মা’আরেফুল কোরআন - ৩৯ || সূরা আল-বাকারাহ ১২৫নং আয়াতের অর্থ ও তাফসীর || মক্কা ও কা’বাগৃহের ইতিহাস










بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

سورة البقرة

মক্কা ও কা’বাগৃহের ইতিহাস

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ১২৫


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَ اِذۡ جَعَلۡنَا الۡبَیۡتَ مَثَابَۃً لِّلنَّاسِ وَ اَمۡنًا ؕ وَ اتَّخِذُوۡا مِنۡ مَّقَامِ اِبۡرٰهٖمَ مُصَلًّی ؕ وَ عَهِدۡنَاۤ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ اَنۡ طَهِّرَا بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡعٰکِفِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ ﴿۱۲۵


সূরা আল-বাকারাহ ১২৫ নং আয়াতের অর্থ

(১২৫) যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও এবং আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।


শব্দার্থঃ مَثَابَةً শব্দটি ثَابَ يَثُوْبُ ثَوْبًا وَمَثَابًا থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ প্রত্যাবর্তন করা। এ কারণে مَثَابَةً শব্দের অর্থ হবে প্রত্যাবর্তনস্থল— যেখানে মানুষ বারবার ফিরে আসে।


সূরা আল-বাকারাহ ১২৫ নং আয়াতের তফসীরের সার-সংক্ষেপ

(ঐ সময়টিও স্মরণযোগ্য) যখন আমি কা’বাগৃহকে মানুষের জন্য উপাসনাস্থল ও (সর্বদা) শান্তির আবাসস্থল হিসাবে পরিণত করে রেখেছি। (পরিশেষে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছি যে, বরকত লাভের জন্য) তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের জায়গা বানাও। আমি কা’বা নির্মাণের সময় (হযরত) ইবরাহীম ও (হযরত) ইসমাঈল (আ)-এর কাছে আদেশ পাঠিয়েছি যে, আমার (এই) গৃহকে বহিরাগত ও স্থানীয় লোকদের (ইবাদতের) জন্য এবং রুকূ-সিজদাকারীদের জন্য খুব পাক (সাফ) রাখ ।


সূরা আল-বাকারাহ ১২৫ নং আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

হযরত খলীলুল্লাহর মক্কায় হিজরত ও কা’বা নির্মাণের ঘটনাঃ এই আয়াতে কা’বাগৃহের ইতিহাস, হযরত ইবরাহীম ও হযরত ইসমাঈল (আ) কর্তৃক কা’বাগৃহের পুনর্নির্মাণ, কা’বা ও মক্কার কতিপয় বৈশিষ্ট্য এবং কা’বাগৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সম্পর্কিত বিধি-বিধান উল্লিখিত হয়েছে। এ বিষয়টি কে কোরআনের অনেক আয়াতে বিভিন্ন সূরায় ছড়িয়ে রয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তা-ই বর্ণিত হচ্ছে। এতে উল্লিখিত আয়াতসমূহের বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। সূরা হজ্জের ২৬তম আয়াতে এ বিষয়টি এভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ


وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَنْ لَا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَى كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ .

অর্থাৎ- “ঐ সময়টির কথা স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে কা‘বাগৃহের স্থান নির্দেশ করে দিলাম যে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, আমার গৃহকে তওয়াফকারী ও রুকূ-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা করে দেবে। তারা তোমার কাছে পদব্রজে এবং শ্রান্তক্লান্ত উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে আসবে।

