মৃত্যু, জানাযা ও দাফন সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর (পর্ব-০২) || মৃতকে মসজিদে দাফন করা || মৃত্যুর সময় সূরা ইয়াসীন পড়া ||





মৃতকে মসজিদে দাফন করা

কোন নেক লোকের লাশ মসজিদে দাফন করা কি বৈধ?

কোন নেক, বুযূর্গ বা ওলী-আওলিয়ার লাশ মসজিদে দাফন করা বৈধও নয়। যেহেতু তাতে তাঁদেরকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয় এবং তাদের কবর শিরকের অসীলায় পরিণত হয়। আর নবী (সঃ) বলেছেন, “ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” ৪৮১ (বুখারী ১৩৩০, মুসলিম ৫২৯ নং)

তিনি আর বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়ো না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছি।” ৪৮২ (মুসলিম ৫৩২ নং)

তাছাড়া মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর এই যে, মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। সুতরাং আল্লাহ্‌র সাথে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না।” (জ্বিনঃ ১৮)
সুতরাং মসজিদ সর্বপ্রকার শিরকমুক্ত হয়ে কেবল আল্লাহ্‌র থাকা উচিৎ, তাতে অন্য কারো আহবান বা ইবাদত হওয়া আদৌ উচিৎ নয়। ৪৮৩( ইবনে উসাইমীন)

কবরের উপর ঘর উঠানো

মহানবী (সঃ) এর কবর মসজিদের ভিতরে রয়েছে। তাহলে আপনারা মসজিদের ভিতরে লাশ দাফন করতে নিষেধ করেন কেন? মহানবী (সঃ) এর কবরের উপর ঘর ও গুম্বুজ রয়েছে। তাহলে আপনারা তা করতে নিষেধ করেন কেন?

মহানবী (সঃ) কে মসজিদে দাফন করা হয়নি। আর নিষেধ এই জন্য করা হয় যে, “ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।” ৪৮৪ (বুখারী ১৩৩০, মুসলিম ৫২৯ নং)

তিনি আর বলেছেন, “সাবধান! তোমাদের পূর্ববর্তী তাদের নবী ও নেক লোকেদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিত। সাবধান! তোমরা কবরগুলোকে মসজিদ বানিয়ে নিয়ো না। এরূপ করতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি।” ৪৮৫ (মুসলিম ৫৩২ নং)

অনুরূপ তার কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা হয়নি। বরং তার কবরই হয়েছিল তার ঘরের ভেতরে। যেহেতু নবীরা যেখানে ইন্তিকাল করেন, সেখানেই তাদের দাফন করা হয়। আর গম্বুজ বানিয়েছে পরবর্তী কালের শাসকেরা। কবরের উপর ঘর ও গম্বুজ বানাতে নিষেধ করা হয় এই জন্য যে, জাবের (রঃ) বলেন, “নবী (সঃ) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং তার উপর ইমারত নির্মাণ করতে মানা করেছেনে।” ৪৮৬ (মুসলিম)

লাশের পাশে বসে কুরআন পড়া

মুসলিম মারা যাওয়ার পর তার পাশে বসে অনেককে কুরআন পড়তে দেখা যায়। এ সময় কুরআন তিলাওয়াত কি বিধেয় ও উপকারী?

মৃত ব্যক্তির পাশে বসে কুরআন পড়া একটি বিদআত কাজ। এ তিলাওয়াত মৃত ব্যক্তির কোন কাজে আসবে না। জীবিত অবস্থায় কুরআন পড়ে, শুনে ও তার উপর আমল করে থাকলে মরনের পর তা উপকারী হবে। শোক সন্তপ্ত মানুষ কুরআন পড়লে শোকের বোঝা হালকা হবে। কিন্তু লাশের পাশে বসে কুরআন তিলাওয়াত কোন উপকারী নয়। ৪৮৭ (সাফা)

মৃত্যুর সময় সূরা ইয়াসীন পড়া

শুনেছি, কোন মানুষের মৃত্যুর সময় কষ্ট হলে সূরা ইয়াসীন পড়তে হয়। এতে নাকি মরন আসান হয়ে যায়। এ কথা কি ঠিক?

একটি হাদিসে ঐ শ্রেণীর কথা আছে, কিন্তু সেটি জাল হাদিস। ৪৮৮ (দ্রঃ সিঃ যয়ীফাহ ৫২১৯ নং)
সুতরাং তাতে বিশ্বাস রেখে উক্ত আমল শুদ্ধ নয়। অনুরূপ মরনের পর থেকে কবর পর্যন্ত (নামায ছাড়া অন্য স্থলে) মৃতের জন্য কুরআনখানী করা বিদআত। মরনের পূর্বে মরণোন্মুখ ব্যক্তি কুরআন শুনতে চাইলে সে কথা ভিন্ন। ৪৮৯ (দ্রঃ জানাযা দর্পণ)

দাফনের পর হাত তুলে দু'আ

দাফনের পর হাত তুলে জামাআতী দু'আ কি বিধেয়?

যে কারণে ফরয নামাযের পর হাত তুলে জামাআতী দুআ বিধেয় নয়, সেই কারণেই দাফনের পর দুআ বিধেয় হলেও হাত তুলে জামাআতী দুআ বিধেয় নয়। সুতরাং বিধেয় হল, প্রত্যেকেই হাত না তুলে নিজে নিজে মৃতের জন্য দুআ করা। নবী (সঃ) মাইয়্যেত দাফন করা শেষ হলে তার কবরে দাঁড়িয়ে বলতেন, “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং (প্রশ্নের জওয়াবে) প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক চাও। কারণ ওকে এখনই প্রশ্ন করা হবে।” (আবু দাউদ ৩২২১ নং, হাকেম ১/৫৭০, বাইহাকী ৪/৫৬)

সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সঃ) কেবল সকলকে দুআ করার নির্দেশ দিতেন। ফলে প্রত্যেকে নিজ নিজ মনে দুআ করতেন। তারা জামাআতী দুআ করতেন না। তা করা উত্তম হলে নিশ্চয় রাসুল (সঃ) দুআ'র আদেশ না করে নিজে হাত তুলে দুআ করতেন এবং সাহাবাগন অনুরূপ করতেন। কারণ, ভালো মন্দের ব্যাপারে আমাদের চেয়ে তারাই সব রকমের জ্ঞ্যান অধিক রাখতেন। আর তা উত্তম হলে আমাদের আগেই তারা তা করে যেতেন। অথচ তার কোন প্রমাণ নেই। (দেখুন, ফাতাওয়াত তা’যিয়াহ, ইবনে উষাইমীন ৩১ পৃঃ)

অনেকে ফাতহুল বারী (৪/২৭২) তে দাফন করার পর হাত তুলে দু'আ করার দলীল খুঁজে পেয়েছেন। নবী (সঃ) ত্বালহা বিন বারা’র কবরে দাঁড়িয়ে দুই হাত তুলে দুআ করেছেন। অথচ সে ঘটনা দাফনের পর নয়। পরন্ত তার সনদও সহীহ নয়। ৪৯২ (দ্রঃ সিঃ যযীফাহ ৩২৩২ নং)
আর এ কথা বিদিত যে, যিয়ারতের সময় (একাকী) হাত তুলে দুআ করা বিধেয়।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url