আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) জান্নাতী || জান্নাতের সব দরজা || নামাযের দোয়া || ক্ষুধার যন্ত্রনায় পথে নেমে আসলেন নবী







আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) জান্নাতী

সূর্য ডুবে যাওয়ার পর রাত তার অন্ধকার নিয়ে আগমন করল। ধীরে ধীরে অন্ধকার বাড়তে লাগল। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সাঃ) -এর চারপাশে বসেছিলেন, দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছিল পূর্ণিমার চাঁদের চারপাশে তারকারা বসে আছে। রাসূল (সাঃ) তাঁদেরকে তাঁর মিষ্টি ভাষায় হাদীস শুনিয়ে তাঁদের হৃদয় সিক্ত করছিলেন।

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ এক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতে যত ঘর ও কক্ষ আছে, প্রত্যেক ঘর ও কক্ষের অধিবাসীরা বলতে থাকবে, স্বাগতম........ স্বাগতম........ আমাদের দিকে আসুন.......আমাদের দিকে আসুন।

এ কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) খুব আগ্রহের সাথে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! ওই দিন সে লোকটির সওয়াবের পরিমাণ কি হবে?
       
রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) -এর দিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তাঁকে সুসংবাদ দিয়ে বললেনঃ আবু বকর! সে লোকটি তুমি।

রাসূল (সাঃ) -কে মি'রাজের রজনীতে আসমানে উঠিয়ে নিলে, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি জান্নাতের হুর দেখতে পেলেন। হুরটি যেন পূর্ণিমার চাঁদের মতো, যা তিনি আগে কখনো দেখেননি। তাঁর চোখের পাতার পশমগুলো দেখে মনে হচ্ছিল তা যেন ঈগল পাখির ডানার অগ্রপালক। রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি কার জন্যে?

সে বলল, আমি আপনার পরবর্তী খলিফার জন্যে।*

তথ্যসূত্রঃ
*    মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৯ম খন্ড, ৪৯ পৃষ্টা।


জান্নাতের সব দরজা


নবী করীম (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামদের মাঝে বসে আছেন। তাঁর মুখ থেকে মণিমুক্তার মতো বাণী বের হচ্ছিল। সাহাবায়ে কেরামদের শ্রবণশক্তি তাঁর মূল্যবান কথাগুলো শুনে ধন্য হচ্ছিল।

রাসূল (সাঃ) বলছিলেনঃ যে ব্যক্তি সম্পদ থেকে দুটি জিনিসও দান করে থাকবে তাকে জান্নাতের দিকে ডেকে বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটি উত্তম। যে ব্যক্তি নামায আদায়কারী তাকে নামাযের দরজা দিয়ে ডাকা হবে, যে ব্যক্তি জিহাদকারী তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে ডাকা হবে, যে ব্যক্তি রোযাদার তাকে রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে ডাকা হবে, যে ব্যক্তি সদকা দানকারী তাকে সদকার দরজা দিয়ে ডাকা হবে ।
       
তখন আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমার পিতামাতা আপনার জন্যে কোরবান হোক, কোনো ব্যক্তিকে সবগুলো দরজা থেকে আহ্বান করার কোনো প্রয়োজন নেই, তবু কি এমন কোনো ব্যক্তি থাকবে যাকে সবগুলো দরজা দিয়ে ডাকবে? রাসূল (সাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আশা করি তুমি তাদের একজন।*

তথ্যসূত্রঃ
*    বুখারী শরিফ, ১৮৯৭ নং হাদিস।


নামাযের দোয়া


আবু বকর (রাঃ) একদিন নবী করীম (সাঃ)-কে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাকে দোয়া শিখিয়ে দিন, যার দ্বারা নামাযে দোয়া করতে পারি।

তখন নবী করীম (সাঃ) বলেছেন বল-

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةٌ مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ


অর্থঃ হে আল্লাহ ! আমি আমার ওপর অনেক জুলুম করেছি। তুমি ছাড়া আমার পাপ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তাই তোমার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। *

তথ্যসূত্রঃ
*    বুখারী, মুসলিম।


ক্ষুধার যন্ত্রনায় পথে নেমে আসলেন


আকাশের উপরিভাগে সূর্য। উত্তপ্ত মরুভূমির বালুগুলো যেন আগুনের কয়লা থেকে খসে পড়া অগ্নিকণা। এ কঠিন গরমে হযরত আবু বকর (রাঃ) ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে এসে দেখলেন হযরত ওমর (রাঃ) ও সেখানে....... ।