মক্কায় হযরত ইসমাঈল ও হাজেরা আগমন ও বসবাসের ইতিহাস

তফসীরে ইবনে-কাসীরে খ্যাতনামা মুফাসসির হযরত মুজাহিদ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবরাহীম (আ) দুগ্ধপোষ্য শিশুপুত্র হযরত ইসমাঈলসহ সিরিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় তিনি আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ পান যে, আপনাকে কা’বা গৃহের স্থান নির্দেশ করা হবে। আপনি সে স্থানকে পাক-সাফ করে তওয়াফ ও নামায দ্বারা আবাদ রাখবেন। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জিবরাঈল (আ) বোরাক নিয়ে আগমন করলেন এবং ইবরাহীম ইসমাঈল ও হাজেরাকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে কোন জনপদ দৃষ্টিগোচর হলেই হযরত ইবরাহীম (আ) জিবরাঈলকে জিজ্ঞেস করতেন, আমাদের কি এখানেই অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে? হযরত জিবরাঈল (আ) বলতেনঃ না, আপনার গন্তব্যস্থান আরও সামনে। অবশেষে মক্কার স্থানটি সামনে এলো! এখানে কাঁটাযুক্ত বন-জঙ্গল ও বাবলা বৃক্ষ ছাড়া কিছুই ছিল না। এ ভূ-খণ্ডের আশেপাশে কিছু জনবসতি ছিল, তাদের বলা হতো ’আমালীক’। আল্লাহর গৃহটি তখন টিলার আকারে বিদ্যমান ছিল। এখানে পৌঁছে হযরত ইবরাহীম (আ) জিবরাঈল (আ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমাদের কি এখানেই বসবাস করতে হবে? জিবরাঈল (আ) বললেনঃ হ্যাঁ।

হযরত ইবরাহীম (আ) শিশু-পুত্র ও স্ত্রী হাজেরাসহ এখানে অবতরণ করলেন । কা’বাগৃহের অদূরেই একটি ছোট কুঁড়েঘর নির্মাণ করে ইসমাঈলহাজেরাকে সেখানে রেখে দিলেন। খাদ্য পাত্রে কিছু খেজুর এবং মশকে পানিও রাখলেন। তখন হযরত ইবরাহীম (আ)-এর প্রতি সেখানে থাকার নির্দেশ ছিল না। তাই দুগ্ধপোষ্য শিশু ও তাঁর জননীকে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করে তিনি ফিরে যেতে লাগলেন। তাঁকে প্রস্থানোদ্যত দেখে হাজেরা বললেন, এ জন-মানবহীন প্রান্তরে আমাদের রেখে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এখানে না আছে খাদ্য-পানীয়, না আছে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।


হযরত খলীলুল্লাহ্ কোন উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন। হাজেরা পেছন থেকে বারবার এ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলেন। কিন্তু কোন উত্তর নেই। অবশেষে হাজেরা নিজেই ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন কি ? এবার হযরত ইবরাহীম (আ) মুখ খুললেন। বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর পক্ষ থেকেই এ নির্দেশ।

এ কথা শুনে হাজেরা বললেনঃ তবে আপনি স্বচ্ছন্দে যান। যিনি আপনাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও ধ্বংস করবেন না। ইবরাহীম (আ)’ চলতে লাগলেন; কিন্তু দুগ্ধপোষ্য শিশু ও তার মায়ের কথা বারবার তাঁর মনে পড়তে লাগল। যখন রাস্তার এমন এক মোড়ে গিয়ে পৌঁছলেন, যেখান থেকে হাজেরা তাঁকে দেখতে পান না, তখন দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। দোয়াটি সূরা ইবরাহীমের ৩৬ ও ৩৭তম আয়াতে এভাবে উল্লিখিত হয়েছেঃ

رَبِّ اجْعَلْ هَذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ

হে পালনকর্তা! এ শহরকে শান্তিময় করে দাও এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখ।" এরপর দোয়ায় বললেনঃ

رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ

পরওয়ারদেগার ! আমি আমার সন্তানকে আপনার সম্মানিত গৃহের নিকটবর্তী একটি চাষাবাদের অযোগ্য প্রান্তরে আবাদ করেছি, পরওয়ারদেগার, যাতে তারা নামায প্রতিষ্ঠিত করে। আপনি কিছু মানুষের অন্তর তাদের দিকে আকৃষ্ট করে দিন এবং তাদেরকে কিছু ফলের দ্বারা উপজীবিকা দান করুন, যাতে কৃতজ্ঞ হয়।”

যে নির্দেশের ভিত্তিতে ইসমাঈল ও তাঁর জননীকে সিরিয়া থেকে এখানে আনা হয় তাতে বলা হয়েছিল যে, আমার গৃহকে পাক-সাফ রাখবে। হযরত ইবরাহীম (আ) জানতেন যে, পাক রাখার অর্থ বাহ্যিক ময়লা ও আবর্জনা থেকে পাক রাখাও বোঝান হয়েছে। এ কারণেই পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে তিনি যে দোয়া করেন, তাতে প্রথমে বস্তিকে নিরাপদ ও শান্তিময় করার কথা বলে পরে বললেন, “আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন।” কেননা হযরত খলীলুল্লাহ মা’আরেফতের এমন স্তরে উপনীত ছিলেন, যেখানে মানুষ নিজের অস্তিত্বকে পর্যন্ত বিলুপ্ত দেখতে পায়, নিজের ক্রিয়াকর্ম ও ইচ্ছাকে আল্লাহর করায়ত্ত এবং তাঁরই ইচ্ছায় সব কাজকর্ম সম্পন্ন হয় বলে অনুভব করে। কাজেই তিনি কুফর ও শিরক থেকে আল্লাহর ঘরকে পাক রাখার নির্দেশের ব্যাপারে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করলেন। দোয়ায় কুফর ও শিরক থেকে দূরে রাখার জন্য যে আবেদন করা হয়েছে, তাতে আরও একটি তাৎপর্য রয়েছে । তা এই যে, কা’বাগৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ থেকে ভবিষ্যতে কোন অজ্ঞ ব্যক্তি স্বয়ং কা’বাগৃহকেই উপাস্য বানিয়ে নিয়ে শিরকে লিপ্ত হতে পারত। এ কারণেই দোয়া করলেন যে, শিরক থেকে আমাদের দূরে রাখুন।

অতঃপর দুগ্ধপোষ্য শিশু ও তার মায়ের প্রতি স্নেহপরবশ হয়ে দোয়া করলেন যে, আপনার নির্দেশ মোতাবেক আপনার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে আমি তাদের আবাদ করেছি। কিন্তু স্থানটি চাষাবাদের যোগ্যও নয় যে, কেউ কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমেও তা থেকে জীবনের প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। তাই আপনিই কৃপা করে তাদেরকে ফল দ্বারা রিযিক দান করুন।


এই দোয়ার পর হযরত খলীলুল্লাহ সিরিয়ায় চলে গেলেন। এদিকে খেজুর ও পানি নিঃশেষ হয়ে গেলে হাজেরা ও তাঁর পুত্র উভয়েই পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লেন। এরপর পানির জন্য বের হওয়া, কখনও সাফা পাহাড়ে—কখনও মারওয়া পাহাড়ে আরোহণ করা, উভয় পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়ানো—যাতে ইসমাঈল দৃষ্টির অন্তরালে না পড়ে—ইত্যাকার ঘটনা সাধারণ মুসলমানের অজানা নেই। হজ্জ পালন করতে গিয়ে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়ানো সে ঘটনারই স্মৃতিচারণ।

কাহিনীর শেষভাগে আল্লাহর আদেশে জিবরাঈল (আ)-এর সেখানে পৌছা, যম্ যম প্রবাহিত হওয়া, যৌবনে পদার্পণ করে জুরহাম গোত্রের জনৈকা রমণীর সাথে ইসমাঈলের বিয়ে প্রভৃতি ঘটনা সহীহ বুখারী শরীফে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন রেওয়ায়েত একত্র করলে জানা যায় যে, সূরা হজ্জে প্রথম ভাগের আয়াতে কা’বাগৃহকে আবাদ করা ও পাক-সাফ রাখার নির্দেশ দ্বারা সে স্থানকে হযরত ইসমাঈলহাজেরা দ্বারা আবাদ করাই উদ্দেশ্য ছিল। সে নির্দেশ শুধু হযরত ইবরাহীমকে লক্ষ্য করেই দেওয়া হয়েছিল। কেননা, ইসমাঈল ছিলেন তখন দুগ্ধপোষ্য শিশু। তখন কা’বা পুনর্নির্মাণের নির্দেশ ছিল না। কিন্তু সূরা বাকারার আলোচ্য আয়াতে وَعَهِدْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ হযরত ইবরাহীমের সঙ্গে ইসমাঈলকেও যোগ করা হয়েছে। কারণ এ নির্দেশটি তখনকার, যখন হযরত ইসমাঈল যুবক ও বিবাহিত ।

