Mohammadia Foundation
https://www.mohammadiafoundationbd.com/2023/02/kalimar-dawat.html
বাংলা ওয়াজঃ এক কালেমায় রুটি রুজি আর এক কালেমায় ফাঁসি || সাঈয়েদ কুতুবের সংক্ষিপ্ত জীবনী
কালিমার দাওয়াত দেওয়ার কারণে ফাঁসি
ইসলামি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সাঈয়েদ কুতুব রহিমাহুল্লাহকে যেদিন ফাঁসি দিয়ে খুন করা হলো, সেদিন মিশরের পথে পথে তাঁর রচিত তাফসীর "ফি যিলালিল কুরআন"এর সাত অথবা আট হাজার সেট অর্থাৎ চৌষট্টি হাজার পুস্তক পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিলো।
তাগুত-সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করেছিলো, যে ব্যক্তির কাছেই সাইয়্যেদ কুতবের এর বই পাবে, তাকেই দশ বছর জেলে পুরে রাখা হবে। নিষ্প্রাণ দেহে সাঈয়েদ কুতুবের বইগুলো প্রাণের সঞ্চার করতো। যার কারণে যে-ই কুতুবের কিতাব পাঠ করে, সে-ই তাঁর অনুসারী ও অনুরক্ত হয়ে পড়ে।
এই মহান মণীষীর শাহাদাতের ঘটনা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লে সবার মনের কোণে একটি প্রশ্ন উঁকি দিলো; কে এ সাঈয়েদ কুতুব? কী তাঁর পরিচয়? তাঁকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা-ই বা করা হলো কী জন্যে? মানুষজন তাঁকে জানতে শুরু করলো। তাঁর দর্শনের সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলো। পরিচিত হওয়া শুরু করলে তাঁর বিপুল চিন্তা-সাহিত্য কর্মের সাথে।
তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পর তাঁর তাফসীরের কদর এই পরিমাণ বেড়েছে যে, বৈরুতের খ্রিস্টান প্রকাশকেরা প্রকাশনা জগতে কোনো ধরনের লোকসান খেলে তাকে বলতো তুমি যদি বাঁচতে চাও তাহলে সাইয়্যেদ কুতুবের 'ফি যিলালিল' কুরআন' ছাপো। এমনকি যে বছর সাইয়েদ কুতুবকে জালিমেরা শহিদ করেছে, সে বছরই তাঁর রচিত তাফসীর "ফি যিলালিল কুরআন"-এর সাতটি সংস্করণ ছাপা হয়েছে। কিন্তু এই গ্রন্থটি তিনি বেঁচে থাকাবস্থায় শুধু একবার ছাপা হয়েছিলো।
এখন তো অবস্থা এমন যে, পৃথিবীর এমন কোনো প্রান্ত পাওয়া যাবেনা যেখানে সাঈয়েদের এই তাফসীরগ্রন্থ গিয়ে পৌঁছেনি। এমন কো্নো ভাষাও পাওয়া যাবে না, যে ভাষায় তা অনূদিত হয়নি। (তাফসীরে সূরা তাওবা আব্দুল্লাহ আযযাম, পৃষ্ঠা ২৮৪) সাঈয়েদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার পুর্বরাতে তাঁকে কালিমা পড়াবার জন্যে জেলে চাকুরিরত ইমাম সাহেবকে পাঠানো হলো।
ইমাম সাহেবকে দেখে সাঈয়্যেদ কুতুব (রহঃ) জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কী জন্য এখানে এসেছেন"? ইমাম সাহেব বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়ানোর জন্যে এসেছি। আসামীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে কালিমা পড়ানোটা আমার দায়িত্ব।
সাঈয়েদ কুতুব বললেন, এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে? ইমাম সাহেব বললেন সরকার দিয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন এটার বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান? ইমাম সাহেব বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন পাই।
তখন সাঈয়েদ কুতুব রহিমাহুল্লাহ বললেন, কী আশ্চর্য! যে কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান, সে একই কালিমার ব্যখ্যা লিখে মুসলিম উম্মমাহকে জানানোর অপরাধেই তো আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে!
আফসোস
"তোমার কালিমা তোমার রুটি-রুজি যোগায়,
আর আমার কালিমা আমাকে ফাঁসিতে ঝুলায়!
সাঈয়েদ কুতুবের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাঈয়েদ কুতুবের মূল নাম হলো সাঈয়েদ; কুতুব হলো তাঁর বংশীয় উপাধি। তাঁর পূর্বপুরুষরা আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। পিতার নাম হাজী ইবরাহিম কুতুব। তিনি ছিলেন চাষি। করতেন চাষাবাদ করতেন। মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান, যিনি ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা। তাঁরা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। ভাইরা হলেন সাঈয়েদ কুতুব এবং মুহাম্মাদ কুতুব। আর বোনেরা হলেন হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। পঞ্চম বোনের নাম জানা যায়নি। সাঈয়েদ ছিলেন সবার বড়ো। তাঁরা সব ভাই-বোনই উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন।
সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালে মিসরের উসইউত জেলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাঈয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি শৈশবেই কুরআন হিফজ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পিতা কায়রো শহরের উপকণ্ঠে হালওয়ান নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। তিনি তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষা সমাপ্ত করে কায়রোর বিখ্যাত মাদরাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে ওই মাদরাসা থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন।
কিছুকাল অধ্যাপনা করার পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। মিসরে ওই পদটিকে অত্যন্ত সম্মানজনক বিবেচনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তাকে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি পড়াশোনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
তিনি দু’বছরের কোর্স শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। আমেরিকায় থাকাকালেই তিনি বস্তুবাদী সমাজের দুরবস্থা লক্ষ্য করেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, একমাত্র ইসলামই সত্যিকার অর্থে মানবসমাজকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে।
আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পরই তিনি ইখওয়ানুল মুসলেমিন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি যাচাই করতে শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি ওই দলের সদস্য হয়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধ শেষে মিসরকে স্বাধীনতাদানের ওয়াদা করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইখওয়ান দল ব্রিটিশের মিসর ত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এর ফলে তাদের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেড়ে যায়। মাত্র দু’বছর সময়ের মধ্যে এ দলের সক্রিয় কর্মীসংখ্যা পঁচিশ লাখে পৌঁছে। সাধারণ সদস্য, সমর্থক ও সহানুভূতিশীলদের সংখ্যা ছিল কর্মী সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি। ব্রিটিশ ও স্বৈরাচারী মিসর সরকার ইখওয়ানের জনপ্রিয়তা দেখে ভীত হয়ে পড়ে এবং এ দলের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
১৯৫২ সালের জুলাই মাসে মিসরে সামরিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। ওই বছরই ইখওয়ান দল পুনরায় বহাল হয়ে যায়। ড, হাসানুল হোদাইবি দলের মোরশেদু-এ-আম নির্বাচিত হন। দলের আদর্শ প্রচার ও আন্দোলনের সম্প্রসারণ বিভাগ তার পরিচালনাধীনে অগ্রসর হতে থাকে। পরিপূর্ণরূপে নিজেকে আন্দোলনের কাজে উত্সর্গ করেন তিনি।
১৯৫৪ সালে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী-‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন’-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছ’মাস পরই কর্নেল নাসেরের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। কারণ, ওই বছর মিসর সরকার ব্রিটিশের সঙ্গে নতুন করে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে, পত্রিকাটি তার সমালোচনা করে। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পর নাসের সরকার এ দলের ওপর নির্যাতন শুরু করে। একটি বানোয়াট হত্যা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগে ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলকে বেআইনি ঘোষণা করে দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তো অনেক নেতাকে খুন করা হয়। যাঁদের মধ্যে সাঈয়েদও একজন।
এক নজরে সাইয়েদ কুতুব
জন্মঃ ৯ অক্টোবর ১৯০৬, মুশা, উসইউত, মিশর খেদিভাত নামক স্থানে।
মৃত্যুঃ ২৯ আগস্ট ১৯৬৬ (বয়স ৫৯ বৎসর ) স্থান : কায়রো, মিশর।
জাতিভুক্তঃ মিশরীয়।
যুগঃ আধুনিক যুগ।
অঞ্চলঃ মধ্যপ্রাচ্য।
মাজহাবঃ শাফি মাজহাব।
মূল আগ্রহঃ ইসলাম, রাজনীতি ও তাফসীর।
উল্লেখযোগ্য ধারণাঃ জাহিলিয়াহ, উবুদিয়া।
লক্ষণীয় কাজঃ ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা, কোরআনের ছায়ায়।
সাইয়েদ কুতুব-এর জ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা
সাইয়্যেদ কুতুব ছিলেন মিসরের প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যকদের অন্যতম। ছোটদের জন্যে আকর্ষণীয় ভাষায় নবীদের কাহিনী লিখে তার সাহিত্যক জীবনের সূচনা। পরবর্তীকালে ‘আশওয়াক’ (কাটা) নামে ইসলামী ভাবধারাপুষ্ট একখানা উপন্যাস রচনা করেন।
**রচিত গ্রন্থাবলীঃ
১) মুশাহিদুল ক্বিয়ামাহ ফিল ক্বুরআন (কুরআনের আঁকা কেয়ামতের দৃশ্য)।
২) আত্ তাসবিরূল ফান্নি ফিল ক্বুরআন (কুরআনের আলঙ্কারিক চিত্র)।
৩) আল আদালাতুল ইজতিমাঈয়া ফিল ইসলাম (ইসলামের সামাজিক সুবিচার)।
৪) ফি যিলালিল কুরআন (কুরআনের ছায়াতলে) – কুরআনের তাফসীর।
৫) ইসলাম ও পূজিবাদের দ্বন্ধ।
৬) বিশ্ব শান্তি ও ইসলাম।
৭) দারাসাতিল ইসলাম (ইসলামী রচনাবলী)।
৮) “ভবিষ্যৎ সংস্কৃতি” নামক পুস্তকের সমালোচনা।
৯) কুতুব ওয়া শাখসিয়াত (গ্রন্থাবলী ও ব্যক্তিত্ব)।
১০) ইসলামী সমাজের চিত্র।
১১) আমি যে আমেরিকা দেখেছি।
১২) চার ভাই বোনের চিন্তাধারা: সাইয়্যেদ কুতুব, মুহাম্মদ কুতুব, আমিনা কুতুব ও হামিদা কুতুব।
১৩) আশাতিল মাজহুল (কবিতগুচ্ছ)।
১৪) জীবনে কবির আসল কাজ।
১৫) ইসলামী সমাজ বিপ্লবে ধারা (মা’আলিম ফিত তারিক্ব)।
১৬) আন নাক্বদুল আদাবি উসুলিহি ওয়া মানাহিযিহি (সাহিত্য সমালোচনার মূলনীতি ও পদ্ধতি)।
১৭) নবীদের কাহিনী।
১৮) মরন জয়ী মুজাহিদ।
ইতিহাস না জেনে হাফিজুর রহমান কি বলেন?
**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন