বিশ্বের সুন্দরতম মসজিদগুলো (পর্ব -২) || সুন্দরতম মসজিদ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ || শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি ||






সুন্দরতম মসজিদ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ

বিশ্বের সুন্দরতম মসজিদ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, যার আরবি নাম: جامع الشيخ زايد الكبير‎‎। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে অবস্থিত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম একটি উপাসনালয়। এই মসজিদটি পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম মসজিদ। এটিকে পৃথিবীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন মসজিদ মনে করা হয়। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে আরব আমিরাত এর প্রয়াত রাষ্ট্র প্রধান শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের নামানুসারে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের নকশা

চার কোণে চারটি মিনারে পুষ্পশোভিত নকশা রয়েছে। যার উচ্চতা ৩৫১ ফুট (প্রায় ১০৭ মিটার)। নকশা নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মার্বেল পাথর, মূল্যবান স্ফটিক পাথর ও মৃৎশিল্প। শেখ জায়েদ মসজিদের নকশায় মুঘল এবং মুরিস মসজিদ, গম্বুজ বিন্যাস ও ফ্লোর বিন্যাসে বাদশাহি লাহোরে মসজিদ, মিনারে দ্বিতীয় হাসান মসজিদ (মরক্কো) এর প্রভাব স্পষ্ট প্রতীয়মান। আরবের ২০০ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্পচর্চার নমুনা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে মার্বেল পাথর, সোনা, আধা মূল্যবান পাথর, স্ফটিক ও মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপকরন ব্যবহার করে। সংযুক্ত আর আমিরাতের মোহাম্মদ মান্দি আল তামামি , সিরিয়ার ফারুক হাদ্দাদ এবং জর্দানের মোহাম্মদ আলাম এর ক্যালিওগ্রাফি ও নকশা চোখে পরে মসজিদের সর্বত্র। ডিজাইন ও নির্মাণে ইতালি, জার্মানি, মরক্কো, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইরান, চীন, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস ও সংযুক্ত আরব সহ অনেক দেশ থেকে কারীগর ও উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদটিতে আছে ছোট-বড় সাত আকারের ৮২টি গম্বুজ। যা নির্মাণ করা হয়েছে স্বেত মার্বেল দিয়ে। মসজিদের বৃহত্তম গম্বুজের উচ্চতা ২৭৯ ফুট।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের নির্মাণ

১৯৯৬ সালে নির্মাণ শুরু হয়েছিল এবং ১০ বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়েছিল, তবে নির্মাণের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি অনেক বেশি সময় নিয়েছিল। ২০ বছর ধরে, বিশ্বের সেরা স্থপতি এবং ডিজাইনাররা একটি দুর্দান্ত প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে এবং নির্মাণ সংস্থাগুলি এই চাকরি পাওয়ার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। প্রধান স্থপতি ছিলেন সিরিয় স্থপতি ইউসুফ আবদেলকি।

২০০৪ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ৮৫ বছর বয়সে মারা গেলেন। মহান মসজিদটি এখনও প্রস্তুত ছিল না, তবে শেখকে মন্দিরের অঞ্চলে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। দেশটির সেবার জন্য কৃতজ্ঞতা স্বরূপ, ইতিমধ্যে ১৫ বছর ধরে তার কবরে একটি প্রার্থনা অব্যাহতভাবে ২৪ ঘন্টা পড়া হয়েছে। ২০০৭ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছিল এবং তুষার-সাদা ল্যান্ডমার্কটি তার মহিমায় প্রকাশিত ছিল এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের মাত্রা ও পরিসংখ্যান



বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ অনেক বিশেষ এবং অনন্য উপাদান আছে। প্রধান প্রার্থনা কক্ষে ইরানের কার্পেট কোম্পানির তৈরি, যা ইরানি শিল্পী আলী খালিদির ডিজাইনে বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গালিচা ৬০৫৭০ বর্গ ফুট এবং এই কার্পেট এর ওজন ৩৫ টন। নিউজিল্যান্ড এবং ইরানের উল থেকে তৈরি করতে প্রায় দুই বছর সময় লেগেছিল। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম গালিচা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

বিশ্বের বৃহত্তম ঝাড়বাতি


স্ফটিক সচ্ছ লক্ষ লক্ষ পাথরের তৈরি পৃথিবীর বৃহত্তম ঝাড়বাতিটি এই মসজিদে। জার্মানির তৈরি ঝাড়বাতিটির ব্যাস ১০ মিটার (৩৩ ফুট) এবং উচ্চতা ১৫ মিটার (৪৯ ফুট) দ্বিতীয়, তৃতীয় বৃহত্তম ঝাড়বাতিও এই মসজিদেই রয়েছে এবং এই মসজদেরই শ্রী বাড়াচ্ছে। 

বিশ্বের বৃহত্তম মার্বেল মোজাইক

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের আঙিনা ১৭ হাজার বর্গমিটার মার্বেল মোজাইকের। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ আয়তনের মার্বেল মোজাইক। প্রধান হলের ধারণ ক্ষমতা ৭০০০। সাথেই রয়েছে ২টি প্রার্থনা হল এক একটি ১৫০০ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। যার ১ টি মহিলাদের জন্য। প্রতিটির সঙ্গে দুটি ছোট প্রার্থনা হল ও আছে। প্রার্থনা হল ও আঙ্গিনা মিলিয়ে ৪০,০০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারে। জুম্মা ও ঈদে সর্বমোট দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লি শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে নামাজ আদায় করেন।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদের গ্রন্থাগার

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও এই মসজিদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। আধুনিক ও ইসলামী বইয়ের এক অনন্য সংগ্রহশালা রয়েছে মসজিদ গ্রন্থাগারে। ইসলামী বিশ্বের বৈচিত্র্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে সংগ্রহ করা হয়েছে আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, ইতালীয়, স্পেনীয়, জার্মান ও কোরীয় সহ বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য বই।




****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url