মা’আরেফুল কোরআন - ৮৩ || সূরা আল-বাকারাহ, ২১৯-২২১ || দানের পরিমাণ, এতিমের মাল এবং কাফিরদের সাথে বিয়ে







بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
سورة البقرة

সূরা আল-বাকারাহ আয়াতঃ ২১৯-২২১


 وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَا ذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلِ الۡعَفۡوَؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱۹   فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡیَتٰمٰی ؕ قُلۡ اِصۡلَاحٌ لَّهُمۡ خَیۡرٌ ؕ وَ اِنۡ تُخَالِطُوۡهُمۡ فَاِخۡوَانُکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ الۡمُفۡسِدَ مِنَ الۡمُصۡلِحِ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَاَعۡنَتَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۲۰   وَ لَا تَنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکٰتِ حَتّٰی یُؤۡمِنَّ ؕ وَ لَاَمَۃٌ مُّؤۡمِنَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکَۃٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَتۡکُمۡ ۚ وَ لَا تُنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ حَتّٰی یُؤۡمِنُوۡا ؕ وَ لَعَبۡدٌ مُّؤۡمِنٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَکُمۡ ؕ اُولٰٓئِکَ یَدۡعُوۡنَ اِلَی النَّارِ ۚۖ وَ اللّٰهُ یَدۡعُوۡۤا اِلَی الۡجَنَّۃِ وَ الۡمَغۡفِرَۃِ بِاِذۡنِهٖ ۚ وَ یُبَیِّنُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ﴿۲۲۱

সূরা আল-বাকারাহ ২১৯-২২১ নং আয়াতের অর্থ

(২১৯) আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে—কি তারা ব্যয় করবে ? বলে দিন, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ্ তোমাদের জন্য নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার, (২২০) দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে। আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দিন, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেওয়া উত্তম. আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই। বস্তুত অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ্ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের উপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রাজ্ঞ। (২২১) আর তোমাদের মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্য মুসলমান ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম ; যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা দোষখের দিকে আহবান করে ; আর আল্লাহ্ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহবান করেন জান্নাত ও ক্ষমার প্রতি। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে ৷

   

সূরা আল-বাকারাহ ২১৯ নং আয়াতের তাফসীর

তাফসীরের সার-সংক্ষেপ
ষোড়শ নির্দেশঃ 

দানের পরিমাণ

এবং মানুষ আপনার কাছে দান সম্পর্কে জানতে চায় যে, কি পরিমাণ ব্যয় করবে। আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন যা সহজ হয়, (যা খরচ করলে পেরেশান হয়ে দুনিয়াতে কষ্টে পড়তে হবে বা অন্যের অধিকার নষ্ট করে পরকালের ক্ষতিতে পতিত হতে হবে, এ পরিমাণ নয়)। আল্লাহ্ তা’আলা এমনিভাবে নির্দেশসমূহকে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা (এ সম্পর্কে অবগত হতে পার এবং এ জ্ঞানের দ্বারা প্রতিটি আমল করার পূর্বে) দুনিয়া ও আখেরাতের ব্যাপারে (সে সব আদেশ সম্পর্কে) চিন্তা কর। (এবং চিন্তা করে প্রতিটি ব্যাপারে সে আদেশমত আমল করতে পার)।

সপ্তদশ নির্দেশঃ 

এতীমের মালের সংমিশ্রণ

(যেহেতু প্রাথমিক যুগে সাধারণত এতীমের হক সম্পর্কে পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা হতো না, তাই এখানে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, এতীমের মাল আত্মসাৎ করা দোযখের অগ্নিশিখা নিজের পেটে ভর্তি করারই নামান্তর। এ বাণী যাঁরা শুনলেন, তাঁরা ভয়ে এমনই সতর্কতা অবলম্বন করতে শুরু করলেন যে, পরিবারস্থ এতীমদের খাদ্যও আলাদা পাক করতেন এবং আলাদাভাবে রাখতেন। আর যদি সেই এতীম শিশু আহার কম করতো এবং আহার্য অবশিষ্ট থাকতো তবে সে খাবার নষ্ট হয়ে যেত। কেননা, সে খাদ্য তাঁরা নিজেরা ব্যবহার করাও জায়েয মনে করতেন না। এতীমের মাল সদকা করারও অনুমতি ছিল না। এভাবে তাদেরও কষ্ট হতো, এতীমেরও ক্ষতি হতো। তাই শেষ পর্যন্ত এ বিষয়টি হুযূর (সা)-এর দরবারে পেশ করা হলো। এ সম্পর্কেই আয়াতে এর ফয়সালা দেওয়া হয়েছে যে) - এবং মানুষ আপনার নিকট এতীম শিশুদের (ব্যয় আলাদা বা একত্রে রাখার) ব্যাপারে জানতে চাইবে। আপনি বলে দিন যে, (তাদের মাল খাওয়া নিষেধ করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, তাদের সম্পদ যেন নষ্ট করা না হয়। আর যদি ব্যয় যৌথ রাখলে তাদের মঙ্গল হয়, তবে তাদের মঙ্গলের খেয়াল করা (খরচ ভিন্ন রাখলে যদি তাদের অমঙ্গল হয়) অতি উত্তম এবং তোমরা যদি তাদের সাথে খরচ যৌথ রাখ, তবুও ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, সে (ক্ষেত্রে) তোমাদের (ধর্মীয়) ভাই। আর ভাই ভাই তো একত্রেই থাকে এবং আল্লাহ্ তা’আলা স্বার্থ নষ্টকারীকে এবং সুবিধা রক্ষাকারীকে (ভিন্ন ভিন্ন) জানেন। (কাজেই আহার্যে একত্রিকরণ এমন হওয়া উচিত নয়, যাতে এতীমের ক্ষতি হয়। আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু কমবেশি হলে যেহেতু আল্লাহ্ তা’আলা তাদের নিয়ত সম্পর্কে অবগত, তাই এতে শাস্তি হবে না) আর যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করতেন, তবে (এ সম্পর্কে কঠোর আইন জারি করে) তোমাদেরকে বিপদে ফেলতেন। (কেননা) আল্লাহ অত্যন্ত পরাক্রমশালী ( কিন্তু সহজ আইন এজন্য জারি করেছেন যে, তিনি) হেকমতওয়ালাও বটে। (এমন আদেশ তিনি দেন না, যা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়)।


অষ্টাদশ আদেশঃ 

কাফিরদের সাথে বিয়ে

এবং মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কাফির নারীকে বিবাহ করো না এবং মুসলমান নারী (চাই) বাঁদীই (হোক না কেন, সে) কাফির নারী অপেক্ষা (শতগুণে) উত্তম (চাই সে স্বাধীনই হোক না কেন) ; যদি সে কাফির (মেয়ে মাল-দৌলত বা সৌন্দর্যের দিক দিয়ে তোমার নিকট ভাল মনে হয়, তবুও বাস্তবে মুসলমান নারী তার চাইতে উত্তম এবং এমনিভাবে নিজের অধীনস্থ মুসলমান) নারীকে কাফির পুরুষের নিকট বিয়ে দেবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে মুসলমান না হয় এবং মুসলমান পুরুষ (সে) যদি ক্রীতদাস (ও হয়, তবু শতগুণে) উত্তম কাফির পুরুষ হতে (সে চাই স্বাধীনই হোক না কেন,) যদি সে কাফির ব্যক্তি (মাল-দৌলত ও মান-সম্মানে) তোমাদের নিকট ভাল মনে হয়। কিন্তু তবুও) বাস্তবে মুসলমানই তার চাইতে ভাল। কারণ, সে কাফির নিকৃষ্ট হওয়ার কারণেই এর সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছে। এ সব (কাফির) মানুষ দোযখে (যাওয়ার) ইন্ধন যোগায়। (কেননা, তারা কুফরীর আন্দোলন করে ; আর এর পরিণাম দোযখ।) আর আল্লাহ্ তা’আলা বেহেশত এবং ক্ষমার (অর্জনের) পথ দেখান। নিজের আদেশে (এবং সে আদেশের বিস্তার এভাবে হয়েছে যে, কাফিরদের সম্পর্কে আদেশ দিয়েছেন, তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না। তা হলেই তাদের আন্দোলনের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকা যাবে এবং তাদের সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থেকে বেহেশত এবং মাগফেরাত লাভ করা যাবে) এবং আল্লাহ্ তা’আলা এ জন্য স্বীয় হুকুম বলে দেন, যাতে তারা তাঁর উপদেশমত আমল করে (এবং বেহেশত ও মাগফেরাতের অধিকারী হয় )।

বয়ানুল কোরআনের কয়েকটি উদ্ধৃতিঃ মাস’আলাঃ 
যে জাতিকে তাদের প্রথাপদ্ধতিতে আসমানী কিতাবের অনুসারী মনে হয়, কিন্তু বিশ্বাস ও আকীদার দিক দিয়ে খুঁজে দেখতে গেলে দেখা যায় যে, তারা আহলে-কিতাব নয়, সে জাতির স্ত্রীলোক বিয়ে করা জায়েয নয়। যেমন, আজকাল ইংরেজদেরকে সাধারণ মানুষ খৃস্টান বা নাসারা মনে করে; অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে যে, তাদের কোন কোন আকীদা সম্পূর্ণ মুশরিকদের অনুরূপ। তাদের অনেকেই আল্লাহর অস্তিত্বও স্বীকার করে না, ঈসা (আ)-এর নবুয়ত কিংবা আসমানী গ্রন্থ ইঞ্জীলকেও আসমানী গ্রন্থ বলে স্বীকার করে না। সুতরাং এমন ব্যক্তিগণ আহলে-কিতাব ঈসায়ী নয়। এ সব দলে যে সমস্ত স্ত্রীলোক রয়েছে, তাদের বিয়ে করা বৈধ নয়। মানুষ অত্যন্ত ভুল করে যে, খোঁজ-খবর না নিয়েই পাশ্চাত্যের মেয়েদেরকে বিয়ে করে বসে।

মাস’আলাঃ
এমনিভাবে যে ব্যক্তিকে প্রকাশ্যভাবে মুসলমান মনে করা হয়, কিন্তু তার আকীদা কুফর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে, তার সাথে মুসলমান নারীর বিয়ে জায়েয নয়। আর যদি বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার আকীদা এমনি বিকৃত হয়ে পড়ে তবে তাদের বিয়ে ছিন্ন হয়ে যাবে। আজকাল অনেকেই নিজের ধর্ম সম্পর্কে অন্ধ ও অজ্ঞ এবং সামান্য কিছুটা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করেই স্বীয় ধর্মীয় আকীদা নষ্ট করে বসে। কাজেই প্রথমে ছেলের আকীদা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে তারপর বিয়ে সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা দেওয়া মেয়েদের অভিভাবকদের উপর ওয়াজিব।

সূরা আল-বাকারাহ ২১৯ নং আয়াতের বিষয় বস্তু

আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়

মুসলমান ও কাফিরের পারস্পরিক বিবাহ নিষিদ্ধ

আলোচ্য আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলা বর্ণনা করা হয়েছে যে, মুসলমান পুরুষের বিয়ে কাফির নারীর সাথে এবং কাফির পুরুষদের বিয়ে মুসলমান নারীর সাথে হতে পারে না। কারণ, কাফির স্ত্রী পুরুষ মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কেননা বৈবাহিক সম্পর্ক পরস্পরের ভালবাসা, নির্ভরশীলতা এবং একাত্মতায় পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তা ব্যতীত এ সম্পর্কের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। আর মুশরিকদের সাথে এ জাতীয় সম্পর্কের ফলে ভালবাসা ও নির্ভরশীলতার অপরিহার্য পরিণাম দাঁড়ায় এই যে, তাদের অন্তরে কুফর ও শিরকের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় অথবা কমপক্ষে কুফর ও শিরকের প্রতি ঘৃণা তাদের অন্তর থেকে উঠে যায়। এর পরিণামে শেষ পর্যন্ত সেও কুফর ও শিরকে জড়িয়ে পড়ে, যার পরিণতি জাহান্নাম। এজন্যই বলা হয়েছে যে, এসব লোক জাহান্নামের দিকে আহবান করে। আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত ও মাগফেরাতের দিকে আহবান করেন এবং পরিষ্কারভাবে নিজের আদেশ বর্ণনা করেন, যাতে মানুষ উপদেশ মত চলে। এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে চিন্তা প্রয়োজনঃ

প্রথমত, ’মুশরিক’ শব্দ দ্বারা সাধারণ অমুসলমানকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, কোরআন মজীদের অন্য এক আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকৃত কিতাবে বিশ্বাসী নারীরা এ আদেশের অন্তর্ভুক্ত নয়। ইরশাদ হয়েছেঃ

