দো'আ কবুল হওয়ার শর্ত || দো'আ করার আদব সমূহ








দো'আ করার কিছু আদব এবং শর্ত রয়েছে । দো'আ করার সময় এসব আদব এবং শর্ত পালন করা আবশ্যক। যেমন- 

(১) হারাম খাওয়া, পান করা ও পরিধান করা হতে বিরত থাকাঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 'খাদ্য, পানি ও পোষাক হারাম হ'লে দো'আ কবুল হয় না' (মুসলিম, মিশকাত, হা/২৭৬০; 'ক্রয়-বিক্রয়' অধ্যায়)।

(২) খালেছ নিয়তে অর্থাৎ অন্তরে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে একনিষ্ঠভাবে দো'আ করাঃ রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'নিশ্চয়ই কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১)।

(৩) নেক আমল পেশ করে দো'আ করাঃ তিনজন লোক এক গুহায় আটকা পড়লে তারা তাদের নিজ নিজ সৎ আমল আল্লাহ্র নিকট পেশ করে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৩৮, 'সৎ আমল ও সদাচরণ' অনুচ্ছেল, 'শিষ্টাচার' অধ্যায়)।
   

(৪) ওযু করে দো'আ করাঃ আবু মূসা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) একদা পানি নিয়ে ওযূ করলেন এবং হাত তুলে দো'আ করলেন (বুখারী হা/৬৩৮৩; ফাতহুল বারী, ১১/১৮৭ পৃঃ, 'দো'আ সমূহ' অধ্যায়, অনুচ্ছেদ- ৪১)।

(৫) ক্বিবলামুখী হয়ে দো'আ করাঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো'আ করার ইচ্ছা করলে ক্বিবলামুখী হয়ে দো'আ করতেন' (বুখারী হা/৬৩৪৩: ফাল বারী, ১১শ ৭৬, পৃঃ ১৪৪, 'দো'আ' অধ্যায়)।

(৬) দো'আ করার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা ও নবীর উপর দরূদ পড়াঃ ফাযালা ইবনু ওবায়েদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে তার ছালাতের মাঝে দো'আ করতে দেখলেন। ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রশংসা করল না এবং আল্লাহ্র নবীর উপর দরূদও পড়ল না। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, 'হে মুছল্লী! তুমি দো'আ করতে তাড়াহুড়া করলে। অতঃপর তাদেরকে দো'আ করার নিয়ম শিক্ষা দিলেন। পরে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) অপর একজনকে দো'আ করতে শুনলেন। লোকটি আল্লাহ্র প্রশংসা করল এবং নবীর উপর দরূদ পাঠ করল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি দো'আ কর, তোমার দো'আ কবুল করা হবে, তুমি যা চাও তোমাকে তা প্রদান করা হবে' (ছবীহ নাসাঈ হা/১২৮ ছহীহ তিরমিধী হা/৩৭২৪, 'দোজা' অধ্যায়, মিশকাত হা/১৩০ 'রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ অনুচ্ছেদ, সনদ সহি)


বুরায়দা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) একজন লোককে বলতে শুনলেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার নিকট চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি একমাত্র তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন মা'বুদ নেই। তুমি একক নিরপেক্ষ মুখাপেক্ষিহীন। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। তারপর নবী করীম (ছাঃ) বললেন, 'অবশ্যই সে আল্লাহর এমন নামে ডেকেছে যে নামে চাওয়া হ'লে প্রদান করেন এবং প্রার্থনা করা হ'লে কবুল করেন' (আবুদাউদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, বুলুগুল মারাম হা/১৫৬১)।

প্রকাশ থাকে যে, কি শব্দে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে, তা এখানে উল্লেখ নেই। তবে অন্য হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর প্রশংসা করতেন নিম্নোক্ত শব্দ দ্বারা-

إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ
وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

(মুসলিম, মিশকাত হ/৫৮৬২ 'নবুওয়াতের আলামত' অনুচ্ছেদ; তিরমিযী, আবুদাউদ হা/২১১৮, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৩১৪৭ 'বিবাহ' অধ্যায়)।

সংক্ষিপ্তভাবে সোনাসার এক বলা যায়' نَحْمَدُهُ وَنُصَلِّي عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ (আবুদাউদ, মিশকাত, হা/৪৪৬)। এভাবেও বলা যায়-

الْحَمْدُ للهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى مَنْ لا نَبِيَّ بَعْدَهُ

আর দরূদ হ'ল দরূদে ইবরাহীম, যা আমরা ছালাতের মাঝে পড়ে থাকি। অবশ্য অন্য বর্ণনায় এভাবে আছে,

اللهمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَلَي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنتَ اللهُ لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يلدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ.