কা’বাগৃহের পূননির্মাণ ও ইতিহাস

সহীহ্ বুখারীর রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছেঃ একদিন হযরত ইবরাহীম (আ) স্ত্রী ও পুত্রকে দেখার উদ্দেশ্যে মক্কা আগমন করলে ইসমাঈলকে একটি গাছের নিচে বসে তীর বানাতে দেখতে পান। পিতাকে দেখে পুত্র সসম্ভ্রমে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রাথমিক কুশল বিনিময়ের পর হযরত ইবরাহীম (আ) বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তুমি আমাকে সাহায্য করবে। অতঃপর যে ঢিবির নিচে কা’বাগৃহ অবস্থিত ছিল, হযরত ইবরাহীম (আ) সেদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেনঃ আমি এর নির্মাণের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইবরাহীমকে কা’বা গৃহের চতুর্সীমা বলে দিয়েছিলেন। পিতাপুত্র উভয়ে মিলে কাজ আরম্ভ করলে কা’বাগৃহের প্রাচীন ভিত্তি বেরিয়ে পড়ল। এ ভিত্তির উপরই তারা নির্মাণ কাজ আরম্ভ করলেন। পরবর্তী আয়াতে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, কাবাগৃহের পুনর্নির্মাতা ছিলেন প্রকৃতপক্ষে হযরত ইবরাহীম (আ) আর হযরত ইসমাঈল (আ) ছিলেন তাঁর সাহায্যকারী।


কোন কোন হাদীসে এবং ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, কা’বাগৃহ পূর্ব থেকেই পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল। কোরআনে উল্লিখিত আয়াতসমূহ থেকেও সত্যই প্রতিভাত হয়। কেননা, আয়াতসমূহে কোথাও কা’বাগৃহের স্থান নির্দেশ করার কথা এবং কোথাও পাক-সাফ রাখার কথা আছে। কিন্তু একটি নতুন গৃহ নির্মাণের কথা কোথাও নেই। কাজেই বোঝা যায় যে, এ ঘটনার পূর্ব থেকেই কা’বাগৃহ বিদ্যমান ছিল। অতঃপর নূহের আমলে সংঘটিত মহাপ্লাবনের সময় হতে তা বিধ্বস্ত হয়ে যায়, না হয় ভিত্তিটুকু ঠিক রেখে বাকিটুকু উঠিয়ে নেওয়া হয়। সুতরাং হযরত ইবরাহীম (আ)ইসমাঈল (আ) কা’বাগৃহের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা নন; বরং তাঁদের হাতে প্রাচীন ভিত্তির উপর এ গৃহ পুনর্নির্মিত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন ওঠে যে, কা’বাগৃহ প্রথমে কখন কে নির্মাণ করেছিলেন। এ সম্পর্কে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই। আহলে-কিতাব ইহুদী ও খৃস্টানদের রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে, হযরত আদমের পৃথিবীতে অবতরণের পূর্বে সর্বপ্রথম ফেরেশতারা এ গৃহ নির্মাণ করেছিলেন। এরপর আদম (আ) এর পুনর্নির্মাণ করেন। নূহের মহা প্লাবন পর্যন্ত এ নির্মাণ অক্ষত ছিল। মহাপ্লাবনে বিধ্বস্ত হওয়ার পর হযরত ইবরাহীম (আ)-এর আমল পর্যন্ত তা একটি টিলার আকারে বিদ্যমান ছিল। অতঃপর হযরত ইবরাহীমইসমাঈল (আ) এর পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর এর প্রাচীরে বহু ভাঙা-গড়া হয়েছে কিন্তু একেবারে বিধ্বস্ত হয়নি। মহানবী (সা)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে কুরায়েশরা একে বিধ্বস্ত করে নতুনভাবে নির্মাণ করে। এ নির্মাণকাজে হযরত (সা) নিজেও বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায় হেরেম সম্পর্কিত বিধি-বিধান।

