সাহাবাগণের জীবনকথা-৩৫ || খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ)





খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ) জীবন কথা


খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ) জীবন কথা’র আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

খাদীজা (রাঃ) এর বংশ পরিপরিচয়

নাম তাঁর খাদীজা। কুনিয়াত উন্মু হিন্দ' এবং লকব 'তাহিরা'। পিতা খুওয়াইলিদ, মাতা ফাতিমা বিনতু যায়িদ। জন্ম 'আমুল ফীল' বা হস্তীবর্ষের পনের বছর আগে মক্কা নগরীতে। পিতৃ-বংশের উর্ধ পুরুষ কুসাঈ-এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর (সা) নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। জাহিলী যুগেই পূতপবিত্র চরিত্রের জন্য 'তাহিরা' উপাধি লাভ করেন। (আল-ইসাবা) রাসুলুল্লাহ (সা) ও খাদীজার (রা) মধ্যে ফুফু-ভাতিজার দূর সম্পর্ক ছিল। এ কারণে, নবুওয়াত লাভের পর খাদীজা (রা) রাসূলুল্লাহকে (সা) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলেন, 'আপনার ভাতিজার কথা শুনুন।' সম্ভবতঃ বংশগত সম্পর্কের ভিত্তিতেই তিনি একথা বলেছিলেন।

খাদীজা (রাঃ) এর বিয়ে এবং ভাই-বোন পরিচিতি

পিতা খুওয়াইলিদ তৎকালীন আরব সমাজের বিশিষ্ট তাওরাত ও ইনজীল বিশেষজ্ঞ ওয়ারাকা ইবন নাওফিলকে খাদীজার বর নির্বাচন করেছিলেন, কিন্তু কেন যে তা বাস্তবে রূপ লাভ করেনি সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা নীরব। শেষ পর্যন্ত আবু হালা ইবন যারারাহ আত-তামীমীর সাথে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। জাহিলী যুগেই তাঁর মৃত্যু হয়। আবু হালার মৃত্যুর পর 'আতীক বিন আবিদ আল-মাখযুমীর সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। (শারহুল মাওয়াহিব, আল-ইসভিয়াব) তবে কাতাদার সূত্রে জানা যায়, তাঁর প্রথম স্বামী 'আতীক, অতঃপর আবু হালা। ইবন ইসহাকও এ মত সমর্থন করেছেন বলে ইউনুস ইবন বুকাইর বর্ণনা করেছেন। (আল-ইসাবা : ৪/২৮১) তবে প্রথমোক্ত মতটি ইবন আবদিল বার সহ অধিকাংশের মত বলে ইবন হাজার উল্লেখ করেছেন।

খাদীজার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ছিলেন ফিজার যুদ্ধে নিজ গোত্রের কমাণ্ডার । তিনি ছিলেন বহু সন্তানের জনক। প্রথম পুত্র হিযাম। এই হিযামের পুত্র প্রখ্যাত সাহাবী হাকীম জাহিলী যুগে মক্কার 'দারুন নাদওয়ার' পরিচালনভার লাভ করেছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান হযরত খাদীজা। তৃতীয় সন্তান 'আওয়াম' প্রখ্যাত সাহাবী হযরত যুবাইরের (রা) পিতা। রাসূলুল্লাহর (সা) ফুফু এবং হযরত হামযার আপন বোন হযরত সাফিয়্যা (রা) ছিলেন ‘আওয়ামের স্ত্রী বা যুবাইরের (রা) মা। সাফিয়্যা ছিলেন খাদীজার ছোট ভাইয়ের বউ । চতুর্থ সন্তান হালা। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) মেয়ে হযরত যয়নাবের (রা) স্বামী আবুল আস ইবন রাবী'র মা। আবুল আ'স রাসূলুল্লাহর (সা) বড় জামাই। পঞ্চম সন্তান রুকাইয়া । পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে হিযাম, আওয়াম এবং রুকাইয়া ইসলামের আবির্ভাবের আগেই মারা যান। হযরত খাদীজা ও হালা ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।

খাদীজার পিতার মৃত্যু কখন হয়েছিল, সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। কেউ বলেছেন, "ফিজার' যুদ্ধে মারা যান। ইমাম সুহাইলীর মতে ফিজার যুদ্ধের আগেই মারা যান । তখন খাদীজার বয়স পঁয়ত্রিশ। কারো কারো মতে রাসূলুল্লাহর (সা) বিয়ের পর তিনি মারা যান। (হায়াতুস সাহাবা- ২/৬৫২)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে খাদীজা (রাঃ) এর পরিচয় ও ব্যবসা বাণিজ্য

পিতা বা স্বামীর মৃত্যু বা যে কোন কারণেই হোক কুরাইশ বংশের অনেকের মত খাদীজাও ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী। ইবন সা'দ তাঁর ব্যবসায় সম্পর্কে বলছেন? ‘খাদীজা ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও সম্পদশালী ব্যবসায়ী মহিলা। তাঁর বাণিজ্য সম্ভার সিরিয়া যেত এবং তার একার পণ্য কুরাইশদের সকলের পণ্যের সমান হতাে।' ইবন সা'দের এ মন্তব্য দ্বারা খাদীজার ব্যবসায়ের পরিধি উপলব্ধি করা যায়। অংশীদারী বা মজুরী বিনিময়ে যোগ্য লােক নিয়োগ করে তিনি দেশ বিদেশে মাল কেনাবেচা করতেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) তখন পঁচিশ বছরের যুবক। এর মধ্যে চাচা আবু তালিবের সাথে বা একাকী কয়েকটি বাণিজ্য সফয়ে গিয়ে ব্যবসায় সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেছেন। ব্যবসায়ে তার সততা ও আমানতদারীর কথাও মক্কার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। সবার কাছে তিনি তখন আল-আমীন। তার সুনামের কথা খাদীজার কানেও পৌঁছেছে। বিশেষতঃ তাঁর ছোট ভাই-বউ সাফিয়্যার কাছে আল-আমীন মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে বহু কথাই শুনে থাকবেন।

হযরত খাদীজা একবার কেনাবেচার জন্য সিরিয়ায় পণ্য পাঠাবার চিন্তা করলেন । যােগ্য লােকের সন্ধান করছেন। এ প্রসঙ্গে ওয়াকিদী থেকে যারকানীর বর্ণনাঃ আবু তালিব মুহাম্মাদকে (সা) ডেকে বললেন : ভাতিজা! আমি একজন দরিদ্র মানুষ, সময়টাও ধুৰ সঙ্কটজনক। মারাত্মক দুর্ভিক্ষের কবলে আমরা নিপতিত। আমাদের কোন ব্যবসায় বা অন্য কোন উপায়-উপকরণ নেই। তোমার গোত্রের একটি বাণিজ্য কাফিলা সিরিয়া যাচ্ছে। খাদীজা তাঁর পণ্যের সাথে পাঠানাের জন্য কিছু লােকের খোঁজ করছে। তুমি যদি তার কাছে যেতে, হয়তাে তােমাকেই সে নির্বাচন করতাে। তােমার চারিত্রিক নিষ্কলুষতা। তার জানা আছে। যদিও তোমার সিরিয়া যাওয়া আমি পছন্দ করিনে এবং ইয়াহুদীদের পক্ষ থেকে তােমার জীবনের আশঙ্কা করি, তবুও এমনটি না করে উপায় নেই।' জবাবে রাসুল (সা) বললেন, সম্ভবতঃ সে নিজেই লােক পাঠাবে। আবু 'তালিব বললেন ! হয়তাে অন্য কাউকে সে নিয়ােগ করে ফেলবে। চাচা-ভাতিজার এ সংলাপের কথা খাদীজার কানে গেল। তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট লােক পাঠালেন। (টীকা, সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৮৮) উল্লেখ থাকে যে, কৈশােরে একবার রাসূল (সা) চাচার সাথে সিরিয়া। গিয়েছিলেন। তখন পাদরী বুহাইরা রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে আবু তালিবকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। উপরােক্ত বর্ণনায় 'আবু তালিব সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

খাদীজা লােক মারফত মুহাম্মদের (সা) কাছে প্রস্তাব পাঠালেন, তিনি যদি ব্যবসায়ের দায়িত্ব নিয়ে সিরিয়া যান, অন্যদের তুলনায় খাদীজা কে দ্বিগুণ মুনাফা দেবেন। মুহাম্মদ (সা) রাজী হলেন।

খাদীজার (রা) পণ্য-সামগ্রী নিয়ে তার বিশ্বস্ত দাস মায়সারাকে সঙ্গে করে মুহাম্মাদ (সা) চললেন সিরিয়া। পথে এক গীর্জার পাশে একটি গাছের ছায়ায় বসে আছেন তিনি। গীর্জার পাদ্রী এগিয়ে গেলেন মায়সারার দিকে। জিজ্ঞেস করলেন । পাছের নিচে বিশ্রামরত লােকটি কে' মায়সাৱা বললেন ? 'মক্কার হারামবাসী কুরাইশ গােত্রের একটি লোক।” পাদ্রী বললেন ? এখন এই গাছের নীচে যিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি একজন নবী ছাড়া আর কেউ নন।' ঐতিহাসিকরা এই পাদ্রীর নাম ‘নাসতুয়া বলে উল্লেখ করেছেন। (টীকা, সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৮৮) দুবে ইবন হাজার আসকালানী এই পাত্রীর নাম বুহাইরা বলেছেন। (আল-ইসাবাঃ ৪/২৮১) তিনি আরাে বলেছেন, এই বাণিজ্য সম্ভার নিয়ে রাসূল (সা) সিরিয়ার বাজারে গিয়েছিলেন। বারী ইবন শিহাব যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) খাদীজার পণ্য নিয়ে সিরিয়া নয়, বরং ইয়ামানের এক হাবশী বাজারে গিয়েছিলেন। তবে সিরিয়া যাওয়ার বর্ণনাটাই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। (তারীখুল উম্মাহ আল ইসলামিয়া, মুহাম্মদ আল-খিদরী বেক ? ১/৬৪)

রাসুলুল্লাহ (সা) সিরিয়ার বাজারে পণদ্রব্য বিক্রি করলেন এবং যা কেনার তা কিনলেন। তারপর মায়সারাকে সঙ্গে করে মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। পথে মায়সারা লক্ষ্য করলেন, রাসূল (সা) তার উটের ওপর সওয়ার হয়ে চলেছেন, আর দুজন ফিরিশতা দুপুরের প্রচণ্ড রােদে তার ওপর ছায়া বিস্তার করে রেখেছেন। এভাবে মক্কায় ফিরে খাদীজার পণ্য-সামগ্রী বিক্রি করলেন। ব্যবসায়ে এবার দ্বিগুণ অথবা দ্বিগুণের কাছাকাছি মুনাফা হলাে। বাড়ী ফিরে বিশ্বস্ত ভৃত্য মায়সারা তার মনিব খাদীজার নিকট পাদ্রীর মন্তব্য এবং সফরের অলৌকিক ঘটনাবলী সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। (সীরাতু ইবন। হিশাম-১/১৮৯)।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে খাদীজা (রা) এর বিবাহ

হযরত খাদীজা (রা) ছিলেন এক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতি ভদ্র মহিলা। তার ধন-সম্পদ, ভদ্রতা ও লৌকিকতায় মক্কার সর্বস্তরের মানুষ মুগ্ধ ছিল। অনেক অভিজাত কুরাইশ যুবকই আঁকে সহধর্মিনী হিসেবে লাভ করার প্রত্যাশী ছিল। তিনি তাদের সকলকে প্রত্যাখ্যান করেন। মায়সারার মুখে সবকিছু শুনে খার্দীজা নিজেই রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট বিয়ের পয়গাম পাঠান। (সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৮৯)

বিয়ের প্রস্তাব কিভাবে এবং কেমন করে হয়েছিল সে সম্পর্কে নানা রকম বর্ণনা। রয়েছে। তবে খাদীজাই যে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট প্রস্তাবটি পেশ করেন সে ব্যাপারে সব বর্ণনা একমত। 

একটি বর্ণনায় এসেছে, খাদীজা (রা) নিজেই রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে কথা বলেন এবং তার পিতার নিকট প্রস্তাবটি উত্থাপন করার জন্য অনুরােধ করেন। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, দরিদ্রের কারণে হয়তাে খাদীজার পিতা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন। অবশেষে খাদীজার পিতা যখন অতিরিক্ত মদপান করে মাতাল অবস্থায় ছিলেন তখন খাদীজা নিজেই বিষয়টি তার কাছে উত্থাপন করেন এবং সম্মতি আদায় করেন। কিন্তু সুস্থ হয়ে আবার তিনি বেঁকে বসেন। তবে খাদীজা পুনরায় তার সম্মতি আদায় করেন। (হায়াতুস সাহাবা-২/৬৫২) অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত ইয়ালার স্ত্রী ও খাদীজার বান্ধবী নাফীসা বিনতু মানিয়্যা" এ ব্যাপারে পুরাে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনিই সর্বপ্রথম খাদীজার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) নিকট এভাবে প্রস্তাব পেশ করেন। আপনাকে যদি ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও জীবিকার নিশ্চয়তার দিকে আহবান জানানাে হয়, আপনি কি গ্রহণ করবেন।.... এ কথাগুলি ছিল হয়ত খাদীজা সম্পর্কে।

কথা পাকাপাকি হয়ে গেল। নির্ধারিত তারিখে আবু তালিব, হামযাসহ রাসূলুল্লাহর (সা) খান্দানের আরাে কিছু ব্যক্তি খাদীজার বাড়ী উপস্থিত হলেন। খাদীজাও তার খান্দানের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দাওয়াত দিয়েছিলেন। সকলের উপস্থিতিতে আবু তালিব বিয়ের খুতবা পাঠ করলেন। সাহিত্যিক উৎকর্ষের দিক দিয়ে এ খুতবা জাহিলী যুগের আরবী-গদ্য সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। পাঁচশ' স্বর্ণমুদ্রা মােহর ধার্য হয়। খাদীজা নিজেই উভয় পক্ষের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন। তিনি দুই উকিয়া সােনা ও রুপাে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট পাঠান এবং তা দিয়ে উভয়ের পােশাক ও ওয়ালীমার বন্দোবস্ত করতে বলেন। (হায়াতুস সাহাবা-২৯৫২) এভাবে হযরত খাদীজা হলেন “উম্মুল মুমিনীন। এটা নবুয়াত প্রকাশের পনের বছর পূর্বের ঘটনা। সে সময় তাদের উভয়ের বয়স সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতপার্থক্য থাকলেও সর্বাধিক সঠিক মতানুযায়ী রাসূলুল্লাহর (সা) বয়স ছিল পঁচিশ এবং খাদীজার চল্লিশ। | 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নবুয়ত লাভ এবং খাদীজার সাহচর্য্য

বিয়ের পনের বছর পর হযরত নবী করীম (সা) নবুওয়াত লাভ করেন। তিনি খাদীজাকে (রা) সর্বপ্রথম এ বিষয়ে অবহিত করেন। পূর্ব থেকেই খাদীজা রাসূলুল্লাহর (সা) নবী হওয়া সম্পর্কে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। সহীহ বুখারীর ওহীর সূচনা অধ্যায়ে একটি হাদীসে বিষয়টির বিস্তারিত আলােচনা এসেছে। হযরত আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহর (স) প্রতি প্রথম ওহীর সূচনা হয় ঘুমে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। স্বপ্নে যা কিছু দেখতেন তা সকাল বেলার সূর্যের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর নির্জনে থাকতে ভালোবাসতেন। খানাপিনা সঙ্গে নিয়ে হিরা গুহায় চলে যেতেন। সেখানে একাধারে কয়েকদিন ইবাদতে মশগুল থাকতেন। খাবার শেষ হয়ে গেলে আবার খাদীজার কাছে ফিরে আসছেন। খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আবার গুহায় ফিরে যেতেন। এ অবস্থায় একদিন তার কাছে সত্যের আগমন হলাে। ফিরিশতা এসে তাকে বললেন ঃ আপনি পড়ন। তিনি বললেন : “আমি তাে পড়া-লেথার লােক নই।' ফিরিশতা তাঁকে এমন জোরে চেপে ধরলেন যে তিনি কষ্ট অনুভব করলেন। ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন, পড়ুন। তিনি আবারাে বললেন, আমি পড়া-লেখার লােক নই'। ফিরিশতা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার চেষ্ঠার সাথে প্রথমবারের মত আচরণ করলেন। অবশেষে বললেন : 'পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিণ্ড থেকে,..' রাসূল (সা) ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরলেন। খাদীজাকে ডেকে বললেনঃ 'আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও, কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও।' তিনি ঢেকে দিলেন। তার ভয় দূর হয়ে গেল। তিনি খালীজার নিকট পুরো ঘটনা খুলে বললেন এবং নিজের জীবনের আশংকার কথা ব্যক্ত করলেন। খাদীজা বললেন না, তা কক্ষণো হতে পারে না। আল্লাহর কসম, তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়কারী, গরীব-দুঃখীর সাহায্যকারী, অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী।

অতঃপর খাদীজা (রা) রাসূলুল্লাহকে (সা) সংগে করে তার চাচাতাে ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের নিকট নিয়ে যান। সেই জাহিলী যুগে তিনি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। হিব্রু ভাষায় ইনঞ্জীল কিতাব লিখতেন। তিনি বৃদ্ধ ও দৃষ্টিহীন। খাদীজা (রা) বললেনঃ 'শুনুন তো আপনার ভাতিজা কি বলে! তিনি জিজ্ঞেস করলেন ! ভাতিজা তােমার বিষয়টি কি?' রাসূলুল্লাহ (সা) পুরাে ঘটনা বর্ণনা করলেন। শুনে ওয়ারাকা বললেন ? ‘এতো সেই নামুস'- আল্লাহ যাকে মুসার (আ) নিকট পাঠিয়েছিলেন। আফসুস। সে দিন যদি আমি জীবিত ও সুস্থ থাকতাম, যেদিন তােমার দেশবাসী তােমাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে।' রাসূলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা আমাকে দেশ থেকে বের করে দেবে? তিনি বললেনঃ হ্যা, তুমি যা নিয়ে এসেছ, যখনই কোন ব্যক্তি তা নিয়ে এসেছে, সারা দুনিয়া তার বিরােধী হয়ে গেছে। যদি সে সময় পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি, তােমাকে সব ধরনের সাহায্য করবো। (বুখারী, ১ম খণ্ড) এ ঘটনার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ওয়ারকার মৃত্যু হয়।

খাদীজা (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ এবং তাবলীগে দ্বীনের জন্য আত্ম নিয়োগ

ইসলাম গ্রহণের পর হযরত খাদীজা (রাঃ) তার সকল ধন-সম্পদ তাবলীগে দ্বীনের লক্ষ্যে ওয়াকফ করেন। রাসূল (সা) ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে আল্লাহর ইবাদাত এবং ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়ােগ করেন। সংসারের সকল আয় বন্ধ হয়ে যায় । সেই সাথে বাড়তে থাকে খাদীজার দুশ্চিন্তা। তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে সব প্রতিকূল অবস্থার মুকাবিলা করেন। আল-ইসতিয়াব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, মুশরিকদের প্রত্যাখান ও অবিশ্বাসের কারণে রাসুল (সা) যে ব্যথা অনুভব করতেন, খাদীজার কাছে এলে তা দূর হয়ে যেত। কারণ, তিনি রাসূলকে (সা) সান্ত্বনা দিতেন, সাহস ও উৎসাহ যােগাতেন। তাঁর সব কথাই তিনি বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করতেন। মুশরিকদের সকল অমার্জিত আচরণ তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে অত্যন্ত হালকা ও তুচ্ছভাবে তুলে ধরতেন।' (তাবাকাত-৩৭৪০)।

নবুওয়াতের সপ্তম বছর মুহাররম মাসে কুরাইশরা মুসলমানদের বয়কট করে। তারা ‘শিয়াবে আবু তালিবে’ আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা) সাথে খাদীজাও সেখানে অন্তরীণ হন। প্রায় তিনটি বছর বনী হাশিম দারুণ দুর্ভিক্ষের মাঝে অতিবাহিত করে। গাছের পাতা ছাড়া জীবন ধারণের আর কোন ব্যবস্থা তাদের ছিল না। স্বামীর সাথে খাদীজাও হাসি মুখে সে কষ্ট সহ্য করেন। এমন দুর্দিনে হযরত খাদীজা (রা) নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন উপায়ে কিছু খাদ্য খাবারের ব্যবস্থা মাঝে মাঝে করতেন। তাঁর তিন ভাতিজা- হাকীম ইকন হিযাম, আবুল বুখারী ও যুময়া ইবনুল আসওয়াদ- তারা সকলে ছিলেন কুরাইশ নেতৃবর্গের অন্যতম। অমুসলিম হওয়া সত্বেও তারা বিভিন্নভাবে মুসলমানদের কাছে খাদ্যশস্য পাঠানাের ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। একদিন হাকীম ইবন হিযাম তার চাকরের মাধ্যমে ফুফু খাদীজার (রা) কাছে কিছু গম পাঠাচ্ছিলেন। পথে আবু জাহল বাধা দেয়। হঠাৎ আবুল বুখতারী সেখানে উপস্থিত হন। তিনি আবু জাহলকে বললেন, এক ব্যক্তি তার ফুফুকে সামান্য খাদ্য পাঠাচ্ছে, তুমি তা বাধা দিচ্ছ? (সীরাতু ইবন হিশাম-১১৯২) ।

নামায ফরজ হওয়ার হুকুম নাযিল হয়নি, হযরত খাদীজা (রা) ঘরের মধ্যে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে সেই প্রথম থেকেই নামায আদায় করতেন। (তাবাকাত-৮/১০) ইবন ইসহাক উল্লেখ করেছেন, একদিন আলী (রা) দেখতে পেলেন, তারা দু'জন অর্থাৎ নবী (সা) ও খাদীজা (রা) নামায আদায় করছেন। আলী (রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ মুহাম্মদ, এ কি? রাসূল (সাঃ) তখন নতুন দ্বীনের দাওয়াত আলীর কাছে পেশ করলেন এবং একথা কাউকে বলতে নিষেধ করলেন। (হায়াতুস সাহাবা-১৭০) এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, উম্মতে মুহাম্মাদীর (সা) মধ্যে সর্বপ্রথম হযরত খর্দীজা (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে। নামায আদায়ের গৌৱব অর্জন করেন।

আফীফ আল-কিন্দী নামক এক ব্যক্তি কিছু কেনাকাটার জন্য মক্কায় এসেছিলেন। হযরত আব্বাসের (রা) বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন তিনি। একদিন সকালে লক্ষ্য করলেন, এক যুবক কাবার কাছে এসে আসমানের দিকে তাকালো। তারপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালাে। একজন কিশোর এসে তার পাশে দাড়িয়ে গেল। তারপর এলো এক মহিলা। সেও তাদের দুজনের পেছনে দাঁড়ালো। তারা নামায শেষ করে চলে গেল। দৃশ্যটি আফীফ কিন্দী দেখলেন। আব্বাসকে তিনি বললেন 'বড় রকমের একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আব্বাস বললেন, হ্যাঁ! তিনি আরো বললেনঃ 'এ নওজোয়ান আমার ভাতিজা মুহাম্মাদ।' কিশােরটি আমার আরেক ভাতিজা আলী এবং মহিলাটি মুহাম্মদের স্ত্রী । ....আমার জানামতে দুনিয়ায় তারা তিনজনই মাত্র এই নতুন ধর্মের অনুসারী। (ন্যান্যাকাতঃ ৮/১০-১১)

ইবনুল আসীর বলেন, এ ব্যাপারে মুসলিম উম্মার ইজমা হয়েছে যে, হযরত খাদীজা রাসূলুল্লাহর (সা) ওপর সর্বপ্রথম ঈমান আনেন । ইসলাম গ্রহণের সময় তার বয়স হয়েছিল পঞ্চাশ বছর। তাঁর ইসলাম গ্রহণের প্রভাব তার পিতৃকুলের লােকদের উপরও পড়ে। ইসলামের আবির্ভাবের সময় পিতৃকুল বনু অসাদ ইবন অবিদিল উযযার পনের জন বিখ্যাত ব্যক্তি জীবিত ছিলেন। তাদের দশজনই ইসলাম গ্রহণ করেন। অন্য পাঁচজন। কাফের অবস্থায় বদর যুদ্ধে নিহত হন।

হযরত খাদীজা (রাঃ) এর ওফাত

রাসুলুল্লাহর (সা) সাথে পঁচিশ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করার পর নবুওয়াতের দশম বছরে দশই রামাদান পয়ষট্টি নহুর বয়সে হযরত খাদীজী মক্কায় ইনতিকাল করেন। জানাযা নামাযের বিধান তখনাে প্রচলিত হয়নি। সুতরাং বিনা জানাযায় তাকে মক্কার কবরস্থান জান্নাতুল মুয়াল্লায় দাফন করা হয়। হযরত নবী করীম (সা) নিজেই তার লাশ কবরে নামান। (আল-ইসাবাঃ ৪/২৮৩)।

হযরত খাদীজা (রা) ওয়াফাতের অল্পকিছুদিন পর রাসূলুল্লাহর (সা) বিশেষ হিতাকাঙ্খী চাচা আবু তালিব মারা যান। অবশ্য অল-ইসতিয়াবের একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, আবু তালিবের মৃত্যুর তিনদিন পর খাদীজা ইনতিকাল করেন। বিপদে-আপদে এ চাচাই রাসূলুল্লাহকে (সা) নানাভাবে সাহায্য করতেন। রাসূলুল্লাহর (সা) দুই নিকটাত্মীয়ের ওফাতের কারণে মুসলিম উম্মাহর নিকট এ বছরটি ‘অমুল হুযূন' বা শােকের বছর, নামে অভিহিত হয়েছে। | 