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআনী আশহাদু আন্নাকা আংতার-হু লা- ইলাহা ইল্লা আংতাল আহাদুস স্বামাদুল্লাযী নাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ ওয়ালাম্ ইয়াকুল্লাহ্ কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এ বলে প্রার্থনা করছি যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন মা'বূদ নেই। তুমি একক ও অভাবমুক্ত। যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁর থেকে জন্ম নেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই' (আবুদাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, বুলূগুল মারাম হা/১৫৬১; ছহীহ আবুদাউদ হা/১৫২১ 'ছালাত' অধ্যায়, ইস্তিগফার' অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।

(৭) দু'রাক'আত ছালাত আদায় করে দো'আ করাঃ এর প্রমাণে কিছু হাদীছ পাওয়া যায় (ইবনু কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ৪৫নং আয়াতের ব্যাখ্যা)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, 'মানুষ কোন পাপ করার পর সুন্দর করে ওযূ করে দু'রাক'আত ছালাত আদায় করে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করেন' (ছহীহ আবুদাউদ, হা/১৫২১ 'ছালাত' অধ্যায়, 'ইস্তিগফার' অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।

(৮) হাত তুলে দো'আ করা এবং হাত কাঁধ বরাবর উঠানোঃ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, চাওয়া হ'ল, তুমি তোমার দু'হাত তোমার কাঁধ বরাবর উঠাবে (ছহীহ আবুদাউদ, হা/১৪৮৯, মিশকাত হা/২২৫৬ 'দো'আ সমূহ' অধ্যায়, সনদ ছহীহ)।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর হাত মুখের সামনা সামনি উঠাতেন' (আবুদাউদ, হা/১১৭৫ ইঞ্জিসকাতে হাত তোলা' অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ)।

(৯) বিনয়ী, নম্রতা, ভীতি ও দরিদ্রতার ভাব নিয়ে দো'আ করাঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তুমি মনে মনে সবিনয় ও শংকিতচিত্তে অনুচ্চস্বরে সঙ্গোপনে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর' (আ'রাফ ২০৫)।

(১০) পাপ স্বীকার করে দো'আ করাঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'কোন ব্যক্তি পাপ করার পর তা স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩ 'ইস্তিগফার ও তওবা' অনুচ্ছেদ)।

(১১) আল্লাহর সুন্দর নামগুলির মাধ্যমে দো'আ করাঃ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, 'আল্লাহ তা'আলার রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা সেই সকল নামেই তাঁকে ডাক' (আ'রাফ ১৮০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ্র গুণবাচক নামগুলি ইখলাছের সাথে মুখস্থ রাখবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন' (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২২৮৭ 'আল্লাহর নাম সমূহ' অনুচ্ছেদ)।

(১২) দো'আ নীরবে করাঃ আল্লাহ তা'আলা এবং তাঁর নবী (ছাঃ) নীরবে দো'আ করার জন্য আদেশ করেছেন' (আ'রাফ ৫৫, ২০৫)।

(১৩) মনে আশা নিয়ে দৃঢ়তার সাথে দো'আ করাঃ রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) দৃঢ়তার সাথে চাইতে বলেছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৪ 'ছালাতুল খাওফ' অনুচ্ছেদ)।

(১৪) দো'আ কবুল হয় না মনে করে তাড়াহুড়া না করাঃ রাসূল (ছাঃ) বলেন, 'তোমাদের কোন ব্যক্তি তাড়াহুড়া না করলে তার দো'আ কবুল করা হবে' (ছহীহ আবুদাউদ, হা/১৪৮৪; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১২১ 'দো'আ' অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭)।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url