রক্তাক্ত মুহাররম, ফজিলতের মুহাররম || মুহাররম মাসের ফজিলত || মুহাররম মাসের সহীহ আমল






মুহাররম মাসের ফজিলত


মুহাররম হলো সেই মাস যে মাসের মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের চন্দ্রমাসের হিসেব শুরু করে থাকে। এটি সেই পবিত্র চার মাসের মধ্যে একটি, যেগুলোর ব্যাপারে কুরআন ঘোষণা করেছে-

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ .

“নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস বারোটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত।” 

নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্রানুসারে সম্মানিত এ চারটি মাস হলো যুল- কা'দা, যুল-হাজ্ব, মুহাররম এবং রজব। কুরআনের সকল তাফসীরকারক এ ব্যাপারে একমত। কেননা, মহানবী সালাতে তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন-

السَّنَةُ اِثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا اَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلَاثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ : ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الحَجَّةِ وَالمُحَرَّمُ ، وَرَجَبْ .

“এক বছরে বারো মাস; তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত; তাদের মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক; যুল-কাদ, যুল-হাজ্ব, মুহাররম এবং চতুর্থটি রজব।"

এ চারটি মাসকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার অর্থ এ নয় যে, অন্যান্য মাসের কোনো মর্যাদা নেই; বরং রমযান মাস বছরের সবচাইতে সম্মানিত মাস হিসেবে বিবেচিত। এ চারটি মাসের মর্যাদা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ খোদ মক্কার মুশরিকদের মধ্যেও এদের মর্যাদা স্বীকৃত ছিল।

সত্যি কথা বলতে, বছরের বারোটি মাস, মূলতঃ একে অপরের সমান, একে অপরের তুলনায় এদের সহজাত কোনো মর্যাদা নেই। যখন মহান আল্লাহ কোনো নির্দিষ্ট একটি সময়কে তাঁর বিশেষ দয়া বা অনুগ্রহ দানের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, আল্লাহর অপার মহিমায় সেটি সেই মর্যাদা লাভ করেছে।

এভাবে, এ চার মাসের মর্যাদা সর্বপ্রথম স্বীকৃত হয় সাইয়্যেদুনা ইবরাহীম (আ.)-এর সময়ে। যেহেতু মক্কার মুশরিকরা নিজেদেরকে সাইয়্যেদুনা ইবরাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে বিশেষায়িত করত, সে কারণে তারা এ চারটি মাসের পবিত্রতা উদযাপন করত এবং এ চার মাসে সকল প্রকার যুদ্ধ- বিগ্রহ বন্ধ রাখত, এ মাসগুলোকে যুদ্ধ করাকে তারা হারাম মনে করত । মহানবী সাল-এর শরীয়তেও এ চারমাসের মর্যাদা সমুন্নত রাখা হয়েছে এবং কুরআন এ মাসগুলোতে ‘সম্মানিত মাস' হিসেবে সম্বোধন করেছে। এছাড়া মুহাররম মাসের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো নিচে উদ্ধৃত করা হলো:

মুহাররম মাসে রোযা


মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেন-

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ.

“রমযানের রোযার পর সর্বোত্তম রোযা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা।”

যদিও মুহাররম মাসে রোযা রাখা ফরয করা হয় নি, কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় এ দিনগুলোতে রোযা রাখলে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য বড় পুরস্কার রয়েছে। উপরিউক্ত হাদীসটি এটাই নির্দেশ করে যে, নফল রোযা অর্থাৎ ফরয ব্যতীত কেউ স্বেচ্ছায় যেই রোযা রাখে সেগুলোর মধ্যে মুহাররমের রোযা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।

হাদীসের অর্থ এটা নয় যে, মুহাররমে রোযা রাখার যে পুরস্কার বর্ণনা করা হয়েছে তা পেতে হলে সমগ্র মাস জুড়ে রোযা রাখতে হবে; বরং এ মাসের এক এক দিনের রোযার জন্যই পুরস্কার বিবেচিত হবে। সুতরাং কারো পক্ষে যত বেশি সম্ভব এ সুযোগ গ্রহণ করা উচিত ।

আশুরা'র দিবস


যদিও মাস হিসেবে পুরো মুহাররম মাসকেই পবিত্র ঘোষণা করা হয়েছে, তারপরও এর দশম দিবসটি সবচাইতে বেশি সম্মানিত। এ দিনের নাম 'আশুরা', যার অর্থ দশ।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) “বর্ণনা করেন, মহানবী (সাঃ) যখন মদিনায় হিযরত করেন তখন মদিনার ইহুদিরা মুহাররমের দশ তারিখে রোযা রাখত। তারা বলত এ দিনে মূসা (আ.) তাঁর অনুসারীদের সাথে নিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে লোহিত সাগর পাড়ি দেন এবং ফেরাউন পানিতে নিমজ্জিত হয়। ইহুদিদের কাছ থেকে এ কথা শুনে মহানবী (সাঃ) "আমরা তোমাদের চেয়ে মূসার অধিক নিকটবর্তী” এবং তিনি মুসলমানদেরকে আশুরা দিবসে রোযা রাখার নির্দেশ দেন।

অনেক সহীহ বর্ণনার মাধ্যমে জানা যায়, প্রাথমিক সময়ে মুসলমানদের জন্য 'আশুরা'র দিবসে রোযা রাখা ফরয ছিল। পরবর্তীতে রমযানে রোযা রাখা ফরয করা হয় এবং আশুরার দিবসে রোযা রাখা ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়। আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেন-

فَلَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ صَامَهُ وَاَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا نَزَلَ رَمَضَانُ كَانَرَمَضَانُ الفَرِيضَةَ ، وَتُرِكَ عَاشُورَاءُ، فَكَانَ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ لَمْ يَصْبُهُ.

“যখন মহানবী সালাতে মদিনায় এলেন, তিনি আশুরার দিবসে রোযা রাখলেন এবং মানুষদেরকে এ দিবসে রোযা রাখার আদেশ দিলেন। অতঃপর যখন রমযানের রোযা ফরয হলো, তখন আশুরার রোযার ফরয রহিত করা হলো। কেউ ইচ্ছে করলে এ দিনে রোযা রাখতে পারে আবার কেউ নাও রাখতে পারে যদি সে ইচ্ছে করে।” 

মহানবী (সাঃ) রমযানের রোযা ফরয হওয়ার পরও 'আশুরার দিনে রোযা রাখতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী (সাঃ) অন্যান্য দিনের চেয়ে আশুরার দিনে রোযা রাখাকে অধিক গুরুত্ব দিতেন এবং রমযানে রোযা রাখাকে আশুরার দিনে রোযার চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিতেন।

সংক্ষেপে বললে, অসংখ্য সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, আশুরার দিবসে রোযা রাখা সুন্নত এবং মহানবী (সাঃ)-এর জন্য বিশেষ পুরস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন।

অপর একটি হাদীস অনুসারে, আশুরার দিবসে রোযার আগে অথবা পরে একটি রোযা মিলিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি আশুরার দিবসে রোযা রাখার ইচ্ছে করে তবে সে দুই দিন রোযা রাখবে ৯ এবং ১০ মুহাররম অথবা ১০ এবং ১১ মুহাররম। তবে নয় এবং দশই মহাররম রোযা পালনই অধিক নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় প্রমাণিত। এ অতিরিক্ত একটি রোযার কারণ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সমাহার উল্লেখ করেছেন। ইহুদিরা শুধু আশুরার একটি দিন রোযা রাখত এবং মহানবী (সাঃ) ইসলামের রীতিকে ইহুদিদের চেয়ে আলাদা করতে চেয়েছিলেন। সে কারণে, তিনি আশুরার দিবসের সাথে অতিরিক্ত একটি রোযা রাখতে মুসলমানদের উপদেশ দিয়েছেন। মুহাররম মাসের রোযা সংক্রান্ত আরো আলোচনা এ বইয়ের নফল রোজা অধ্যায়ে আছে।

