সিরাতুন নবী (সাঃ)- ৭০ || বদর যুদ্ধের পর ছোট ছোট যুদ্ধ ও অভিযানসমূহ ||





বদর যুদ্ধের পর ছোট ছোট যুদ্ধ ও অভিযানসমূহ


সিরাতুন নবী (সাঃ) ৭০-তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

‘কুদর’ নামক স্থানে গাযওয়ায়ে বনী সুলাইমের যুদ্ধ

বদর যুদ্ধের পর সর্ব প্রথম মুসলিম গোয়েন্দা বাহিনী সরবরাহ করেন তা ছিল গাত্বাফান গোত্রের শাখা বনু সুলাইমের লোকেরা মদীনার উপর চড়াও হওয়ার জন্যে সৈন্য সমাবেশ করছে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নাবী কারীম (ﷺ) দু’শ জন উষ্ট্রারোহীকে সঙ্গে নিয়ে আকস্মিকভাবে তাদের নিজেদের এলাকায় ধাওয়া করেন এবং কুদর নামক স্থানে তাদর মনযিল পর্যন্ত পৌঁছেন। বনু সুলাইম গোত্র এ আকস্মিক আক্রমণে একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে এবং উপায়ন্তর না দেখে উপত্যকার মধ্যে পাঁচশটি উট ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এগুলোর উপর মদীনার মুসলিম সেনাবাহিনী দখলদার হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এগুলোর এক পঞ্চমাংশ বের করে নিয়ে অবশিষ্ট মাল গণীমত হিসেবে মুজাহিদদের মধ্যে বন্টন করে দেন। প্রত্যেকের অংশে দুটি করে উট পড়ে। এ গাযওয়ায় ইয়াসার নামক একটি গোলাম হাতে আসে যাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আযাদ করে দেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বনু সুলাইমের বাসভূমিতে তিন দিন অবস্থান করার পর মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
এ গাযওয়া হিজরী ২য় সনের শাওয়াল মাসে বদর হতে প্রত্যাবর্তনের মাত্র সাত দিন পরে সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধকালীন সময়ে সিবা’ ইবনু ‘উরফুত্বাহ (রাঃ)-কে এবং মতান্তরে ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ)-কে মদীনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল।[১]

* কুদর প্রকৃত পক্ষে মেটোখাকীরং এর এক প্রকার পাখী। কিন্তু এখানে বানু সুলাইমের একটি প্রস্রবণ উদ্দেশ্য, এটা নজদের মধ্যে অবস্থিত। মক্কা হতে (নজদের পথে) সিরিয়াগামী রাজপথের উপর অবস্থিত।

[১] যা’দুল মা’আদ ২য় খন্ড ৯০ পৃঃ, ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ৪৩-৪৪ পৃঃ, মুখতাসার সীরাহ শায়খ আব্দুল্লাহ প্রণীত ২৩৬।


নবী করীম (সাঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং উমায়ের-এর ইসলাম গ্রহণ

বদর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মুশরিকরা ক্ষোভে ও ক্রোধে অগ্নি শর্মা হয়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে হত্যা করে বদর যুদ্ধের গ্লানি ও অপমানের প্রহিশোধ গ্রহণের জন্য ভীষণ ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, দু’ যুবক নিজ বুদ্ধিবলে এ সকল মতভেদ ও এখতেলাফের বুনিয়াদ ও বদর যুদ্ধের অবমাননাকর পরিস্থিতির মূলোৎপাটন করবে অর্থাৎ নাবী (ﷺ)-কে হত্যা করবে।

