Mohammadia Foundation
https://www.mohammadiafoundationbd.com/2022/10/Siratunnabi27.html
সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-২৫) || হযরত হামযা (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণ ||
সিরাতুন নবী (সাঃ) পর্ব ২৫-এর আলোচ্য বিষয়সমূহঃ
হযরত হামযাহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ
মক্কার বিস্তৃত অঞ্চল অন্যায় ও অত্যাচারের ঘনকৃষ্ণ মেঘমালা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। সেই মেঘ মালার মধ্য থেকে হঠাৎ এক ঝলক বিদ্যুত চমকিত হওয়ায় মজলুমদের পথ আলোকিত হল, হামযাহ মুসলিম হয়ে গেলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা সংঘটিত হয় নবুওয়ত প্রাপ্তি ৬ষ্ঠ বর্ষের শেষভাগ। সম্ভবতঃ তিনি যুল হিজ্জাহ মাসে মুসলিম হয়েছিলেন।
হযরত হামযাহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
আল্লাহ তা‘আলা যাঁর উপর রহম করেন তাঁর পক্ষেই ইসলামের অমিয় ধারা থেকে এক আঁজলা পান করা সম্ভব হয়। যদিও হামযাহর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটিও আল্লাহর তা‘আলার খাস রহমতেরই ফলশ্রুতি তবুও তাঁর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে একটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ না করে পারা যায় না। ঘটনাটি হচ্ছে এরূপ, এক দিবসে আবূ জাহল সাফা পর্বতের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। নাবী কারীম (ﷺ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নাবী (ﷺ)-কে দেখে অনেক কটু কাটব্য করল এবং অপমানসূচক কথাবার্তা বললে নাবী কারীম (ﷺ) তার কথাবার্তার কোন উত্তর দিলেন না। আবূ জাহল একটি পাথর তুলে নিয়ে নাবীজী (ﷺ)-এর মাথায় আঘাত করল। এর ফলে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান হতে রক্তধারা প্রবাহিত হতে থাকল। তারপর সে ক্বাবা’হ গৃহের নিকটে কুরাইশগণের বৈঠকে গিয়ে যোগদান করল।
আব্দুল্লাহ বিন জুদয়ানের এক দাসী নিজগৃহ থেকে সাফা পর্বতের উপর সংঘটিত ঘটনাটি আদ্যোপান্ত প্রত্যক্ষ করছিল। হামযাহ (রাঃ) মৃগয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করা মাত্রই (তখনো তাঁর হাতে তীর ধনুক ছিল এমতাবস্থায়ঃ) সে তাঁকে আবূ জাহলের অন্যায় অত্যাচার এবং নাবী (ﷺ)-এর ধৈর্য ধারণের ব্যাপারটি বর্ণনা করে শোনাল। ঘটনা শ্রবণ করা মাত্র তিনি ক্রোধে ফেটে পড়লেন। কুরাইশগণের মধ্যে তিনি ছিলেন মহাবীর চাচা এবং মহাবলশালী এক যুবক। এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে তিনি এ সংকল্পবদ্ধ হয়ে ছুটে চললেন যে, যেখানেই আবূ জাহলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ হবে সেখানেই তিনি তার ভূত ছাড়াবেন। তিনি তার খোঁজ করতে করতে গিয়ে তাকে পেলেন মসজিদুল হারামে। সেখানে তিনি তার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘ও হে গুহ্যদ্বার দিয়ে বায়ূ নিঃসরণকারী! আমার ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তুমি গালি দিয়েছ এবং পাথর দিয়ে আঘাত করেছ। অথচ আমি তার দ্বীনেই আছি।
এরপর তিনি কামানের দ্বারা তার মাথার উপর এমনভাবে আঘাত করলেন যাতে সে আহত হয়ে গেল। এর ফলে আবূ জাহলের বনু মখযুম ও হামযাহ (রাঃ)-এর বনু হাশিম গোত্রদ্বয় একে অপরের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। কিন্তু আবূ জাহল এভাবে সকলকে নিরস্ত করল যে, আবূ উমারাকে যেতে দাও। আমি প্রকৃতই তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে গালমন্দ এবং আঘাত দিয়েছি।[১]
প্রাথমিক পর্যায়ে হামযাহর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটি ছিল কিছুটা যেন ভ্রাতুষ্পুত্রের প্রতি আবেগের উৎস থেকে উৎসারিত। মুশরিকগণ ভ্রাতুষ্পুত্রকে কষ্ট দিত। এটা বরদাস্ত করা তাঁর পক্ষে খুবই কঠিন ছিল। কাজেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে হয়তো তার দুঃখ কষ্টের কিছু লাঘব হতে পারে এ ধারণার বশবর্তী হয়েই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।[২] পরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্তরে ইসলাম প্রীতি জোরদার করে দেয়ায় তিনি দ্বীনের রশি মজবুত করে ধরলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলামানদের শক্তি এবং সম্মান দুই-ই বৃদ্ধি পেল।
তথ্যসূত্রঃ
[১] শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাবঃ মোখতারুস সীরাহ পৃঃ ৬৬, আল্লামা মানসুরপুরীঃ রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৬৮ পৃঃ। ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ২৯১-২৯২ পৃঃ।
[২] শাইখ আবদুল্লাহ মুখতাসারুস সীরাহ পৃঃ ১০১।
*********************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন