কুরবানীর বিধান ও নিয়মাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

কুরবানীর বিধান ও নিয়মাবলী


মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানীর বিধান

আ'মাশ বলেন, আমি আলী (রা)-কে দু'টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি ব্যাপার? তিনি বললেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পক্ষ থেকে আমাকে কুরবানী করার ওসিয়ত করে গেছেন। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে এ কুরবানী আদায় করছি। (আবু দাউদ, মিশকাত ১২৮. বাইহাকী ৯ম খণ্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা) মুস্তাদরাকে হাকীমেও একটি সহীহ রেওয়ায়াত আছে যে, তিনি দু'টি দুম্বা নবী (সাঃ) -এর পক্ষ থেকে কুরবানী করেন এবং নিজের পক্ষ থেকে। উক্ত হাদীস প্রমাণ করে যে, মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া জায়েয। (মিরকাত ২য় খণ্ড, ২৬৫)

এ ব্যাপারে আত্-তিরমিযী হাদীস গ্রন্থের ভাষ্যকার আল্লামা মুবারাকপুরী বলেন: কেবল মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে আমি একটি সহীহ মারফু হাদীস রাসূল (সাঃ) থেকে পাইনি। থাকলে সেটা আলী বর্ণিত (রা) হাদীস, আর তা য‘ইফ ।
তাই কোনো ব্যক্তি যদি একটি কুরবানী কেবল মৃত লোকদের পক্ষ থেকে করে এবং তাতে জীবিত লোককে শরীক না করে তাহলে সাবধানতা অবলম্বনমূলক হিসেবে গোটা কুরবানীটাই সদকাহ করা উচিত। যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক ‘গুয়্যাতুল আলমায়ী' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন।

কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি একটি কুরবানী নিজের এবং কিছু মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া কিংবা নিজের এবং স্বীয় পরিবার ও কিছু মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয় তাহলে তার গোশত নিজে খেতে এবং পরিবারবর্গকে খাওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। আর এ কুরবানী গোটাই তাকে খায়রাত করতে হবে না। এ ব্যাপারে হানাফী ফকীহ আল্লামা মুহাম্মদ আমীন ইবনে আবিদীন বলেন, যদি কেউ মৃতব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে এ কুরবানী গোশ্ত খাওয়া ও সদকার ব্যাপারে ঐরূপ করবে যেমন সে নিজের কুরবানীর ব্যাপারে করে । আর ওর নেকীটা মৃতব্যক্তি পাবে। (তুহফাতুল আহওয়াযী ২য় খণ্ড, ৩৫৪, আওনুল মাবুদ ৩য় খণ্ড, বদ্দুল মুহতার ৫ম খণ্ড, ২৮৫) 

কখন কুরবানী করবে

ঈদের সালাতের আগে কুরবানী দেয়া যাবে না। যেমন- রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি সালাতের আগে যবেহ করে সে নিজেরই জন্য তা যবেহ করে এবং যে ব্যক্তি সালাতের পরে যবেহ করে সে তার কুরবানী পূর্ণ করে এবং মুসলমানদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করে। (বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ১২৬ ও ১২৮ পৃ.)

বারা ইবনে 'আযিব (রা) বলেন, একদা কুরবানীর দিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সামনে খুৎবাহ দিয়ে বললেন- لا يُضَحِيْنَ أَحَدٌ حَتَّى يُصَلِّى অর্থাৎ কোন ব্যক্তি সালাত না পড়া পর্যন্ত কখনই যেন সে কুরবানী না করে।   (মুসলিম ২য় খণ্ড, ১৫৪ পৃ.)

আত্‌-তিরমিযীর বর্ণনায় আছে- অর্থাৎ, সালাত না পড়া পর্যন্ত তোমাদের কেউই যেন কখনো যবেহ না করে। (আত্-তিরমিযী ১ম খণ্ড, ১৮২ পৃ.)