ফলে বদর যুদ্ধের পরের ঘটনা হল ওহাব ইবনে উমায়ের জুমাহী, যে ছিল কুরাইশদের সব চাইতে বড় শয়তান এবং মক্কাতে নাবী কারীম (ﷺ) ও সাহাবীগণ (রাঃ)-কে যন্ত্রণা দেয়ার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করত তার পুত্র ওহাব ইবনে উমায়ের বদর যুদ্ধে মুসলিমদের হাতে বন্দী হয়েছিল। এ উমায়ের এক দিন হাতীমে বসে সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার সঙ্গে বদরের কূঁয়ায় নিক্ষিপ্ত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে আলোচনা করছিল। এতে সাফওয়ান বলে উঠল, ‘আল্লাহর শপথ! এরপর আমাদের বেঁচে থাকার আর কোন আকর্ষণ থাকতে পারে না।’
====================
উত্তরে উমায়ের বলল, ‘আল্লাহর কসম! তুমি সত্যই বলেছ। দেখ, আমার যদি ঋণ না থাকত যা পরিশোধ করার মতো অবস্থা বর্তমানে আমার নেই এবং আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে যদি না থাকত যা আমার অভাবে বিনষ্ট হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে, তবে এখনই আমি বাহনে আরোহণ করে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কাছে যেতাম এবং তাকে হত্যা করে ফেলতাম। কেননা, তার কাছে যাওয়ার কারণ আমার মজুদ রয়েছে। আমার পুত্র তার নিকট বন্দী রয়েছে। সাফওয়ান তার এ কথার উত্তরে বলল, বেশ, তোমার সমস্ত ঋণের আমি যিম্মাদার হচ্ছি এবং তোমার পরিবার প্রতিপালনের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। তোমার সন্তানেরা হবে আমার সন্তান।

উমায়ের বলল, ‘সাবধান! ব্যাপারটা যেন গোপন থাকে।’ সিদ্ধান্ত হল, সে তার বন্দী সন্তানকে মুক্ত করার অজুহাত নিয়ে মদীনায় গমন করবে এবং সুযোগ মতো অতর্কিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র উপর তরবারী চালাবে। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এ কাজ করতে গিয়ে একাধিক বারের বেশী আঘাত করা হয়ত বা সম্ভব নাও হতে পারে এবং এর ফলে নাবী (ﷺ) আহত হয়েও বেঁচে যেতে পারেন। এ সব ভেবে-চিন্তে উমায়েরের তরবারী খানা তীব্র গরলে সিক্ত করা হল যাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে কোন রকমে আঘাত করতে পারলেই তার প্রাণ রক্ষার ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মসজিদে বসে রয়েছেন। উমার (রাঃ) এবং আরও কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) বাইরে বসে বদর যুদ্ধ সম্বন্ধে কথোপকথন করছেন, এমন সময় গলায় তরবারী ঝুলিয়ে উমায়ের মসজিদের দ্বারদেশে উপস্থিত হলো। তখন উমার (রাঃ) তাকে কুরাইশদের অন্যতম শয়তান বলে উল্লেখ করলেন। তার কুটিল চাহনি ও সন্দেহজনক হাবভাব দেখে উমার (রাঃ)-এর মনে খটকা লাগল। তিনি সকলকে সতর্ক হতে ইঙ্গিত করলেন এবং কয়েকজন আনসারকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চারদিকে উপবেশন করার আদেশ দিয়ে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে অবস্থা নিবেদন করলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটু মধুর হাস্য করে বললেন, ‘বেশ, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ উমার (রাঃ) তখন উমায়েরের কণ্ঠ বিলম্বিত তরবারী ধরে টানতে টানতে তাকে নিয়ে মসজিদের মধ্যে উপস্থিত হলেন। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে ছেড়ে দিতে আদেশ করলেন এবং উমায়েরকে তাঁর কাছে আসতে বললেন। সে নিকটে এসে বলল, ‘আপনাদের প্রাতঃকাল শুভ হোক।’ নবী (ﷺ) বললেন, ‘আল্লাহ আমাদেরকে এর চাইতে অনেক ভাল অভিবাদন দান করেছেন অর্থাৎ সালাম, যা হচ্ছে জান্নাতীদের অভিবাদন।’
তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উমায়েরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘উমায়ের, কী মনে করে এসেছো?’ সে উত্তরে বলল, ‘হুযূর এ বন্দীদের জন্যে আপনি দয়া করুন।’ তিনি বললেন, ‘এ তো খুব ভাল কথা। কিন্তু এ তরবারী এনেছো কেন?’