১। مَثَابَةً  শব্দ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা কা’বাগৃহকে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। ফলে তা সর্বদাই মানব জাতির প্রত্যাবর্তনস্থল হয়ে থাকবে এবং মানুষ বরাবর তার দিকে ফিরে যেতে আকাঙ্ক্ষী হবে। মুফাসসির শ্রেষ্ঠ হযরত মুজাহিদ বলেনঃ لا تقضى أحد منها وطرا অর্থাৎ, কোন মানুষ কাবাগৃহের যিয়ারত করে তৃপ্ত হয় না, বরং প্রতিবারেই যিয়ারতের অধিকতর বাসনা নিয়ে ফিরে আসে। কোন কোন আলিমের মতে কা’বাগৃহ থেকে ফিরে আসার পর আবার সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হজ্জ কবূল হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। সাধারণভাবে দেখা যায়, প্রথমবার কা’বাগৃহ যিয়ারত করার যতটুকু আগ্রহ হয়, দ্বিতীয়বার তা আরও বৃদ্ধি পায় এবং যতবারই যিয়ারত করতে থাকে, এ আগ্রহ উত্তরোত্তর ততই বেড়ে যেতে থাকে, এ বিস্ময়কর ব্যাপারটি একমাত্র কা’বাগৃহেরই বৈশিষ্ট্য। নতুবা জগতের শ্রেষ্ঠতম মনোরম দৃশ্যও এক-দু’বার দেখেই মানুষ পরিতৃপ্ত হয়ে যায়। পাঁচ-সাতবার দেখলে আর দেখার ইচ্ছাই হয় না। অথচ এখানে না আছে কোন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট, না এখানে পৌছা সহজ এবং না আছে ব্যবসায়িক সুবিধা, তা সত্ত্বেও এখানে পৌঁছার আকুল আগ্রহ মানুষের মনে অবিরাম ঢেউ খেলতে থাকে । হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে এখানে পৌঁছানোর জন্য মানুষ ব্যাকুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

২. এখানে آمَنَّا শব্দের অর্থ مأمن অর্থাৎ, শান্তির আবাসস্থল بيت শব্দের অর্থ শুধু কা’বাগৃহ নয় ; বরং সম্পূর্ণ হেরেম। অর্থাৎ কা’বাগৃহের পবিত্র প্রাঙ্গণ। কোরআনে بيت الله كعبة শব্দ বলে যে সম্পূর্ণ হেরেমকে বোঝানো হয়েছে, তার আরও বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন, এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ এখানে كعبة বলে সমগ্র হেরেমকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, এতে কোরবানীর কথা আছে। কোরবানী কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে হয় না এবং সেখানে কোরবানী করা বৈধও নয়। কাজেই আয়াতের অর্থ হবে যে, “আমি কা’বার হেরেমকে শান্তির আলয় করেছি। শান্তির আলয় করার অর্থ মানুষকে নির্দেশ দেওয়া যে, এ স্থানকে সাধারণ হত্যা ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি অশান্তিজনিত কার্যক্রম থেকে মুক্ত রাখতে হবে। -(ইবনে-আরাবী)


আইয়্যামে জাহিলিয়াতে আরবদের হাতে ইবরাহীমী ধর্মের যে শেষ চিহ্নটুকু অবশিষ্ট ছিল, তারই ফলে হেরেমে পিতা বা ভ্রাতার হত্যাকারীকে পেয়েও কেউ প্রতিশোধ নিত না। তারা হেরেমে সাধারণ যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম মনে করত। এ বিধানটি ইসলামী শরীয়তেও হুবহু বাকি রাখা হয়েছে। মক্কা বিজয়ের সময় রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর জন্য হেরেমে যুদ্ধ করা কয়েক ঘণ্টার জন্য বৈধ করা হয়েছিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আবার চিরতরে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা) মক্কা বিজয়ের পরবর্তী ভাষণে বিষয়টি ঘোষণা করে দেন।- (সহীহ্ বুখারী)

