বিষয় ভিত্তিক আয়াত (পর্ব -৬) || শিরক বা আল্লাহর অংশীদারিত্ব বিষয়ক আয়াত





সুরা আল-হজ্জ এ বর্ণিত শিরক ও আল্লাহর একত্ববাদ বিষয়ক আয়াত


২২:৬২ ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ هُوَ الۡبَاطِلُ وَ اَنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ

আর এটা এজন্য যে, নিশ্চয় আল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, অবশ্যই তা বাতিল। আর নিশ্চয় আল্লাহ তো সমুচ্চ, সুমহান। আল-বায়ান

এজন্য যে, আল্লাহ- তিনিই সত্য, আর তাঁকে বাদ দিয়ে তারা অন্য যাকে ডাকে তা অলীক, অসত্য, আর আল্লাহ, তিনি তো সর্বোচ্চ, সুমহান। তাইসিরুল

এ জন্যও যে, আল্লাহ সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে ওটাতো অসত্য এবং আল্লাহ তো সমুচ্চ, মহান। মুজিবুর রহমান

That is because Allah is the Truth, and that which they call upon other than Him is falsehood, and because Allah is the Most High, the Grand. Sahih International


৬২. এজন্যেও যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা তো অসত্য।(১) আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই সমুচ্চ, সুমহান।(২)

(১) অর্থাৎ তিনিই সত্যিকার ক্ষমতার অধিকারী ও যথার্থ রব। একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা যাবে। কারণ, তিনিই মহান শক্তিধর, তিনি যা চাইবেন তা হবে, আর যাচাইবেন না তা হবে না। সবকিছু তাঁরই মুখাপেক্ষী। সবাই তাঁর কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য। [ইবন কাসীর] সুতরাং তাঁর বন্দেগীকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। আর অন্যান্য সকল মাবুদই আসলে পুরোপুরি অসত্য ও অর্থহীন। তাদেরকে যেসব গুণাবলী ও ক্ষমতার মালিক মনে করা হয়েছে সেগুলোর মূলত কোন ভিত্তি নেই। তারা লাভ বা ক্ষতি কিছুরই মালিক নয়। [ইবন কাসীর] সুতরাং আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের ভরসায় যারা বেঁচে থাকে তারা কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না।

(২) আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, এবং আল্লাহ, তিনিই তো সমুচ্চ, মহান। অনুরূপ অন্যত্র বলা হয়েছে, “আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫] আরও এসেছে, “তিনি গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী, মহান, সর্বোচ্চ।” [সূরা আর-রাদ: ৯] সুতরাং সবকিছুই তাঁর ক্ষমতা, প্রতাপ ও মাহাত্যের অধীন। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি ব্যতীত আর কোন রব নেই। তিনিই মহান, তাঁর চেয়ে মহৎ কেউ নেই। তিনিই সর্বোচ্চ সত্তা, তাঁর উপরে কেউ নেই, তিনিই বড় তাঁর থেকে বড় কেউ নেই। যালেমরা তাঁর সম্পর্কে যা বলে তা থেকে তিনি কতই না পবিত্র ও মহান! [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া

সুরা আল-মুমিনুন এ শিরক ও আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত আয়াত

২৩:৯১ مَا اتَّخَذَ اللّٰهُ مِنۡ وَّلَدٍ وَّ مَا کَانَ مَعَهٗ مِنۡ اِلٰهٍ اِذًا لَّذَهَبَ کُلُّ اِلٰهٍۭ بِمَا خَلَقَ وَ لَعَلَا بَعۡضُهُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ


আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই। (যদি থাকত) তবে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টিকে নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত; তারা যা বর্ণনা করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্র! আল-বায়ান

আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, আর তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহ নেই, (থাকলে) প্রত্যেক ইলাহ আপন সৃষ্টি নিয়ে অবশ্যই চলে যেত, আর অবশ্যই একে অপরের উপর চড়াও হত, তারা তাঁর প্রতি যা আরোপ করে তাত্থেকে তিনি কত মহান ও পবিত্র! তাইসিরুল

আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অপর কোন মা‘বূদ নেই; যদি থাকত তাহলে প্রত্যেক মা‘বূদ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে তা হতে আল্লাহ অতি পবিত্র! মুজিবুর রহমান

Allah has not taken any son, nor has there ever been with Him any deity. [If there had been], then each deity would have taken what it created, and some of them would have sought to overcome others. Exalted is Allah above what they describe [concerning Him]. Sahih International


৯১. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই; যদি থাকত তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অন্যের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত।(১) তারা যে গুণে তাকে গুণান্বিত করে তা থেকে আল্লাহ কত পবিত্ৰ-মহান!

(১) অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্ৰভু যদি আলাদা আলাদা ইলাহ হতো তাহলে তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা বজায় থাকতো না। বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পরিক একাত্মতা প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত। যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবাৰ্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌছে ছাড়তো না। অন্যত্র বলা হয়েছেঃ যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতো। [সূরা আল-আম্বিয়ঃ ২২] আরও বলা হয়েছেঃ “যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো, যেমন লোকেরা বলে,তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের নৈকট্যলাভের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত থাকত।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৪২]
তাফসীরে জাকারিয়া


২৩:৯২ عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ فَتَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ

তিনি গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞানী, তারা যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, তারা যা তাঁর শরীক বানায়, তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে। মুজিবুর রহমান

[He is] Knower of the unseen and the witnessed, so high is He above what they associate [with Him]. Sahih International

৯২. তিনি গায়েব ও উপস্থিতের জ্ঞাণী, সুতরাং তারা যা কিছু শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।তাফসীরে জাকারিয়া


২৩:১১৬ فَتَعٰلَی اللّٰهُ الۡمَلِکُ الۡحَقُّ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡکَرِیۡمِ

সুতরাং সত্যিকারের মালিক আল্লাহ মহিমান্বিত, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনি সম্মানিত ‘আরশের রব। আল-বায়ান

সুউচ্চ মহান আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, সম্মানিত আরশের অধিপতি। তাইসিরুল

মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই; সম্মানিত আরশের তিনিই রাব্ব। মুজিবুর রহমান

So exalted is Allah, the Sovereign, the Truth; there is no deity except Him, Lord of the Noble Throne. Sahih International


(১১৬) মহিমার্নিত আল্লাহ; যিনি প্রকৃত মালিক,[1] তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই; সম্মানিত আরশের অধিপতি তিনি।’ [2]

[1] অর্থাৎ, তিনি এর থেকে অনেক ঊর্ধ্বে যে, তিনি তোমাদেরকে বিনা কোন উদ্দেশ্যে, খেলার ছলে বেকার সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা যা ইচ্ছা তাই করবে, সে ব্যাপারে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। বরং তিনি বিশেষ এক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। সেই জন্য পরবর্তীতে বলেছেন যে, তিনিই একমাত্র উপাস্য; তিনি ছাড়া আর কোন সত্য উপাস্য নেই।

[2] এখানে আরশের বিশেষণ (গুণ) স্বরূপ ‘কারীম’ বলা হয়েছে। যার অর্থ সম্মানিত। যেহেতু তার অধিপতি সম্মানিত। অথবা তার অর্থঃ মহানুভব; কারণ, সেখান হতেই রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য মতান্তরে এটি অধিপতি (রবে)র বিশেষণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান


২৩:১১৭ وَ مَنۡ یَّدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۙ لَا بُرۡهَانَ لَهٗ بِهٖ ۙ فَاِنَّمَا حِسَابُهٗ عِنۡدَ رَبِّهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡکٰفِرُوۡنَ

আর যে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, যে বিষয়ে তার কাছে প্রমাণ নেই; তার হিসাব কেবল তার রবের কাছে। নিশ্চয় কাফিররা সফলকাম হবে না। আল-বায়ান

যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকেও ডাকে, এ ব্যাপারে তার কাছে কোন দলীল প্রমাণ নেই, একমাত্র তার প্রতিপালকের কাছেই তার হিসাব হবে, কাফিরগণ অবশ্যই সফলকাম হবে না। তাইসিরুল

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে ডাকে অন্য ইলাহকে যার নিকট কোন সনদ নেই, তার হিসাব রয়েছে তার রবের নিকট, নিশ্চয়ই কাফিরেরা সফলকাম হবেনা। মুজিবুর রহমান

And whoever invokes besides Allah another deity for which he has no proof - then his account is only with his Lord. Indeed, the disbelievers will not succeed. Sahih International


(১১৭) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করে, (অথচ) ঐ বিষয়ে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই; তার হিসাব তার প্রতিপালকের নিকট আছে, নিশ্চয়ই অবিশ্বাসীরা সফলকাম হবে না।[1]

[1] এখান হতে বুঝা যায় যে, প্রকৃত সফলতা ও কৃতকার্যতা হল আখেরাতে আল্লাহর আযাব হতে বেঁচে যাওয়া। শুধুমাত্র পৃথিবীর ধন-দৌলত ও বিলাসসামগ্রীর পর্যাপ্তিই সফলতা নয়। এ সব তো পৃথিবীতে কাফেররাও অর্জন করে থাকে। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদের সফলতার কথা নাকচ করেছেন। যার পরিষ্কার অর্থ হল, আসল সফলতা পরকালের সফলতা; যা একমাত্র ঈমানদাররাই লাভ করবে। পৃথিবীর ধন-সম্পদের আধিক্য নয়; যা বিনা কোন পার্থক্যে মুসলমান ও কাফেরদল সকলেই পেয়ে থাকে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান

সুরা আশ-শুআ’রায় বর্ণিত শিরক ও আল্লাহর একত্বাবাদ বিষয়ক আয়াত


২৬:২১৩ فَلَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ فَتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُعَذَّبِیۡنَ

অতএব, তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তাহলে তুমি আযাবপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আল-বায়ান

কাজেই তুমি অন্য কোন ইলাহ্কে আল্লাহর সঙ্গে ডেক না। ডাকলে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তাইসিরুল

অতএব তুমি অন্য কোন মা‘বূদকে আল্লাহর সাথে ডেকোনা, তাহলে তুমি শাস্তি প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। মুজিবুর রহমান

So do not invoke with Allah another deity and [thus] be among the punished. Sahih International


২১৩. অতএব আপনি অন্য কোন ইলাহকে আল্লাহর সাথে ডাকবেন না, ডাকলে আপনি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
তাফসীরে জাকারিয়া


সুরা আল-কাসাস এ বর্ণিত শিরক বা আল্লাহর অংশীদারিত্ব বিষয়ক আয়াত

২৮:৬৮ وَ رَبُّکَ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ وَ یَخۡتَارُ ؕ مَا کَانَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ 


আর তোমার রব যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং মনোনীত করেন, তাদের কোন এখতিয়ার নাই। আল্লাহ পবিত্র মহান এবং তারা যা শরীক করে তিনি তা থেকে ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন আর যাকে ইচ্ছে মনোনীত করেন। এতে তাদের কোন এখতিয়ার নেই, আল্লাহ পবিত্র, মহান। তারা যাকে শরীক করে তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

তোমার রাব্ব যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, এতে তাদের কোন ক্ষমতা নেই, আল্লাহ পবিত্র মহান এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্ধ্বে।   মুজিবুর রহমান

And your Lord creates what He wills and chooses; not for them was the choice. Exalted is Allah and high above what they associate with Him. Sahih International


৬৮. আর আপনার রব যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং যা ইচ্ছে মনোনীত করেন(১), এতে ওদের কোন হাত নেই। আল্লাহ্ পবিত্ৰ, মহান এবং তারা যা শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে!

(১) আয়াতটির তাফসীরে সঠিক মত হচ্ছে, যা ইমাম বাগাভী তার তাফসীরে এবং ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম তার যাদুল মাআদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। তা এই যে, আল্লাহ তা'আলা মানবজাতির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা সম্মান দানের জন্য মনোনীত করেন। বগভীর উক্তি অনুযায়ী এটা মুশরিকদের এই কথার জওয়াব (وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَٰذَا الْقُرْآنُ عَلَىٰ رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ) “আর তারা বলেঃ এ কুরআন কেন নাযিল করা হল না দুই জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির উপর?” [সূরা আয-যুখরুফঃ ৩১] অর্থাৎ কাফেররা এটা বলে যে, এ কুরআন আরবের দু'টি বড় শহর মক্কা ও তায়েফের মধ্য থেকে কোন প্রধান ব্যক্তির প্রতি নাযিল করা হল না কেন? এরূপ করলে এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা হত।

একজন পিতৃহীন দরিদ্র লোকের প্রতি নাযিল করার রহস্য কি? এর জওয়াবে বলা হয়েছে যে, যে প্ৰভু সমগ্র সৃষ্টিজগতকে কোন অংশীদারের সাহায্য ব্যাতিরেকে সৃষ্টি করেছেন, কোন বান্দাকে বিশেষ সম্মান দানের জন্য মনোনিত করার ক্ষমতাও তাঁরই। এ ব্যাপারে তিনি তোমাদের এই প্রস্তাবের অনুসারী হবেন কেন যে, অমুক যোগ্য, অমুক যোগ্য নয়?

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রাহেমাহুল্লাহ এ আয়াত থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান উদ্ভাবন করেছেন। তা এই যে, দুনিয়াতে এক স্থানকে অন্য স্থানের উপর অথবা এক বস্তুকে অন্য বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। এই শেষ্ঠত্ব দান সংশ্লিষ্ট বস্তুর উপার্জন ও কর্মের ফল নয়; বরং এটা প্ৰত্যক্ষভাবে স্রষ্টার মনোনয়ন ও ইচ্ছার ফলশ্রুতি। তিনি সপ্ত-আকাশ সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে উর্ধ্ব আকাশকে অন্যগুলোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি জান্নাতুল ফেরদাউসকে অন্য সব জান্নাতের উপর, জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীল প্রমুখ বিশেষ ফেরেশতাগণকে অন্য ফেরেশতাদের উপর, নবী-রাসূলগণকে সমগ্র আদম সন্তানের উপর, তাদের মধ্যে দৃঢ়চেতা নবী-রাসূলগণকে অন্য নবী-রাসূলদের উপর, ইবরাহীম ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়াসাল্লামকে অন্য দৃঢ়চেতা নবী-রাসূলগণের উপর, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশধরদের সমগ্ৰ মানবজাতির উপর, কুরাইশদেরকে আরবদের উপরে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বনী হাশেমের উপর এবং এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য মনীষীকে অন্য মুসলিমদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

এগুলো সব আল্লাহ্ তা'আলার মনোনয়ন ও ইচ্ছার ফলশ্রুতি। এমনিভাবে পৃথিবীর অনেক স্থানকে অন্য স্থানের উপর, অনেক দিন ও রাতকে অন্য দিন ও রাতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করাও আল্লাহ তা'আলার মনোনয়ন ও ইচ্ছার প্রভাব। মোটকথাঃ শ্রেষ্ঠত্ব ও অশ্রেষ্ঠত্বের আসল মাপকাঠি এই মনোনয়ন ইচ্ছাই। এখানে অন্য কিছুর হাত নেই।
তাফসীরে জাকারিয়া