উমায়ের উত্তরে দিলো ‘তরবারীর কপাল পুড়ুক, এটা আপনাদের কী ক্ষতি করতে পেরেছে?’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে পুনঃ পুনঃ সত্য বলতে নির্দেশ দিলেন, কিন্তু সে নানা প্রকার টাল বাহানা করে এ কথাই বলতে থাকল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “তুমি ও সাফওয়ান হাতীমে বসে নিহত কুরাইশদের (বদরের) কুয়ায় নিক্ষেপ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেছিলে। অতঃপর তুমি বলেছ, আমার উপর যদি কোন ঋণ না থাকতো, এবং আমার পরিবারবর্গের ব্যাপারে আশংকা না করতাম- মদীনায় গিয়ে মুহাম্মাদকে হত্যা করতাম। তারপর সাফওয়ান আমাকে হত্যা করার বিনিময়ে তোমার ঋণ এবং পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অথচ আল্লাহ তা’আলা আমার ও তোমার মাঝে বাধাদানকারী”।

‘উমায়ের ভয়-ভক্তি বিজড়িত কণ্ঠে ধীরে ধীরে বলতে লাগল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহ রাসূল। আসমানী যে কল্যাণ আপনি নিয়ে এসেছেন ও আপনার উপর যে ওহী অবতীর্ণ হতো সেগুলোকে আমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছি। অতচ আপনি এমন বিষয় স্পষ্টভাবে বলে দিলেন যা আমি ও সাফওয়ান ব্যতীত আর কেউ জানেনা। অতএব আল্লাহর শপথ! আমি এক্ষণে জানতে পারলাম যে, এটা একমাত্র আল্লাহ আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার জন্যেই সমস্ত প্রশংসা যে, তিনি আমাকে সত্যের জ্যোতি সুদর্শনের সৌভাগ্য প্রদান করেছেন এবং আমাকে এক পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। অতঃপর ‘উমায়ের সত্যের সাক্ষ্য দিলেন।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘তোমাদের এ ধর্ম ভ্রাতাকে উত্তমরূপে ধর্ম ও কুরআন শিক্ষা দাও এবং তার প্রার্থিত বন্দীদের মুক্তি দাও।’

কিছুকাল পরে উমায়ের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে নিবেদন করলেন, ‘মহাত্মন! আমি আল্লাহর জ্যোতিকে নির্বাপিত এবং সত্যের সেবকদেরকে নির্যাতিত করতে সাধ্যপক্ষে চেষ্টার ত্রুটি করিনি। এরূপে যে মহাপাপ আমি সঞ্চয় করেছি, এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি মক্কায় গিয়ে যথাসাধ্য ইসলাম প্রচার করতে থাকি।’ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উমায়ের (রাঃ)-কে অনুমতি দিলেন এবং স্পর্শমণির সংশ্রবে নতুন জীবন লাভ করে তিনি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করলেন।
এদিকে সাফওয়ান মক্কার লোকদেরকে ইঙ্গিতে বলে রেখেছিল, ‘দেখে নিয়ো, আমি শীঘ্রই এমন এক শুভ সংবাদ দিতে পারবো যার ফলে তোমরা বদর যুদ্ধের সমস্ত শোক ভুলে যাবে।’ কিন্তু উমায়েরকে দেখে সে অবাক হয়ে রইলো। একি! এহেন দুর্ধর্ষ উমায়ের; তার উপরও মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর যাদু খেটে গেল, যাহোক, উমায়ের আর কোন দিকে দৃকপাত না করে নিজের কর্তব্য পালন করে যেতে লাগলেন। তার আদর্শে ও প্রচার মাহাত্মে মক্কার বহু সংখ্যক নরনারী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে ধন্য হয়েছিলেন।[২]

[২] ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড ৬৬১-৬৬৩ পৃঃ।


গাযওয়ায়ে বনী ক্বাইনুক্কা’ বা ক্বাইনুক্কা’ অভিযান

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মদীনায় আগমনের পর ইহুদীদের সঙ্গে তিনি যে চুক্তি করেছিলেন তার দফাগুলো ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পূর্ণ চেষ্টা ও ইচ্ছা ছিল যে, এ চুক্তি পত্রে যে সব শর্ত আরোপিত হয়েছে সেগুলো যেন পুরোপুরিভাবে পালিত হয়। সুতরাং মুসলিমরা এমন এক পদও অগ্রসর হননি যা এ চুক্তি নামার কোন একটি অক্ষরেরও বিপরীত হয়। কিন্তু ইহুদীদের ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতা, হঠকারিতা এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গে পরিপূর্ণ। তারা অতি তাড়াতাড়ি তাদের পূর্ব স্বভাবের দিকে ফিরে গেল। তারা মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং গন্ডগোল বাধাবার চেষ্টায় লেগে পড়লো। এর একটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে।


ইয়াহুদীদের প্রতারণার একটি নমুনা

ইবনু ইসহাক্ব বর্ণনা করেছেন যে, শাস ইবনু ক্বায়স নামক একজন বৃদ্ধ ইয়াহুদী ছিল। তার পা যেন কবরে লটকানো ছিল (অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল)। সে মুসলিমদের প্রতি চরম শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে একদা সাহাবীগণের (রাঃ) একটি মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করছিল যে মজলিসে আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্রেরই লোকেরা পরস্পর কথোপকথন করছিলেন। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে তার অন্তর হিংসায় জ্বলে উঠল এবং তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পথ সে অন্বেষণ করতে লাগল। ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ঐ দু’সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘকালব্যাপী বিরাজিত শত্রুতা ইসলাম পরবর্তীকালে প্রেম প্রীতিতে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল এবং এভাবে তাদের দীর্ঘ কালের দুঃখ-দুর্দশার অবসান হয়েছিল। সমবেত জনতাকে দেখে সে বলতে লাগল এখানে বনু কাইলার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ একত্রিত হয়েছে। আল্লাহর কসম! এ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট দিয়ে আমার গমন সঙ্গত হবে না। তাই সে তার এক যুবক সঙ্গীকে নির্দেশ দিল যে, সে যেন তাদের মজলিসে যায় এবং তাদের সঙ্গে বসে গিয়ে বুআস যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী অবস্থা আলোচনা করে এবং ঐ সময়ে উভয় পক্ষ হতে যে সকল কবিতা পাঠ করা হয়েছিল ওগুলোর কিছু কিছু পাঠ করে শুনিয়ে দেয়। ঐ যুবক ইহুদীকে যা যা বলা হয়েছিল ঠিক সে ঐ রূপই করল।
ঐ কবিতাগুলো শোনা মাত্রই উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে পুরনো হিংসা বিদ্বেষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অনেক বাক বিতন্ডা হয়ে গেল। যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে উভয় পক্ষের যোদ্ধাগণ হার্রাহ নামক স্থানে সমবেত হলেন।

এ দুঃসংবাদ পাওয়া মাত্রই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুহাজির সাহাবীগণ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের মাঝে আগমন করে বললেন,

‏‏(‏يا معشر المسلمين، الله الله، أبدعوي الجاهلية وأنا بين أظهركم بعد أن هداكم الله للإسلام، وأكرمكم به، وقطع به عنكم أمر الجاهلية، واستنقذكم به من الكفر وألف بين قلوبكم‏)‏

‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! আল্লাহ ক্ষমা করুন, এ কী হচ্ছে? আমার জীবদ্দশাতেই জাহেলিয়াতের চিৎকার? অথচ আল্লাহ তোমাদেরকে মুসলিম করেছেন, ইসলামের দ্বারা জাহেলিয়াতের মূলোৎপাটন করে তোমাদিগকে কুফর হতে মুক্ত করে তোমাদের পরস্পরের হৃদয়কে এক অপরের সাথে বেঁধে দিয়েছেন।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এ কথা শুনে নিজেরা নিজেদেরকে সামলিয়ে নিলেন এবং অনুধাবন করলেন যে, এটা শয়তানের প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারপর তাঁরা পরস্পর গলায়-গলায় মিলে ক্রন্দন এবং তওবাহ করলেন। এভাবে শাস ইবনু কায়েসের প্রতি হিংসার আগুন নির্বাপিত হল।[৩]