হযরত খাদীজা (রা) এর সন্তানসন্ততি

হযরত খাদীজা (রা) ছিলেন বহু সন্তানের জননী। প্রথম স্বামী আবু হালার ঔরসে হালা ও হিল নামে দু’ছেলে জন্ম গ্রহণ করেন। তারা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। হিন্দ বদর যুদ্ধে মতান্তরে উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহর (সা) সাথে অংশগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন একজন প্রাঞ্জলভাষী বাগ্মী। উটের যুদ্ধে আলীর (রা) পক্ষে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। দ্বিতীয় স্বামী আতীকের ঔরসে হিন্দা নাম্মী এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিও ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবী হওয়া গৌরব অর্জন করেন। (শরহুল মাওয়াকিব, আল-ইসতিয়াব, হশিয়া, সীরাতু ইবন হিশাম-১/১৮৭) অবশ্য অন্য একটি বর্ণনা মতে প্রথম পক্ষে তার তিনটি সন্তান লাভ করেন। দুই ছেলে- হিন্দ ও হারিস। হারিসকে এক কাফির কাবার রুকনে ইয়ামনীর নিকট শহীদ করে ফেলে। এক কন্যা যয়নাব। আর দ্বিতীয় পক্ষের কন্যাটির কুনিয়াত ছিল উম্মু মুহাম্মাদ। (দাখিরা-ই-মা'রিফ-ই-ইসলামিয়া)

হযরত রাসূলে কারীমের (সা) পবিত্র ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর ছয় সন্তান। প্রথম সন্তান হযরত কাসিম। অল্প বয়সে মক্কা শরীফে ইনতিকাল করেন। তার নাম অনুসারে রাসূলুল্লাহ (সা) কুনিয়াত হয় আবুল কাসিম। মৃত্যুর পূর্বে তিনি হাটি হাটি পা পা করে হাঁটা শিখেছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান হযরত যয়নাব। তৃতীয় সন্তান হযরত আবদুল্লাহ। তিনি নবুওয়াত প্রাপ্তির পর জন্মলাভ করেছিলেন, তাই তাইয়্যেব ও তাহির লকব লাভ করেন। অল্প বয়সে ইনতিকাল করেন। চতুর্থ সন্তান হযরত রুকাইয়া। পঞ্চম সন্তান হযরত উম্মু কুলসুম। ৬ষ্ট সন্তান হযরত ফাতিমা (রা)। উল্লেখ্য যে, ইবরাহীম ছিলেন হযরত মারিয়ার গর্ভ জাত সন্তান।

হযরত খাদীজা (রা) সন্তানদের খুব আদর করতেন। আর্থিক সচ্ছলতাও ছিল। উকবার দাসী সালমাকে মজুরীর বিনিময়ে সন্তানদের দেখাশােনার জন্য নিয়ােজিত করেছিলেন। | হযরত নবী কারীমের (সা) পবিত্র স্ত্রীগণের মধ্যে হযরত খাদীজার স্থান সর্বোচ্চ। তিনি প্রথম স্ত্রী, চল্লিশ বছর বয়সে রাসূলুল্লাহর (সা) এর সাথে বিয়ে হয়। তাঁর জীবদ্দশায় নবী করীম (সা) আর কোন বিয়ে করেননি। হযরত ইবরাহীম ছাড়া রাসূলুল্লাহর (সা) সব সন্তানই তার গর্ভে পয়দা হয়েছেন।

ইসলামের জন্য খাদীজা (রাঃ) এর অবদান

উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজার ফযীলত ও মর্যাদা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি, আরবের সেই ঘাের অন্ধকার দিনে কিভাবে এক মহিলা-নিঃসঙ্কোচে রাসূলুল্লাহর (সা) নবুওয়াতে বিশ্বাস স্থাপন করছেন। তাঁর মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও সংশয় নেই। সেই ওহী নাযিলের প্রথম দিনটি, ওয়াকার নিকট গমন এবং রাসূলুল্লাহর (সা) নবী হওয়া সম্পর্কে তার দৃঢ় প্রত্যয় ঘােষণা- সবকিছুই গভীর ভাবে ভেবে দেখার বিষয়। রাসূলুল্লাহর (সা) নবুওয়াত লাভের পূর্ব থেকে খাদীজা যেন দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন, তিনি নবী হবেন। তাই জিবরাঈলের আগমনের পর ক্ষণিকের জন্যও তার মনে কোন রকম ইতস্তুত ভাব দেখা দেয়নি। এতে তার গভীর দুরদৃষ্টি ও তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নবুওয়াত লাভের পূর্বে ও পরে সর্বদাই তিনি রাসুলুল্লাহকে (সা) সম্মান করেছেন, তার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করেছেন। পচিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে মুহূর্তের জন্যও তার মনে কোন প্রকার সন্দেহ দানা বাঁধতে পারেনি। সেই জাহিলী যুগেও তিনি ছিলেন পূতঃপবিত্র । কখনাে মুর্তিপূজা করেননি। নবী করীম (সা) একদিন তাকে বললেন : 'আমি কখনাে লাত-উযযার ইবাদত করবাে না। খাদীজা বলেছিলেনঃ লা-উযযার কথা ছেড়ে দিন। তাদের প্রসঙ্গই উত্থাপন করবেন না । (মুসনাদে আহমাদ-৪/২২২)।