কুরবানী মোট কতদিন চলে

কুরবানী মোট কতদিন হতে পারে- এ ব্যাপারে বিভিন্ন ওলামায়ে কিরাম ও ইমামদের পাঁচটি অভিমত পাওয়া যায়। যেমন- ইমাম ইবনে হাযম ও আল্লামা “উবাইদুল্লাহ রাহমানী সাহেব বলেন-

১. ইবনে আবী শায়বা ও মুওয়াত্তা ইমাম মালিককে 'উমর, 'আলী, ইবনে উমর, ইবনে ‘আব্বাস, আবু হুরায়রা ও আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, কুরবানী ইয়াওমুন নাহর ও তার পর দু'দিন। অর্থাৎ, ১০, ১১ ও ১২ই যিলহজ্ব মোট তিন দিন। এটা হল হানাফী, মালিকী ও হাম্বলীদের অভিমত। এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাযম বলেন, আনাস (রা) বর্ণিত হাদীসটির সনদ ছাড়া বাকি সূত্রগুলো বিশুদ্ধ নয়। প্রত্যেকটির সনদে কোনো না কোনো রাবী দোষযুক্ত আছেন। এগুলো সম্পর্কে আল্লামা রাহমানী বলেন, এসব হাদীসগুলো মওকূফ। অর্থাৎ সবগুলোই উক্ত সাহাবীদেরই উক্তি। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) উক্তি নয়। কোনো বিষয়ে সাহাবীদের মোকাবেলায় যদি রাসুলুল্লাহর (সাঃ) মারফূ হাদীস পাওয়া যায় তাহলে সেটাই নীতিবিদ মুহাদ্দিসদের মতে অগ্রাধিকার যোগ্য ।

২. ইবনে হিব্বান, বায়হাকী, দারাকুতনী, বায্যার, ইবনে 'আদী, মুসনাদে আহমদ ও ইবনে আবি শায়বা প্রভৃতিতে বর্ণিত আছে, নবীয়ে করীম বলেন, আইয়্যামে তাশরীকের দিনগুলো যবেহের দিন। অর্থাৎ কুরবানী হবে ১০, ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহিজ্জ পর্যন্ত। মোট ৪ দিন। ইমাম শাফি'ঈর ও অনুরূপ মতো।'

কুরবানীর উত্তম দিন ১০ই যুলহজ্জ

চন্দ্র বছরের শেষ মাসের নাম যিলহজ্ব। এ মাসের ১০ম তারিখকে আরবিতে ইয়াওমুন নাহর বলে। আর নাহর শব্দের অর্থ সীনা বা বুক। উটের সীনায় বিশেষ প্রক্রিয়ায় খঞ্জরের খোঁচা মেরে রক্তপাত করে উট বধ করাকে ইসলামী পরিভাষায় 'নাহর' বলে। ব্যাপক অর্থে নাহর শব্দের অর্থে যবেহও বোঝায়। যেমন- মুয়াত্তা ইমাম মালিক-এর ১৮৮ পৃষ্ঠায় একটি হাদীসে উট ও গরু উভয়কে বধ করার ব্যাপারে 'নাহর' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও গরুকে যবেহ করা হয় । নাহর করা হয় না। এ ইয়াওমুন নাহরের ফযিলত ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ইয়াওমুন নাহরে আদম সন্তান যত কাজ সম্পদের করে থাকে তন্মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ (কুরবানীর জানোয়ারের) রক্তপাত। ঐ জানোয়ার তার শিং, পশম ও খুরসহ কিয়ামতের দিনে নিশ্চয়ই হাযির হবে। আর ঐ খুন যমীনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। কাজেই তোমরা কুরবানী দ্বারা নিজের মনকে তৃপ্ত কর। (আত্ তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১২৮ )

কুরবানীর জানোয়ার কি কি

মোট ৮ প্রকার জন্তু দ্বারা কুরবানী দেয়া জায়েয যা সূরা আনআমের ১৪৩ ও ১৪৪ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
১. ভেড়া- পুরুষ ও স্ত্রী,
২. উট - পুরুষ ও স্ত্রী,
৩. বকরী - পুরুষ ও স্ত্রী
৪. গরু বা মহিষ পুরুষ ও স্ত্রী

কুরবানীর পশু গাভিন হলে কুরবানী দেয়া যাবে কি?

ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত আছে, গাভিন জন্তুর কুরবানী চলে না। কিন্তু এ রটনার প্রমাণে কুরআন ও হাদীস থেকে কোনো দলীল পাওয়া যায় না; বরং হাদীস দ্বারা বোঝা যায় যে, গাভিন জন্তু এবং সদ্য বাচ্চা হওয়া জন্তু কুরবানী করতে কোনো আপত্তি নেই। যেমন- আবু সাইদ খুদরী (রা) বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! আমরা নহর করি এবং গরু ও বকরী যবেহ করি। অতঃপর তাদের পেট থেকে বাচ্চা পাই এটা আমরা ফেলে দেব, না খাব? তিনি বললেন, যদি তোমরা চাও তাহলে খাও। কারণ তার যবেহ তার মায়ের যবেহের মতো । (আবু দাউদ ২য়, ৩৫ পৃষ্ঠা, মিশকাত ৩৫৭ পৃ.) 

এ হাদীস প্রমাণ করে যে, গাভিন গরু যবেহ করতে নিষেধ নেই এবং কারো রুচিতে না বাধলে যে যবেহ করা গাভিন জন্তুর বাচ্চা খেতে পারে।

যুলহজ্ব মাসের প্রথম ১০ দিন চুল ও নখ কাটা নিষিদ্ধ

উম্মে সালামা (রা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা পোষণ করে সে যেন কুরবানী করা পর্যন্ত তার নখ ও চুল মোটেই না কাটে। অন্য বর্ণনায় আছে, যিলহজ্ব ১০ দিন যখন এসে পড়ে এবং তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে সে যেন তার নখ ও চুলে স্পর্শ না করে- (মুসলিম, মিশকাত ১২৭ পৃষ্ঠা, আত্‌-তিরমিযী, নাসায়ী, আবু দাউদ, মুস্তাদরাকে হাকীম, কানযুল উম্মাল ৫ম খণ্ড, ৪৫ পৃষ্ঠা)। আবু দাউদ, মুসলিম ও নাসায়ীর বর্ণনায় আছে; যার কাছে কুরবানী জানোয়ার রয়েছে, অতঃপর সে যখন যিলহজ্ব চাঁদ দেখে তখন কুরবানী না করা পর্যন্ত সে যেন তার নখ ও চুল না কাটে। (নায়লুল আওতার ৪র্থ খণ্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা)

কুরবানী যবেহের নিয়মাবলি

আনাস (রা) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ হাতে শিংওলা দু'টি ত্রুটিমুক্ত দুম্বা কুরবানী করেন। আমি দেখলাম যে, তিনিও তাদের ঘাড়ে পা দিয়ে বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করলেন। 'আয়েশা (রা)-এর বর্ণনায় আছে, তিনি তাঁকে বললেন, একটি ছুরি আনো এবং ওটাকে পাথরে ঘষে শান দাও । আমি তাই করলাম। তারপর তিনি ছুরিটা ধরলেন এবং দুম্বাটা ধরে শুইয়ে ফেললেন। অতঃপর যবেহ করলেন। তারপর বললেন, বিসমিল্লাহ, আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়ালী-মুহাম্মাদিও ওয়ামিন উম্মাতি মুহাম্মাদ ।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৭ পৃ.)

নিজ হাতে কুরবানী করা উচিত

উপরোক্ত আনাস (রা) বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমের হাদীসসহ অগণিত হাদীস প্রমাণ করে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ হাতে কুরবানী করতেন এবং সাধ্যমতো অন্য কাউকে দিয়ে কুরবানী করাতেন না। সুতরাং তাঁর উম্মতের উচিত তাঁর আদর্শ যথাসাধ্য পালনের চেষ্টা করা এবং নিজহাতে কুরবানী করা। আল্লামা মাযহার বলেন, প্রত্যেকেরই নিজহাতে কুরবানী করা সুন্নাত। কারণ যবেহ করাটা একটি ইবাদত । আর নিজের ইবাদত নিজে করাই অতি উত্তম। যদিও এ ইবাদাত অন্যকেও দিয়ে করানো বৈধ। (মিরকাত ২য় খণ্ড, ২৬০ পৃ.)

