সিরাতুল মুস্তাক্বিম || সরল ও সঠিক পথ || আল্লাহর প্রদর্শিত পথ || নবী-রাসুলগণের পথ ||





সিরাতুল মুস্তাক্বিম বা সরল ও সঠিক পথ

মানব জাতির সূচনা

মানব জাতির সূচনা তথা সৃষ্টি এই পৃথিবীতে হয়নি এবং এই পৃথিবী মানুষের চিরস্থায়ী ঠিকানা তথা বসবাসের স্থান না। মানুষের সূচনা মহান আল্লাহ করেছিলেন জান্নাতে। পৃথিবীতে অতি সামান্য কিছু দিন বসবাসের পর মানুষকে যাত্রা করতে হয় পরকালের অনন্ত, অসীম, চিরস্থাযী ঠিকানার দিকে। 

মানুষের চিরস্থায়ী ঠিকানা

মানুষের ইহকালে বসবাসের জন্য পৃথিবী একটাই (ভৌগলিক সীমানা আলাদা- সেটা ভিন্ন বিষয়)। কিন্তু পরকালের জন্য সমগ্র মানব জাতির বসবাসের ঠিকানা একই না। পরকালে মানুষের জন্য আছে মূলতঃ দু'টি ঠিকানা। একটি হলো 'চির সুখের জান্নাত' এবং অপরটি হলো বর্ণনাতীত কষ্টের/শাস্তির চিরস্থায়ী 'জাহান্নাম। 

মানুষের পরকালে চিরস্থায়ী বসবাসের ঠিকানা যেহেতু ২টি, সেহেতু গন্তব্যের পথও ২টি। একটি হলো মহান স্রষ্টা  আল্লাহ পাক কর্তৃক নির্ধারিত এবং নাবী/রাসূলদের মাধ্যমে প্রদর্শিত পথ- যার নাম 'সিরাতুল মুস্তাক্বিম' তথা সরল/সঠিক পথ। অন্যটি হলো ইবলিস শয়তান কর্তৃক প্রদর্শিত বক্র পথ। মানুষ যদি পৃথিবীতে সিরাতুল মুস্তাক্বিম' তথা সরল/সঠিক পথে চলে, তবে পরকালে আল্লাহর রহমতে তার ঠিকানা হবে 'চির সুখের জান্নাত'।  আর যদি মানুষ পৃথিবীতে শয়তানের কূ-প্ররোচনায় বা নিজের বক্র চিন্তায় সরল পথ হতে বিচ্যুত হয়ে বক্র পথে চলে, তাহলে পরকালে তার ঠিকানা হবে চির-অশান্তির জাহান্নাম।

আল্লাহর প্রথম সৃষ্ট মানুষ

আসমান, জমিন এবং এই উভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুর একমাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি প্রথম মানুষ আদম (আঃ)কে অবতরণ করিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায় এবং মা হাওয়া (আঃ)কে জেদ্দায়। দীর্ঘ দিন বিরহের পর তাদের পুনঃমিলন হয়েছিল মক্কার নিকটবর্তী আরাফাত ময়দানে। অতঃপর তাঁরা ঐ এলাকাতেই বসতি স্থাপন করেন। ক্রমান্বয়ে মানুষ বাড়তে থাকে এবং তারা নিজেদের সুবিধামত দুরে সরে যেয়ে বসতি স্থাপন করতে থাকেন। সেভাবেই এখনো চলছে। বর্তমানে আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে যে জন-বসতি দেখতে পাই, তা এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে। 

আল্লাহ'র মনোনিত প্রথম নবী

আদম (আঃ) ছিলেন আল্লাহ'র সৃষ্টি প্রথম মানুষ ও মনোনিত প্রথম নবী। তাঁর জীবদ্দশায় মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার হয়েছিল। তিনি তাঁর সন্তানদের মাঝে আল্লাহ'র বাণী পৌঁছাতেন।  মানুষ বৃদ্ধির ফলে ভিন্ন ভিন্ন বসতি গড়ে উঠতে থাকে এবং তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে থাকে একই সাথে তারা ইবলিস শযতানের কূ-মন্ত্রনায় মূর্তি পূজা এবং নানাবিধ পাপ কাজে জড়িয়ে যায়। এর বিপরীতে আল্লাহ্ বিভিন্ন এলাকায়/গোষ্ঠিতে ঐসব বিপথগামী মানুষদেরকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য নাবী/রসূল প্রেরণ করেন। কিন্তু, মানুষের বড় দুর্ভাগ্য যে, কালের বিবর্তনে ঐ সব নবী/রসূলদের মধ্য থেকেই কাউকে তারা দেবতা/ভগবান/অবতার ইত্যাদি আখ্যায়িত করে তাদের পূজা উপাসনা শুরু করে দেয়। এখন পূর্বকালীন অনেক নবী/রসূলদেরকে চেনারই উপায় নাই যে কারা নবী/রসূল ছিলেন। উল্লেখ্য যে, নবী/রসূলের মোট সংখ্যা লক্ষাধিক। 

