সাহাবাগণের জীবনকথা-৩৯ || হযরত বিলাল ইবন রাবাহ (রাঃ)- এর জীবনী

হযরত বিলাল (রাঃ), রাসুল (সাঃ) জান্নাতে যার পায়ের আওয়াজ শুনেছিলেন


হযরত বিলাল (রাঃ)

হযরত বিলাল (রাঃ) এর কথা শুনেননি এমন মুসলমান পৃথিবীতে খোঁজে পাওয়াই দুষ্কর। মক্কায় যে অত্যাচার ও উৎপীড়ন হযরত বিলাল (রাঃ) সহ্য করেছিলেন, তাদ্বারাই তার সহ্যশক্তি, ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। কেউ তার কোন গুণের কথা বললে বলতেন? আমি তাে শুধু একজন হাবশী, কাল পর্যন্তও যে দাস ছিল। সততা, নিষ্কলুষতা ও বিশ্বস্ততা ছিলাে তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
হযরত বিলাল (রাঃ) যেহেতু রাসূলুল্লাহর (স) বিশেষ মুয়াযিন ছিলেন এ কারণে অধিকাংশ সময় মসজিদেই কাটাতে হতাে। রাত দিনের বেশী সময় ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। একবার রাসূল (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তােমার কোন্ ভালাে কাজটির জন্য সবচেয়ে বেশী সাওয়াবের আশা করাে? বললেনঃ “আমি তো এমন কোন ভালাে কজি করিনি। তবে প্রত্যেক অজুর পরে নামায আদায় করেছি।

হযরত বিলাল (রাঃ) এর নাম ও বংশ পরিচয়

আবু আবদুল্লাহ বিলাল তার নাম। পিতা রাবাহ এবং মাতা হামামাহ। হাবশী বংশােদ্ভত ক্রীতদাস। তবে তিনি মক্কায় জন্ম লাভ করেছিলেন। বনু জুমাহ ছিল তাদের মনিব । | হাবশী দাস হিসাবে তাঁর বাহ্যিক রং কালাে হলেও অন্তর ছিল দারুণ স্বচ্ছ। আরবের গৌরবর্ণের লােকেরা যখন আভিজাত্যের ও কৌলিণ্যের বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হয়ে হকের দাওয়াত অস্বীকার করে চলেছিল, তখনই তার অন্তর ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। অল্প কিছু লােক দাওয়াতে হক কবুল করলেও যে সাত ব্যক্তি প্রকাশ্য ঘোষণার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে এ হবিশী গোলাম হযরত বিলাল (রাঃ)  অন্যতম।

হযরত বিলালের (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ ও নির্যাতন ভোগ

চিরকালই দুর্বলৱা অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হয়ে থাকে। বিলালের সামাজিক অবস্থানের কারণে তার ওপর অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। শাস্তি ও যন্ত্রণার নানা রকম অনুশীলনের মাধ্যমে তার সবর ও ইসতিকলালের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। গলায় উত্তপ্ত বালু, পাথরকুচি ও জ্বলন্ত অংগারের ওপর তাকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে, গলায় রশি বেঁধে ছাগলের মত শিশুরা মক্কার অলিতে গলিতে টেনে নিয়ে বেড়িয়েছে। তবুও তাওহীদের শক্ত রশি তিনি হাত ছাড়া করেননি। আবু জাহল তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে পিঠের ওপর পাথরের বড় চাকি রেখে দিত। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রচণ্ড খরতাপে তিনি যখন অস্থির হয়ে পড়তেন, আবু জাহল বলতাে ? “বিলাল, এখনাে মুহাম্মাদের আল্লাহ থেকে ফিরে এসাে।” কিন্তু তখনাে তার পবিত্র মুখ থেকে ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ ধ্বনি বের হতাে।

অত্যাচারী মুশরিকদের মধ্যে উমাইয়া ইবন খালাফ ছিল সর্বাধিক উৎসাহী। সে শাস্তি ও যন্ত্রণার নিত্য নতুন কলা-কৌশল প্রয়ােগ করতো। নানা রকম পদ্ধতিতে সে তাকে কষ্ট দিত। কখনাে গরুর কাঁচা চামড়ায় তাঁকে ভরে, কখনাে লােহার বর্ম পরিয়ে উত্তপ্ত রোদে বসিয়ে দিয়ে বলতােঃ ‘তােমার আল্লাহ লাত ও উযযাহ' কিন্তু তখনাে এ তাওহীদ প্রেমিক লােকটির যবান থেকে ‘আহাদ' আহাদ' ছাড়া আর কোন বাক্য বের হতাে না। মুশরিকরা বলতাে, তুমি আমাদের কথিত শব্দগুলিই উচ্চারণ করো। তিনি বলতেন 'আমার যবান ঠিক মত তােমাদের শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পারে না।'

হযরত বিলালের (রাঃ) দাসত্ব থেকে মুক্তি

প্রতিদিনের মত সেদিনও হযরত বিলালের ওপর 'বাতহা' উপত্যকায় অত্যাচারের স্টীম রােলার চলছিল। ঘটনাক্রমে হযরত আবু বকর সিদ্দীকও সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দারুণ মর্মাহত হলেন। মােটা অংকের অর্থ বিলালের মনিবকে দিয়ে তিনি তাকে আযাদ করে দেন। এ খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ আবু বকর, আমাকেও তুমি এ কাজে শরীক করে নাও। তিনি আরজ করলেন ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি তাে তাকে আযাদ করেই দিয়েছি।’

মুক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় তিনি হযরত সা'দ ইবন খুসাইমার (রা) অতিথি হলেন। হযরত আবু রুওয়াইহা আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান খাসয়ামীর (রা) সাথে তাঁর ভ্রাতৃ-সম্পর্ক স্থাপিত হলাে। তাদের দু'জনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার ফারুকের সময়ে হযরত বিলাল সিরিয়া অভিযানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। খলীফা উমর (রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল, তােমার ভাতা কে উঠাবে? জবাব দিলেন । আবু রুওয়াইহা। রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের দু'জনের যে ভ্রাতৃসম্পর্ক কায়েম করে দিয়েছিলেন তা কখনাে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না।'

হিজরতের আগ পর্যন্ত মক্কায় ইসলাম ছিল দূর্বল, হিজরতের পর মদীনায় তা সবল হয়ে দাঁড়ায়। এই মাদানী জীবনের সূচনা থেকেই ইসলামী আচার-আচরণ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তির স্থাপনা শুরু হয়। মসজিদ প্রতিষ্ঠা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং নামাযের জন্য আযানের প্রচলন হলাে। হযরত বিলাল প্রথম ব্যক্তি, আযানের দায়িত্ব যাঁর ওপর অর্পিত হয়। বিলালের উচ্চ ও হৃদয়গ্রাহী আযান ধ্বনি শুনে নারী পুরুষ, কিশোর , যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে কেউ ঘরে স্থির থাকতে পারতাে না। মসজিদে তাওহীদের ধারকবাহকদের ভীড় জমে উঠলে তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) দরজায় গিয়ে আওয়ায দিতেন হাইয়ালাস সালাহ, হাইয়ালাল ফালাহ, আস্সালাহইয়া রাসূলাল্লাহ= হে আল্লাহর রাসুল! নামায উপস্থিত। রাসূল (সা) বেরিয়ে আসতেন, বিলাল তাকবীর দিতেন। কোনদিন হযরত বিলাল মদীনায় উপস্থিত না থাকলে হযরত আবু মাহযুরা এবং হযরত আমর ইবন উম্মে মাকতুম (রা) তার দায়িত্ব পালন করতেন। বিলাল (রা) সাধারণতঃ সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই ফজরের আযান দিতেন। এ কারণে সকালে দু'বার আযান দেওয়া হতাে। শেষের আযান দিতেন হযরত আমর ইবন উম্মে মাকতুম (রাঃ)। এ জন্য রমজান মাসে হযরত বিলালের আযানের পর পানাহার জায়েয ছিল।

রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় অবস্থান বা সফরে সময়, উভয় অবস্থায় বিলাল ছিলেন তার বিশেষ মুয়াজ্জিন। একবার রাসূলুল্লাহর (সা) কোন এক সফরে পথ চলতে চলতে রাত হয়ে গেল। সাহাবাদের কেউ কেউ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, এখানে কোথাও রাত্রি যাপনের জন্য তাবু গড়ার হুকুম দিলে ভালো হতো। রাসূল (সা) বললেনঃ 'আমার ভয় হচ্ছে ঘুম তােমাদের নামায থেকে উদাসীন করে না দেয়।' হযরত বিলাল সকলকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তােলার দায়িত্ব নিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) অনুমতি পেয়ে সবাই তাব্ পেড়ে বিশ্রামে গা এলিয়ে দিলেন। এদিকে বিলাল (রা) অধিক সতর্কতার সাথে হওদার কাঠের সাথে হেলান দিয়ে সুবহে সাদিকের প্রতীক্ষায় থাকলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে এ অবস্থায় তার চোখ বন্ধ হয়ে এলাে এবং গভীর ঘুমে এমন অচেতন হয়ে পড়লেন যে সূর্যোদয়ের আগে আর চেনা ফিরে এলাে না। রাসূলুল্লাহ (সা) ঘুম থেকে জেগে সর্বপ্রথম বিলালকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তােমার দায়িত্ব পালনের কি হলাে? বললেন। ইয়া রাসুলাল্লাহ, আজ আমি এমনভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যে, এমনটি আমার সাধারণতঃ হয় না। রাসূল (সা) বললেনঃ 'আল্লাহ যখন ইচ্ছা তােমাদের রূহ অধিকার করে নেন, আবার যখন ইচ্ছা তা ফিরিয়ে দেন। উঠে আযান দাও এবং লােকদের নামাযের জন্য সমবেত কর।”

হযরত বিলালের (রাঃ) জিহাদে অংশগ্রহণ

হযরত বিলাল (রা) প্রধান প্রধান সকল যুদ্ধেই শরীক ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি ইসলামের এক মস্তবড় দুশমন উমাইয়া ইবন খালাফকে হত্যা করেন। মক্কায় যাঁরা বিলালের ওপর নির্যাতন চালাতাে, এ উমাইয়া ছিল তাদের অন্যতম। মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সংগী ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তিনিও কা'বার অভ্যন্তরে প্রবেশের সৌভাগ্য লাভ করেন। রাসূলুল্লাহর (সা) নির্দেশে কাবার ছাদের ওপর দাড়িয়ে তিনি আযান ধ্বনি উচ্চারণ করেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর হযরত বিলাল (রা) তাঁর প্রতি সর্বাধিক ইহসানকারী ব্যক্তি হযরত সিদ্দীকে আকবরের (রা) নিকট আরজ করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূলের খলীফা আপনি কি আমাকে আযাদ করেছেন আল্লাহর ওয়াস্তে না আপনার সংগী বানানাের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন : “আল্লাহর ওয়াস্তে।' বিলাল বললেন “আমি রাসূলুল্লাহর (সা) মুখে শুনেছি, মুমিনের উত্তম কাজ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ করা। এ কারণে আমি চাই, এই মহান কাজটিকে আমরণ আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করতে।' হযরত আবু বকর (রা) বললেনঃ 'বিলাল, তুমি আমার থেকে দূরে চলে গিয়ে বিচ্ছেদ বেদনায় আমাকে কাতর করে তুলাে না।' হযরত আবু বকরের আবেদনে সাড়া দিয়ে তার জীবদ্দশায় বিলাল কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি।

