মা তাঁর নাম রাখলেন ‘হায়দার’ আর পিতা নাম রাখলেন ‘আলী’




মা নাম রাখলেন হায়দার

জন্মের সময় আলী (রাঃ) -এর নাম ছিল আসাদ। আর তাঁর এই নামটি রাখেন তাঁর মা, তার নানা আসাদ বিন হাশেমের নামানুসারে। তাইতো খায়বার যুদ্ধের দিন আলী (রাঃ)-এর কণ্ঠে ছন্দ রচিত হয়েছিল, “আমি সেই লোক যার নাম রেখেছিল তার মা হায়দার, যেন নিকৃষ্ট এক পরিবেশে বনের রাজা ।" আলী (রাঃ) -এর জন্মের সময় তাঁর পিতা আবু তালেব উপস্থিত ছিলেন না । যখন তিনি বাসায় ফিরে আসলেন, তখন তিনি নাম রাখেন আলী ।

তথ্যসূত্রঃ
(রিয়াযুন নাযরাহ ফী মানাকীবে আশারাহ, পৃঃ ১৬৫)


নবী (সাঃ) -এর বাড়িতে প্রতিপালিত

আবু তালেব (রাঃ) -এর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল অনেক। তাই নবী করীম (সাঃ) তাঁর চাচা আব্বাস-কে বললেন, হে আমার চাচা আব্বাস! নিশ্চয়ই আপনার ভাই আবু তালেবের অনেক সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবার। আর এখন খুব অভাব-অনটনের সময় চলছে। আসুন আমরা আবু তালেবের বাড়িতে যাই। দেখি, তাঁর পরিবারের বোঝা কিছু হালকা করতে পারি কি না। আর নবী (সাঃ) আব্বাস (রাঃ) -এর কাছে এজন্য এ প্রস্তাব পেশ করলেন যে, আর্থিক দিক দিয়ে তিনি অনেক স্বচ্ছল ছিলেন । চাচা আব্বাস (রাঃ) এবং নবী (সাঃ) দু'জন পরামর্শ করার পর নবী (সাঃ) বললেন, আমি আবু তালেবের একটি সন্তান প্রতিপালন করব। আর আপনি একটি সন্তান প্রতিপালন করবেন। তখন আব্বাস বললেন, ঠিক আছে চল। অবশেষে চাচা-ভাতিজা দু'জনই আবু তালেব এর কাছে এসে পৌঁছলেন এবং বললেন, আমরা দু'জন তোমার দু'টি ছেলের দায়িত্ব নিয়ে তোমার পরিবারের বোঝা একটু হালকা করতে চাচ্ছি, এতে তোমার মতামত কি?
   
তখন আবু তালিব বলেন, ঠিক আছে। আকিলকে রেখে বাকি যাকে ইচ্ছা নিয়ে যাও। তখন রাসূল (সাঃ)  নিলেন আলী (রাঃ) কে এবং চাচা আব্বাস (রাঃ) নিলেন জাফর (রাঃ) কে । এরপর থেকে আলী (রাঃ) নবী (সাঃ) -এর কাছে বড় হতে থাকেন । আর জাফর (রাঃ) চাচা আব্বাস (রাঃ) এর বাড়িতে বড় হতে থাকেন।

তথ্যসূত্রঃ
(আস সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ১/২৪৬ )



আলী (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণ

ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই আলী ইবনে আবু তালেব খাদিজা (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণের পর নবী (সাঃ) -এর কাছে আসলেন । তিনি এসে নবী (সাঃ) এবং খাদিজা (রাঃ) -কে নামাযরত অবস্থায় পেলেন। তখন তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মদ! এটা কি? নবী শুধু উত্তর দিলেন, এটা হচ্ছে আল্লাহর এমন দ্বীন যা তিনি তার জন্য নির্বাচন করেছেন এবং যার জন্য তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন । অতএব আমি তোমাকে একমাত্র আল্লাহর দিকে এবং তাঁর ইবাদতের দিকে আহ্বান করছি; সাথে সাথে লাত ও উযযাকেও অস্বীকার করার জন্য আহ্বান করছি। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ এটা তো এমন এক বিষয় যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি । আমি এ বিষয়ে আমার পিতা আবু তালেবের সাথে আলাপ-আলোচনা না করে কিছু বলতে পারছি না । তার এরূপ কথা শুনে নবী (সাঃ) একটু মন খারাপ করলেন এবং বললেন, ঠিক আছে আলী, তুমি যদি ইসলাম গ্রহণ করতে না চাও তাহলে তোমার কাছে আমার এই ইসলামের দাওয়াতের বিষয়টি গোপন রাখবে । অতঃপর আলী ঐ দিন রাত্রি যাপন করলেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আলী (রাঃ) -এর অন্তরে ইসলাম গ্রহণের অনুভূতি তৈরি করে দিলেন। তাই পরের দিন সকাল বেলা আলী (রাঃ) রাসূল (সাঃ) -এর কাছে এসে বললেনঃ হে মুহাম্মদ! আপনি আমার কাছে কি পেশ করতে চাচ্ছেন? তখন নবী (সাঃ) তাকে বললেনঃ তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই। তুমি লাত ও উযযাকে অস্বীকার করবে এবং অংশীদারদের থেকে মুক্ত থাকবে। আলী (রাঃ) তা-ই করলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে তার পিতা আবু তালেব-এর ভয়ও পাচ্ছিলেন । কারণ তার পিতা তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি । তাই আলী (রাঃ) তার ইসলামকে গোপন রাখলেন। 
তথ্যসূত্রঃ
আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াহ, ৩/৪


গিরিপথের মাঝে নামায

কতিপয় জ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন যে, যখন নামাযের সময় হতো তখন নবী (সাঃ) মক্কার এক গিরিপথে চলে যেতেন । তখন আলী ইবনে আবু তালেবও গোপনে রাসূল (সাঃ) -এর সাথে বের হয়ে যেত । তাঁরা সেখানে নামায আদায় করতেন। যখন বিকেল হত তখন ফিরে আসতেন। এভাবে অনেক দিন চলতে থাকে। অতঃপর কোনো একদিন আলী (রাঃ) -এর পিতা আবু তালেব জানতে পারল এবং তাদেরকে গিয়ে নামাযরত অবস্থায় পেল। তখন সে রাসূল (সাঃ) -কে বললেন, হে আমার ভাইয়ের ছেলে! এটা কোন দ্বীন, যে দিকে তুমি ডাক। তিনি উত্তর দিলেন, হে চাচা! এটা আল্লাহর দ্বীন, তাঁর ফেরেশতাদের দ্বীন, তাঁর রাসূলগণের দ্বীন এবং আমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) -এর দ্বীন। আল্লাহ আমাকে বান্দাদের প্রতি রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। আর যাদেরকে আমি নসীহত করছি এবং যাদেরকে আমি হেদায়াতের দিকে আহ্বান করছি তাদের মধ্যে আপনি হচ্ছেন অধিক হকদার। আর আমার ডাকে সাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে এবং আমাকে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করার ক্ষেত্রেও আপনি অধিক হকদার। তখন আবু তালেব বললঃ হে আমার ভাতিজা! আমি আমার বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করতে পারব না ।
   
অতঃপর সে আলী (রাঃ) -কে বললঃ হে আমার ছেলে! এটা কোন দ্বীন যাতে তুমি প্রতিষ্ঠিত, আছ? তখন আলী বললেনঃ আমি ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা মেনে নিয়েছি। তাই আমি তাঁর সাথে সালাত আদায় করি এবং তাঁর অনুসরণ করি। তিনি আরো বলেন, হে আমার পিতা! আমি তোমাকে কখনো ত্যাগ করব না, তবে হকের কারণে অবশ্যই ত্যাগ করব। 

তথ্যসূত্রঃ
আস সীরাতুন নাবুবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম, ১/২৪৬


আলী (রাঃ) - এর পিতার দাফন

আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃ) -এর কাছে এসে বললাম যে, আবু তালিব মারা গেছেন। তখন নবী (সাঃ) বললেনঃ যাও। এবং তাকে (চাদর দ্বারা) ঢেকে দাও। তখন আলী (রাঃ) বললেনঃ তিনি তো মুশরিক অবস্থায় মারা গেছেন।
তখন নবী (সাঃ) আবার বললেনঃ যাও! এবং তাকে ঢেকে রাখ । অতঃপর আমি তাকে ঢেকে রেখে নবী (সাঃ) -এর কাছে ফিরে আসলাম। তখন তিনি বললেনঃ যাও এবং গোসল করাও । অত:পর কোনো প্রকার কথাবার্তা ব্যতীত আমার কাছে আস। অতঃপর আমি গোসল করালাম। এরপর নবী (সাঃ) -এর কাছে আসলাম । অতঃপর তিনি আমার জন্য অনেক দোয়া করলেন, যা আমাকে এমন আনন্দ দিল যা লাল উট বা কালো উট লাভের চেয়েও বেশি আনন্দদায়ক ।

তথ্যসূত্রঃ
আস সাহীহুল মুসনাদ ফী ফাযায়েলিস সাহাবা, পৃ : ১৮৮




**************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url