অভিজ্ঞার আলোকে দেখা গেছে যে, নিজ হাতে কুরবানী করার ফলে এবং কুরবানী করার সময় কুরবানীগাহে হাযির থাকার ফলে অনেক কাপুরুষ ও ভীরু ব্যক্তির কাপুরুষতা ও ভীরুতা কেটে গিয়ে তাদের মনে সাহসের সঞ্চার হয়েছে।

কুরবানীর পশুর মাথা বিচ্ছিন্ন হলে এবং ঘাড় মটকালে তার বিধান

মোরগ, মুরগি ও হাঁস প্রভৃতি যবেহের সময় কখনো কখনো দেখা যায় যে, কল্লাটা ঘাড় থেকে আলাদা হয়ে যায়। এ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্পর্কে হানাফী ফিক্‌হ বলে, মাথা কেটে ফেললে কাজটা আপত্তিকর হবে, কিন্তু যবেহকৃত জন্তুটি খাওয়া যাবে। ঐ আপত্তির কারণ সম্পর্কে হেদায়া গ্রন্থে একটি হাদীস উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু ঐ হাদীস সম্পর্কে আল্লামা যায়লায়ী হানাফী এবং হাফিয ইবনে হাজার আস্কালানী (রহ.) বলেন, ঐ হাদীসটি দুনিয়ার কোনো কিতাবে আমরা খুঁজে পাইনি। (হিদায়া ৪র্থ খণ্ড, ৪৩৮ পৃ. ঐ-৪৩৯ পৃ. টীকায় আদদিরায়াহ এবং নাসবুর রাযাহ ৪র্থ খণ্ড, ৮৮)

কুরবানীর পশুর কসাইয়ের পারিশ্রমিকের বিধান

আলী (রা) বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, কুরবানীর কোন কিছু থেকেই যেন আমি কসাইকে মজুরি হিসেবে না দেই।। তিনি আরো বলেন, তাই আমরা নিজেদের কাছ থেকে তা দিতাম। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ২৩২ পৃ: ও বুলূগুল মারাম ১০২ পৃ:) 

অর্থাৎ কুরবানীর গোস্ত চামড়া বা অন্য কিছুর দ্বারা কসাইয়ের মজুরি না দিয়ে আলাদাভাবে তার দাম দিতে হবে। কিন্তু হ্যাঁ, তাকে যদি তুফা হিসেবে কিছু গোশত্ খেতে দেয়া হয় তাহলে তাতে কোনো আপত্তি নেই ।

একই জন্তুর ভাগাভাগির কুরবানী ও আকীকা চলে কি?

পৃথিবীর কোনো সহীহ বা যইফ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় না যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কিংবা লক্ষাধিক সাহাবায়ে কিরাম অথবা তাবিয়ীনে ইমাম প্রমুখদের কেউই একটি গরু বা উটের সাতভাগের কয়েকভাগ কুরবানী এবং কয়েকভাগ বা একভাগ বা দুভাগ আকিকা দিয়েছেন। একটি উট বা গরু ৭ জনের পক্ষ থেকে আকীকাহ দেরা যাবে কি-না -এ সম্পর্কে হাফেয ইবনুল কাইয়্যুম লিখেছেন, একটি মাথা কেবলমাত্র একটি মাথারই পক্ষ থেকে যথেষ্ট। ইমাম খাল্লান তদীয় জামীআ গ্রন্থে বলেন, আমাকে আব্দুল মালিক ইবনে আব্দুল হামীদ সংবাদ দিয়েছেন যে, একদা তিনি আবু আব্দুল্লাহকে (ইমাম আহমদকে) জিজ্ঞেস করেন, উট দিয়ে আকিকাহ হবে কী? তিনি বলেন, রাইস উট দিয়ে আকিকাহ করেছেন। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট আকীকাহ হবে কি? তিনি বললেন, আমি ঐ ব্যাপারে কিছু শুনিনি। অর্থাৎ, কোনো হাদীস পাইনি। অতঃপর হাফিয ইবনুল কাইয়্যুম মন্তব্য করেছেন যে, কুরবানী এবং হাদিতে ভাগাভাগি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাত। কিন্তু আকীকাহর ব্যাপারে তিনি ছেলের পক্ষ থেকে দুটি স্বতন্ত্র খুনের বিধান দিয়েছেন। যার বিকল্প একটি উট কিংবা গরু হতে পারে না। আকীকাতে একটি প্রাণের মুক্তিপণে একটি পূর্ণাঙ্গ খুনই শরিয়তের বিধান। অতএব এখানে যদি ভাগাভাগি সঠিক হয় তাহলে একটি নির্দিষ্ট শিশুর পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহের উদ্দেশ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তাই একই জন্তুর ভাগাভাগিতে কুরবানী এবং আকীকাহ দুটি একসাথে জায়েয নয়। (তুহফাতুল মওদূদ বিআকামিল মণ্ডলুদ ৪৭ পৃ:)