আল্লাহর মনোনিত সর্বশেষ রসূল মুহাম্মাদ (সঃ)

আল্লাহ পাকের মনোনিত সর্বশেষ ও চুড়ান্ত রসূল হলেন মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তাঁর প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহ'র সর্বশেষ ও চুড়ান্ত গ্রন্থ 'আল কুরআন'। প্রসঙ্গ অনুযায়ী এবং মানুষের শিক্ষা গ্রহণের জন্য আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মোট ২৫ জন নাবী/রসূলের বর্ণনা করেছেন। এর বাইরে যত নবী/রসূল আছেন, সকলকেই আমরা মুসলিমরা সমানভাবে সম্মান করি। কারণ, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে নবী/রসূলদের মধ্যে সম্মান/শ্রদ্ধার দিক থেকে পার্থক্য করতে নিষেধ করেছেন। যারা জন্ম সূত্রে মুসলিম, মুহাম্মাদ (সঃ) শুধুমাত্র তাদের জন্যই রসূল না।  বরং যেদিন থেকে তাঁর উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছিল, সেদিন থেকেই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য রসূল। কেউ মানুক বা না মানুক, তার পরকালীন ফলাফল তারই উপর বর্তাবে। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে (সূত্র:  সূরা তুর আয়াত নং- ২১ এবং সূরা মুদ্দাচ্ছির আয়াত নং- ৩৮)। মহান আল্লাহ অবশ্যই জানতেন, মানুষ প্রশ্ন তুলবে যে, পূর্ববর্তী সকল মহা মানবের কথা কুরআনে নাই কেন ? So, ১৪৫০ বছর আগেই আল্লাহ্ কুরআনে বলে রেখেছেন যে, সব নবী/রসূলের বর্ণনা তিনি (কুরআনে) করেননি (সূত্র: সূরা নিসা আয়াত নং- ১৬৪ এবং সূরা মূ'মিন আয়াত নং- ৭৮)।

বেদ ও কুরআনের মিল

'বেদ' সম্পর্কে যাদের কিঞ্চিত জ্ঞান আছে, তারা অনুধাবন করতে পারেন যে, ভারতবর্ষে এক কালে এক আল্লাহ'রই ইবাদত/উপাষণা মানুষ করতো। মানুষের হস্তক্ষেপে 'বেদ' পরিবর্তিত হয়ে গেলেও; এখনো বেদে এমন এমন কথা আছে, যার অর্থ হুবহু পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থের সাথে মিলে যায়। বেদের অনেক বাণী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি হয়তো কোন নবী/রসূলের প্রতি আল্লাহ'র প্রেরিত এবং বর্তমানে মানুষ কর্তৃক পরিবর্তিত সংস্করণ হতে পারে (যেমন- তাওরাত ও ইঞ্জিল বিকৃত হয়ে রূপ পেয়েছে Old Testament, New Testament, Bible ইত্যাদিতে )। 

আল্লাহর মনোনিত একমাত্র ধর্ম ইসলাম

'ইসলাম' ইহুদী আর খৃষ্টান ধর্মের modified রূপ না। ইসলাম হলো মহান স্রষ্টা আল্লাহ কর্তৃক মনোনিত একমাত্র ধর্ম তথা জীবন ব্যবস্থার পরিপূর্ণ ও চুড়ান্ত রূপ (সূত্র: পবিত্র কুরআন; সূরা মাইদাহ্, আয়াত নং- ৩)। সকল যুগের সকল নবী/রসূলেরই একমাত্র ধর্ম ছিল ইসলাম। তাওরাত ও ইঞ্জিল-এর ধারক মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ) ছিলেন মুসলিম। অর্থাৎ, স্রষ্টার অনুগত। তাঁদের অনুসারী বলে দাবিদার ইহুদী ও খৃষ্টানরা যদি সত্যই তাঁদের অনুসারী হতো, তাহলে সকলেই মুসলিম হয়ে যেত। কারণ, পূর্ববর্তী সকল নবী/রসূলই তাঁদের অনুসারীদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সর্বশেষ ও চুড়ান্ত রসূল মুহাম্মাদ (সঃ)'র অনুসরণ করার জন্য। ইংরেজিতে একটি কথা প্রচলিত আছে- 'Always follow the latest command' অর্থাৎ, সর্বদা সর্বশেষ আদেশ অনুসরণ করো। কিন্তু, মূল সমস্যা হলো- একমাত্র কুরআন ব্যতীত আর কোন আসমানী কিতাবই অবিকৃত অবস্থায় এই ধরাপৃষ্ঠে বর্তমান নাই। 