ঐতিহাসিকভাবে আশুরার দিবসের আরো কিছু প্রথা রয়েছে। এসব প্রথার মধ্যে একটি হলো এ দিনে একজন মানুষ তার পরিবারের প্রতি দয়াশীল হবে এবং অপরাপর দিনের তুলনায় এ দিন পরিবারের সদস্যদের উন্নতমানের খাদ্য সরবরাহ করবে। সহীহ হাদীসের আলোকে এ প্রথা খুব বেশি প্রমাণিত না। তারপরও ইমাম বাইহাকী এবং ইবনে হিব্বান এ প্রথাকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন।

এতক্ষণ আশুরার ব্যাপারে যা আলোচিত হয়েছে তার সবই গ্রহণযোগ্য তথ্যসূত্র দ্বারা স্বীকৃত। তথাপি আশুরার ব্যাপারে সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে কিছু লোককথা এবং ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, ইসলামে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই । সেগুলোর মধ্যে খুব প্রচলিত কিছু কথা নিম্নরূপঃ

যে ব্যক্তি আশুরার দিনে গোসল করবে সে কখনই রোগাক্রান্ত হবে না এ কথা এবং এরূপ অন্যান্য কথা কিংবা মনগড়া কল্পনা পরিপূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং এগুলো পালন করার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই ।

কিছু মানুষ আশুরার দিনে একটা নির্দিষ্ট খাবার তৈরিকে সুন্নত বলে মনে করে থাকে। এ ধারণাও ইসলামের কোনো সহীহ তথ্যসূত্রে পাওয়া যায় না ।

কিছু মানুষ আশুরার দিনের মর্যাদার সাথে সিরিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতকে সম্পৃক্ত করেন। সন্দেহ নেই, সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাত আমাদের ইতিহাসে অত্যন্ত দুঃখজনক অধ্যায়। তথাপি আশুরা দিবসের মর্যাদার সাথে একে সম্পৃক্ত করা যায় না, কেননা, হুসাইন (রাঃ)-এর জন্মেরও পূর্বে মহানবী (সাঃ) আশুরা দিবসের মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন।

বরং সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ দিক হচ্ছে তিনি শহীদ হয়েছেন এ আশুরার দিনে ।

মুহাররম মাসের ব্যাপারে আরো একটা ভ্রান্ত ধারণা হলো এ মাস ‘অশুভ’, কেননা এ মাসে সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ)-কে হত্যা করা হয়েছে। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে কিছু মানুষ মুহাররম মাসে বিবাহ সম্পন্ন করা থেকে বিরত থাকেন। এটি আরো একটি মনগড়া কল্পনা যা কুরআন হাদীসের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। এরূপ কুসংস্কারকে মহানবী (সাঃ) পরিপূর্ণরূপে পরিহার করেছেন। যদি ইসলামের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে কোনো বিশেষ দিন অশুভ হয়, তাহলে, সারা বছরের ৩৬৫ দিনের খুব কম দিন হয়ত পাওয়া যাবে যেগুলো অশুভ নয়, কেননা বছরের প্রত্যেকটা দিনের সাথেই বড় বড় ইসলামী মনীষীদের মৃত্যুর ঘটনা জড়িত আছে। পবিত্র কুরআন এবং মহানবী (সাঃ)-এর সুন্নত আমাদেরকে এ সকল কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকতে আদেশ করে, সুতরাং এরূপ কুসংস্কারের প্রতি মনোযোগ দেয়ার কোনো অবকাশ নেই ।

সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ) স্মরণে বিলাপ এবং মার্সিয়া ক্রন্দন এ মাসের অপর একটি ভ্রান্ত প্রথা। একথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, কারবালার শাহাদাতের ঘটনা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাগুলোর একটি। কিন্তু মহানবী (সাঃ) মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন করে মৃত ব্যক্তির জন্য শোকপ্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। জাহেলী যুগে, মানুষেরা উচ্চৈঃস্বরে কেঁদে, কাপড় চাপড়িয়ে, গাল এবং বাহু চাপড়িয়ে তাদের মৃত নিকটাত্মীয় এবং বন্ধুদের জন্য শোক প্রকাশ করত। মহানবী (সাঃ) মুসলিমদেরকে এরূপ করা থেকে বিরত করেন এবং তাদেরকে

إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ - পড়ার মাধ্যমে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেন। এ ব্যাপারে বহু বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো-

لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ ، وَشَقَ الجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ

“যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে অথবা জাহেলিয়াতের ন্যায় বিলাপ করে সে আমার দলভুক্ত নয়।”

সকল গ্রহণযোগ্য আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, এসকল বিলাপ পরিপূর্ণরূপে হারাম। এমনকি সাইয়্যেদুনা হুসাইন তাঁর শাহাদাতের পূর্বে তাঁর প্রিয় বোন যায়নাব (রাঃ)-কে তাঁর এহেন মৃত্যুর কারণে বিলাপ করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন -

يا اخيَّةٌ إِنِّي أَقْسِمُ عَلَيْكَ ، لَا تَشْقَى عَلَى جَيْبًا، وَلَا يَخْشِي عَلَى وَجْهَا یکو ولا تد على عَلى بِالوَيْلِ والعبور إن هلكت.

প্রিয় বোন! আল্লাহর কসম! যদি আমি মৃত্যুবরণ করি, তোমরা জামা ছিঁড়বে না, গাল চাপড়াবে না, আমার জন্য কাউকে অভিশাপ দেবে না, নিজের মৃত্যুও কামনা করবে না।

এরূপ কুপ্রথা বন্ধের জন্য এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি চাই, যেখানে সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ), যেই সম্মানিত ব্যক্তিকে ঘিরে এ বিলাপ অনুষ্ঠিত হয়, তিনি নিজেই বিলাপ অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছেন? প্রত্যেক মুসলমানের উচিত মহানবী (রাঃ) এবং তাঁর দৌহিত্র সাইয়্যেদুনা হুসাইন (রাঃ) আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন তা মেনে চলা এবং এভাবে বিলাপ করা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখা ।

মুহাররম সংক্রান্ত সহীহ ও যয়ীফ হাদীস


সহীহ হাদীসের আলোকে এ মাসের ফযীলত বা মর্যাদা সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আমরা জানতে পারলাম-

প্রথমত, এ মাসটি বৎসরের চারটি ‘হারাম' মাসের অন্যতম। এ মাসগুলো ইসলামী শরিয়তে বিশেষভাবে সম্মানিত। এগুলোতে সধারণতঃ ঝগড়াঝাটি বা যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটি, তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এই নিষিদ্ধ মাসগুলোর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না ।”

এ মাসগুলো হলো : মুহাররম, রজব, যিলকাদ ও যিলহাজ্জ মাস।

দ্বিতীয়ত, এ মাসকে সহীহ হাদীসে ‘আল্লাহর মাস' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এ মাসের নফল সিয়াম সর্বোত্তম নফল সিয়াম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তৃতীয়ত, এ মাসের ১০ তারিখ ‘আশুরা'র দিনে সিয়াম পালনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। ‘আশুরা'র সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-

يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ .

“এ দিনের সিয়াম গত এক বৎসরের পাপ মার্জনা করে।”

চতুর্থত, সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, এ দিনে মহান আল্লাহ তার রাসূল মূসা (আ.) ও তার সঙ্গি বনী ইসরাঈলকে ফির'আউনের হাত থেকে উদ্ধার করেন এবং ফির'আউন ও তার সঙ্গিদেরকে ডুবিয়ে মারেন। ১০

সহীহ হাদীস থেকে মুহাররম মাস ও আশুরা সম্পর্কে শুধু এতটুকুই জানা যায়। পরবর্তীকালে অনেক বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী এক্ষেত্রে প্রচলিত হয়েছে । এখানে দুটি বিষয় লক্ষণীয়ঃ

প্রথম বিষয়ঃ এ দিনটিকে ইহুদীগণ সম্মান করত। এ কারণে ইহুদীদের মধ্যে এ দিনটির ব্যাপারে অনেক কল্প-কাহিনী প্রচলিত ছিল। পরবর্তী যুগে ইসরাঈলী রেওয়ায়াত হিসেবে সেগুলো মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। প্রথম যুগে মুসলিমগণ এগুলো সত্য বা মিথ্যা বলে বিশ্বাস না করে ইসরাঈলী কাহিনী হিসেবেই বলেছেন। পরবর্তী যুগে তা ‘হাদীসে’ পরিণত হয়েছে।