হযরত ওমর (রাঃ) বললেনঃ হে আবু বকর! এ সময়ে আপনি কেন বের হলেন? 
হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালায় বের হয়েছি। 
হযরত ওমর (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমিও একই কারণে বের হয়েছি।
তাঁদের কথোপকথনের মাঝে রাসূল (সাঃ) ও সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ অসময়ে তোমরা কেন বের হয়েছ? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমরা পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করার কারণে বের হয়েছি।

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! আমিও এ একই কারণে বের হয়েছি......... । সুতরাং তোমরা আমার সাথে চল।

তাঁরা চলতে চলতে হযরত আবু আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) -এর বাড়িতে আসলেন । তিনি প্রতিদিন রাসূল (সাঃ) -এর জন্যে খাবার তৈরি করতেন। খাবারের নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরেও যদি রাসূল (সাঃ) না আসতেন, তখন তিনি খাবারগুলো তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে খেতে দিতেন।
       
রাসূল (সাঃ) ও তাঁর দুই সাহাবী আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ) আবু আইয়ূব আল আনসারীর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছলে তাঁর স্ত্রী তাঁদেরকে দেখে ঘর থেকে বের হয়ে এলেন।

তিনি বললেনঃ আল্লাহর নবীকে স্বাগতম আর যাঁরা তাঁর সাথে আগমন করেছেন তাদেরকেও স্বাগতম ।

রাসূল (সাঃ) তাঁর স্ত্রীকে বললেনঃ আবু আইয়ূব কোথায়?

হযরত আবু আইয়ূব আল আনসারী পাশে একটি খেজুর গাছে কাজ করতে ছিলেন। তিনি রাসূল (সাঃ) -এর কথা শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে এসে বললেনঃ আল্লাহর রাসূলকে স্বাগতম, আর যাঁরা তাঁর সাথে আগমন করেছেন তাঁদেরকেও স্বাগতম।

তারপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিতো স্বাভাবিকভাবে এ সময়ে আসেন না।

রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ঠিক বলেছ।

তারপর তিনি খেজুর গাছের দিকে ছুটে গিয়ে একটি খেজুরের কাঁদি কেটে নিয়ে আসলেন। তাতে পাকা, কাঁচা ও শুকনো তিন প্রকারের খেজুরই ছিল।

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ তুমি খেজুরের পুরো কাঁদিটি কেটে আনবে তা আমার ইচ্ছে ছিল না। সেখান থেকে কয়েকটি খেজুর নিয়ে আসলে কি হতো না?

তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি পছন্দ করি, আপনি কাঁচা, পাকা ও শুকনো সব রকমের খেজুর খাবেন। আর অবশ্যই আমি আপনার জন্যে পশু জবাই করব।

হযরত আবু আইয়ূব আল আনসারী একটি বকরি ধরে জবাই করে দিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেনঃ তুমি ময়দা ভিজাও এবং আমাদের জন্যে রুটি বানাও। কেননা তুমি রুটি ভালো বানাতে পার। তিনি বকরির অর্ধেক নিয়ে রান্না করেন আরেক অর্ধেককে কাবাব করেন। যখন রান্না প্রস্তুত হলো তিনি তা রাসুল (সাঃ)- এর সামনে পেশ করলেন। রাসূল (সাঃ) বকরির একটি অংশ নিয়ে রুটিতে রেখে বললেনঃ হে আবু আইয়ূব আল আনসারী! তুমি এটি ফাতেমাকে দিয়ে আস কেননা সে অনেক দিন যাবত এর মতো খাবার খেতে পায়নি।

যখন রাসূল (সাঃ) খানা খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে বললেনঃ রুটি, গোশত, শুকনা, পাকা ও কাঁচা খেজুর-
একথা বলার পর তাঁর দু চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।
       
এরপর তিনি বললেনঃ আমার প্রাণ যার হাতে তার শপথ! এ সেই নেয়ামত যার সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে। যখন তোমরা তা খেতে হাত বাড়াবে তখন তোমরা বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু কর। আর যখন খেয়ে পরিতৃপ্ত হবে তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বল........

الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي هُوَ أَشْبَعْنَا وَأَنْعَمَ عَلَيْنَا فَأَفْضَلَ

অর্থ- সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন এবং উৎকৃষ্ট ও উত্তম নেয়ামত দান করেছেন। *
তথ্যসূত্রঃ
*    আল ইহসান ফি তাকরিবে সহীহ ইবনি হিব্বান, ৫২১৬ ।






***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url