যদি কেউ হেরেমের অভ্যন্তরেই এমন অপরাধ করে বসে, ইসলামী আইনে যার সাজা হদ ও কিসাস (মৃত্যুদণ্ড, হত্যার বিনিময়ে মৃত্যু বা অর্থদণ্ড)-এর শাস্তি হয়, তবে হেরেম তাকে আশ্রয় দেবে না, বরং হদ ও কিসাস জারি করতে হবে। এটাই ইজমা তথা সর্বসম্মত রায় ।-(আহকামুল কোরআন-জাসসাস, কুরতুবী) কেননা, কোরআনে বলা হয়েছেঃ قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ অর্থাৎ তারা যদি হেরেমে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা কর।’

এখানে একটি মাসআলার ব্যাপারে মুজতাহিদ ইমামগণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। যদি কোন ব্যক্তি হেরেমের বাইরে অপরাধ করে হেরেমে আশ্রয় নেয়, তবে তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হবে ? কোন কোন ইমামের মতে হেরেমের মধ্যেই তাকে দণ্ড দেওয়া হবে। ইমাম আবূ হানিফা (র) বলেন, সে সাজার কবল থেকে রেহাই পাবে না। কারণ, তাকে রেহাই দেওয়া হলে অপরাধের সাজা থেকে বাঁচার একটি পথ খুলে যাবে। ফলে পৃথিবীতে অশান্তি বৃদ্ধি পাবে এবং হেরেম শরীফ অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হবে। কিন্তু হেরেমের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে তাকে হেরেমের ভিতরে সাজা দেওয়া হবে না, বরং হেরেম থেকে বের হতে বাধ্য করতে হবে। বের হওয়ার পর সাজা দেওয়া হবে।


মাকামে-ইবরাহীম

৩. وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى এখানে মাকামে-ইবরাহীমের অর্থ ঐ পাথর, যাতে মু’জিযা হিসাবে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পদচিহ্ন অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। কা’বা নির্মাণের সময় এ পাথরটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন। (সহীহ্ বুখারী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আনাস (রা) বলেন, আমি এই পাথরে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পদচিহ্ন দেখেছি। যিয়ারতকারীদের উপর্যুপরি স্পর্শের দরুণ চিহ্নটি এখন অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে।-(কুরতুবী) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে মাকামে ইবরাহীমের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে যে, সমগ্র হেরেমটিই মাকামে ইবরাহীম। এর অর্থ বোধ হয় এই যে, তওয়াফের পর যে দু’রাকআত নামায মাকামে ইবরাহীমে পড়ার নির্দেশ আলোচ্য আয়াতে রয়েছে, তা হেরেমের যে কোন অংশে পড়লেই নির্দেশটি পালিত হবে। অধিকাংশ ফিক্হশাস্ত্রবিদ এ ব্যাপারে একমত।


৪. আলোচ্য আয়াতে মাকামে ইবরাহীমকে নামাযের জায়গা করে নিতে বলা হয়েছে। স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জের সময় কথা ও কর্মের মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন। তিনি তওয়াফের পর কা’বাগৃহের সম্মুখে অনতিদূরে রক্ষিত মাকামে ইবরাহীমের কাছে আগমন করলেন এবং এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى অতঃপর মাকামে-ইবরাহীমের পেছনে এমনভাবে দাঁড়িয়ে দু’রাকআত নামায পড়লেন যে, কা’বা ছিল তাঁর সম্মুখে এবং কা’বা ও তার মাঝখানে ছিল মাকামে-ইবরাহীম। -(সহীহ্ মুসলিম)

এ কারণেই ফিকশাস্ত্রবিদগণ বলেছেনঃ যদি কেউ মাকামে ইবরাহীমের পেছনে সংলগ্ন স্থানে জায়গা না পায়, তবে মাকামে ইবরাহীম ও কা’বা—উভয়টিকে সামনে রেখে যে কোন দূরত্বে দাঁড়িয়ে নামায পড়লে নির্দেশ পালিত হবে। 


মাকামে ইবরাহীমের পিছনে দুই রাকাত নামাজের মাসালা

৫. আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তওয়াফের পরবর্তী দুই রাকআত নামায ওয়াজিব।-(জাসসাস, মোল্লাহ আলী কারী)