২৮:৮৮ وَ لَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ۘ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۟ کُلُّ شَیۡءٍ هَالِکٌ اِلَّا وَجۡهَهٗ ؕ لَهُ الۡحُکۡمُ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ


আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। আল-বায়ান

আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। তাইসিরুল

তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকনা, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। মুজিবুর রহমান

And do not invoke with Allah another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face. His is the judgement, and to Him you will be returned.   Sahih International

* আয়াতে উল্লিখিত وجه শব্দের অর্থ চেহারা। আল্লাহর চেহারা আছে। আর তাঁর চেহারা যেমন ধ্বংসশীল নয় তেমনি তাঁর সত্ত্বাও ধ্বংসশীল নয়।


(৮৮) তুমি আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যকে ডেকো না,[1] তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তাঁর মুখমন্ডল[2] ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই [3] এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। [4]

[1] অর্থাৎ, অন্য কারো ইবাদত করো না। না দু’আর মাধ্যমে, না নযর-মানতের মাধ্যমে আর না কুরবানীর মাধ্যমে। কারণ, এগুলি ইবাদত বলে গণ্য, যা কেবলমাত্র এক আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করাকে কুরআনের ভাষায় ‘আহবান করা’ বলা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হল এ কথা স্পষ্ট করা যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যকে --যা করার তার ক্ষমতা নেই তার জন্য-- ডাকা, সাহায্য প্রার্থনা করা, তার নিকট দু’আ করা, বিনয়-নম্র হওয়া --এ সব করাই হল তার ইবাদত করা। যার কারণে মানুষ মুশরিকে পরিণত হয়।

[2] وَجهَه (তাঁর মুখমন্ডল) বলতে স্বয়ং আল্লাহকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া প্রত্যেক বস্তুই নশ্বর।{كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَى  وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ}  অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সমস্তই নশ্বর। অবিনশ্বর শুধু তোমার মহিমময়, মহানুভব প্রতিপালকের মুখমন্ডল (সত্তা)। (সূরা রাহমান ২৬-২৭ আয়াত)

[3] অর্থাৎ, তিনি যা চান সেই ফায়সালাই মান্য হয় এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর আদেশ বলবৎ হয়।

[4] যাতে তিনি সৎকর্মশীলদের সৎকর্মের ও অসৎ কর্মশীলদের অসৎ কর্মের প্রতিদান দেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

সুরা আর-রুম এ বর্ণিত শিরক বা আল্লাহর অংশীদারিত্ব বিষয়ক আয়াত


৩০:৪০ اَللّٰهُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ ثُمَّ رَزَقَکُمۡ ثُمَّ یُمِیۡتُکُمۡ ثُمَّ یُحۡیِیۡکُمۡ ؕ هَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّفۡعَلُ مِنۡ ذٰلِکُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ 

আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন। এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, পরে আবার তোমাদের জীবন দেবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এ থেকে কোন কিছু করতে পারবে? তিনি পবিত্র এবং তারা যাদের শরীক করে তা থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিযক দিয়েছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর) অংশীদার মান্য কর তাদের মধ্যে কেউ আছে কি এ সবের কোন কিছু করতে পারে? তারা যাদেরকে অংশীদার গণ্য করে আল্লাহ তাদের থেকে পবিত্র, বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদেরকে রিয্ক দিয়েছেন; তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং পরে তোমাদেরকে জীবিত করবেন। তোমাদের দেব-দেবীগুলোর এমন কেহ আছে কি, যে এ সবের কোন একটিও করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান। মুজিবুর রহমান

Allah is the one who created you, then provided for you, then will cause you to die, and then will give you life. Are there any of your "partners" who does anything of that? Exalted is He and high above what they associate with Him. Sahih International


৪০. আল্লাহ্‌(১) যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিয্‌ক দিয়েছেন, তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন অবশেষে তিনি তোমাদেরকে জীবিত করবেন। (আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্তকৃত) তোমাদের মা’বুদগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোন কিছু করতে পারে?(২) তারা যাদেরকে শরীক করে, তিনি (আল্লাহ) সে সব (শরীক) থেকে মহিমাময়-পবিত্র ও অতি ঊর্ধ্বে।

(১) এখান থেকে আবার মুশরিকদেরকে বুঝাবার জন্য বক্তব্যের ধারা তাওহীদ ও আখেরাতের বিষয়বস্তুর দিকে ফিরে এসেছে। [আইসারুতি-তাফসীর]

(২) অর্থাৎ তোমাদের তৈরী করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা? জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতার আওতাভুক্ত আছে? অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে? তাহলে তাদের কাজ কি? তোমরা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো কেন? [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

সুরা আস-সাফফাত এ বর্ণিত শিরক বা আল্লাহর অংশীদারিত্ব বিষয়ক আয়াত



জেনে রাখ, তারা অবশ্যই তাদের মনগড়া কথা বলে যে, আল-বায়ান

দেখ, তারা অবশ্যই তাদের মন-গড়া কথা বলে যে, তাইসিরুল

দেখ তারা মনগড়া কথা বলে যে – মুজিবুর রহমান

Unquestionably, it is out of their [invented] falsehood that they say, Sahih International


১৫১. সাবধান! তারা তো মনগড়া কথা বলে যে,

তাফসীরে জাকারিয়া


৩৭:১৫২ وَلَدَ اللّٰهُ ۙ وَ اِنَّهُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ


‘আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন’ আর তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। আল-বায়ান

আল্লাহ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তারা অবশ্যই মিথ্যেবাদী। তাইসিরুল

আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তারা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী। মুজিবুর রহমান

" Allah has begotten," and indeed, they are liars. Sahih International


১৫২. আল্লাহ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আর তারা নিশ্চয় মিথ্যাবাদী।
তাফসীরে জাকারিয়া


৩৭:১৫৩ اَصۡطَفَی الۡبَنَاتِ عَلَی الۡبَنِیۡنَ 

তিনি কি পুত্রসন্তানদের উপর কন্যা সন্তানদের বেছে নিয়েছেন? আল-বায়ান

তিনি কি পুত্রদের চেয়ে কন্যাদেরকেই বেশি পছন্দ করেছেন? তাইসিরুল

তিনি কি পুত্র সন্তানের পরিবর্তে কন্যা সন্তান পছন্দ করতেন? মুজিবুর রহমান

Has He chosen daughters over sons? Sahih International


(১৫৩) তিনি কি পুত্রসন্তানের পরিবর্তে কন্যাসন্তান পছন্দ করেছেন? [1]

[1] অথচ তারা নিজেদের জন্য কন্যাসন্তান নয়; বরং পুত্রসন্তান পছন্দ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান


৩৭:১৫৪ مَا لَکُمۡ ۟ کَیۡفَ تَحۡکُمُوۡنَ

তোমাদের কী হল? তোমরা কেমন ফয়সালা করছ! আল-বায়ান

তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কেমন ফয়সালা করছ? তাইসিরুল

তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা কি রূপ বিচার কর? মুজিবুর রহমান

What is [wrong] with you? How do you make judgement? Sahih International


১৫৪. তোমাদের কী হয়েছে, তোমরা কিরূপ বিচার কর?
তাফসীরে জাকারিয়া



৩৭:১৫৫ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ

তাহলে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? আল-বায়ান

তাহলে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? তাইসিরুল

তাহলে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবেনা? মুজিবুর রহমান

Then will you not be reminded? Sahih International


(১৫৫) তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না? [1]

[1] যে, যদি আল্লাহর সন্তান হত তবে পুত্রসন্তান হত, যা তোমরাও পছন্দ কর এবং উত্তম মনে কর। কন্যাসন্তান নয়, যা তোমাদের চোখেও নগণ্য ও তুচ্ছ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান





Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url