তাফসীরে ইবনে কাসীর - ২১ || সূরা বাকারা - ১১ || মুনাফিকদের আর এক পরিচয় || ঈমানদার ও কাফিরের শ্রেণীবিভাগ || হৃদয়ের প্রকারভেদ





اَوۡ کَصَیِّبٍ مِّنَ السَّمَآءِ فِیۡهِ ظُلُمٰتٌ وَّ رَعۡدٌ وَّ بَرۡقٌ ۚ یَجۡعَلُوۡنَ اَصَابِعَهُمۡ فِیۡۤ اٰذَانِهِمۡ مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اللّٰهُ مُحِیۡطٌۢ بِالۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۱۹   یَکَادُ الۡبَرۡقُ یَخۡطَفُ اَبۡصَارَهُمۡ ؕ کُلَّمَاۤ اَضَآءَ لَهُمۡ مَّشَوۡا فِیۡهِ ٭ۙ وَ اِذَاۤ اَظۡلَمَ عَلَیۡهِمۡ قَامُوۡا ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَذَهَبَ بِسَمۡعِهِمۡ وَ اَبۡصَارِهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۲۰

১৯। অথবা আকাশ হতে বারি বর্ষণের ন্যায় - যাতে অন্ধকার, গর্জন ও বিদ্যুৎ রয়েছে, তারা বজ্রধ্বনি বশতঃ মৃত্যুভয়ে তাদের কর্ণসমূহে স্ব স্ব অঙ্গুলী গুজে দেয়, এবং আল্লাহ অবিশ্বাসীদের পরিবেষ্টনকারী।  ২০। অচিরে বিদ্যুৎ তাদের দৃষ্টি হরণ করবে, যখন তাদের প্রতি আলোক প্ৰদীপ্ত হয় তখন তারা চলতে থাকে এবং যখন তাদের উপর অন্ধকার আচ্ছন্ন হয় তখন তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন- নিশ্চয়ই তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি হরণ করতে পারেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

মুনাফিকদের আর এক পরিচয়

       
এটা দ্বিতীয় উদাহরণ যা দ্বিতীয় প্রকারের মুনাফিকদের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে। এরা সেই সম্প্রদায় যাদের নিকট কখনও সত্য প্রকাশ পেয়ে থাকে এবং কখনও সন্দেহে পতিত হয়। সন্দেহের সময় তাদের দৃষ্টান্ত বৃষ্টির মত। صَيِّبٌ এর অর্থ হচ্ছে বৃষ্টিপাত। (তাবারী ১/৩৩৪) ইবন মাসউদ (রাঃ), ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) ও অন্যান্যরা 'কাসাইব' এর অর্থ করেছেন বৃষ্টি। (তাবারী) এ ছাড়া আবুল আলীয়া (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), সাঈদ ইব্‌ন যুবাইর (রহঃ), আতা (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), আতীয়া আল আউফি (রহঃ), খুরাসানী (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ) এবং রাবী ইব্‌ন আনাসও (রহঃ) অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেছেন। (ইবন আবী হাতিম ১/৬৬) যাহ্হাক (রহঃ) বলেন, উহা হল মেঘ। (ইব্‌ন আবী হাতিম ১/৬৭) যা হোক, অধিকাংশের মতে ইহা হল বৃষ্টি যা উপর হতে নেমে আসে। কিন্তু খুব প্রসিদ্ধ অর্থ হচ্ছে বৃষ্টি । ظُلُمَاتٌ এর ভাবার্থ হচ্ছে সন্দেহ, কুফর ও নিফাক। رَعْدٌ এর অর্থ হচ্ছে বজ্র, যা ভয়ংকর শব্দের দ্বারা অন্তর কাঁপিয়ে তোলে। মুনাফিকের অবস্থাও ঠিক এইরূপ। সব সময় তার মনে ভয়, ত্রাস ও উদ্বেগ থাকে। যেমন কুরআনুম মাজীদে আছেঃ

یَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَیْحَةٍ عَلَیْهِمْ

তারা যে কোন শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে। (সূরা মুনাফিকূন, ৬৩ : ৪) অন্যত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেনঃ

وَ یَحْلِفُوْنَ بِاللّٰهِ اِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَ مَا هُمْ مِّنْكُمْ وَ لٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ یَّفْرَقُوْنَ. لَوْ یَجِدُوْنَ مَلْجَاً اَوْ مَغٰرٰتٍ اَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا اِلَیْهِ وَ هُمْ یَجْمَحُوْنَ

আর তারা (মুনাফিকরা) আল্লাহর শপথ করে বলে যে, তারা (মুনাফিকরা) তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত; অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং তারা হচ্ছে কাপুরুষের দল । যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল পেত, অথবা গুহা কিংবা লুকিয়ে থাকার একটু স্থান পেত তাহলে তারা অবশ্যই ক্ষিপ্র গতিতে সেদিকে ধাবিত হত। (সূরা তাওবাহ, ৯ : ৫৬-৫৭) বিজলীর সঙ্গে সেই ঈমানের আলোর তুলনা করা হয়েছে যা কখনও কখনও তাদের অন্তরে উজ্জ্বল হয়ে উঠে, সে সময়ে তারা মরণের ভয়ে তাদের আঙ্গুলগুলি কানের মধ্যে ভরে দেয়, কিন্তু ওটা মুনাফিকদের কোন উপকারে আসেনা। এরা আল্লাহ তা'আলার ক্ষমতা ও ইচ্ছার অধীন রয়েছে। সুতরাং এরা বাঁচতে পারেনা। আল্লাহ তা'আলা এক জায়গায় বলেন : 'তোমাদের নিকট কি ঐ সেনাবাহিনীর কাহিনী পৌঁছেছে, অর্থাৎ ফির'আউন ও ছাদের? বরং কাফিরেরা অবিশ্বাস করার মধ্যে রয়েছে। আর আল্লাহ তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রয়েছেন।'

هَلْ اَتٰىكَ حَدِیْثُ الْجُنُوْدِۙ۝۱۷ فِرْعَوْنَ وَ ثَمُوْدَؕ۝۱۸ بَلِ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا فِیْ تَكْذِیْبٍۙ۝۱۹ وَّ اللّٰهُ مِنْ وَّرَآىِٕهِمْ مُّحِیْطٌ

তোমার নিকট কি পৌঁছেছে সৈন্য বাহিনীর বৃত্তান্ত ফির'আউন ও ছামূদের? তবুও কাফিরেরা মিথ্যা আরোপ করায় রত, এবং আল্লাহ তাদের পরিবেষ্টন করে রয়েছেন। (সূরা বুরূজ, ৮৫: ১৭-২০)
       
বিদ্যুতের চক্ষুকে কেড়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে তার শক্তি ও কাঠিন্য এবং ঐ মুনাফিকদের দৃষ্টিশক্তিতে দুর্বলতার অর্থ হচ্ছে তাদের ঈমানের দুর্বলতা।

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : 'এর ভাবার্থ এই যে, যখন ইসলামের বিজয় সাধিত হয়, তখন তাদের মনে কিছুটা স্থিরতা আসে, কিন্তু যখনই ওর বিপরীত পরিলক্ষিত হয় তখনই তারা কুফরীর দিকে ফিরে যায়। (তাবারী ১/৩৪৯) যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ومِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَى حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرُ أَعْمَانَ بِهِ

মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহর ইবাদাত করে দ্বিধার সাথে; তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশস্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। (সূরা হাজ্জ, ২২:১১ )
ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তাদের আলোতে চলার অর্থ হচ্ছে সত্যকে জেনে ইসলামের কালেমা পাঠ করা এবং অন্ধকারে থেমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া। (তাবারী ১/৩৪৬) আরও বহু মুফাসিরের এটাই মত, আর সবচেয়ে বেশি সঠিক ও স্পষ্টও হচ্ছে এটাই। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। (ইবন আবী হাতিম ১/৭৫)
       
কিয়ামাত দিবসেও তাদের এই অবস্থা হবে যে, যখন লোকদেরকে তাদের ঈমানের পরিমাপ অনুযায়ী আলো দেয়া হবে, কেহ পাবে বহু মাইল পর্যন্ত, কেহ কেহ তারও বেশী, কেহ তার চেয়ে কম, এমনকি শেষ পর্যন্ত কেহ এতটুকু আলো পাবে যে, কখনও আলোকিত হবে এবং কখনও অন্ধকার। কিছু লোক এমনও হবে যে, তারা একটু দূরে গিয়েই থেমে যাবে, আবার কিছু দূর পর্যন্ত আলো পাবে, আবার নিভে যাবে। আবার কতকগুলো লোক এমন দুর্ভাগাও হবে যে, তাদের আলো সম্পূর্ণ রূপে নিভে যাবে। এরাই হবে পূর্ণ মুনাফিক, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার ফরমান রয়েছেঃ

 یَوۡمَ یَقُوۡلُ الۡمُنٰفِقُوۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتُ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا انۡظُرُوۡنَا نَقۡتَبِسۡ مِنۡ نُّوۡرِکُمۡ ۚ قِیۡلَ ارۡجِعُوۡا وَرَآءَکُمۡ فَالۡتَمِسُوۡا نُوۡرًا ؕ فَضُرِبَ بَیۡنَهُمۡ بِسُوۡرٍ لَّهٗ بَابٌ ؕ بَاطِنُهٗ فِیۡهِ الرَّحۡمَۃُ وَ ظَاهِرُهٗ مِنۡ قِبَلِهِ الۡعَذَابُ ﴿ؕ۱۳

সেদিন মুনাফিক নর-নারী মুমিনদের বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্য একটু থাম, যাতে আমরা তোমাদের জ্যোতির কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবে : তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও এবং আলোর সন্ধান কর। (সূরা হাদীদ, ৫৭ : ১৩) মু'মিন নারী ও পুরুষের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

 یَوۡمَ تَرَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ یَسۡعٰی نُوۡرُهُمۡ بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ بُشۡرٰىکُمُ الۡیَوۡمَ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿ۚ۱۲

সেদিন তুমি দেখবে মু'মিন নর-নারীদেরকে তাদের সম্মুখ ভাগে ও দক্ষিণ পার্শ্বে তাদের জ্যোতি প্রবাহিত হবে। বলা হবে : আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। (সূরা হাদীদ, ৫৭ : ১২) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আরও বলেনঃ

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا ؕ عَسٰی رَبُّکُمۡ اَنۡ یُّکَفِّرَ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یُدۡخِلَکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ ۙ یَوۡمَ لَا یُخۡزِی اللّٰهُ النَّبِیَّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ ۚ نُوۡرُهُمۡ یَسۡعٰی بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ بِاَیۡمَانِهِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَتۡمِمۡ لَنَا نُوۡرَنَا وَ اغۡفِرۡ لَنَا ۚ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۸

সেই দিন নাবী এবং তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদেরকে আল্লাহ অপদস্ত করবেননা। তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে এবং ডান পাশে ধাবিত হবে। তারা বলবে : হে আমাদের রাব্ব! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আপনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। (সূরা তাহরীম, ৬৬ : ৮) এই আয়াতসমূহের পর নিম্নের এ বিষয়ের হাদীসগুলিও উল্লেখযোগ্যঃ

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, আমল অনুযায়ী তারা আলো পাবে, সেই আলোতে তারা পুলসিরাত অতিক্রম করবে। কোন কোন লোকের নূর পাহাড়ের সমান হবে, কারও হবে খেজুর গাছের সমান, আর সবচেয়ে ছোট নূর ঐ লোকের হবে, যার শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলির উপর নূর থাকবে। ওটা কখনও জ্বলে উঠবে এবং কখনও নিভে যাবে। (তাবারী ২৩/৩১৭৯)
       
ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কিয়ামাতের দিন সমস্ত একাত্মবাদীকে নূর দেয়া হবে। যখন মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে তখন একাত্মবাদীরা ভয় পেয়ে বলবে ঃ 'হে আল্লাহ! আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন। (মুসতাদরাক হাকিম ২/৪৯৫)। যাহ্হাক ইব্‌ন মুজাহিমেরও (রহঃ) এটাই মত। যাহ্হাক ইব্‌ন মুজাহিম (রহঃ) বলেন : কিয়ামাত দিবসে প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তিকে একটি করে নূর বা আলো দেয়া হবে। যখন তারা পুলসিরাতের কাছে পৌঁছবে তখন মুনাফিকের আলো নিভে যাবে। ঈমানদার ব্যক্তিরা তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়বে এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে : হে আল্লাহ! আমাদেরকে দেয়া তোমার আলো অটুট রাখ।