এটা হচ্ছে কুচক্রীপনা ও গন্ডগোলের একটা নমুনা যা ইহুদীরা মুসলিমদের মধ্যে সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে থাকত। এ কাজের জন্যে তারা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করত এবং মিথ্যা রটনা রটাতে থাকত। তারা সকালে মুসলিম হয়ে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যেত এবং এভাবে সরল প্রাণ মুসলিমদের অন্তরে সন্দেহের বীজ বপন করার চেষ্টায় লেগে থাকত। কোন মুসলমানের সাথে তাদের অর্থের সম্পর্ক থাকলে তারা তার জীবিকার পথ সংকীর্ণ করে দিত। আর তাদের উপর মুসলিমদের ঋণ থাকলে তারা তাদের ঋণ পরিশোধ করত না, বরং অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করত এবং বলত তোমাদের ঋণ তো আমাদের উপর ঐ সময় ছিল যখন তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মের উপর ছিলে। কিন্তু এখন তোমরা ঐ ধর্ম যখন পরিবর্তন করেছো তখন আমাদের নিকট হতে ঋণ আদায়ের তোমাদের কোন পথ নেই।[৪]

প্রকাশ থাকে যে, ইহুদীরা এ সব কার্যকলাপ বদর যুদ্ধের পূর্বেই শুরু করেছিল এবং তাদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করার সূচনা করে ফেলেছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীদের অবস্থা এই ছিল যে, তারা ইহুদীদের হিদায়াত প্রাপ্তির আশা করে তাদের এ সব কার্যকলাপের উপর ধৈর্য ধারণ করে চলছিলেন। এছাড়া এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, যেন ঐ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার কোন ব্যাঘাত না ঘটে।

[৩] ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৫৫৫-৫৫৬ পৃঃ।
[৪] সূরাহ আল-ইমরান প্রভৃতির তাফসীর, মুফাসসিরগণ ইহুদীদের এ সব কার্যকলাপ বর্ণনা দিয়েছেন।


বনু ক্বাইনুক্কা’র অঙ্গীকার ভঙ্গ

ইহুদীরা যখন দেখল যে, আল্লাহ তা‘আলা বদর প্রান্তরে মুসলিমগণকে চরমভাবে সাহায্য করে তাদেরকে মর্যাদা মন্ডিত করলেন এবং দূরবর্তী নিকটবর্তী প্রতিটি স্থানের বাসিন্দাদের অন্তরে তাদের প্রভাব প্রতিফলিত হল, তখন তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসায় তারা ফেটে পড়ল। প্রকাশ্যভাবে তারা শত্রুতার ভাব প্রদর্শন করতে লাগল এবং খোলাখুলিভাবে তারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল ও দুঃখ কষ্ট দিবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হিংসুটে ও প্রতিহিংসাপরায়ন ছিল কাব বিন আশরাফ, যার আলোচনা সামনে আসছে। অনুরূপভাবে ইহুদীদের তিনটি গোত্রের মধ্যে সর্বাধিক হিংসুটে ছিল বনু ক্বাইনুক্কা’ গোত্রটি। এরা সকলেই মদীনার মধ্যে অবস্থান করত এবং তাদের মহল্লাটি তাদের নামেই কথিত ছিল। পেশার দিকে দিয়ে তারা ছিল স্বর্ণকার, কর্মকার ও পাত্র নির্মাতা। এ কারণে ওদের প্রত্যেকের নিকটে বহুল পরিমাণে সমরাস্ত্র মওজুদ ছিল। তাদের যোদ্ধার সংখ্যা সাতশত। তারা ছিল মদীনার সবচেয়ে বাহাদুর ইহুদী গোষ্ঠী। তাদের সর্বপ্রথম অঙ্গীকার ভঙ্গের বিস্তারিত বিবরণ হচ্ছে নিম্নরূপ :

আল্লাহ তা‘আলা যখন বদর প্রান্তরে মুসলিমগণকে বিজয় দান করলেন তখন তাদের বিরুদ্ধাচরণ চরমে উঠল। তারা তাদের প্রতিহিংসা, অন্যায়াচরণ এবং ঝগড়া বাধানোর কার্যকলাপের সীমা আরো বাড়িয়ে দিল। সুতরাং যে মুসলিমই তাদের বাজারে যেতেন তাঁরই তারা ঠাট্টা তামাশা এবং বিদ্রূপাত্মক আচরণ শুরু করে দিত এবং নানাভাবে কষ্ট দিত। এমন কি মুসলিম মহিলাদের নিয়েও তারা উপহাস ও ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে কসুর করত না।