হযরত বিলালের (রাঃ) আযান

হযরত আবু বকরের পর খলীফা হযরত উমার। বিলাল তার কাছেও অনুমতি চাইলেন জিহাদে অংশগ্রহণের। প্রথম খলীফার মত দ্বিতীয় খলীফাও তাকে ঠেকিয়ে রাখতে চাইলেন। কিন্তু তার অত্যধিক উৎসাহ ও অনমনীয় মনোভাব দেখে খলীফা উমার তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। তিনি সিরিয়া অভিযানে অংশগ্রহণ করলেন। ১৬ হিজরী সনে হযরত উমারের সিরিয়া সফরকালে অন্যান্য সামরিক অফিসারদের সাথে বিলালও ‘জাবিয়া' নামক স্থানে খলীফাকে স্বাগত জানান এবং ‘বাইতুল মুকাদ্দাস' সফরে তিনি খলীফার সংগী হন। সফরের এক পর্যায়ে একদিন খলীফা বিলালকে অনুরােধ করলেন আযান দেওয়ার জন্য। বিলাল বললেনঃ যদিও আমি অঙ্গীকার করেছি, রাসূলুল্লাহর (সা) পর আর কারাে জন্য আযান দিব না, তবে আজ আপনার ইচ্ছা পূরণ করবাে।' এ কথা বলে তিনি এমন হৃদয়গ্রাহী আওয়াযে আযান দিলেন যে উপস্থিত জনতার মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিল। হযরত উমার এত কাঁদলেন যে তার বাক রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। হযরত আবু উবাইদা ও হযরত মুয়ায বিন জাবাল (রা) কান্নায় ভেংগে পড়েছিলেন। সবারই মনে তখন নবী-যুগের ছবি ভেসে উঠছিল, অন্তরে তখন এক বিশেষ অনুভূতি জেগে উঠেছিল।

সিরিয়ার সবুজ ও শস্য-শ্যামল ভূমি হযরত বিলালের খুবই মনঃপুত হয়। তিনি দ্বিতীয় খলীফার নিকট তার ইসলামী ভাই আবু রুওয়াইহাসহ তাকে সিরিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দানের জন্য আবেদন জানান। তার আবেদন মজুর হলাে। তারা দু'জন ‘খাওলান' নামক ছোট একটি শহরে বসতি স্থাপন করেন। তাদের পূর্বেই এ শহরে বসতি স্থাপন করেছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দারদা আনসারীর (রা) গােত্র। এখানে তারা দু'জন এ গােত্রের দুটি মেয়েকে বিয়ে করে তাদের সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন।

দীর্ঘদিন যাবত হযরত বিলাল (রা) সিরিয়ায় বসবাস করতে থাকেন। একদিন স্বপ্নে দেখলেনঃ রাসূল (সা) বলছেনঃ “বিলাল, এমন নিরস জীবন আর কতকাল? আমার যিয়ারতের সময় কি তােমার এখনাে হয়নি?' এ স্বপ্ন তার প্রেম ও ভালােবাসার ক্ষত আবার তাজা করে দিল। তখনি তিনি মদীনা রওয়ানা হলেন এবং পবিত্র রওজা মুবারকে হাজির হয়ে জবাই করা মােরগের মত ছটফট করতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) কলিজার টুকরী হযরত হাসান ও হুসাইনকে (রা) জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকেন। তারা দু'জন সে দিন সকালে ফজরের আযান দেওয়ার জন্য হযরত বিলালকে (রা) অনুরােধ করেন। তাদের অনুরােধ তিনি প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। সুবহে সাদিকের সময় মসজিদে নববীর ছাদে দাড়িয়ে তিনি আল্লাহু আকবর' বলছিলেন, আর সে ধ্বনি মদীনার অলিতে গলিতে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরছিল। তাঁর সে আযান ধ্বনি শুনে মদীনার জনগণ তাকবীর ধ্বনি দিয়ে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলছিল।

তিনি যখন 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বললেন, তখন মদীনার নারী-পুরুষ সকলেই অস্থিরভাবে কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে মসজিদের দিকে দৌড়াতে শুরু করেন। বর্ণিত আছে, এমন ভাব-বিহ্বল দৃশ্য মদীনায় আর কখনাে দেখা যায়নি।

হযরত বিলালের (রাঃ) মৃত্যু

এ নিষ্ঠাবান রাসূলপ্রেমিক হিজরী ২০ সনে প্রায় ষাট বছর বয়সে ইনতিকাল করেন। দিমাশকের বাবুস সাগীরের কাছেই তাকে দাফন করা হয়।

চারিত্রিক সৌন্দর্য হযরত বিলালের (রা) মর্যাদা ও সম্মানকে অত্যধিক বাড়িয়ে দিয়েছিল। হযরত উমর বলতেনঃ 'আবু বকর আমাদের নেতা এবং তিনি আমাদের নেতা বিলালকে আবাদ করেছেন।'

হযরত রাসূলে পাকের সাহচর্য ও সেবাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। সব সময় রাসূলুল্লাহর (সা) আশেপাশে উপস্থিত থাকতেন। রাসূলুল্লাহর (সা) সফর সংগী হতেন। ঈদ ও ইসতিসকার নামাযের সময় বল্লম হাতে রাসূলুল্লাহর (সা) আগে আগে ময়দানে যেতেন। ওয়াজ নসীহতের মজলিসেও উপস্থিত থাকতেন। শত প্রয়ােজন ও দারিদ্র থাকা সত্ত্বেও হাতে কিছু এলেই তার একাংশ রাসূলকে (সা) উপটৌকন পাঠাতেন। একবার উৎকৃষ্ট মানের কিছু খেজুর রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে নিয়ে আসেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন। বিলাল, এগুলি কোথায় পেলে? জবাব দিলেন । আমার কাছে কিছু নিম্নমানের খেজুর ছিল। যেহেতু আপনার খিদমতে কিছু পাঠানাের ইচ্ছা ছিল, এ জন্যই দু সায়ের বিনিময়ে এর এক সা' খেজুর লাভ করেছি। রাসূল (সা) বললেনঃ হায়, হায়, এমন করোনা। এ তাে এক ধরনের সুদ। যদি তােমাকে খরীদ করতেই হতাে, তাহলে প্রথমে তােমার খেজুরগুলি বিক্রি করে দিতে এবং সেই অর্থ দিয়ে এগুলি খরীদ করতে।

জান্নাতে বিলালের পায়ের আওয়াজ

মক্কায় যে অত্যাচার ও উৎপীড়ন হযরত বিলাল সহ্য করেছিলেন, তাদ্বারাই তার সহ্যশক্তি, ধৈর্য ও দৃঢ়তার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। কেউ তার কোন গুণের কথা বললে বলতেন? আমি তাে শুধু একজন হাবশী, কাল পর্যন্তও যে দাস ছিল। সততা, নিষ্কলুষতা ও বিশ্বস্ততা ছিলাে তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

হযরত বিলাল যেহেতু রাসূলুল্লাহর (স) বিশেষ মুয়াযিন ছিলেন এ কারণে অধিকাংশ সময় মসজিদেই কাটাতে হতাে। প্রতি দিনের বেশী সময় ইবাদতে অতিবাহিত করতেন। একবার রাসূল (সা) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তােমার কোন্ ভালাে কাজটির জন্য সবচেয়ে বেশী সাওয়াবের আশা করাে? বললেনঃ “আমি তো এমন কোন ভালাে কাজ করিনি। তবে প্রত্যেক অজুর পরে নামায আদায় করেছি।

সম্ভ্রান্ত আরব পরিবারে তিনি একাধিক বিয়ে করেছিলেন। হযরত আবু বকরের কন্যার সাথে রাসূল (সা) নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন। বনু যুহরা ও আবু দারদার পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু কোন পক্ষেই তার কোন সন্তান জন্ম লাভ করেনি। | সহীহ ইবন খুযাইমা গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, একদিন রাসূল (সা) বিলালকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিলাল, কিসের বদৌলতে তুমি আমার আগেই জান্নাতে পৌঁছে গেলে। গতরাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তোমার 'খশখশা আওয়াজ শুনতে পেলাম।' বিলাল বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি কোন গুনাহ করলেই দু'রাকায়াত নামায আদায় করি। আর অজু চলে গেলে তখনি আবার অজু করে আমি দু'রাকায়াত নামায আদায় করে থাকি।'

************************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url