ঈমানদার ও কাফিরের শ্রেণীবিভাগ

কিয়ামাতের দিন কয়েক প্রকারের লোক হবেঃ (১) খাঁটি মু'মিন যাদের বর্ণনা পূর্বের চারটি আয়াতে হয়েছে। (২) খাঁটি কাফির, যার বর্ণনা তার পরবর্তী দু'টি আয়াতে হয়েছে। (৩) মুনাফিক, এদের আবার দু'টি ভাগ আছে। প্রথম হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক যাদের উপমা আগুনের আলো দিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় হচ্ছে সেই মুনাফিক যারা সন্দেহের মধ্যে আছে। কখনও ঈমানের আলো জ্বলে, কখনও নিভে যায়। তাদের উপমা বৃষ্টির সঙ্গে দেয়া হয়েছে। এরা প্রথম প্রকারের মুনাফিক হতে কিছু কম দোষী।

ঠিক এভাবেই সূরা নূরেও আল্লাহ তা'আলা মু'মিনের ও তার অন্তরের আলোর উপমা সেই উজ্জ্বল প্রদীপের সঙ্গে দিয়েছেন যা উজ্জ্বল চিমনীর মধ্যে থাকে এবং স্বয়ং চিমনিও উজ্জ্বল তারকার মত হয়। যেহেতু একেতো স্বয়ং ঈমানদারের অন্তর উজ্জ্বল, দ্বিতীয়তঃ খাঁটি শারীয়াত দিয়ে তাকে সাহায্য করা হয়েছে। সুতরাং এ হচ্ছে নূরের উপর নূর। এভাবেই অন্য স্থানে কাফিরদের উপমাও তিনি বর্ণনা করেছেন যারা মূর্খতা বশতঃ নিজেদেরকে অন্য কিছু একটা মনে করে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা কিছুই নয়। তিনি বলেনঃ

 وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَعۡمَالُهُمۡ کَسَرَابٍۭ بِقِیۡعَۃٍ یَّحۡسَبُهُ الظَّمۡاٰنُ مَآءً ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَآءَهٗ لَمۡ یَجِدۡهُ شَیۡئًا وَّ وَجَدَ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ فَوَفّٰىهُ حِسَابَهٗ ؕ وَ اللّٰهُ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ ﴿ۙ۳۹

যারা কুফরী করে, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ; পিপাসার্ত থাকে পানি মনে করে থাকে, কিন্তু সে ওর নিকট উপস্থিত হলে দেখবে ওটা কিছু নয়। (সূরা নূর, ২৪ : ৩৯) আল্লাহ সুবহানাহু ঐ কাফিরদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন যারা খাঁটি মূর্খতায় জড়িত হয়ে পড়েছেঃ

 اَوۡ کَظُلُمٰتٍ فِیۡ بَحۡرٍ لُّجِّیٍّ یَّغۡشٰهُ مَوۡجٌ مِّنۡ فَوۡقِهٖ مَوۡجٌ مِّنۡ فَوۡقِهٖ سَحَابٌ ؕ ظُلُمٰتٌۢ بَعۡضُهَا فَوۡقَ بَعۡضٍ ؕ اِذَاۤ اَخۡرَجَ یَدَهٗ لَمۡ یَکَدۡ یَرٰىهَا ؕ وَ مَنۡ لَّمۡ یَجۡعَلِ اللّٰهُ لَهٗ نُوۡرًا فَمَا لَهٗ مِنۡ نُّوۡرٍ ﴿۴۰

অথবা (কাফিরদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে রয়েছে ঘন কালো মেঘ, একের উপর এক অন্ধকার। তার হাতকে বের করলে সে তা আদৌ দেখতে পায়না। আল্লাহ যাকে জ্যোতি দান করেননা তার জন্য কোন জ্যোতি নেই। (সূরা নূর, ২৪:৪০ )
সুতরাং কাফিরদেরও দু'টি ভাগ হল। প্রথম হল ওরা যারা অন্যদেরকে কুফরীর দিকে আহ্বান করে এবং দ্বিতীয় হচ্ছে যারা তাদেরকে অনুকরণ করে। যেমন সূরা হাজ্জের প্রথমে রয়েছেঃ

 وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ یَتَّبِعُ کُلَّ شَیۡطٰنٍ مَّرِیۡدٍ ۙ﴿۳

মানুষের কতক অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শাইতানের। (সূরা হাজ্জ, ২২ : ৩) অন্যত্র আছেঃ

 وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ لَا هُدًی وَّ لَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ ۙ﴿۸

মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে, তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশক, আর না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব। (সূরা হাজ্জ, ২২ : ৮) এ ছাড়া সূরা ওয়াকি'আহর প্রথমে ও শেষে এবং সূরা নিসায় মু'মিনদেরও দুই প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে। তারা হচ্ছে সাবেকিন ও আসহাব-ই ইয়ামীন অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী এবং পরহেযগার ও সৎ ব্যক্তিগণ। সুতরাং এ আয়াতসমূহ দ্বারা জানা গেল যে, মু'মিনদের দু'টি দল, আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ও সৎ। কাফিরদেরও দু'টি দল, কুফরের দিকে আহ্বানকারী ও তাদের অনুসরণকারী। মুনাফিকদেরও দু'টি ভাগ, খাঁটি ও পাক্কা মুনাফিক এবং সেই মুনাফিক যাদের মধ্যে নিফাকের এক আধটি শাখা আছে।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
       
'যার মধ্যে তিনটি অভ্যাস আছে সে নিশ্চিত মুনাফিক। আর যার মধ্যে ওর একটি আছে তার মধ্যে নিফাকের একটি অভ্যাস আছে যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করে। (তিনটি অভ্যাস হচ্ছে কথা বলার সময় মিথ্যা বলা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং গচ্ছিত দ্রব্য আত্মসাৎ করা)। (ফাতহুল বারী ১/১১১, মুসলিম ১/৭৮) এর দ্বারা সাব্যস্ত হল যে, কখনও কখনও মানুষের মধ্যে নিফাকের কিছু অংশ থাকে তা কার্য সম্বন্ধীয়ই হোক অথবা বিশ্বাস সম্বন্ধীয়ই হোক। যেমন আয়াত ও হাদীস দ্বারা জানা গেল ।

হৃদয়ের প্রকারভেদ

মুসনাদ আহমাদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
'অন্তর চার প্রকারঃ (১) সেই পরিষ্কার অন্তর যা উজ্জ্বল প্রদীপের মত ঝলমল করে। (২) ঐ অন্তর যা পর্দায় ঢাকা থাকে। (৩) উল্টো অন্তর এবং (৪) মিশ্রিত অন্তর। প্রথমটি হচ্ছে মু'মিনের অন্তর যা পূর্ণভাবে উজ্জ্বল। দ্বিতীয়টা কাফিরের অন্তর যার উপর পর্দা পড়ে রয়েছে। তৃতীয়টা খাঁটি মুনাফিকের অন্তর যা জেনে শুনে অস্বীকার করে এবং চতুর্থটা হচ্ছে মুনাফিকের অন্তর যার মধ্যে ঈমান ও নিফাক এ দুটোর সংমিশ্রণ রয়েছে। ঈমানের দৃষ্টান্ত সেই সবুজ উদ্ভিদের মত যা নির্মল পানি দ্বারা বেড়ে ওঠে। নিফাকের উপমা ঐ ফোঁড়ার ন্যায় যার মধ্যে রক্ত ও পুঁজ বাড়তে থাকে। এখন যে জিনিসের মূল বেড়ে যায়, তার প্রভাব অন্যের উপর পড়ে থাকে। এই হাদীসটি সনদ হিসাবে খুবই মযবুত। (আহমাদ ৩/১৭)
       
ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেন: ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কান ও চক্ষু ধ্বংস করে দিবেন’ এর ভাবার্থ এই যে, তারা যখন সত্যকে জেনে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক জিনিসের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান। অর্থাৎ তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন অথবা ক্ষমা করবেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) আরও বলেন : কেহকে শান্তি দেয়া কিংবা ক্ষমা করা সম্পূর্ণই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (ইবন আবী হাতিম ১/৭৬) ইবন জারীর (রহঃ) বলেন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা মুনাফিকদের সাবধান করার জন্য এখানে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, মুনাফিকসহ সবকিছুই তাঁর করায়ত্বে রয়েছে। যার কাছ থেকে খুশি তার শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি তিনি ছিনিয়ে নিতে পারেন, এতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই। (তাবারী ১/৩৬১)

 وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَعۡمَالُهُمۡ کَسَرَابٍۭ بِقِیۡعَۃٍ

যারা কুফরী করে, তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ। (সূরা নূর, ২৪ : ৩৯)
অথবা (কাফিরদের কাজ) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়। (সূরা নূর, ২৪:৪০ )






***************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url