তবে এ দু’রাকআত নামায বিশেষভাবে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে পড়া সুন্নত। হেরেমের অন্যত্র পড়লেও আদায় হবে। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সা) এ দু’রাকআত নামায কা’বাগৃহের দরজা সংলগ্ন স্থানে পড়েছেন বলেও প্রমাণিত রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-ও তাই করেছেন বলে বর্ণিত আছে (জাসসাস)। মোল্লা আলী কারী ’মানাসেক’ গ্রন্থে বলেছেন, এ দু’রাকআত মাকামে-ইবরাহীমের পেছনে পড়া সুন্নত। যদি কোন কারণে সেখানে পড়তে কেউ অক্ষম হয়, তবে হরম অথবা হরমের বাইরে যে কোনখানে পড়ে নিলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। বিদায় হজ্জে হযরত উম্মে সালমা (রা) এমনি বিপাকে পড়েন, তখন তিনি মসজিদে হারামে নয়, বরং মক্কা থেকে বের হয়ে দু’রাকআত ওয়াজিব নামায পড়েন। রসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। প্রয়োজনবশত হরমের বাইরে এ নামায পড়লে ফিকহবিদদের মতে কোন কোরবানীও ওয়াজিব হয় না। একমাত্র ইমাম মালেকের মতে কোরবানী ওয়াজিব হয়। (মানাসেক, মোল্লা আলী কারী)


মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার মাসালা

৬. طَهِّرَا بَيْتِيَ এখানে কা’বাগৃহকে পাক-সাফ করার নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে। বাহ্যিক অপবিত্রতা ও আবর্জনা এবং আত্মিক অপবিত্রতা-উভয়টিই এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন-কুফর, শিরক, দুশ্চরিত্রতা, হিংসা, লালসা, কুপ্রবৃত্তি, অহংকার, রিয়া, নাম-যশ ইত্যাদির কলুষ থেকেও কা’বাগৃহকে পবিত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশে , শব্দ দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ আদেশ যে কোন মসজিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ সব মসজিদই আল্লাহর ঘর। কোরআনে বলা হয়েছেঃ

فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ


হযরত ফারূকে আযম (রা) মসজিদে এক ব্যক্তিকে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে শুনে বললেনঃ ’তুমি কোথায় দাঁড়িয়ে আছ জান না ?’ (কুরতুবী) অর্থাৎ মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত; এতে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা উচিত নয়। মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে কা’বাগৃহকে যেমন যাবতীয় বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখতে বলা হয়েছে, তেমনি অন্যান্য মসজিদকেও পাক-পবিত্র রাখতে হবে। দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদকে যাবতীয় অপবিত্রতা ও দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পাক-সাফ করে এবং অন্তরকে কুফর, শিরক, দুশ্চরিত্রতা, অহংকার, হিংসা, লোভ-লালসা ইত্যাদি থেকে পবিত্র করে মসজিদে প্রবেশ করা অবশ্য কর্তব্য। রসূলুল্লাহ (সা) পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে বারণ করেছেন। তিনি ছোট শিশু এবং উন্মাদদেরও মসজিদে প্রবেশ করতে বারণ করেছেন। কারণ তাদের দ্বারা মসজিদ অপবিত্র হওয়ার আশংকা থাকে।


৭. لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ  আয়াতের শব্দগুলো থেকে কতিপয় বিধি-বিধান প্রমাণিত হয়। প্রথমত, কা’বাগৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য তওয়াফ, ইতেকাফ ও নামায । দ্বিতীয়ত, তওয়াফ আগে আর নামায পরে (হযরত ইবনে আব্বাসের অভিমত তাই)। তৃতীয়ত, বিশ্বের বিভিন্ন কোণ্ থেকে আগমনকারী হাজীদের পক্ষে নামাযের চাইতে তওয়াফ উত্তম। চতুর্থত, ফরয হোক অথবা নফল – কা’বাগৃহের অভ্যন্তরে যে কোন নামায পড়া বৈধ।-(জাসসাস)





************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url