নবুওয়াতে মুহাম্মদীর (সা) ওপর প্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী এবং তার সাথে প্রথম সালাত আদায়কারীই শুধু তিনি নন। সেই ঘাের দুর্দিনে ইসলামের জন্য তিনি যে শক্তি যুগিয়েছেন চিরদিন তা অম্লান হয়ে থাকবে। ইসলামের সেই সূচনা লগ্নে প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) পরামর্শ দাত্রী। রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে বিয়ের পর সমস্ত সম্পদ তিনি স্বামীর হাতে তুলে দেন। যায়িদ বিন হারিসা ছিলেন ভার প্রিয় দাস। তাকেও তিনি স্বামীর হাতে তুলে দেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যায়িদকে বেশী ভালােবাসতেন, তাই উকে খুশী করার জন্য তাকে আযাদ করে দেন।

স্বামীর সেবায় খাদীজা (রাঃ) ছিলেন অতুলনীয়া

মক্কার একজন ধনী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজ হাতে স্বামীর সেবা করতেন। একবার তিনি বর্তনে করে রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য কিছু নিয়ে আসছিলেন। হযরত জিবরাইল (আ) রাসূলকে (সা) বললেন, আপনি তাকে আল্লাহ তা'আলা ও আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিন।” (বুখারী)।

হযরত রাসূলে করীম (সা) প্রিয়তমা স্ত্রী খাদীজার (রা) স্মৃতি তাঁর মৃত্যুর পরও ভােলেননি। তার মৃত্যুর পর বাড়ীতে যখনই কোন পশু জবেহ হতাে, তিনি তালাশ করে তাঁর বান্ধবীদের ঘরে ঘরে গােশত পাঠিয়ে দিতেন। হযরত আয়িশা বলেন ঃ যদিও আমি খাদীজাকে দেখিনি, তবুও তার প্রতি আমার ইর্ষা হতাে। অন্য কারো বেলায় কিন্তু এমনটি হতাে না। কারণ, নবী কারীম (সা) সবসময় তার কথা স্মরণ করতেন। মাঝে মাঝে হযরত আয়িশা (রা) রাসূলুল্লাহকে (সা) রাগিয়ে তুলতেন। রাসুল (সা) বলতেন। আল্লাহ আমার অন্তরে তার ভালােবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন।' | হযরত খাদীজার (রা) ওয়াফাতের পর তার বােন হালা একবার রাসূলে কারীমের (সা) সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তার কণ্ঠস্বর শুনেই বলে উঠলেন “হালা এসেছে? রাসূলুল্লাহর (সা) মানসপটে তখন খাদীজার স্মৃতি ভেসে উঠেছিল। আয়িশা (রা) বলে ফেললেন, 'আপনি একজন বৃদ্ধার কথা মনে করছেন যিনি মারা গেছেন। আল্লাহ তার চেয়ে অনেক উত্তম স্ত্রী আপনাকে দান করেছেন। জবাবে নবী কারীম (সা) বললেন 'কক্ষনাে না। মানুষ যখন আমাকে মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে, সে তখন আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। সবাই যখন কাফির ছিল, তখন সে মুসলমান। কেউ যখন আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, তখন সে আমাকে সাহায্য করেছে। তার গর্ভেই আমার সন্তান হয়েছে। আমরা মনে করি হযরত খাদীজার মূল্যায়ন এর চেয়ে আর বেশী কিছু হতে পারে না।

হযরত খাদীজার ফজীলাত সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে এসেছেঃ ধরা পৃষ্ঠের সর্বোত্তম নারী মরিয়ম বিনতু ইমরান ও খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ। হযরত জিবরাঈল (আ) বসে আছেন রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে। এমন সময় খাদীজা আসলেন, জিবরাইল (আ) রাসূলুল্লাহকে (সা) বললেন, 'তাকে মণি-মুক্তার তৈরী একটি বেহেশতী মহলের সুসংবাদ দিল। (বুখারী)




**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url