাম করব?! তিনি বলেন: তারা এমন বান্দা যারা আমার ইবাদত করত আমার সাথে কাউকে শরীক করত না। তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রাখা হত, তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত, তাদের কেউ মারা যেত কিন্তু তার প্রয়োজন তার অন্তরেই থাকত সে তা পূর্ণ করতে পারত না। তিনি বলেন: অতঃপর তখন তাদের নিকট ফেরেশতাগণ আসেন, প্রত্যেক দরজা দিয়ে তাদের নিকট প্রবেশ করেন: তোমাদের ওপর সালাম, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছে, আখেরাতের প্রতিদান খুবই সুন্দর!”। [আহমদ] হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি।

151- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ؟» قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: «أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ الْفُقَرَاءُ وَالْمُهَاجِرُونَ الَّذِينَ تُسَدُّ بِهِمْ الثُّغُورُ وَيُتَّقَى بِهِمْ الْمَكَارِهُ، وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً, فَيَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ مَلَائِكَتِهِ: ائْتُوهُمْ فَحَيُّوهُم،ْ فَتَقُولُ الْمَلَائِكَةُ: نَحْنُ سُكَّانُ سَمَائِكَ وَخِيرَتُكَ مِنْ خَلْقِكَ أَفَتَأْمُرُنَا أَنْ نَأْتِيَ هَؤُلَاءِ فَنُسَلِّمَ عَلَيْهِمْ؟!! قَالَ: إِنَّهُمْ كَانُوا عِبَادًا يَعْبُدُونِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا، وَتُسَدُّ بِهِمْ الثُّغُور،ُ وَيُتَّقَى بِهِمْ الْمَكَارِهُ، وَيَمُوتُ أَحَدُهُمْ وَحَاجَتُهُ فِي صَدْرِهِ لَا يَسْتَطِيعُ لَهَا قَضَاءً، قَالَ: فَتَأْتِيهِمُ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ ذَلِكَ فَيَدْخُلُونَ عَلَيْهِمْ مِنْ كُلِّ بَابٍ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ». ( حم ) صحيح لغيره

151- عن عبد الله بن عمرو بن العاص عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «هل تدرون أول من يدخل الجنة من خلق الله؟» قالوا: الله ورسوله أعلم. قال: «أول من يدخل الجنة من خلق الله الفقراء والمهاجرون الذين تسد بهم الثغور ويتقى بهم المكاره، ويموت أحدهم وحاجته في صدره لا يستطيع لها قضاء, فيقول الله -عز وجل- لمن يشاء من ملائكته: ائتوهم فحيوهم، فتقول الملائكة: نحن سكان سمائك وخيرتك من خلقك أفتأمرنا أن نأتي هؤلاء فنسلم عليهم؟!! قال: إنهم كانوا عبادا يعبدوني لا يشركون بي شيئا، وتسد بهم الثغور، ويتقى بهم المكاره، ويموت أحدهم وحاجته في صدره لا يستطيع لها قضاء، قال: فتأتيهم الملائكة عند ذلك فيدخلون عليهم من كل باب سلام عليكم بما صبرتم فنعم عقبى الدار». ( حم ) صحيح لغيره


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫২ 

নিজের ব্যাপারে জলদি করলে জান্নাত হারাম


১৫২. জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, যার হাতে ছিল জখম, সে অস্থির হয়ে ছুরি নেয় ও তা দ্বারা হাত কেটে ফেলে, অতঃপর রক্ত বন্ধ হয়নি ফলে সে মারা যায়”। আল্লাহ তা’আলা বলেন: আমার বান্দা তার নিজের ব্যাপারে জলদি করেছে, আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

152- عَنْ جُنْدَبُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ( قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ».
( خ, م ) صحيح
152- عن جندب بن عبد الله ( قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «كان فيمن كان قبلكم رجل به جرح فجزع فأخذ سكينا فحز بها يده فما رقأ الدم حتى مات، قال الله تعالى: بادرني عبدي بنفسه حرمت عليه الجنة». ( خ, م ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৩ 

হত্যার শাস্তি ও পুরস্কার


১৫৩. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হবে এবং বলবে: হে আমার রব: এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ বললেন: কেন তাকে হত্যা করেছ? সে বলবে: আমি তাকে এ জন্য হত্যা করেছি যেন আপনার সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেন: হ্যাঁ তা আমার জন্য। অপর ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত ধরে উপস্থিত হবে এবং বলবে: এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। আল্লাহ তাকে বলবেন কেন হত্যা করেছ? সে বলবে: যেন অমুকের সম্মান বুলন্দ হয়। তিনি বলবেন: তার জন্য সম্মান নয়, ফলে সে তার পাপ বহন করবে”। [নাসায়ি] পরবর্তী হাদিসের বিবেচনায় সহিহ।

153- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ ( عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَجِيءُ الرَّجُلُ آخِذًا بِيَدِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ هَذَا قَتَلَنِي. فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: لِمَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: قَتَلْتُهُ لِتَكُونَ الْعِزَّةُ لَكَ. فَيَقُولُ: فَإِنَّهَا لِي، وَيَجِيءُ الرَّجُلُ آخِذًا بِيَدِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: إِنَّ هَذَا قَتَلَنِي. فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: لِمَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: لِتَكُونَ الْعِزَّةُ لِفُلَانٍ فَيَقُولُ: إِنَّهَا لَيْسَتْ لِفُلَانٍ فَيَبُوءُ بِإِثْمِهِ» . ( ن ) صحيح لما بعده

153- عن عبد الله بن مسعود ( عن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قال: «يجيء الرجل آخذا بيد الرجل فيقول: يا رب هذا قتلني. فيقول الله له: لم قتلته؟ فيقول: قتلته لتكون العزة لك. فيقول: فإنها لي، ويجيء الرجل آخذا بيد الرجل فيقول: إن هذا قتلني. فيقول الله له: لم قتلته؟ فيقول: لتكون العزة لفلان فيقول: إنها ليست لفلان فيبوء بإثمه» . ( ن ) صحيح لما بعده


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৪ 

যুদ্ধ যাওয়া থেকে বিরত থাকা


১৫৪. ইমরান আল-জাওনি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি জুনদুবকে বললাম: আমি তাদের নিকট বায়‘আত হয়েছি, অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনু জুবায়ের এর হাতে, তারা চায় আমি তাদের সাথে শামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, তিনি বললেন: বিরত থাক। আমি বললাম: তারা আমাকে পীড়াপীড়ি করে। তিনি বললেন: তোমার সম্পদ দিয়ে বিরত থাক। তিনি বলেন: আমি বললাম: আমি তাদের সাথে তলোয়ার দ্বারা যুদ্ধ করব এ ছাড়া কিছুতেই তারা রাজি হয় না। অতঃপর জুনদুব বললেন: অমুকে আমার নিকট বলেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে নিয়ে উপস্থিত হবে, অতঃপর সে বলবে: তাকে জিজ্ঞাসা কর কেন আমাকে হত্যা করেছে”। শু‘বা বলেন: আমার মনে হয় তিনি বলেছেন: “সে বলবে: কিসের ওপর আমাকে হত্যা করেছে? সে বলবে: অমুকের নেতৃত্বে আমি তাকে হত্যা করেছি”। তিনি বলেন: অতঃপর জুনদুব বলল: সুতরাং তুমি বিরত থাক। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।

154- عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الجوني قَالَ: قُلْتُ لِجُنْدُبٍ: إِنِّي بَايَعْتُ هَؤُلَاءِ -يَعْنِي ابْنَ الزُّبَيْرِ- وَإِنَّهُمْ يُرِيدُونَ أَنْ أَخْرُجَ مَعَهُمْ إِلَى الشَّامِ فَقَالَ: أَمْسِكْ. فَقُلْت:ُ إِنَّهُمْ يَأْبَوْنَ عَلَي، فَقَالَ: افْتَدِ بِمَالِكَ. قَالَ: قُلْتُ: إِنَّهُمْ يَأْبَوْنَ إِلَّا أَنْ أُقَاَتِلْ مَعَهُمْ بِالسَّيْفِ، فَقَالَ جُنْدُبٌ: حَدَّثَنِي فُلَانٌ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَجِيءُ الْمَقْتُولُ بِقَاتِلِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ سَلْ هَذَا فِيمَ قَتَلَنِي» قَالَ شُعْبَةُ: فَأَحْسِبُهُ قَالَ: «فَيَقُولُ: عَلَامَ قَتَلْتَهُ؟ فَيَقُولُ: قَتَلْتُهُ عَلَى مُلْكِ فُلَان». قَالَ: فَقَالَ جُنْدُبٌ: فَاتَّقِهَا. ( حم ) صحيح

154- عن أبي عمران الجوني قال: قلت لجندب: إني بايعت هؤلاء -يعني ابن الزبير- وإنهم يريدون أن أخرج معهم إلى الشام فقال: أمسك. فقلت: إنهم يأبون علي، فقال: افتد بمالك. قال: قلت: إنهم يأبون إلا أن أقاتل معهم بالسيف، فقال جندب: حدثني فلان أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «يجيء المقتول بقاتله يوم القيامة فيقول: يا رب سل هذا فيم قتلني» قال شعبة: فأحسبه قال: «فيقول: علام قتلته؟ فيقول: قتلته على ملك فلان». قال: فقال جندب: فاتقها. ( حم ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৫ 

একজনের অপরাদে পুরো জাতিকে শাস্তি দেওয়া যাবে না


১৫৫. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “একটি পিপড়া কোন এক নবীকে কামড় দেয়, তিনি পিপড়ার গ্রামকে জ্বালিয়ে দিতে নির্দেশ দিলেন, ফলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হল। আল্লাহ তাকে ওহি করলেন: একটি পিপড়া তোমাকে কামড় দিয়েছে, আর তুমি একটি জাতি জ্বালিয়ে দিলে যারা আল্লাহর প্রশংসা করত”! [বুখারি, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসায়ি ও ইবনু মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।

155- عَنْ أَبي هُرَيْرَةَ ( قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا مِنْ الْأَنْبِيَاءِ فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنَ الأُمَمِ تُسَبِّحُ الله». ( خ, م, د, ن, جه ) صحيح

155- عن أبي هريرة ( قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «قرصت نملة نبيا من الأنبياء فأمر بقرية النمل فأحرقت فأوحى الله إليه: أن قرصتك نملة أحرقت أمة من الأمم تسبح الله». ( خ, م, د, ن, جه ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৬ 

আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য

১৫৬. ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা’আলা না’মান নামক স্থানে (অর্থাৎ আরাফায়) আদমের পিঠে থাকাবস্থায় অঙ্গিকার গ্রহণ করেছেন, তিনি তার পিঠ থেকে প্রত্যেক সন্তান বের করেন যা সে জন্ম দিবে, অতঃপর তাদেরকে সামনে অণুর ন্যায় রাখেন, অতঃপর তাদের মুখোমুখি হয়ে কথা বলেন: তিনি বলেন:

﴿ وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِيٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُواْ بَلَىٰ شَهِدۡنَآۚ أَن تَقُولُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ١٧٢ ﴾ [الاعراف: ١٧١]

“আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব বনী-আদমের ‎পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরকে বের করলেন ‎এবং তাদেরকে তাদের নিজদের উপর সাক্ষী ‎করলেন যে, ’আমি কি তোমাদের রব নই’? ‎তারা বলল, ’হ্যাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিলাম।’ যাতে ‎কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পার যে, ‎নিশ্চয় আমরা এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম”।[১] [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
[১] সূরা আরাফ: (১৭১)

156- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: « أَخَذَ اللَّهُ الْمِيثَاقَ مِنْ ظَهْرِ آدَمَ بِنَعْمَانَ -يَعْنِي عَرَفَةَ- فَأَخْرَجَ مِنْ صُلْبِهِ كُلَّ ذُرِّيَّةٍ ذَرَأَهَا فَنَثَرَهُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ كَالذَّرِّ ثُمَّ كَلَّمَهُمْ قِبَلاً قَالَ: ﴿ وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِيٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّيَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُواْ بَلَىٰ شَهِدۡنَآۚ أَن تَقُولُواْ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ١٧٢ ﴾ [الاعراف: ١٧١] . ( حم ) صحيح

156- عن ابن عباس -رضي الله عنهما- عن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قال: « أخذ الله الميثاق من ظهر آدم بنعمان -يعني عرفة- فأخرج من صلبه كل ذرية ذرأها فنثرهم بين يديه كالذر ثم كلمهم قبلا قال: ﴿ وإذۡ أخذ ربك منۢ بني ءادم من ظهورهمۡ ذريتهمۡ وأشۡهدهمۡ على أنفسهمۡ ألسۡت بربكمۡۖ قالوا بلى شهدۡناۚ أن تقولوا يوۡم ٱلۡقيمة إنا كنا عنۡ هذا غفلين ١٧٢ ﴾ [الاعراف: ١٧١] . ( حم ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৭ 

