তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন-১ || মিশরের শতাব্দি শ্রেষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ শহীদ সাইয়েদ কুতুব -এর জীবনী





সাইয়েদ কুতুব শহীদ একটি মহা জীবন


বিশ্বের সর্বাধিক মানুষের পঠিত বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক ভাষায় অনুদিত তাফসীর 'ফী যিলালিল কোরআন' শহীদ সাইয়েদ কুতুবের সুদীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার এক অমর সৃষ্টি। আধুনিক জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত আরব আজমের প্রতিটি মানুষের হৃদয়তন্ত্রীতে কোরআনের বাণী পৌঁছে দেয়ার এক প্রচন্ড তাগিদ রয়েছে এই তাফসীরের পাতায় পাতায়।
       
শহীদ সাইয়েদ কুতুব বিংশ শতকের একজন কালজয়ী প্রতিভা। তার প্রতিভাদীপ্ত জ্ঞানকোষ থেকে 'ফী যিলালিল কোরআন'-এর পাশাপাশি তিনি আরো অনেক কয়টি ইসলামী সাহিত্য রচনা করেছেন। তার প্রতিটি বই যেমনি ইসলামী জ্ঞান গরিমায় মহীয়ান তেমনি তা জেহাদের উদ্দীপনায়ও বলীয়ান। তাঁর সাহিত্য যেমনি ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তোলে তেমনি জেগে থাকা মানুষকে জেহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে।

আমাদের সমাজে প্রচলিত ও প্রকাশিত হাজার হাজার ইসলামী সাহিত্যের সাথে শহীদ কুতুবের গ্রন্থমালার এখানেই তফাৎ।

তাফসীর শাস্ত্রের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাষায় কোরআনের শত শত তাফসীর গ্রন্থ লেখা হয়েছে সেখানে সেই বিশাল ভান্ডারে আরেকটি সংখ্যা যোগ করার জন্যে যে এই মহাপুরুষ তাঁর কলম ধরেননি, কিছুদূর এগুলে আমি জানি, আপনি নিজেই তা বুঝতে পারবেন। আমি শুধু আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাটুকু আপনাকে বলতে পারি যে, 'ফী যিলালিল কোরআন' সত্যিই আমাদের সময়ের এক বিস্ময়কর তাফসীর। দুনিয়ার সব কয়টি সেরা তাফসীর গ্রন্থের পাশাপাশি এটি নিসন্দেহে আমাদের সাহিত্যে এক মহা মূল্যবান সংযোজন।

যে মহান চিন্তানায়কের কলম থেকে এই তাফসীর গ্রন্থটি নিসৃত হয়েছে, সেই গ্রন্থের প্রথম বাংলা অনুবাদ প্রকাশের এ পবিত্র মুহূর্তে তার জীবন ও সাধনা সম্পর্কে দু'টো কথা না বললে মনে হয় তার রূহের প্রতি সুবিচার করা হবে না।

সাইয়েদ কুতুবের শাহাদাতের পটভূমিকা

১৯৬৬ সালের ২৯শে আগস্ট সকাল বেলায় মিসরের যালেম শাসক জামাল নাসের-সাইয়েদ কুতুব এবং তার দু'জন সাথী মোহাম্মদ ইউসুফ হাওয়াশ ও মোহাম্মদ আবদুল ফাত্তাহ ইসমাইলকে নির্মমভাবে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয়। তিনজন মর্দে মোজাহেদ একত্রে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)
       
১৯৫৪ সালে সাইয়েদ কুতুবকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জেলে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানো হয়, ফলে তিনি দারুণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৯৫৫ সালের মে মাসে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই বছরের ১৩ই জুলাই তারিখে যখন তাকে ১৫ বছর কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয় তখন তিনি এতো অসুস্থ ছিলেন যে, সেই আদেশটি শোনার জন্যে আদালতের কাঠগড়া পর্যন্ত পৌঁছাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। দশ বছরের ক্রমাগত শারীরিক ও মানসিক যুলুম নিপীড়নের পর ১৯৬৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন। তদানীন্তন ইরাকী প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফের ব্যক্তিগত অনুরোধে জামাল নাসের কিছুদিনের জন্যে তাকে মুক্তি দিলেও সে তাকে আবার গ্রেফতারের নানা অজুহাত খুঁজতে থাকে ।