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ

তাই এখানে মুশরিক বলতে ঐসব বিশেষ অমুসলমানকেই বোঝানো হয়েছে, যারা কোন নবী কিংবা আসমানী কিতাবে বিশ্বাস করে না।

দ্বিতীয়ত, মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম করার কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে বলা হয়েছে যে, তাদের সাথে এরূপ সম্পর্কের ফলে কুফর ও শিরকের মধ্যে নিমগ্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে। কারণটি তো আপাতদৃষ্টিতে সমস্ত মুসলমানের বেলায়ই খাটে, এতদসত্ত্বেও কিতাবীদেরকে এ আদেশের আওতামুক্ত রাখার কারণ কি? উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার যে, কিতাবীদের সাথে মুসলমানদের মতপার্থক্য অন্যান্য অমুসলমানের তুলনায় ভিন্ন ধরনের। কেননা, ইসলামের আকীদার তিনটি দিক রয়েছেঃ তওহীদ, পরকাল ও রিসালাত। তন্মধ্যে পরকালের আকীদার বেলায় কিতাবী নাসারা ও ইহুদীরা মুসলমানদের সাথে একমত তাছাড়া আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করাও তাদের প্রকৃত ধর্মমতে কুফর। অবশ্য তারা হযরত ঈসা (আ)-এর প্রতি মহব্বত ও মর্যাদা প্রদানের ক্ষেত্রে যে শিরক পর্যন্ত পৌঁছেছে, তা ভিন্ন কথা।

এখন মৌলিক মতপার্থক্য শুধু এই যে, তারা হুযূর (সা)-কে রাসূল বলে স্বীকার করে না। অথচ ইসলাম ধর্মে এটি একটি মৌলিক আকীদা। এ আকীদা ব্যতীত কোন মানুষ মুসলমান হতে পারে না। এতদসত্ত্বেও অন্যান্য অমুসলমানের তুলনায় কিতাবীদের মতপার্থক্য মুসলমানদের সাথে অনেকটা কম। কাজেই তাদের সংস্পর্শে পথভ্রষ্টতার ভয়ও তুলনামূলকভাবে কম।

তৃতীয়ত, কিতাবীদের সাথে মতপার্থক্য তুলনামূলকভাবে কম বলে তাদের মেয়েদের সাথে মুসলমান পুরুষের বিয়েকে জায়েয করা হলে তার বিপরীত দিকে মুসলিম নারীদের সাথে কিতাবী অমুসলমানদের বিয়ের ব্যাপারটিও জায়েয হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একটু চিন্তা করলে পার্থক্যটা বোঝা যাবে। মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবে কিছুটা দুর্বল। তাছাড়া স্বামীকে তার হাকেম বা তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করা হয়েছে। তার আকীদা ও পরিকল্পনা দ্বারা মেয়েদের আকৃষ্ট হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । কাজেই মুসলমান নারী যদি অমুসলমান কিতাবীদের সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তবে এতে তার বিশ্বাস ও আকীদা নষ্ট হয়ে যাওয়া খুবই সহজ। অপরদিকে অমুসলমান কিতাবী মেয়ের মুসলমান পুরুষের সাথে বিয়ে হলে তার প্রভাবে স্বামী প্রভাবিত না হয়ে বরং স্বামীর প্রভাবে স্ত্রীর প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে কোন অনিময় বা আতিশয্যে যদি লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তা তার নিজস্ব ত্রুটি।

চতুর্থত, বৈবাহিক সম্পর্ক যে প্রভাব বিস্তার করে তা উভয় পক্ষে একই রকম হয়ে থাকে। সুতরাং এতে যদি এরূপও আশা পোষণ করা হয় যে, মুসলমানদের আকীদায় অমুসলমানদের আকীদা প্রভাবিত হয়ে সেই মুসলমান হয়ে যাবে, তবে এর চাহিদা হচ্ছে এই যে, মুসলমান এবং অন্যান্য অমুসলমানের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক জায়েয হওয়া উচিত ছিল।