এভাবে পরিস্থিতির যখন চরমে পৌঁছল এবং তাদের ঔদ্ধত্যপনা বেড়েই চলল তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং বনু ক্বাইনুক্কা’র বাজারে উপস্থিত হলেন এবং ইহুদীদেরকে ডেকে নানা প্রকার হিতোপদেশ প্রদান করলেন। ইমাম আবূ দাউদ এবং অন্যান্যরা ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বদর প্রান্তরে কুরাইশদেরকে পরাজিত করে যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন বনু ক্বাইনুক্কা’র বাজারে ইহুদীদের একত্রিত করে বললেন, ‘হে ইহুদী সমাজ, তোমরা আনুগত্য স্বীকার কর, অন্যথায় কুরাইশদের মতো তোমাদেরকেও বিপন্ন হতে হবে।’

কিন্তু তারা তাঁর উপদেশ গ্রহণ করল না। চরম ধৃষ্টতা সহকারে তারা বলতে লাগল, ‘হে মুহাম্মাদ কতিপয় আনাড়ী কুরাইশকে হত্যা করেছ বলে গর্বিত হয়ো না। যুদ্ধ সম্বন্ধে তারা একেবারে অনভিজ্ঞ ছিল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যখন যুদ্ধ হবে তখন বুঝবে যে, ব্যাপারটি কত কঠিন।’ তাদের এ সবের জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

‏(‏قُل لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا سَتُغْلَبُوْنَ وَتُحْشَرُوْنَ إِلٰى جَهَنَّمَ وَبِئْسَ الْمِهَادُ‏ قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِيْ فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَأُخْرَى كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ وَاللهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاء إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَعِبْرَةً لَّأُوْلِي الأَبْصَارِ‏)‏ ‏[‏آل عمران 12، 13‏]

‘‘যারা কুফরী করে তাদেরকে বলে দাও, ‘তোমরা অচিরেই পরাজিত হবে আর তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকানো হবে, ওটা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থান’! ১৩. তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন আছে সেই দু’দল সৈন্যের মধ্যে যারা পরস্পর প্রতিদ্বনদ্বীরূপে দাঁড়িয়েছিল (বাদ্র প্রান্তরে)। একদল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছিল এবং অপরদল ছিল কাফির, কাফিররা মুসলিমগণকে প্রকাশ্য চোখে দ্বিগুণ দেখছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে স্বীয় সাহায্যের দ্বারা শক্তিশালী করে থাকেন, নিশ্চয়ই এতে দৃষ্টিমানদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।’ (আলু-‘ইমরান ৩ : ১২-১৩)
মোট কথা, বনু ক্বাইনুক্কা’ যে জবাব দিয়েছিল তাতে পরিস্কারভাবে যুদ্ধের ঘোষণাই ছিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ক্রোধ সম্বরণ করে ধৈর্য্য ধারণ করেন। অন্যান্য মুসলিমগণও ধৈর্য্য ধারণ করে পরবর্তী অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

এদিকে ঐ হিতোপদেশের পর বনু ক্বাইনুক্কা’র ইহুদীগণের ঔদ্ধত্য আরও বেড়ে যায় এবং অল্প দিনের মধ্যেই তারা মদীনাতে হাঙ্গামা শুরু করে দেয়। এর ফলশ্রুতিতে তারা নিজের কবর নিজের হাতেই খনন করে এবং নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তোলে।

আবূ আওন থেকে ইবনু হিশাম বর্ণনা করেছেন যে, এ সময়ে জনৈকা মুসলিম মহিলা বানুক্বাইনুক্কা’র বাজারে দুধ বিক্রী করে বিশেষ কোন প্রয়োজনে এক ইহুদী স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে বসে পড়েন। কয়েকজন দুর্বৃত্ত ইহুদী তাঁর মুখের অবগুণ্ঠন খোলাবার অপচেষ্টা করে, তাতে মহিলাটি অস্বীকার করেন। এ স্বর্ণকার গোপনে মহিলাটির পরিহিত বস্ত্রের এক প্রান্ত তার পিঠের উপরে গিরা দিয়েছিল, তিনি তা বুঝতেই পারলেন না। তিনি উঠতে গিয়ে বিবস্ত্র হয়ে পড়লেন। এ ভদ্র মহিলাকে বিবস্ত্র অবস্থায় প্রত্যক্ষ করে নর পিশাচের দল হো হো করে হাত তালি দিতে থাকল। মহিলাটি ক্ষোভে ও লজ্জায় মৃত প্রায় হয়ে আর্তনাদ করতে লাগলেন। তা শুনে জনৈক মুসলিম ঐ স্বর্ণকারকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রত্যুত্তরে ইহুদীগণ মুসলিমটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যা করে।

এরপর নিহত মুসলিমটির পরিবার বর্গ চিৎকার করে ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের নিকট ফরিয়াদ করলেন। এর ফলে মুসলিম ও বনু ক্বাইনুক্কা’র ইহুদীদের মধ্যে সংঘাত বেধে গেল।[৫]

[৫] ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ৪৭ পৃঃ।


বনু ক্বাইনুক্কা গোত্রকে অবরোধ, আত্মসমর্পণ ও নির্বাসন

এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি মদীনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবূ লুবাবাহ ইবনু আব্দুল মুনযির (রাঃ)-এর উপর অর্পণ করে স্বয়ং হামযাহ ইবনু আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর হাতে মুসলিমদের পতাকা প্রদান করে আল্লাহর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বনু ক্বাইনুক্কা’র দিকে ধাবিত হলেন। ইহুদীরা তাদেরকে দেখামাত্র দূর্গের মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে দূর্গের দ্বারগুলো উত্তমরূপে বন্ধ করে দিলো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কঠিনভাবে তাদের দূর্গ অবরোধ করলেন। এ দিনটি ছিল শুক্রবার, হিজরী ২য় সনের শাওয়াল মাসের ১৫ তারীখ। ১৫ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ যুলকাদার নতুন চাঁদ উদয় হওয়া অবধি অবরোধ জারী থাকল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের অন্তরে ভীতি ও সন্ত্রস্তভাব সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর নীতি এটাই যে, যখন তিনি কোন সম্প্রদায়কে পরাজিত ও লাঞ্ছিত করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে থাকেন। অবশেষে বনু ক্বাইনুক্কা’ আত্মসমর্পণ করল এবং বলল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের জান মাল, সন্তান-সন্ততি এবং নারীদের ব্যাপারে যা ফায়সালা করবেন তারা তা মেনে নিবে। তারপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র নির্দেশক্রমে তাদের সকলকে বেঁধে নেয়া হয়।
কিন্তু এ স্থানে আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার কপট চাল চালবার সুযোগ গ্রহণ করল। সে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অত্যন্ত অনুনয় বিনয় করে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ (ﷺ) আপনি এদের প্রতি সদয় ব্যবহার করুন।’ প্রকাশ থাকে যে, বনু ক্বাইনুক্কা’ গোত্র খাযরাজ গোত্রের মিত্র ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারে বিলম্ব করলেন। সে পীড়াপীড়ি করতে থাকল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু শেষে সে তাঁর (ﷺ) জামার বুকের অংশবিশেষ ধরে ফেলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিশেষ বিরক্তি ও ক্রোধ সহকারে পুনঃপুনঃ তাকে ছেড়ে দিতে বললেন, কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও সে পুনঃ পুনঃ উত্তর করতে লাগল ‘আমি কোন মতেই ছাড়বো না যে পর্যন্ত না আপনি তাদের উপর দয়াপরবশ হন। চারশ জন খোলা দেহের যুবক এবং তিনশ জন বর্মপরিহিত যুবককে আপনি একই দিনের সকালে কেটে ফেলবেন, অথচ তারা আমাকে কঠিন বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিল। আল্লাহর কসম! আমি কালচক্রের বিপদের আশঙ্কা করছি।

অবশেষে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ধন মাল হস্তগত করলেন যেগুলোর মধ্যে তিনটি কামান, দুটি বর্ম, তিনটি তরবারী এবং তিনটি বর্শা নিজের জন্যে বেছে নেন এবং গনীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ বের করেন। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) গণীমত একত্রিত করার কাজ সম্পাদন করেন।[৬]

[৬] যা’দুল মাআদ ২য় খন্ড ৭১ ও ৯১ পৃঃ এবং ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৪৭-৪৯ পৃঃ।





*******************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url