সিরাতুন নবী (সাঃ) - ৮০ || উহুদ ও আহযাব যুদ্ধের মধ্যবর্তী সারিয়্যাহ ও অভিযানসমূহ || রাযী’র ঘটনা ||






উহুদ ও আহযাব যুদ্ধের মধ্যবর্তী সারিয়্যাহ ও অভিযানসমূহ

উহুদের অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক পরিস্থিতি মুসলিমগণের সুখ্যাতি ও শক্তি সামর্থ্যের উপর দারুণ প্রতিক্রিয়ার সূচনা করে। এতে তাঁদের মনোবলের জোয়ার ধারায় কিছুটা ভাটার সৃষ্টি হয়ে যায় এবং এর ফলে বিরুদ্ধবাদীগণের অন্তর থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম ভীতি হ্রাস পেতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে মুসলিমগণের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যাদি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকে এবং বিভিন্ন দিক থেকে মদীনার উপর বিপদাপদ ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়ে যায়। ইহুদী, মুনাফিক্ব এবং বেদুঈনগণ প্রকাশ্য শত্রুতায় লিপ্ত হয় এবং মুসলিমগণকে অপমান করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। তাদের এ চক্রান্ত ও শত্রুদের উদ্দেশ্য ছিল এমনভাবে ইসলামের মূলোৎপাটন করে ফেলা যাতে কোনদিনই মুসলিমগণ আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। উহুদের পর দুই মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই এ লক্ষে বনু আসাদ গোত্র মদীনা আক্রমণের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে।
অন্যদিকে চতুর্থ হিজরীর সফর মাসে ‘আযাল এবং ক্বারাহ গোত্র এমন এক চক্রান্তমূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যার ফলে ১০ জন সাহাবীকে শাহাদতের পেয়ালা পান করতে হয়। অধিকন্তু, এ সফর মাসেই বনু ‘আমির প্রধান হীন চক্রান্ত ও শঠতার মাধ্যমে ৭০ জন সাহাবী (রাযি.)-কে শহীদ করে। এ ঘটনাকে ‘বীরে মাউনাহর ঘটনা’ বলা হয়। ঐ সময়ে বনু নাজিরও প্রকাশ্যে শত্রুতা আরম্ভ করে দেয়। এমনকি ৪র্থ হিজরীর রবিউল আওয়াল মাসে তারা নাবী কারীম (ﷺ)-কে হত্যার জন্যও চেষ্টা করে। এদিকে বনু গাতফানের সাহস এতই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় যে, চতুর্থ হিজরীর জমাদাল উলা মাসে মদীনা আক্রমণের সময়সূচি নির্ধারণ করে বসে।

মূল কথা হচ্ছে, উহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণের যে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল তারই প্রেক্ষাপটে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের একের পর এক নানা বিপদাপদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু নাবী কারীম (ﷺ) তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা প্রসূত পরিচালনার মাধ্যমে সকল প্রকার চক্রান্ত, শঠতা ও বৈরিতা অতিক্রম করে পুনরায় গৌরব ও মর্যাদার সু্উচ্চ আসনে মুসলিমগণকে প্রতিষ্ঠিত করতে পুরোপুরি সক্ষম হন। এ ব্যাপারে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সর্ব প্রথম পদক্ষেপ ছিল হামরাউল আসাদ পর্যন্ত মুশরিকগণের পশ্চাদ্ধাবন করা। এ পদক্ষেপের ফলে নাবী কারীম (ﷺ)-এর সৈন্যদলের মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কারণ, এ পদক্ষেপ এতই গুরুত্ব ও বীরত্বপূর্ণ ছিল যে, এর ফলে প্রতিপক্ষগণ, অর্থাৎ মুশরিক, মুনাফিক্ব ও ইহুদীগণ একদম স্তম্ভিত ও হতবাক হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলে কারীম (ﷺ) আরও এমন সব সামারিক পদক্ষেপ অবলম্বন করেছিলেন যা শুধু মুসলিমগণের হৃতগৌরব পুন: প্রতিষ্ঠায় সাহায্যই করে নি, বরং তার বৃদ্ধিপ্রাপ্তিতেও প্রভূত সাহায্য করেছিল। পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলোতে এ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে।

আবূ সালামাহর অভিযান

উহুদ যুদ্ধের পর সর্ব প্রথম মুসলিমগণের বিরুদ্ধাচরণ করে বনু আসাদ বিন খুযায়মাহ গোত্র। মদীনায় এ মর্মে খবর পৌঁছায় যে, খুওয়াইলিদের দু’ ছেলে ত্বালহাহ ও সালামাহ নিজদলের লোকজন এবং অনুসারীদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর আক্রমণ পরিচালনার জন্য বনু আসাদকে আহবান জানাচ্ছে। এ সংবাদ অবগত হয়ে নাবী কারীম (ﷺ) অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আনসার ও মুহাজিরদের সমন্বয়ে দেড় শত সৈন্যের এক বাহিনী গঠন করেন এবং আবূ সালামাহর হস্তে পতাকা প্রদান করে তাঁর নেতৃত্বাধীনে সেই বাহিনী প্রেরণ করেন। বনু আসাদের প্রস্তুতি গ্রহণের পূর্বেই আবূ সালামাহ (রাঃ) অতর্কিতভাবে তাদের আক্রমণ করেন, যার ফলে তারা হতচকিত হয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং পলায়ন করে। মুসলিম বাহিনী তাদের পরিত্যক্ত উট ও বকরীর পাল এবং প্রাপ্ত গণীমতের মালামালসহ নিরাপদে মদীনা ফিরে আসেন। এ অভিযানে মুসলিম বাহিনীকে মুখোমুখী সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হয় নি।
এ অভিযান সংঘটিত হয়েছিল চতুর্থ হিজরী মুহাররম মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর। এ অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবূ সালামাহ (রাঃ)-এর উহুদ যুদ্ধে আহত হওয়ার কারণে প্রাপ্ত ব্যথা পুনরায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং অল্প কালের মধ্যেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।[১]

[১]  যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১০৮ পৃঃ।

আব্দুল্লাহ বিন উনাইস (রাঃ)-এর অভিযান

চতুর্থ হিজরীর মুহাররম মাসের ৫ তারীখে এ মর্মে একটি সংবাদ পাওয়া যায় যে, খালিদ বিন সুফইয়ান হুযালী মুসলিমগণকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে সৈন্য সংগ্রহ করছে। শত্রুপক্ষের এ দুরভিসন্ধি নস্যাৎ করার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনু উনাইস (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন।

আব্দুল্লাহ বিন উনাইস (রাঃ) মদীনার বাইরে ১৮ দিন অবস্থানের পর মুহাররমের ২৩ তারীখে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি খালিদকে হত্যা করে তার মস্তক সঙ্গে নিয়ে আসেন। নাবী কারীম (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তিনি যখন মস্তকটি তাঁর সম্মুখে উপস্থাপন করেন তখন তিনি তাঁর হাতে একটি ‘আসা’ (লাঠি) প্রদান করে বলেন, ‘এটা কিয়ামতের দিন আমার ও তোমার মাঝে একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে। যখন তাঁর মৃত্যুর সময় নিকবর্তী হল এ প্রেক্ষিতে তিনি সেই আসাটিকে তাঁর লাশের সঙ্গে কবরে দেয়ার জন্য অসিয়ত করলেন।[১]

রাযী’র ঘটনা

চতুর্থ হিজরীর সফর মাসে ‘আযাল’ এবং ‘ক্বারাহ’ গোত্রের কয়েক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করে যে, তাদের মধ্যে কিছু কিছু ইসলামের চর্চা রয়েছে। কাজেই, কুরআন ও দ্বীন শিক্ষাদানের জন্য তাদের সঙ্গে কয়েকজন সাহাবী (রাঃ)-কে পাঠালে ভাল হয়। সে মোতাবেক রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইতিহাসবিদ ইবনু ইসহাক্বের মতে ছয় জন এবং সহীহুল বুখারীর বর্ণনা মতে দশ জন সাহাবা কিরাম (রাঃ)-কে তাদের সঙ্গে প্রেরণ করেন। ইবনে ইসহাক্বের মতে মুরশেদ বিন আবূ মুরশেদ গানাভীকে এবং সহীহুল বুখারীর বর্ণনা মতে ‘আসিম বিন উমার বিন খাত্তাবের নানা ‘আসিম বিন সাবেতকে এ দলের নেতৃত্বে প্রদান করা হয়। এরা যখন রাবেগ এবং জেদ্দাহর মধ্যবর্তী স্থানের হোযাইল গোত্রের ‘রাযী’ নামক ঝর্ণার নিকটে পৌঁছান তখন আযাল এবং ক্বারাহর উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গ হুযাইল গোত্রের শাখা বানু লাহয়ানকে তাদের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য লেলিয়ে দেয়।
এ গোত্রের একশত তীরন্দাজ তাঁদের অনুসন্ধান করতে থাকে। পদচিহ্ন অনুসরণ করতে করতে গিয়ে নাগালের মধ্যে তাদের পেয়ে যায়। সাহাবাগণ একটি পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় বনু লাহয়ান তাদের চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলার পর বলতে থাকে, ‘তোমাদের সঙ্গে এ মর্মে আমরা ওয়াদাবদ্ধ হলাম যে তোমরা যদি নীচে নেমে আস তাহলে আমরা কাউকেও হত্যা করব না। ‘আসিম তাদের প্রস্তাবে সম্মত না হয়ে সঙ্গীদের নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হলেন। কিন্তু শত্রুপক্ষের অবিরাম তীর বর্ষণের ফলে ৭ জন শাহাদতবরণ করেন। জীবত রইলেন ৩ জন। তারা হচ্ছেন খুবাইব (রাঃ), যায়দ বিন দাসিন্নাহ (রাঃ) এবং আরও একজন। আবারও বনু লাহয়ান তাদের ওয়াদা পুনর্ব্যক্ত করলে তাঁরা নীচে নেমে আসেন।