কিন্তু এ স্থলে বিশেষ বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, যখন কোন কিছুতে লাভের একটি দিকের পাশাপাশি ক্ষতির কারণ থাকে, তবে সেক্ষেত্রে সুস্থ বুদ্ধির চাহিদা অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা এবং সফলতা লাভের কাল্পনিক সম্ভাবনাকে এড়িয়ে চলাই উত্তম। হয়তো সে অমুসলমান প্রভাবিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করবে, তবে সতর্কর্তার বিষয় হলো, মুসলমান প্রভাবিত হয়ে যেন কাফির না হয়ে যায়।

পঞ্চমত, কিতাবী ইহুদী ও নাসারা নারীদের সাথে মুসলমান পুরুষদের বিবাহের অর্থ হচ্ছে এই যে, যদি তাদেরকে বিবাহ করা হয়, তবে বিবাহ ঠিক হবে এবং স্বামীর পরিচয়েই সন্তানদের বংশ সাব্যস্ত করে। কিন্তু হাদীসে রয়েছে, এ বিবাহও পছন্দনীয় নয়। হুযুর (সা) ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমান বিবাহের জন্য দীনদার ও সৎ স্ত্রীর অনুসন্ধান করবে, যাতে করে সে তার ধর্মীয় ব্যাপারে সাহায্যকারিণীর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে করে তাদের সন্তানদেরও দীনদার হওয়ার সুযোগ মিলবে। যখন কোন অধার্মিক মুসলমান মেয়ের সাথে বিবাহ পছন্দ করা হয়নি, সেক্ষেত্রে অমুসলমান মেয়েদের সাথে কিভাবে বিবাহ পছন্দ করা হবে? এ কারণেই হযরত উমর ফারুক (রা) যখন সংবাদ পেলেন যে, ইরাক ও শাম দেশের মুসলমানদের এমন কিছু স্ত্রী রয়েছে এবং দিন দিন তাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তখন তিনি আদেশ জারি করলেন যে, তা হতে পারে না। তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া হলো যে, এটা বৈবাহিক জীবন তথা ধর্মীয় জীবনের জন্য যেমন অকল্যাণকর, তেমনি রাজনৈতিক দিক দিয়েও ক্ষতির কারণ।—(কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ)

বর্তমান যুগের অমুসলমান কিতাবী ইহুদী ও নাসারা এবং তাদের রাজনৈতিক ধোঁকা-প্রতারণা, বিশেষত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিবাহ এবং মুসলমান সংসারে প্রবেশ করে তাদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করা এবং মুসলমানদের গোপন তথ্য জানার প্রচেষ্টা আজ স্বীকৃত সত্যে পরিণত হয়েছে। তাদের রচিত অনেক গ্রন্থেও যার স্বীকারোক্তির উল্লেখ রয়েছে। মেজর জেনারেল আকবারের লেখা ’হাদীসে-দেফা’ নামক গ্রন্থে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা উদ্ধৃতিসহ করা হয়েছে। মনে হয় হযরত উমর ফারুকের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিশক্তি বৈবাহিক ব্যাপার সংক্রান্ত এ বিষয়টির সর্বনাশা দিক উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিল। বিশেষত বর্তমানে পাশ্চাত্যের দেশসমূহে যারা ইহুদী ও নাসারা নামে পরিচিত এবং আদমশুমারীর খাতায় যাদেরকে ধর্মীয় দিক দিয়ে ইহুদী কিংবা নাসারা বলে লেখা হয়, যদি তাদের প্রকৃত ধর্মের অনুসন্ধান করা যায়, তবে দেখা যাবে যে, খৃস্টান ও ইহুদীমতের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। তারা সম্পূর্ণতই ধর্ম বিবর্জিত। তারা ঈসা (আ)-কেও মানে না, তওরাতকেও মানে না, এমনকি আল্লাহর অস্তিত্বও মানে না, পরকালকেও মানে না। বলা বাহুল্য, বিবাহ হালাল হওয়ার কোরআনী আদেশ এমন সব ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে না। তাদের মেয়েদের সাথে বিবাহ সম্পূর্ণরূপে হারাম। বিশেষত وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ - আয়াতে যাদের বোঝানো হয়েছে আজকালকার ইহুদী-নাসারারা তার আওতায় পড়ে না। সে হিসাবে সাধারণ অমুসলমানদের মত তাদের মেয়েদের সাথেও বিবাহ করা হারাম।





********************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity. 
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url