তাকদিরের উপর আমল


১৫৭. আব্দুর রহমান ইবনু কাতাদা আসসুলামি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেন, অতঃপর তার পিঠ থেকে মখলুক বের করেন ও বলেন: এরা জান্নাতি আমি কোন পরোয়া করি না, এরা জাহান্নামী আমি কোন পরোয়া করি না। তিনি বলেন এক ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহর রাসূল তাহলে কিসের ওপর আমল করব”? তিনি বললেন: “তাকদিরে নির্ধারিত স্থানে”[১]। [আহমদ] হাদিসটি হাসান।

[১] অর্থাৎ আমল করার বিষয়টিও তাকদীরে লেখা আছে। যদি ভালো আমল করার সৌভাগ্য হয়, তবে সেটাও তার তাকদীরে লেখা আছে। সুতরাং তাকদীরে কী আছে তা খুজে বের করার চেষ্টায় আমল করা পরিত্যাগ করা যাবে না, বরং সর্বদা ভালো আমল করার প্রচেষ্টায় লেগে থাকতে হবে, আর তখনই তার জন্য সে ভালো আমলটি করা সহজ করে দেয়া হবে। একজন মুমিন এ কাজটই করে এবং করা উচিত। মুমিন কখনো তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে না। যারা কাফের ও বদকার তারাই শুধু তাকদীরের দোহাই দিয়ে নেক আমল করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে যদি আল্লাহ চাইত তবে আমি অবশ্যই নেক আমল করতে সমর্থ হতাম। বস্তুত: এ ধরনের কথা বলে নেক আমল থেকে বিরত থাকা আরবের মুশরিকদের কাজ। মোটকথা: মুমিনের দায়িত্ব হচ্ছে, নেক আমলের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা। যাতে করে তার তাকদীরের লেখা অনুসারে সে ভালো কাজ করতে পারে। আর আল্লাহও তার জন্য তা সহজ করে দেন। এটাই বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামথেকে বর্ণিত হয়েছে।

157- عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ قَتَادَةَ السُّلَمِيِّ -رضي الله عنه- أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- خَلَقَ آدَمَ ثُمَّ أَخَذَ الْخَلْقَ مِنْ ظَهْرِهِ وَقَالَ: هَؤُلَاءِ فِي الْجَنَّةِ وَلَا أُبَالِي، وَهَؤُلَاءِ فِي النَّارِ وَلَا أُبَالِي » . فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَعَلَى مَاذَا نَعْمَلُ؟ قَالَ: « عَلَى مَوَاقِعِ الْقَدَرِ » . (حم) حسن

157- عن عبد الرحمن بن قتادة السلمي -رضي الله عنه- أنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « إن الله -عز وجل- خلق آدم ثم أخذ الخلق من ظهره وقال: هؤلاء في الجنة ولا أبالي، وهؤلاء في النار ولا أبالي » . فقال قائل: يا رسول الله فعلى ماذا نعمل؟ قال: « على مواقع القدر » . (حم) حسن


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৮ 

তাকদিরের ফয়সালার জন্য কান্না


১৫৮. আবূ নাদরাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক সাহাবি যাকে আবূ আব্দুল্লাহ বলা হয়, তাকে দেখার জন্য তার সাথীবৃন্দ আসেন, তিনি কাঁদতে ছিলেন, তারা বলল: আপনি কি জন্য কাঁদছেন, আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি: “তুমি তোমার মোচ ছাট, অতঃপর তার ওপর স্থির থাক, যতক্ষণ না আমার সাথে সাক্ষাত কর”। তিনি বলেন: অবশ্যই, কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তা’আলা তার ডান হাতে এক মুষ্টি ও অপর হাতে অপর মুষ্টি গ্রহণ করেন, অতঃপর বলেন: এরা হচ্ছে এর জন্য এবং এরা হচ্ছে এর জন্য, আমি কোন পরোয়া করি না”। আমি জানি না আমি কোন মুষ্টির অন্তর্ভুক্ত। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।

158- عَنْ أَبِي نَضْرَةَ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُقَالُ لَهُ: أَبُو عَبْدِ اللَّهِ دَخَلَ عَلَيْهِ أَصْحَابُهُ يَعُودُونَهُ وَهُوَ يَبْكِي فَقَالُوا لَهُ: مَا يُبْكِيكَ أَلَمْ يَقُلْ لَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « خُذْ مِنْ شَارِبِكَ ثُمَّ أَقِرَّهُ حَتَّى تَلْقَانِي » , قَالَ: بَلَى وَلَكِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- قَبَضَ بِيَمِينِهِ قَبْضَةً وَأُخْرَى بِالْيَدِ الْأُخْرَى وَقَالَ: هَذِهِ لِهَذِهِ, وَهَذِهِ لِهَذِهِ، وَلَا أُبَالِي». فَلَا أَدْرِي فِي أَيِّ الْقَبْضَتَيْنِ أَنَا. ( حم ) صحيح

158- عن أبي نضرة أن رجلا من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يقال له: أبو عبد الله دخل عليه أصحابه يعودونه وهو يبكي فقالوا له: ما يبكيك ألم يقل لك رسول الله صلى الله عليه وسلم : « خذ من شاربك ثم أقره حتى تلقاني » , قال: بلى ولكني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « إن الله -عز وجل- قبض بيمينه قبضة وأخرى باليد الأخرى وقال: هذه لهذه, وهذه لهذه، ولا أبالي». فلا أدري في أي القبضتين أنا. ( حم ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৫৯ 

জান্নাত ও জাহান্নামের বাসিন্দা


১৫৯. আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে সৃষ্টি করেন যখন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তার ডান কাঁধে হাত মারেন ও ধবধবে সাদা এক প্রজন্ম বের করেন যেন তারা পতঙ্গ, অতঃপর বাম কাঁধে হাত মারেন ও কালো এক প্রজন্ম বের করেন যেন তারা জ্বলন্ত ছাই। অতঃপর ডান হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেন: এগুলো জান্নাতের জন্য আমি কোন পরোয়া করি না, বাম হাতের তালুর দিকে লক্ষ্য করে বলেন: এগুলো জাহান্নামের জন্য আমি কোন পরোয়া করি না”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।

159- عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: « خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ حِينَ خَلَقَهُ، فَضَرَبَ كَتِفَهُ الْيُمْنَى، فَأَخْرَجَ ذُرِّيَّةً بَيْضَاءَ كَأَنَّهُمْ الذَّرُّ، وَضَرَبَ كَتِفَهُ الْيُسْرَى، فَأَخْرَجَ ذُرِّيَّةً سَوْدَاءَ. كَأَنَّهُمْ الْحُمَمُ، فَقَالَ لِلَّذِي فِي يَمِينِهِ: إِلَى الْجَنَّةِ وَلَا أُبَالِي، وَقَالَ لِلَّذِي فِي كَفِّهِ الْيُسْرَى: إِلَى النَّارِ وَلَا أُبَالِي ». ( حم ) صحيح

159- عن أبي الدرداء -رضي الله عنه- عن النبي صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قال: « خلق الله آدم حين خلقه، فضرب كتفه اليمنى، فأخرج ذرية بيضاء كأنهم الذر، وضرب كتفه اليسرى، فأخرج ذرية سوداء. كأنهم الحمم، فقال للذي في يمينه: إلى الجنة ولا أبالي، وقال للذي في كفه اليسرى: إلى النار ولا أبالي ». ( حم ) صحيح


 হাদিসে কুদসী নং     ১৬০ 

মান্নতের মাধ্যমে আল্লাহ কৃপনের সম্পদ বের করে আনেন


১৬০. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বনি আদমের নিকট মান্নত কোন জিনিস নিয়ে আসে না যা আমি তার জন্য নির্ধারণ করিনি, কিন্তু তাকদির তাকে পেয়ে বসে[১], আমি তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছি এর দ্বারা কৃপণ থেকে সম্পদ বের করব”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।

[১] অর্থাৎ কখনও কখনও মানুষ মান্নত দ্বারা কোন জিনিস পায়, এটা আসলে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া নয়; বরং এটাই আমি তার তাকদীরে লিখেছি। কিন্তু সে যেহেতু আল্লাহর জন্য কিছু দিতে চায় না, কৃপণতা করে, তখন সে মনে মান্নতের মাধ্যমে পাওয়া যাবে, আর এভাবে মান্নত করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে কিছু জিনিস তার থেকে বের করে আনেন। 

160- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَا يَأْتِ ابْنَ آدَمَ النَّذْرُ بِشَيْءٍ لَمْ يَكُنْ قَدْ قَدَّرْتُهُ, وَلَكِنْ يُلْقِيهِ الْقَدَرُ وَقَدْ قَدَّرْتُهُ لَهُ أَسْتَخْرِجُ بِهِ مِنْ الْبَخِيلِ » . ( خ, م ) صحيح




**************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url