কিন্তু নাগালের মধ্যে পেয়েই তারা ওয়াদা ভঙ্গ করে ধনুকের ছিলা দ্বারা তাঁদের বেঁধে ফেলে। অঙ্গীকার ভঙ্গের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তৃতীয় সাহাবী তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করেন। তারা তাঁকে জোর করে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে, কিন্তু না পেরে শেষ পর্যন্ত তাঁকে হত্যা করে। এদিকে খুবাইব (রাঃ) এবং যায়দ বিন দাসিন্নাহকে (রাঃ) মক্কায় নিয়ে গিয়ে বিক্রয় করে দেয়। এ সাহাবীদ্বয় বদরের যুদ্ধে মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করেছিলেন।

খুবাইব (রাঃ) কিছু দিন যাবৎ বন্দী অবস্থায় মক্কাবাসীদের নিকট থাকেন। অতঃপর মক্কাবাসীগণ তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হারাম শরীফের বাইরে তানঈমে নিয়ে যায়। তাঁকে শূলে চড়ানোর পূর্ব মুহূর্তে তিনি বলেন, ‘দু’ রাকআত সালাত পড়ার জন্য সময় ও সুযোগ আমাকে দেয়া হোক।’ তাঁকে সময় দেয়া হলে তিনি দু’ রাকআত সালাত আদায় করেন। সালাতান্তে সালাম ফেরানোর পর তিনি বলেন, ‘যদি তোমাদের এ বলার ভয় না থাকত যে আমি যা কিছু করছি তা ভয় পাওয়ার কারণে করছি তাহলে আরও দীর্ঘ সময় যাবৎ এ সালাত আদায় করতাম।’

এরপর তিনি বলেন,

(اللهُمَّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا وَاقْتُلْهُمْ بَدَدًا وَلاَ تُبْقِ مِنْهُمْ أَحَدًا)

‘হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে নাও। অতঃপর তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে মৃত্যু দাও এবং কাউকেও অবশিষ্ট রেখো না।
এ কথার পর তিনি নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন:

অর্থ: আমার শত্রুগণ তাদের দলবল ও তাদের গোত্রসমূহকে আমার চারদিকে একত্রিত করেছে এবং তাদের সকলেই এক স্থানে একত্রিত হয়েছে।

তারা আমার হত্যার দৃশ্য অবলোকন করার জন্য তাদের সন্তান-সন্ততি এবং নারীদেরকেও একত্রিত করেছে। আর আমাকে হত্যা করার জন্য প্রকান্ড ও সুদৃঢ় এক খেজুর বৃক্ষের নিকটবর্তী করা হয়েছে।

অর্থঃ হে আরশের মালিক (আল্লাহ)! আমাকে হত্যার ব্যাপারে আমার সঙ্গে তারা যা করতে চায় তুমি আমাকে তাতে ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দান কর। কারণ, অল্প সময়ের মধ্যেই তারা আমার মাংসগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে এবং মৃত্যুর মাধ্যমে আমার সকল আশা আকাঙ্ক্ষার নিরসন ঘটাবে।

আমাকে হত্যার পূর্বে কুফরী গ্রহণ করা কিংবা মৃত্যুবরণ করা এ দুয়ের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার সুযোগ তারা দিয়েছিল, কিন্তু কুফরী গ্রহণ না করে ধর্মের পথে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছি। তখন আমার নয়ন যুগল বিনা অস্থিরতায় অশ্রু প্রবাহিত করেছে, অর্থাৎ মৃত্যুর ভয়ে আমি অস্থির হই নি, বরং তাদের অন্যায় আচরণ ও নির্বুদ্ধিতার কারণে ক্ষোভে দুঃখে আমার নয়ন যুগল অশ্রু-সিক্ত হয়েছে।

