সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-৪৫) || অঙ্গীকারের পর নেতা নির্বাচন এবং শয়তান কর্তৃক অঙ্গীকারের কথা ফাঁস ||





আক্বাবার অঙ্গীকারের পর বারোজন নেতা নির্বাচন

অঙ্গীকার পর্ব সম্পন্ন হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অঙ্গীকারাবদ্ধ লোকদের মধ্যে থেকে বারোজন নেতা নির্বাচন করলেন। নির্বাচিত ব্যক্তিগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন এবং আপন আপন সম্প্রদায়ের মধ্যে অঙ্গীকারের ধারাসমূহ বাস্তবায়ণের ব্যাপারে জিম্মাদারী ও দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এরূপ ইঙ্গিত ছিল যে, নিজেদের মধ্যে থেকে তাঁরা এমন সব নেতা নির্বাচন করবেন যাঁরা নিজ নিজ সম্প্রদায়ের সমস্যাবলী সমাধানের ব্যাপারে যথোপযোগী ভূমিকা পালন করবেন। তাঁর ইঙ্গিতে তড়িঘড়ি নেতা নির্বাচন পর্ব সমাপ্ত হল। নয়জন খাযরাজ এবং তিন জন আউস গোত্র থেকে মোট বারজন নেতা নির্বাচন করা হল। 

খাযরাজ গোত্রের নেতাগণের নাম হচ্ছেন যথাক্রমেঃ
(১) আস’আদ বিন যুরারাহ বিন আদাস (২) সা’দ বিন রাবী’আহ বিন ‘আমর (৩) আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ বিন সা’লাবাহ (৪) রাফি বিন মালিক বিন আজলান (৫) বারা বিন মা’রুর বিন সাখর (৬) আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর বিন হারাম (৭) উবাদা বিন সামিত বিন ক্বায়স (৮) সা‘দ বিন উবাদাহ বিন অইম (৯) মুনযির বিন ‘আমর বিন খুনাইস।

আউস গোত্রের নেতাগণ হচ্ছেন যথাক্রমেঃ
(১) উসাইদ বিন হুযাইর বিন সামাক (২) সা’দ বিন খায়সামা বিন হারিস এবং (৩) রিফাআ’হহা বিন আব্দুল মুনযির বিন যুবাইর।[১]

যখন এ সকল নেতার নির্বাচন পর্ব সমাপ্ত হল তখন নাবী কারীম (ﷺ) তাঁদের নিকট থেকে পুনরায় অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, ঈসা (আঃ)-এর পক্ষ যেভাবে হাওয়ারীগণের উপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল সেভাবে আজ থেকে আপনাদের উপর আপন আপন সম্প্রদায়ের যিম্মাদারী বা দায়িত্ব অর্পিত হল। আর আমার উপর যিম্মাদারী বা দায়িত্ব ভার রইল সমগ্র মুসলিম জাতির। তাঁরা সকলে এক বাক্যে বলে উঠলেন ‘জী হ্যাঁ’’।[২]

আক্বাবার অঙ্গীকারের কথা শয়তান ফাঁস করে দিল

অঙ্গীকার সংক্রান্ত কাজকর্ম সম্পূর্ণ হয়ে গেছে এবং লোকজনেরা এখন নিজ নিজ গন্তব্য স্থান অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যাবেন এমন সময় এক শয়তান ব্যাপারটি জেনে ফেলে। যেহেতু ব্যাপারটি সে জানতে পারে একেবারে শেষ মুহূর্তে এবং তার হাতে এতটুকু সময় ছিল না যে, সে কুরাইশ মুশরিকদের নিকট এ খবর পাঠিয়ে দেয় এবং তারা আকস্মিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে এ সুড়ঙ্গের মধ্যেই এদের সকলকে নিঃশেষ করে ফেলে, সেহেতু সে (শয়তান) তাড়াতাড়ি পাহাড়ে একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে এমন উচ্চ কণ্ঠে (যা কদাচিৎ কেউ শুনে থাকবে) ডাক দিল, ‘হে তাঁবু ওয়ালা! মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে দেখ বেদীনেরা এখন তার সঙ্গে রয়েছে। তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য তারা এখানে একত্রিত হয়েছে।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘এ হচ্ছে এ সুড়ঙ্গের শয়তান। হে আল্লাহর দুশমন! আমি তোর জন্য অতিসত্ত্বর বেরিয়ে পড়ছি। এরপর তিনি সকলকে বললেন, ‘তোমরা সকলে নিজ নিজ আস্তানায় চলে যাও।[৩]

কুরাইশদের উপর আক্রমণের জন্য আনসারদের প্রস্তুতি

শয়তানের কণ্ঠ নিঃসৃত শব্দ শ্রবণ করে, আব্বাস বিন উবাদাহ বিন নাযলাহ বললেন, ‘ঐ সত্ত্বার শপথ যিনি ন্যায়ের সঙ্গে আপনাকে প্রেরণ করেছেন, আপনি যদি চান তাহলে আমরা কালই তরবারী নিয়ে মিনাবাসীর উপর আক্রমণ চালাই। তিনি (ﷺ) বললেন, ‘আমাকে এ নির্দেশ দেয়া হয়নি।’ অতএব আপনারা নিজ নিজ আস্তানায় চলে যান।’ কাজেই লোকেরা নিজ নিজ আস্তানায় ফিরে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। এভাবেই সকাল হয়ে গেল।[৪]

তথ্যসূত্রঃ
[১] কেউ কেউ যুবাইর এর পরিবর্তে যুনাইর বলেছেন।
[২] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৪৩-৪৪৬ পৃঃ।
[৩] যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৫১ পৃঃ।
[৪] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৪৮ পৃঃ।





******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url