সাহাবাগণের জীবনকথা-৬১ || হযরত আবদুল্লাহ ইবন 'আমর ইবনিল আস (রা)-এর জীবনী






আবদুল্লাহ ইবন 'আমর ইবনিল আস (রা)

নাম আবদুল্লাহ, কুনিয়াত আবু মুহাম্মাদ, আবু আবদির রহমান ও আবু নুসাইর। তবে প্রথমোক্ত কুনিয়াত দু'টি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। পিতা প্রখ্যাত সেনানায়ক ও কূটনীতিবিদ হযরত 'আমর ইবনুল' 'আস (রা) ও মাতা রীতা বিনতু মুনাব্বিহ। বর্ণিত আছে, আবদুল্লাহর ইসলাম-পূর্ব নাম 'আল-আস' (পাপী, অবাধ্য)। আবু যারয়া তাঁর তারীখে উল্লেখ করেছেন, একটি জানাযার অনুষ্ঠানে রাসূল (সা), তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'তোমার নাম কি ?' তিনি যখন বললেন, “আল-আস, রাসূল (সা) তখন বললেন, না, আজ থেকে তোমার নাম হবে 'আবদুল্লাহ। সেই দিন থেকে 'আল-আস' হলেন আবদুল্লাহ।

   

রাসুলুল্লাহর (সা) হাদিস লেখক 

“ইবন সা'দ বলেন, আবদুল্লাহ তাঁর পিতা আমর ইবনুল আসের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পুত্র আবদুল্লাহ অপেক্ষা পিতা আমরের বয়স মাত্র দশ থেকে বারো বছর বেশী ছিল। তবে ওয়াকিদীর মতে পুত্র অপেক্ষা পিতা বিশ বছরের বড় ছিলেন। (তাজকিরাতুল হুফ্‌ফাজ, আল-ইসাবা, আল-ইসতিয়াব) পিতা-পুত্র উভয়ে মক্কা বিজয়ের পূর্বেই মদীনায় হিজরাত করেন। ইসলাম গ্রহণের পর অধিকাংশ সময় আবদুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ (সা) সুহবত বা সাহচর্যে ব্যয় করতেন । ক্রোধ বা শান্ত উভয় অবস্থায় রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ থেকে যা কিছু বের হতো, তিনি সব কিছু লিখে রাখতেন। কোন কোন সাহাবী এমনটি না করার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, উত্তেজিত অবস্থায় রাসুলুল্লাহর (সা) মুখ থেকে যা কিছু বের হয় তা না লেখা উচিত। বিষয়টি তিনি রাসুলুল্লাহর (সা) নিকট উত্থাপন করলেন। রাসূল (সা) বললেন, 'তুমি আমার সব কথা লিখতে পার। সত্য ছাড়া অন্য কিছুই আমি বলতে পারিনে। (মুসনাদে আহমাদ, আল-ইসতিয়াব) তাঁর পিতা আমর অপেক্ষা রাসূল (সা) তাকেই বেশী ভালোবাসতেন এবং রাসুলুল্লাহর (সা) নিকট তার গুরুত্ব ছিল বেশী।

রাসুলুল্লাহর (সা) সুহবত বা সাহচর্যে কাটানোর পর যে অতিরিক্ত সময়টুকু আবদুল্লাহ পেতেন, তার সবটুকু প্রায় দিনে রোযা রেখে এবং রাতে ইবাদাতে কেটে যেত। ধীরে ধীরে এ কাজে তিনি এত গভীরভাবে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন যে, স্ত্রী-পরিজন ও দুনিয়ার সবকিছুর প্রতি নিরাসক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহর (সা) খিদমতে হাজির হয়ে তাঁর এই অস্বাভাবিক বৈরাগী জীবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। রাসূল (সা) আবদুল্লাহকে ডেকে পিতার আনুগত্যের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, 'আবদুল্লাহ, রোযা রাখ, ইফতার কর, নামায পড়, বিশ্রাম নেও এবং স্ত্রী-পরিজনের হকও আদায় কর। এই আমার তরীকা বা পন্থা। যে আমার তরীকা প্রত্যাখ্যান করবে সে আমার উম্মাতের মধ্যে গণা হবে না।'


রাসূলুল্লাহর (সা) যুগে সংঘটিত সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ

রাসূলুল্লাহর (সা) যুগে সংঘটিত সব যুদ্ধে হযরত আবদুল্লাহ অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের সময় সাধারণত সোয়ারী পশুর ব্যবস্থা ও জিনিসপত্র পরিবহনের দায়িত্ব তাঁর ওপর অর্পিত হতো। একবার এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, 'আবু মুহাম্মাদ, আমরা যেখানে বসবাস করি সেখানে দিরহাম ও দীনারের প্রচলন নেই। গৃহপালিত পশু ও জীব-জন্তু আমাদের প্রধান সম্পদ। আমরা ছাগলের বিনিময়ে উট, গরুর বিনিময়ে ঘোড়া এবং ঘোড়ার বিনিময়ে উট ক্রয়-বিক্রয় করে থাকি। এতে কোন আপত্তি নেই তো? তিনি বললেন, 'একবার রাসূলুল্লাহ (সা) আমাকে নির্দেশ দিলেন একটি উষ্ট্রারোহী বাহিনী গড়ার। আমার কাছে যতগুলি উট ছিল, এক এক করে সবগুলি বিলি করলাম। তবুও সোয়ারী বিহীন কিছু লোক রয়ে গেল। আমি রাসূলুল্লাহর (সা) খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করলাম, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে যতগুলি উট ছিল, সবগুলি বন্টন করার পরও সোয়ারী বিহীন অবস্থায় একদল লোক রয়ে গেছে।' রাসুল (সা) নির্দেশ দিলেন, 'একটি উটের বিনিময়ে সদকার দু'টি, তিনটি করে উট দানের অঙ্গীকার করে কিছু উট খরীদ করে নাও।' আমি সেই মত প্রয়োজনীয় উট সংগ্রহ করে নিলাম। (দারু কুতনী)

ইয়ারমুকের যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে তিনি লড়াই করেন। এই যুদ্ধে হযরত 'আমর ইবনুল 'আস তাঁর নেতৃত্বের ঝাণ্ডা আবদুল্লাহর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।



**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url