ইখলাস ও নিয়ত সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর




ইখলাস ও নিয়ত বিষয়ক প্রশ্ন ও উত্তর

মুখে নিয়ত পড়া

মুখে নিয়ত পড়া কি শরীয়তসম্মত?

মোটেই না। মুখে নিয়ত পড়া বিদআত। নিয়ত করা জরুরী, কিন্তু পড়া বিদআত। কত শত ইবাদতের মধ্যে আর কয়টা নিয়তই বা আরবীতে মুখস্থ করবেন? মনের সংকল্পই হল নিয়ত।

মনের ভিতরে লোভ

অনেক সময় ভাল কাজ করি। অতঃপর মনের ভিতরে প্রশংসার লোভ হয়। তাতে কি তা বাতিল হয়ে যাবে?

এ হল শয়তানী অসঅসা (কুমন্ত্রণা)। এর প্রতি ভ্রূক্ষেপ করা উচিৎ নয়। তবে অসঅসার সাথে সাথে শয়তান থেকে পানাহ চেয়ে নেওয়া উচিৎ। ১৩৫
১৩৫ (ইবনে উষাইমীন)

সুনাম ও সুখ্যাতি

অনেক সময় ভাল কাজ করি। অতঃপর এর ফলে লোকমাঝে চর্চা হয়, আমার সুনাম ও সুখ্যাতি হয়। অথচ আমি মনে মনে তা চাইনি। তাতে কি তা বাতিল হয়ে যাবে?

মনে সুনামের কামনা না থাকা সত্ত্বেও যদি মানুষের মাঝে কারো সুনাম হয়, তাহলে জানতে হবে এটা তাঁর সত্বর সওয়াব। তবে তাতে তাঁর পরকালের সওয়াব বরবাদ হয়ে যাবে না। একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল; বলুন, “যে মানুষ সৎকাজ করে, আর লোকে তাঁর প্রশংসা করে থাকে, (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?)” তিনি বললেন, “এটা মুমিনের সত্বর সুসংবাদ।”১৩৬
১৩৬ (মুসলিম)

অর্থের লোভে নামাজ

এক কর্মচারী বেনামাযী ছিল। মালিক বলল, “তুমি নামায পড়লে তোমার বেতন ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তখন থেকে সে নামায পড়া শুরু করল।” প্রশ্ন হল, তাঁর নামায কি আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণযোগ্য?

আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদেশ্যে, অর্থ, গদি, সুনাম, সুবিধা ইত্যাদি উপার্জনের উদেশ্যে কোন ইবাদত করলে তা মহান আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যাবতীয় কা কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাঁর প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশত্যাগ) আল্লাহ্‌র (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসুলের জন্য হবে; তাঁর হিজরত তাঁর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত তাঁর পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদেশ্যেই হবে, তাঁর হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তাঁরই জন্য হবে।১৩৭ (বুখারী-মুসলিম)

আবূ মূসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স আশআরী (রঃ) বলেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, “যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য করে এবং লোক প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন যুদ্ধটি আলাহর পথে হবে? আল্লাহ্‌র রাসুল (সঃ) বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লহর কালামকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লহর পথে হয়।” ১৩৮

রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, “আমি সমস্ত অংশীদারদের চাইতে অংশীদারি (শিরক) থেকে অধিক মুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তাঁর অংশীদারি (শিরক) সহ বর্জন করি।” (অর্থাৎ তাঁর আমলই নষ্ট করে দিই।)” ১৩৯

সুতরাং সেই কর্মচারীর উচিৎ, নিয়ত পাল্টে নিয়ে কেবল আল্লাহ্‌র উদেশ্যে নামায পড়া। বেতন সে গ্রহণ করুক, কিন্তু নামায পড়ুক আল্লাহ্‌র ভয়ে। উল্লেখ্য যে, অভিভাবকের ভয়ে নামায পড়া, সমাজে দুর্নামের ভয়ে রোযা রাখা, অর্থ লোভে বদল হজ্জ করা, চাকরির আশায় দ্বীন ইলম অর্জন করা, বেতনের লোভে ইমামতি করা, খ্যাতির লোভে দান করা, নাম ও অর্থের লোভে দ্বীনী দাওয়াতের কাজ করা ইত্যাদি “রিয়া”র বিধান একই।
১৩৮ (বুখারী ও মুসলিম), ১৩৯ (মুসলিম)

আমলের প্রশংসা করা হলে

কোন কোন ভাল আমলের প্রশংসা শোনা গেলে তাঁর ফলে কি ঐ আমল বাতিল গণ্য হবে?

আমলকারীর নিয়তে প্রশংসা নেওয়ার নিয়ত না থাকলে প্রশংসনীয় আমল বাতিল হয় না। যেহেতু আবু যার্র (রঃ) হতে বর্ণিত, একদা রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেশা করা হল; বলুন, “ যে মানুষ সৎকাজ করে, আর লোকে তাঁর প্রশংসা করে থাকে (তাহলে এরূপ কাজ কি রিয়া বলে গণ্য হবে?)” তিনি বললেন, “এটা মুমিনের সত্বর সুসংবাদ।” ১৪০
১৪০ (মুসলিম)

নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা

ওযু, নামায ইত্যাদির নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কি বিধেয়?

ইবাদতের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। যেহেতু তা মহানবী (সঃ) তাঁর কোন সাহাবী কর্তৃক প্রমাণিত নয়। সুতরাং তা বর্জন করা ওয়াজেব। নিয়ত মানে সংকল্প। আর তাঁর স্থান হল মনে। অতএব তা মুখে উচ্চারণ করার কোনই প্রয়োজন নেই। ১৪১
১৪১ (ইবন বায, ইবন ঊসায়মিন)



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url