ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ঈমান ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য






ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ)


তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন উসমান বিন আ'মির আল কোরাইশী, আবু বকর বিন আবু কুহাফা আতাইমী (রাঃ)। যিনি খোলাফায়ে রাশেদিনের প্রথম খলিফা ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশ সাহাবীর মধ্যে একজন। ইসলাম গ্রহণে তিনি ছিলেন অগ্রগামীদের একজন। যিনি পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। দ্বীনের কাজে সম্পদ ব্যয়ে ও কষ্ট স্বীকারে তিনি কোনোরূপ কার্পণ্য করেননি। রাসূল (সাঃ) -এর সকল বিপদে পাশে থেকে তাঁর বিপদগুলো তিনি বীরের মতো প্রতিহত করেছেন। তাঁর দ্বারা আল্লাহ তাআ'লা ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে রক্ষা করেছেন। আর তাঁকে দৃঢ় বিশ্বাস ও পরিপূর্ণ ঈমান দান করেছেন। তিনি মুসলমানদের অনুকরণীয় আদর্শবান লোকদের মধ্যমণি। সারা জীবন তিনি মুনাফিক ও মুরতাদদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন।
       
ঐতিহাসিক আমুল ফিলের আড়াই বছর পর হযরত আবু বকর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ন্যায়নীতি ও সত্যবাদিতার মাঝে বেড়ে উঠেন আর তাই জুলুম, অত্যাচার সম্পর্কে তিনি জানতেন না। জাহিলী যুগের বর্বরতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি আরবীয় চরিত্রে আদর্শিত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বন্ধুভাবাপন্ন, উত্তম সঙ্গী, ওয়াদাপূরণকারী। তাঁর মাঝে মায়া-মমতা ছিল ভরপুর। ইসলাম আগমনের পূর্বেই তিনি নিজের ওপর মদকে হারাম করেছিলেন। ধনীদের সাথে তাঁর ভাব ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ আর গরিবদের প্রতি তিনি ছিলেন খুবই দয়ালু। তিনি ছিলেন দানশীলতা ও আত্মত্যাগের উজ্জ্বল নক্ষত্র। নিজে খাওয়ার আগে গরিবদেরকে খেতে দিতেন। আরবদের নসবনামা সম্পর্কে তাঁর ভালো জ্ঞান ছিল। এ কারণে কোরাইশী যুবকরা আরবদের অতীত ইতিহাস ও নসবনামা জানার জন্যে তাঁর কাছে আসত ।

তিনি নেতাদের নেতা ছিলেন। মর্যাদাগতভাবে তিনি ছিলেন সুউচ্চ। তাঁর কথা মানা হতো। তাছাড়াও তিনি তৎকালীন যুগে একজন অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ছিলেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে তাঁর ভালো জ্ঞান ছিল। আর এ কারণে মানুষ স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে তাঁর কাছে আসত ।
উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী ও উঁচু বংশের লোক হওয়ার কারণে তাঁকে আতীক বলে ডাকা হতো। তাঁর জীবনে কলঙ্কময় কোনো অধ্যায় ছিল না। তিনি খুবই বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ছিলেন এবং সুন্দর ও উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী ছিলেন। তাঁর গায়ের রং ছিল শুভ্র। শারীরিকভাবে তিনি হালকা-পাতলা ছিলেন এবং ডাবা চক্ষুবিশিষ্ট ছিলেন। তাঁর গালের হাড়গুলো হালকা গোস্তের আবরণে ঢাকা ছিল । তিনি উঁচু কপালের অধিকারী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি রাসূল খুব বেশি ভালোবাসতেন।
       
হযরত আবু বকর (রাঃ) কোনো রকম ইতস্ততা ব্যতীতই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ঈমানের চাদরকে তাঁর গায়ে খুব ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। দ্বীনের জন্যে তাঁর সকল মালকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাছাড়াও তিনি কাফের মুশরিকদের অত্যাচারের শিকার গরীব মুসলমান দাস দাসীকে ক্রয় করে আযাদ করে দিতেন। ইসলামের জন্যে তিনি কোরাইশদের অনেক অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। অত্যাচারের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে তিনি মক্কা ত্যাগ করতে চাইলেন। তখন তাঁকে আবু দুগানা তার আশ্রয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অবশ্যই পরে তিনি আবু দুগানার আশ্রয় ত্যাগ করে শক্তিশালী রবের ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন ।
রাসূল (সাঃ)- এর মিরাজ থেকে ফিরে আসার পর অনেক লোক তা বিশ্বাস করতে চায়নি এবং রাসূল (সাঃ) -এর ব্যাপারে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু হযরত আবু বকর (রাঃ) সন্দেহাতীতভাবে রাসূল (সাঃ) -এর মিরাজকে বিশ্বাস করেছেন এবং সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর তখন রাসূল (সাঃ) তাঁকে 'সিদ্দিক' বলে অভিহিত করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূল (সাঃ) -এর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিলেন। তিনি তাঁর মেয়েকে রাসূল (সাঃ)- -এর সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি রাসূল (সাঃ) -এর সাথে হিজরত করেছেন এবং কোরআনে বর্ণিত গুহার সেই দু'জনের একজন ছিলেন। রাসূল ই-এর সাথে সকল যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। প্রতিটি যুদ্ধে জানবাজি রেখে লড়ে গেছেন। রণাঙ্গনের এ লড়াই করতে গিয়ে তিনি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবে প্রতিবারই আল্লাহর সাহায্য পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
রাতে নামাযের বিছানায় তাঁর সময় কাটত আর দিনে তিনি রোযা রেখে পার করতেন। মানুষের সাথে বিনম্র ব্যবহার করতেন এবং দুনিয়ার লোভ লালসা ও অর্থ-সম্পদ ত্যাগ করে চলতেন। শরীয়তের বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখতেন এবং সাথে সাথে তা মেনে চলতেন। এমন কোনো ভালো কাজ নেই তিনি করেননি এবং এমন কোনো ভালো পথ নেই যে পথে তিনি চলেননি। আল্লাহর ভয়ে তিনি অধিক কান্নাকাটি করতেন। তিনি পুণ্যবান ও আল্লাহভীরু ছিলেন। যাকে রাসূল (সাঃ) জাহান্নাম থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সাথে সাথে এও বলেছেন যে, জান্নাতের প্রতিটি দরজা তাঁর জন্যে খোলা থাকবে। তিনি যে দরজা চান সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন।
তাঁকে খেলাফতের দায়িত্ব দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করতে চাননি। অবশেষে হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করেন। সাথে সাথে সকল মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। খিলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরেই হযরত আবু বকর (রাঃ) প্রথমে রোমের বিরুদ্ধে রাসূল রাস্তার-এর প্রেরিত ফেরত আসা সেই সৈন্যবাহিনীকে তাঁর নির্বাচিত নেতা হযরত উসামা বিন জায়েদকে প্রধান রেখে পুনরায় প্রেরণ করেন। রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর পরই আরবের বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা ইসলাম ত্যাগ করে পুনরায় তাদের ধর্মে ফিরে যেতে লাগল। খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর হযরত আবু বকর প্রথমেই এ বিশাল সমস্যার সম্মুখীন হলেন। আবার অন্যকিছু গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে বসে। এতেকরে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। হযরত আবু বকর (রাঃ) এক এক করে সবাইকে কঠোর হস্তে দমন করেন। তিনি সৈন্যদলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিভিন্ন এলাকা নির্ধারণ করে দিয়ে প্রেরণ করেন। তাঁর প্রেরিত মুসলিম সৈন্যদের আক্রমণে মুরতাদ ও কাফেরদের এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পন শুরু হয়ে গেল। মহান প্রভুর সাহায্যে একের পর এক এলাকা বিজয় হতে লাগল। হযরত আবু বকর সর্বপ্রথম কোরআনকে গ্রন্থাকারে সংকলন করেন।
তিনি একজন সুভাষী বক্তা ছিলেন। খলিফাদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে সম্মানিত। তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, ধৈর্য দিয়ে তিনি সকল মানুষকে পিছনে ফেলে অগ্রগামী হয়েছেন। ইসলাম গ্রহণ, সালাম প্রদান, নামাযের ইমামতি, খিলাফতের দায়িত্ব, বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহসহ সকল কর্মেই তিনি ছিলেন সবার আগে ।


তাঁর নিকটে অধিকার গ্রহণের ব্যাপারে দুর্বল ব্যক্তিও অনেক শক্তিশালী আবার অত্যাচারী জালিম যে অন্যের প্রাপ্য আদায় করে দেয় না সে শক্তিশালী হলেও দুর্বল। বেশিরভাগ সময়ে তিনি হেঁটে হেঁটে চলতেন অথচ তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তারা আরোহী হয়ে চলতেন। তিনি ছাগীর দুধ দোহন করতেন অন্যদিকে শিশুরা তা পান করতে থাকত। তিনি সর্বমোট চারটি বিয়ে করেছিলেন। তাঁর মোট ছয়জন সন্তান ছিল ।

তাঁর জীবনযাত্রা ছিল সাধারণ মানুষের মতো। তবে মানুষ হিসেবে সবার নিকটে তিনি ছিলেন অনেক দামি। দুনিয়াতে তিনি রাসূল (সাঃ) -এর সাথি ছিলেন। এমনকি কবরেও তাঁর পাশেই শুয়ে আছেন। তিনি হাউজে কাউসারে রাসূল এর পাশে সাথী হয়ে বসবেন এবং বিচার দিনে তাঁর বন্ধু হয়ে থাকবেন ।
হিজরী ১৩ সনে তিনি এ দুনিয়া ত্যাগ করে মহান রবের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে শ্রেষ্ঠমানবের পাশেই দাফন করা হয়।





****************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url