- ইমাম আহমাদের পুত্র ‘আব্দুল্লাহ বলেন, একদা আমি আমার পিতাকে ঈদুল আযহার দিনে আকীকাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, ঐ দিনে একই সাথে কুরবানী এবং আকীকা করা যাবে কি-না? তিনি বললেন, হযতো তা কুরবানী, কিংবা আকীকা । অর্থাৎ- একটিই হবে। (ঐ-৫০ পৃ.)

ইমাম ইবনে হাযম বলেন, বকরী ও দুম্বা ব্যতীত উট ও গরু দ্বারা আকীকা শুদ্ধ নয় । (আল-মুহাল্লা ৭ম খণ্ড, ৫২৩ পৃষ্ঠা)

তাই তাঁর মতেও একই জন্তুতে ভাগাভাগি করে কুরবানী ও আকীকা দুই হবে না। এজন্য হাম্বলী এবং আহলে হাদীসদের মতে একই জন্তুতে কুরবানী ও আকীকাহ বৈধ নয়।

কিন্তু হানাফী ফিক্হ 'নাওয়াদিরুয যাহায়া'-তে ইমাম মুহাম্মদ বর্ণনা করেছেন যে, যদি কেউ কুরবানীর জন্তুতে আকীকার ভাগ দেয় তা জায়েয হবে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রহ) রকমারী ভাগাভাগিকে মাকরূহ মনে করেন এবং তিনি বলেন যে, ঐ ভাগাভাগি যদি একই রকমের হয় তাহলে আমার কাছে তা অধিকতর পছন্দনীয়। (ফাতাওয়া আলমগীর ৪র্থ, ৮৪ পৃ:)

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.) বলেন, কুরবানীর গরুতে ছেলের আকীকার জন্য দু'ভাগ এবং মেয়ের জন্য একভাগ নিয়ে নেবে। (বেহেশতী যেওর ৩য় খণ্ড, ৪২) হানাফী ফকীহদের উক্ত ফতওয়া কুরআন ও হাদীস সম্মত নয়; বরং তা হলো তাদের ব্যক্তিগত বিবেক প্রসূত। তাই আহলে হাদীসেরা এই ফতওয়া গ্রহণ করে না । 

যিলহজ্ব সম্পর্কে মনগড়া ফযিলত

এই মাসের ১ তারিখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআত সূরা ইখলাস ২৫ বার। এতে অগণিত সাওয়াব লাভ হয়।

এ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিতরের সালাতের পর ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা কাওসার ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ৩ বার পড়লে মাকামে ইল্লীন' (?) লাভ হবে, প্রত্যেক কেশের বদলে ১০০০ নেকী এবং ১০০০ দীনার সদকা করার সাওয়াব লাভ করা যায়!

তবে এগুলো কেবল মনগড়া বৈ কিছুই নয়। এ ধরনের আল কুরআন হাদীসের কোথায় উল্লেখ আছে এবং তার মান কি? যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন-

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ - بِالْبَيِّنَاتِ وَالرَبِّرِ.

অর্থাৎ, যদি তোমরা না জান, তাহলে বিজ্ঞগণকে জিজ্ঞাসা করে নাও দলীল-প্রমাণ ও গ্রন্থসহ। (সূরা নাহল : আয়াত-৪৩-৪৪ )

তাই এ ধরনের আমলের বিশুদ্ধতা যাচাই করা উচিৎ।

****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url