মুক্তির পর তিনি কায়রোর উপকণ্ঠ 'হুলওয়ানে' অবস্থান করতে থাকেন। এখানে তার সাথে যারা দেখা করতে আসতেন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা তাদের ওপর কড়া দৃষ্টি রাখতে শুরু করে। এ সময় অন্যান্য আরব দেশগুলো থেকে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পাওয়ার জন্যে তার কাছে ছুটে আসতেন। যালেম শাসকদের সাথে মোকাবেলা করে সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে জোরদার করার বিষয়েই তারা তার সাথে আলোচনা করতেন। বলতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যসহ সব কয়টি আরব ভূখন্ডের ইসলামী দলগুলোর জন্যে সাইয়েদ কুতুব ছিলেন তখন প্রেরণার এক বিরাট উৎস।

এটাই ফেরাউনের উত্তরসূরী নাসের চক্রের সহ্য হলো না। তারা ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে তাঁকে পুনরায় কারারুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত করলো। গ্রেফতারী পরোয়ানা পড়েই তিনি স্পষ্টত নিজের ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, 'আমি জানি যালেমরা এবার আমার মাথাটাই চাইবে, এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। নিজের মৃত্যুর জন্যে আমার কোনো আক্ষেপও নেই। আমার তো বরং সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় আমার জীবনের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে। আগামীকালের ইতিহাসই এটা প্রমাণ করবে যে, ইখওয়ানুল মোসলেমুন সঠিক পথের অনুসারী ছিলো- না এই দিনের শাসকগোষ্ঠী?'

সাইয়েদ কুতুবের গ্রেফতারের সাথে সাথেই শুরু হলো দলীয় নেতা ও কর্মীদের ব্যাপক গ্রেফতার। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ৬৫ সালের ১১ই অক্টোবরের দৈনিক টেলিগ্রাফের মতে এই গ্রেফতারের সংখ্যা ছিলো ৪০ হাজারের ওপর। এদের মধ্যে ৭ শত ছিলেন মহিলা। গ্রেফতারের পর এই বিপুলসংখ্যক নেতা ও কর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। এদের অধিকাংশের ওপরই নাসেরকে হত্যা ও তার হুকুমতকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।
       
বৈরুতের একটি পত্রিকা সে সময়ে এ ধরনের এমন একটি খবর প্রকাশ করেছে, যা শুনলে যে কোনো বিবেকবান মানুষই বুঝতে পারবে এদের ষড়যন্ত্র ছিলো কতো হীন, কতো স্থুল ! 

একটি হাস্যম্পদ ঘটনা

এক গোয়েন্দা পুলিশের পকেটে ইখওয়ানুল মোসলেমুনের সদস্য হওয়ার ফরম রেখে তাকে জামাল নাসেরের জনসভায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সভার কাজ শুরু হলে সে ব্যক্তি নাসেরকে লক্ষ্য করে পরপর ১২ রাউন্ড গুলী ছুঁড়ে, কিন্তু একটি গুলীও নাসেরের শরীরের কোথায়ও লাগে না। যে ব্যক্তিটি গুলী ছুঁড়েছে সে কিন্তু পালাবারও চেষ্টা করছে না। একদল পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নাসেরের সামনে নিয়ে যায়। নেতা বললো তার পকেট তল্লাশী করে দেখো, ইখওয়ানের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায় কি না। সাথে সাথেই পুলিশের লোকেরা চীৎকার করে উঠলো, হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার, এই যে দেখুন, ইখওয়ানের সদস্যভুক্তির ফরম তার পকেটে। তাকে জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলতে শুরু করে, হ্যাঁ, আমি ইখওয়ানের লোক, ইখওয়ানীরাই আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে গুলী করার জন্যে।
       
নেতাকে আর পায় কে? সে তো এই অজুহাতটির খোঁজেই ছিলো। গ্রেফতারকৃত ইখওয়ানীদের বিচারের জন্যে গঠন করা হলো স্পেশাল সামরিক আদালত। বিচারক, বাদী-বিবাদী ও উভয় পক্ষের উকিল-এরা সবাই প্রেসিডেন্টের নিয়োজিত। তারপরও তাদের রায় কার্যকর করার জন্যে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর প্রয়োজন হতো। অনুমোদনের নামে তা তার নির্দেশ হিসাবে কাজ করতো।

সাইয়েদ কুতুবের বিচারের নমুনা

সাইয়েদ কুতুবের বিচার শুরু হলো। বাদী পক্ষ সমর্থনের জন্যে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর বন্ধুদের কোনো কৌসুলী নিয়োগের অধিকার ও সুযোগ দেয়া হলো না। দেশের শাসনতান্ত্রিক বিধি অনুযায়ী সুদান ও মরক্কোর আইনজীবীরা মিসরের আদালতে মামলা পরিচালনা করতে পারলেও তাদের সে সুবিধা দেয়া হলো না। সাইয়েদ কুতুব ও তার সাথীদের মামলা পরিচালনার জন্যে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সুদান, মরক্কো ও আরো দু-একটি আরব দেশের কয়েকজন আইনজীবী কায়রো এসেছিলেন। তাদের সবাইকে কায়রোর বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। দু একজন আইনজীবীকে আদালত কক্ষ থেকে গলা ধাক্কা দিয়েও বের করে দেয়া হয়।

ফরাসী বার এসোসিয়েশনের সভাপতি উইলিয়াম থরপও চেয়েছিলেন মামলার কাজে কায়রো আসতে, কিন্তু অনুমতি পাননি। লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা 'এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল-ও এ ব্যাপারে তাদের চেষ্টার ত্রুটি করেনি। তারা প্রথমত মামলা পরিচালনার জন্যে একজন আইনজীবী পাঠাতে চেয়েছে, নাসের অনুমতি দেয়নি। তারপর তারা বিচার কক্ষে তাদের একজন পর্যবেক্ষক পাঠাতে চেয়েও সফল হয়নি।

১৯৬৬ সালের ২৫শে এপ্রিল তারিখে এই প্রতিষ্ঠান তার এক প্রতিবাদলিপিতে লিখেছে, শুধু তাদেরই নয়, মিসরীয় স্বৈরশাসক গোটা বিচারকক্ষে কোনো বিদেশী নাগরিক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি এমনকি কোনো সাধারণ মানুষকেও ঢুকতে দেয়নি। আদালতের কোনো বিবরণী যেন সরকারের অথারাইজেশন ছাড়া সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হতে না পারে তার জন্যে তারা একটি কুখ্যাত সেন্সরশীপ এ্যাক্ট চালু করে রাখে।
       
প্রথম ঘোষণা দেয়া হলো সমগ্র বিচারের অনুষ্ঠানটি জাতীয় প্রচার মাধ্যম সরাসরি প্রচার করা হবে, কিন্তু অভিযুক্ত নেতারা যখন অপরাধ স্বীকার করতে অস্বীকার করলেন এবং তাদের ওপর কারা কর্তৃপক্ষ যে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে তা বর্ণনা করতে শুরু করলেন, তখন সম্পূর্ণ বিনা নোটিশেই সম্প্রচারের গোটা কর্মসূচী বাতিল করে দেয়া হলো ।

এই হচ্ছে মিসরীয় সামরিক আদালতে বিচারের নমুনা যার মাধ্যমে তাদের এতো বড়ো দন্ড দেয়া হয়েছে। বিচারালয়ে বিচারের নামে যে প্রহসন চালানো হয়েছে ১৯৬৬ সালের ১৩ই এপ্রিল | তার কিঞ্চিৎ বিবরণী কায়রোর আধা-সরকারী দৈনিক আল আহরাম পত্রিকাটি প্রকাশ করেছে।

এতে দেখানো হয়েছে, আদালতে অভিযুক্তরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের নিজেদের কোনো কৌসুলী নেই। আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁদের কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। এর মাঝেও সাইয়েদ কুতুব কিছু বলতে চাইতেন, কিন্তু তাকে কিছুই বলতে দেয়া হতো না ।

এমনিভাবে সভ্য সমাজে অসভ্যতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে একদিন আদালত তার রায়ে বললো, "হ্যাঁ তোমাদের নিজেদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তোমরা সবাই মিসরের নেতা জামাল নাসেরকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছো। তোমরা এ দেশের ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছো, তাই তোমাদের সবার নামে ফাঁসির আদেশ শোনানো হলো।
       
এ ছিলো ১৯৬৬ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। সারা বিশ্ব হতবাক হয়ে এ ঘটনা দেখলো । বিচারের নামে এ অবিচার দেখে মানবতা সেদিন আর্তনাদ করে উঠলো। কিন্তু কে কার কথা! শোনে গোটা নাসের চক্র যেন এদের ফাঁসির দৃশ্য দেখার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলো। 


পেছনের কিছু ঘটনা
বাদশাহ ফারুকের সময়ের কথা।
১৯৪৮ সালের ৮ই ডিসেম্বর পশ্চিমী দুনিয়া বিশেষ করে বৃটিশদের ইশারায় সর্বপ্রথম ইখওয়ানকে বে-আইনী ঘোষণা করা হয়। ইখওয়ানকে বে-আইনী ঘোষণা করার নীলনকশা আঁকা হয় কিন্তু লন্ডনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশরা ওয়াদা করেছিলো, যুদ্ধ শেষে মিসরকে স্বাধীনতা দেয়া হবে। যুদ্ধ শেষ হবার পর যখন বৃটিশরা স্বাধীনতার প্রশ্নে টালবাহানা শুরু করলো তখন | ইখওয়ান এর বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলে। অল্প দিনের মধ্যেই ইখওয়ানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে গেলো। সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫ লাখের ওপর। সমর্থক ও কর্মীর সংখা ছিলো আরো বহুগুণ। ইখওয়ানের এ বিপুল পরিমাণ জনপ্রিয়তা দেখেই দেশকে যারা বিদেশী প্রভুদের হাতে বিক্রী করে দিতে চাইলো সে গোষ্ঠী এদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো। অতপর লম্পট বাদশাহর লম্পটি উযিরে আযমকে কে বা কারা গুলী করলে এই দোষ চাপানো হলো ইখওয়ানের ঘাড়ে। শুরু হলো ইখওয়ানীদের ওপর চরম নির্যাতনের পালা।

এর কিছুকাল পরে একদিন আলোচনার অজুহাতে ষড়যন্ত্রমূলক এক বৈঠকের আয়োজন করলো কুচক্রীরা। রাস্তার মধ্যেই সরকারী খুনীদের হাতে শহীদ হলেন শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ইখওয়ানের মোর্শেদে আম (কেন্দ্রীয় নেতা) শহীদ হাসানুল বান্না । দিনটি ছিলো ১৯৪৯ সালের ১২ই মার্চ ।
       
১৯৫২ সালের জুলাই মাসে রক্তপাতহীন এক সামরিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এলেন কর্নেল নজীব। ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি দুর্নীতিপরায়ণ সামরিক অফিসারদের এক তালিকা প্রণয়ন করলেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সামরিক অফিসাররা ছিলো দীর্ঘদিন থেকে রাজা ফারুকের সব কয়টি কুকর্মের অংশীদার। এই দুর্নীতিপরায়ণ ও অকর্মা অফিসারদের শীর্ষভাগে যার নাম ছিলো, সেই হলো- জামাল আবদুন নাসের। কিভাবে যেন নাসের কর্নেল নজীবের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার খবর জেনে গেলো এবং তার কুকীর্তির সাথীদের নিয়ে এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কর্নেল নজীবকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাতারাতি মিসরের যাবতীয় রাজনৈতিক কর্তৃত্বের চাবিকাঠি নিজের হাতে নিয়ে নিলো। ক্ষমতায় বসেই নাসের তার সামনে প্রধান বাধা হিসেবে দেখতে পেলো ইখওয়ানুল মোসলেমুনকে ।

ইতিমধ্যে সুয়েজ খাল নিয়ে ইংরেজদের সাথে নাসের এক চুক্তি স্বাক্ষর করলে ইখওয়ানের কেন্দ্রীয় কমিটি একে মিসরের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী বলে আখ্যায়িত করে। এই সময় সাইয়েদ কুতুবের সম্পাদনায় প্রকাশিত 'আল মাজেল্লাতুল ইখওয়ান' পত্রিকা এই চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করায় জামাল নাসের পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। এবার নাসের তার পশ্চিমী প্রভুদের খুশী করার জন্যে বন্য জন্তুর ন্যায় ইখওয়ানের নিরীহ নেতা ও কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিছুদিনের মধ্যেই মিসর হাইকোর্টের খ্যাতনামা বিচারপতি ও ইখওয়ানের প্রবীণ নেতা শহীদ আবদুল কাদের আওদাসহ ৫ জনকে ফাঁসির আদেশ শুনানো হয়। 


আসামীর কাঠগড়ায় বিচারক

১৯৫০ সালে বাদশাহ ফারুক যখন ইখওয়ানীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার হুকুমনামা জারি করলো তখন ইখওয়ানের পক্ষ থেকে দেশের উচ্চ আদালতে এর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বিচারক আবদুল কাদের আওদা ছিলেন সেই আদালতেরই জজ। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইখওয়ানের পক্ষ থেকে জোরালো যুক্তি শুনে মাননীয় বিচারক ইখওয়ানের পক্ষেই মামলার রায় দিলেন। মামলার কাগজপত্র পড়তে পড়তে এক সময় তিনিই নিজেই ইখওয়ানের তক্ত হয়ে গেলেন।

পরে যখন সরকার এই রায়কে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করলো, তখন জজ আবদুল কাদের | চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে উচ্চ আদালতে ইখওয়ানের পক্ষে উকীল হিসেবে মামলা পরিচালনা করেন এবং তিনি জয়লাভও করেন। এবার আর তার ইখওয়ানের সাথে সাংগঠনিকভাবে একাত্ম হতে বাধা রইলো না। কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি দলের কেন্দ্রীয় সহকারী নেতা (নায়েবে মোর্শেদে আম) নির্বাচিত হয়ে গেলেন।
     
যেদিন নাসেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগে তাকে কারারুদ্ধ ও পরে বিচার বিভাগীয় নাটকের মাধ্যমে ফাঁসির আদেশ শুনানো হলো সেদিন তিনি হাসতে হাসতে বললেন, 'আমার কাছে এটা কোনো বিষয়ই নয় যে আমি কোথায় মরতে যাচ্ছি এবং কিভাবে যালেমরা আমার মৃত্যুদন্ড দেবে। আমি তো এতেই সন্তুষ্ট যে আমি আল্লাহ তায়ালার একজন অনুগত বান্দা হিসেবে শাহাদাতের পেয়ালা পান করতে যাচ্ছি।'

শহীদ সাইয়েদ কুতুবকেও যেদিন দ্বিতীয়বার গ্রেফতার করা হলো তখন তিনিও যালেমের মতিগতি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাকেও এবার শাহাদাতের দরজায় পা দিতে হবে, তাই তিনিও একই ভাষায় বলেছিলেন, 'আমি আমার মৃত্যুর জন্যে দুঃখিত নই, এতে আমার কোনো | আক্ষেপও নেই বরং আমি তো সন্তুষ্ট যে, তাঁর পথেই আমার প্রাণ যাচ্ছে।'

ঈমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ গোটা পরিবার

তার ছোট ভাই মোহাম্মদ কুতুবকে (যিনি বহু মূল্যবান ইসলামী সাহিত্যের লেখক) এতো অত্যাচার করা হয় যে, তার চোখে মুখে তাকালে তাকে চিনতে কষ্ট হতো। তার আপন দু'বোন হামিদা কুতুবকে দশ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয় এবং আমিনা কুতুবকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঘরে | নযরবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৬৫ সালের শেষের দিকে শহীদ কুতুবের ভাগিনা মাত্র ২৫ বছর বয়সের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার রাফাত বকর আশ শাফেয়ীকে অমানুষিক অত্যাচার চালিয়ে বাধ্য করা হচ্ছিলো আদালতে দাঁড়িয়ে মামার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে। কিন্তু এই মর্দে মোজাহেদ রাখি হননি। বিধায় তাঁর ওপর অত্যাচারের মাত্রা এতো বাড়িয়ে দেয়া হয় যে, তিনি কারার চার দেয়ালের ভেতরই শাহাদাত বরণ করেন।


শাহাদাতের মর্যাদা দানকারী সে অমর পুস্তক

আদালতের নাটকীয় প্রহসনে যে বই-এর ওপর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ এনেছে তা হচ্ছে সাইয়েদ কুতুবের সেই বিখ্যাত বই 'মায়ালেম ফিত তারীক'। (পথের মাইল ফলক) মোট ১৩টি অধ্যায়ে সমাপ্ত এই বই-এর ৪টি অধ্যায়ই উদ্ধৃত করা হয়েছে শহীদের খ্যাতনামা তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন' থেকে। কোনো অলস ও দুর্বল মনের মানুষকে ইসলামের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে। তোলার ব্যাপারে এই বইয়ের সত্যিই কোনো জুড়ি নেই। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বহু ভাষায় এই গুরুত্বপূর্ণ বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

তার রচিত গ্রন্থের তালিকা অনেক বড়ো

শহীদ সাইয়েদ কুতুব সাহিত্য সংস্কৃতির ময়দানে ইসলামী মূল্যবোধের ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত লোকদের ইসলামের ছায়াতলে আনার জন্যে বহু মূল্যবান পুস্তক রচনা করেছেন। তার রচনাবলীর মধ্যে 'ফী যিলালিল কোরআন' নিসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মূল্যবান তাফসীর লিখে তিনি ইতিহাসের পাতায় সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
       
তার বিশেষ বিশেষ গ্রন্থের মধ্যে একাধিক উপন্যাস রয়েছে, বেশ কয়টি জনপ্রিয় শিশু | সাহিত্যও রয়েছে। তেফলে মিনাল কারিয়া (গ্রামের ছেলে), মদীনাতুল মাসহুর (যাদু নগরী), মাশাহেদুল কেয়ামাহ ফিল কোরআন ( কোরআনে পেশ করা কেয়ামতের দৃশ্যসমূহ), আত্‌ | তাসওয়ীরুল ফান্নি ফিল কোরআন, (কোরআনে শিল্পগত ছবি), আল আদালাতুল এজতেমায়ীয়াতু ফিল ইসলাম (ইসলামে সামাজিক সুবিচার), মা'রেকাতুল ইসলাম ওয়ার রেসমালিয়াহ (ইসলাম ও পুঁজিবাদের দ্বন্দ্ব) আস সালামুল আলামে ওয়াল ইসলাম (ইসলাম ও বিশ্বশান্তি), দেরাসাতুল ইসলামিয়াহ (ইসলামী রচনাবলী), আন নাকদুল আদাবে উসুলুহ ও মানাহেজুহ (সাহিত্য সমালোচনার মূলনীতি ও পদ্ধতি), আন নাকদু লে কেতাবে মুসতাকবেলেস সাকাফাহ (ভবিষ্যতের সংস্কৃতি শীর্ষক একটি পুস্তকের সমালোচনা), কেতাবুন ও শাখছিয়াতুন (গ্রন্থ ও ব্যক্তিত্ব), নাহজু মুজতামেহুল ইসলামী (ইসলামী সমাজের দৃশ্য) আমরিকা আল লাতি রা’আইতু, (আমার দেখা আমেরিকা), আল আতইয়াফুল আরবা (চারজনের চিন্তাধারা)।

সর্বশেষে রয়েছে তাঁর সেই মহা বিপ্লবের গ্রন্থ 'মায়ালেম ফিত তারীক' (পথ চলার নির্দেশনাসমূহ)। এই গ্রন্থের মাঝেই শহীদ কুতুব দেশ, জাতি নির্বিশেষে দুনিয়ার সকল মুসনলমানকে আহ্বান জানিয়েছেন নিজেদের ঘাড় থেকে জাহেলিয়াতের সব ধরনের বোঝা ঝেড়ে ফেলে দিতে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্যে আল কোরআনের ঝান্ডা হাতে নিয়ে যালেমদের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। সমস্ত যালেম মোনাফেক শাসকদের উৎখাত করে | তার স্থলে সত্যিকার অর্থে আল্লাহ তায়ালার দ্বীন কায়েমের জেহাদে শরীক হতে তাদের ডাক দিয়েছেন। (এই বইতে সাইয়েদ কুতুব যে ভূমিকা লিখেছেন, 'কোরআনের উপস্থাপিত আগামী বিপ্লবের ঘোষণাপত্র' নামে আমরা তা এখানে পেশ করেছি।

কোন্ পরিবারে এ সোনার মানুষ

মায়ের নাম ফাতেমা হোসাইন ওসমান, পিতার নাম হাজী ইব্রাহীম কুতুব। তার নিজের সম্মানিত নাম সাইয়েদ, কুতুৰ বংশীয় উপাধি। ১৯০৬ সালে মিসরের উসউত জেলার প্রাচীন পল্লী-মুশায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার আমলে এই বংশের লোকেরা আরব উপদ্বীপ থেকে খাসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন হিন্দুস্থানের অধিবাসী, অবশ্য এব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রমাণ আমাদের নযরে পড়েনি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৫ জন মিসরের মাটিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গোটা পরিবারটাই ছিলো এক ইস্পাত কঠিন ঘাঁটি। তার ছোট ভাই মোহাম্মদ কুতুব নিজেও ছিলেন একজন মহান ব্যক্তি ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা, বোন হামিদা ও আমিনা দু'জনই যালেমদের কারাগারে বহু অত্যাচার সয়ে এক সময় খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন।

শৈশবেই মায়ের ইচ্ছানুযায়ী তিনি কোরআন শরীফ মুখস্থ করেন গ্রামের মাকতাবে। পরে পিতার সান্নিধ্যে চলে আসেন কায়রো শহরের উপকণ্ঠে ছালওয়ান নামক স্থানে। সেখানে তিনি তাজহিযিয়াত দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯২৯ সালে সেখানকার পড়া শেষ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি মাদ্রাসা দারুল উলুম কায়রো থেকে বিএ ডিগ্রী হাসিল করে আপন যোগ্যতার বলে সেখানেই অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন।
       
কিছুকাল পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর হিসেবে নিয়োগপত্র পান। একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্যে তাকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। দু'বছর ধরে আধুনিক পৃথিবীর পাপের দেশে বাস করার সময় তিনি সচক্ষে দেখলেন যে, পাশ্চাত্য সভ্যতায় ধস নেমেছে। এই সর্বগ্রাসী ধস রুখতে হলে মানবজাতিকে পুনরায় আল্লাহ তায়ালার কেতাবের দিকে ফিরে না এসে কোনো উপায় নেই, এই পরিপক্ক ঈমান নিয়েই তিনি ১৯৪৫ সালে শহীদ হাসানুল বান্নার জেহাদী কাফেলা ইখওয়ানুল মোসলেমুনে যোগদান করেন ।

নিজের যোগ্যতা ও অসামান্য প্রতিভার বলে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি ইখওয়ানের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সাইয়েদ ছিলেন একজন মহান শিক্ষাবিদ। সাহিত্য সংস্কৃতি তথা জ্ঞানের জগতে বিপ্লব সৃষ্টির ওপরই তিনি বেশী জোর দিয়েছিলেন। জ্ঞানের জগতে পা দিয়ে তিনি লিখতে শুরু করলেন 'ফী যিলালিল কোরআন'-এর মতো এক অমূল্য তাফসীর গ্রন্থ। এর মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষকে তিনি ডাক দিলেন, জাহেলিয়াতের বাধা-বিপত্তির বাঁধ ভেঙ্গে এসো আমরা সবাই আশ্রয় নেই 'ফী যিলালিল কোরআন' তথা কোরআনের সুনিবিড় ছায়াতলে।

মানব জাতির গোটা ইতিহাসের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন, এই ডাক যিনিই দিয়েছেন তাকেই যালেমরা হয় কারার অন্ধ প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করেছে, না হয় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইতিহাসের এ অমোঘ ভাগ্য থেকে কেউই মাহরুম হয়নি, কিন্তু যালেমরা কখনোই মযলুম মোজাহেদদের মনোবল ভাংতে পারেনি। এই দীর্ঘ ইতিহাসের কোথাও একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা পাওয়া যাবে না যেখানে সংগ্রামী নবী রসূল, সাহাবী ও তাদের অনুসারীরা যালেমদের কাছে ক্ষমার আবেদন জানিয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাবার চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসের এই ধারায় শ‍হীদ কুতুব | ছিলেন এক দুর্লভ ব্যক্তিসত্ত্বার অধিকারী।
১৯৫৫ সালে যখন আদালতের প্রহসন করে তাকে নামের সরকার ১৫ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করলো তখন তিনি দন্ডাদেশ শুনে শুধু মন্তব্য করলেন, ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন (অবশ্যই আমরা আল্লাহ তায়ালার জন্যে এবং আমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে)। পরে নামের সরকার তার কাছে এক অদ্ভূত প্রস্তাব পেশ করে বললো, তিনি যদি সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে তার দন্ডাদেশ লঘু করে দেয়া হবে। সাইয়েদ কুতুব এ হাস্যকর প্রস্তাব শুনে মন্তব্য করলেন, 'যালেমের পক্ষ থেকে এই ধরনের হীন প্রস্তাবে আমি ঘৃণা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তায়ালার কসম, যদি 'ক্ষমা' শব্দটি আমাকে নাসেরের ফাঁসির কাষ্ঠ থেকেও বাঁচাতে পারে তবু আমার জীবন থাকতে আমি যালেমের কাছে ক্ষমা চাইবো না। আমি আমার মালিকের দরবারে এমনভাবে হাযির হতে চাই, যেখানে আমি তাঁর ওপর সন্তুষ্ট থাকবো এবং তিনিও আমার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন।' (না হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ)



**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url