তাফসীরে ইবনে কাসীর - ২৩ || সূরা বাকারা - ১৩ || নবী ও নবুওয়াত সত্য || কুরআনুল হাকীমের একটি চ্যালেঞ্জ ||







 وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّنۡ مِّثۡلِهٖ ۪ وَ ادۡعُوۡا شُهَدَآءَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۲۳    فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَ لَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ ۚۖ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۲۴

২৩। এবং আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, যদি তোমরা তাতে সন্দিহান হও তাহলে তৎসদৃশ একটি 'সূরা’ আনয়ন কর এবং তোমাদের সেই সাহায্যকারীদেরকে ডেকে নাও যারা আল্লাহ হতে পৃথক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও!  ২৪। অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবেনা, তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামের ভয় কর যার খোরাক মনুষ্য ও প্রস্তর খন্ড - যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।


নবী ও নবুওয়াত সত্য

তাওহীদের পর এখন নাবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। কাফিরদেরকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে : 'আমি যে পবিত্র কুরআন আমার বিশিষ্ট বান্দা মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ করেছি তাকে যদি তোমরা আমার বাণী বলে বিশ্বাস না কর তাহলে তোমরা ও তোমাদের সাহায্যকারীরা সব মিলে পূর্ণ কুরআন তো নয়, বরং শুধুমাত্র ওর একটি সূরার মত সূরা আনয়ন কর। তোমরা তো তা করতে কখনও সক্ষম হবেনা, তাহলে ওটি যে আল্লাহর কালাম এতে সন্দেহ করছ কেন?' ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ شُهَدَاءُ এর ভাবার্থ হচ্ছে সাহায্যকারী। (তাবারী ১/৩৭৬) আবূ মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে অংশীদার, যারা তাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করত। তাহলে ভাবার্থ হল এইঃ 'যাদেরকে তোমরা পূজনীয়রূপে স্বীকার করছ তাদেরকেও ডাক এবং তাদের সাহায্য ও সহযোগিতায় হলেও ওটির মত একটি সূরা রচনা কর।' (ইবন আবী হাতিম ১/৮৪)

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন যে, তোমরা তোমাদের শাসনকর্তা এবং বাকপটু ও বাগ্মীদের নিকট হতেও সাহায্য নিয়ে নাও। (ইব্‌ন আবী হাতিম ১/৮৫) 

কুরআনুল হাকীমের একটি চ্যালেঞ্জ

       
কুরআনুল হাকীমের এই মুজিযার প্রকাশ এবং এই রীতির বাণী কয়েক স্থানে আছে। সূরা কাসাসে আছেঃ

 قُلۡ فَاۡتُوۡا بِکِتٰبٍ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰهِ هُوَ اَهۡدٰی مِنۡهُمَاۤ اَتَّبِعۡهُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۴۹

বলঃ তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহর নিকট হতে এক কিতাব আনয়ন কর, যে পথ নির্দেশ এতদুভয় (কুরআন ও তাওরাত) হতে উৎকৃষ্টতর হবে, আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব। (সূরা কাসাস, ২৮ : ৪৯) আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেনঃ

 قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ هٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِهٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ ظَهِیۡرًا ﴿۸۸

বলঃ যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ কুরআন আনয়ন করতে পারবেনা। (সূরা ইসরাহ, ১৭ : ৮৮) অন্য এক সূরায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِهٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۱۳

তাহলে কি তারা বলে যে, ওটা সে নিজেই রচনা করেছে? তুমি বলে দাও : তাহলে তোমরাও ওর অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (নিজ সাহায্যার্থে) যে সমস্ত গাইরুল্লাহকে ডাকতে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা হুদ, ১১ : ১৩) অন্যত্র তিনি বলেনঃ

وَ مَا کَانَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۟۳۷   اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِهٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۳۸

আর এই কুরআন কল্পনা প্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে, এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের বিশদ বর্ণনাকারী, (এবং) এতে কোন সন্দেহ নেই (এটি) বিশ্বের রবের পক্ষ হতে (নাযিল) হয়েছে। তারা কি এরূপ বলে যে, এটি তার (নাবীর) স্বরচিত? তুমি বলে দাও : তাহলে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন কর এবং গাইরুল্লাহ হতে যাকে ইচ্ছা ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (সূরা ইউনুস, ১০: ৩৭-৩৮) এ সমস্ত আয়াত তো মক্কা মুকাররামায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং মক্কাবাসীকে এর মুকাবিলায় অসমর্থ সাব্যস্ত করে মদীনায়ও এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যেমন উপরের আয়াত।
       
 مِسْلِهِ এর 'ه' সর্বনামটিকে কেহ কেহ কুরআনের দিকে ফিরিয়েছেন। অর্থাৎ এর (কুরআনের) মত কোন একটি সূরা রচনা কর। কেহ কেহ সর্বনামটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে ফিরিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর মত কোন নিরক্ষর লোক এরূপ হতেই পারেনা যে, লিখা-পড়া কিছু না জেনেও এমন বাণী রচনা করতে পারে যার মত বাণী কারও দ্বারা রচিত হতে পারেনা। কিন্তু প্রথম মতটিই সঠিক।

মুজাহিদ (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ), ইবন উমার (রাঃ), ইবন মাসউদ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ) এবং অধিকাংশ চিন্তাবিদের এটাই মত। ইমাম ইব্‌ন জারীর তাবারী (রহঃ), যামাখ্শারী (রহঃ) এবং ইমাম রাযীও (রহঃ) এই মত পছন্দ করেছেন। এটিকে প্রাধান্য দেয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি এই যে, এতে সবারই প্রতি চ্যালেঞ্চ রয়েছে। একত্রিত করেও এবং পৃথক পৃথক করেও, সে নিরক্ষরই হোক বা আহলে কিতাব ও শিক্ষিত লোকই হোক, এতে এই মুজিযার পূর্ণতা রয়েছে এবং শুধুমাত্র অশিক্ষিত লোকদেরকে অপারগ করা অপেক্ষা এতে বেশি গুরুত্ব এসেছে। আবার দশটি সূরা আনতে বলা এবং ওটা আনতে না পারার ভবিষ্যদ্বাণী করাও এটাই প্রমাণ করছে যে, এর ভাবার্থ কুরআনই হবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিত্ব নয়। সুতরাং এই সাধারণ ঘোষণা, যা বার বার করা হয়েছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে এই ভবিষ্যদ্বাণীও করা হয়েছে যে, এরা এর উপর সক্ষম নয়। এ ঘোষণা একবার মাক্কায় করা হয়েছে এবং পরে মাদীনায়ও এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে। বিশেষ করে ঐসব লোক, যাদের মাতৃভাষা আরাবী ছিল এবং নিজেদের বাকপটুতা ও বাগ্মীতার জন্য গর্ববোধ করত তারা সবাই এর মুকাবিলা করতে অসমর্থ হয়েছিল। তারা পূর্ণ কুরআনের উত্তর দিতে পারেনি।' দশটি সূরাও নয়, এমনকি






******************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url