পবিত্র কুরআনে গ্রহ, নক্ষত্রের বর্ণনা

চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ- এগুলো সম্পর্কে মানুষ কবে, কতদিন আগে জানতে পেরেছে ? আল্লাহ সেই ১৪৫০ বছর আগে এগুলোর প্রতিটির নামে (ক্বমার, নাজ্ম, তারিক্ব, বুরুজ, শামস্)  স্বতন্ত্র সূরা পবিত্র কুরআনে নাযিল করেছেন। নক্ষত্র সমূহ দ্বারা সজ্জিত আকাশ তথা ছায়াপথের সুন্দর বর্ণনা আছে সূরা ছফ্ফাত আয়াত নং ৬ এবং সূরা মুলক্ আয়াত নং ৫-এ। গ্রহ-নক্ষত্র আকাশে প্রথিত- এরূপ কোন ডাহা মিথ্যা কথা কুরআনে নাই। বরং কুরআনে আছে এগুলো সব নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করছে বা চলমান আছেে (সূরা ইয়া ছিন, আয়াত নং- ৪০)। 

ইসলামী শরিয়াহ্

ইসলামী শরিয়াহ্ অর্থাৎ আইন/নিয়ম-কানুনের উৎস ৪টি। যথা-কুরআন, সহীহ্ হাদীস, ইজমা ও কিয়াস। কোন মুসলিম জনগোষ্ঠি যদি নরওয়ে বা অনুরূপ কোন abnormal স্থানে বসবাস করে, তাহলে তারা ইজমা-কিয়াসের মাধ্যমে নামাজের ওয়াক্ত, রোজার সাহরী, ইফতার ইত্যাদীর সময় নির্ধারণ করে নিবে- এটাই ইসলামী নিয়ম। সেখানে হচ্ছেও তাই। So, There is no problem in Islam. 

ইবলিস শয়তানের চ্যালেঞ্জ

পৃথিবীতে মানব জীবনের জন্য একটা বাড়তি ঝামেলার প্রসঙ্গ হলো ইবলিস শয়তান (এবং তার দল-বল)। ইবলিস আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে, সে আদম সন্তানদেরকে ধোকা দিয়ে তার অনুগত করে ফেলবে (সূরা আ'রাফ আয়াত নং ১৬ ও ১৭)। আল্লাহ ইবলিস শয়তানের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে তাকে বলেছিলেন যে, যারা ইবলিসের অনুসরণ করবে, তাদেরকে দিয়ে এবং সাথে ইবলিসকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করবেন (সূরা  আ'রাফ আয়াত নং ১৮)।

আল্লাহ ইবলিসকে সৃষ্টি করলেন কেন

এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, আল্লাহ ইবলিসকে সৃষ্টি না করলেইতো পারতেন। এ কথার ১ম উত্তর হলো-মহান স্রষ্টা আল্লাহ'র কোন কাজে কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার কোন সৃষ্টির নাই (সূরা আন্বিয়া আয়াত নং- ২৩)। ২য় উত্তর হলো-মহান স্রষ্টা আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য যে, কাজে (অর্থাৎ, পৃথিবীতে আল্লাহ'র হুকুম মেনে জীবন যাপন করাতে) কে কত উত্তম (সূরা মূলক্ আয়াত নং- ২)। 

মানতে পারলে নিজের ভাল।  আর না মানতে পারলে get ready for the 'Day of final Judgement'. অতএব, হে মানব জাতি ! আসুন আমরা পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ খুঁজি। اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ আমাদেরকে সরল-সঠিক সঠিক পথ দেখান। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ দান করেছেন। আল-ফাতিহা, ১/৬-৭ ।
আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন। আমিন।।





****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url