لَسْتُ أُبَالِيْ حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِمًا عَلٰى أَيِّ جَنْبٍ كَانَ لِلهِ مَصْرَعِي

وَذَلِكَ فِيْ ذَاتِ الْإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ يُبَارِكْ عَلٰى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ

আমি যখন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর পথে কাফিরদের হাতে নিহত হচ্ছি তখন আমার হত্যা যে কোন অবস্থায়ই হোক না কেন, আমি কোন কিছুকে ভয় করি না।

আমি জানি যে, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই আমার মৃত্যু হচ্ছে। মহান আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমার শরীরের বিখন্ডীকৃত প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গেই বরকত দান করতে পারেন।’

এরপর খুবাইব (রাঃ)-কে আবূ সুফইয়ান বলল, ‘তোমার নিকট এটা কি পছন্দনীয় যে, তোমার পরিবর্তে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে আমাদের এখানে পেয়ে তার গ্রীবা কর্তন করা হবে আর তুমি নিজ আত্মীয় স্বজনসহ জীবিত থাকবে?’ তিনি বললেন, ‘না, আল্লাহর শপথ! আমার নিকট এটাই তো সহনীয় নয় যে, আমি আপন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেঁচে থাকি এবং তার পরিবর্তে মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে যেখানে তিনি অবস্থান করছেন একটি কাঁটার আঘাত লেগে যায় এবং সে আঘাতে তিনি ব্যথিত হন।’
এরপর মুশরিকরা তাঁকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করল এবং তাঁর লাশ দেখানোর জন্য লোক নিযুক্ত করে দিল। কিন্তু ‘আমির বিন উমাইয়া যামরী (রাঃ) তথায় আগমন করলেন এবং রাত্রিবেলা অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে লাশ উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে কাফন-দাফন করলেন। খুবাইব (রাঃ)-কে হত্যা করেছিল উক্ববাহ বিন হারিস। খুবাইব (রাঃ) তার পিতা হারিসকে বদর যুদ্ধে হত্যা করেছিলেন।

সহীহুল বুখারীতে বর্ণিত আছে যে, খুবাইব (রাঃ) সর্বপ্রথম সম্মানিত ব্যক্তি যিনি হত্যার মুহূর্তে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করার প্রথা চালু করেছিলেন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে আঙ্গুর ফল খেতে দেখা গিয়েছিল, অথচ সেই সময় মক্কায় খেজুরও পাওয়া যাচ্ছিল না।

দ্বিতীয় সাহাবী যাকে এ ঘটনায় ধরা হয়েছিল তিনি ছিলেন যায়দ বিন দাসিন্নাহ। সাফওয়ান বিন উমাইয়া তাকে ক্রয় করে নিয়ে হত্যা করে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

কুরাইশগণ ‘আসিম (রাঃ)-এর দেহের অংশ বিশেষ আনয়নের জন্য লোক প্রেরণ করে। উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে সনাক্ত করা। কারণ বদর যুদ্ধে তিনি বিশিষ্ট কোন এক কুরাইশ প্রধানকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর এমন এক ভীমরুলের ঝাঁক প্রেরণ করলেন যারা কুরাইশ লোকজনদের দুরভিসন্ধি থেকে এ লাশ হেফাজত করল। কুরাইশদের পক্ষে লাশের কোন অংশ গ্রহণ করা সম্ভব হল না। ‘আসিম আল্লাহর দরবারে প্রকৃতই এ প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁকে যেন কোন মুশরিক স্পর্শ করতে না পারে এবং তিনিও যেন কোন মুশরিককে স্পর্শ না করেন। উমার যখন এ ঘটনা অবগত হলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাকে তাঁর মৃত্যুর পরেও হেফাজত করেন যেমনটি করেন জীবিত অবস্থায়।[২]

তথ্যসূত্রঃ
[১] যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১০৯ পৃঃ, ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৬১৯-৬২০ পৃঃ।
[২] ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ১৬৯-১৭৯ পৃঃ। যাদুল মা‘আদ ২য় খন্ড ১৯৯ পৃঃ, সহীহুল বুখারী ২য় খন্ড ৫৬৮-৫৬৯, ৫৮৫ পৃঃ।





******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url