দ্বিতীয় বিষয়ঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইন্তিকালের অর্ধ শতাব্দী পরে ৬১ হিজরীর মুহাররম মাসের ১০তরিখে আশুরার দিনে তাঁর প্রিয়তম নাতি হুসাইন (রাঃ) কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। এ ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে চিরস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে। হুসাইন (রাঃ) পক্ষের ও বিপক্ষের অনেক বিবেকহীন দুর্বল ঈমান মানুষ 'আশুরার' বিষয়ে অনেক হাদীস বানিয়েছে।

কেউ দিনটিকে ‘শোক দিবস' হিসেবে এবং কেউ দিনটিকে “বিজয় দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য নানা প্রকারের কথা বানিয়েছেন। তবে মুহাদ্দীসগণের নিরীক্ষা পদ্ধতিতে এ সকল জালিয়াতি ধরা খুবই সহজ ছিল ।

মুহাররম ও আশুরা সম্পর্কে প্রচলিত অন্যান্য কথাবার্তাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারিঃ

প্রথমত, যে সকল ‘হাদীস' কোনো কোনো মুহাদ্দীস জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করলেও কেউ কেউ তা দুর্বল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং যে সকল হাদীস অত্যন্ত দুর্বল সনদে কোনো কোনো সাহাবী, তাবেয়ী থেকে তাঁর নিজের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বাহ্যত ইসরাঈলী বর্ণনার ভিত্তিতে তাঁরা এগুলো বলেছেন ।

দ্বিতীয়ত, সকল মুহাদ্দিস যে সকল হাদীসকে জাল ও ভিত্তিহীন বলে একমত পোষণ করেছেন 

জাল বা দুর্বল হাদীস এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণের মতামত



১. অত্যন্ত দুর্বলসূত্রে কোনো কোনো সাহাবী বা তাবেয়ী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এ দিনে আল্লাহ তা'আলা আদম (আ.)-এর তাওবা কবুল করেন।

২. অনুরূপভাবে অনির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এ দিনে নূহ (আ.) এর নৌকা তূর পাহাড়ের উপর থামে ।

৩. অনুরূপ অনির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এ দিনে ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন।

৪. মুহাররম মাস ও আশুরার দিনে দান-সদকার বিষয়ে যা কিছুই বলা হয় সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে এ বিষয়ে কিছুই বর্ণিত হয়নি। তবে অত্যন্ত দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য সূত্রে একজন সাহাবী কমলা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, আশুরার দিনে সিয়াম পালন করলে যেহেতু এক বৎসরের সাওয়াব পাওয়া যায়, সেহেতু এ দিনে দান করলেও এক বৎসরের দানের সাওয়াব পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া এ দিনে দানের বিষয়ে যা কিছু বলা হয়েছে সবকিছুই বাতিল ও ভিত্তিহীন কথা। ১১

৫. একটি হাদীসে বলা হয়েছে-

مَنْ وَشَعَ عَلَى عِيَالِهِ فِي يَوْمِ عَاشُوْرَاءَ وَشَعَ اللَّهُ فِي سَنَتِهِ كُلَّهَا .

“যে ব্যক্তি আশুরার দিনে তার পরিবারের জন্য প্রশস্তভাবে খরচ করবে আল্লাহ সারা বৎসরই প্রশস্ত রিযক প্রদান করবেন।”

হাদীসটি কয়েকটা সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেকটা সনদই অত্যন্ত দুর্বল। বিভিন্ন সনদের কারণে বাইহাকী, ইরাকী, সুয়ূতী প্রমুখ মুহাদ্দীস এ হাদীসকে জাল বলে গণ্য না করে 'দুর্বল' বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী হাদীসটিকে ‘অত্যন্ত আপত্তিকর ও খুবই দুর্বল' বলেছেন। অপরদিকে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইবনে তাইমিয়া প্রমুখ মুহাদ্দিস একে জাল বলে গণ্য করেছেন। তারা বলেন যে, প্রত্যেক সনদই অত্যন্ত দুর্বল হওয়ার ফলে একাধিক সনদে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া হাদীসটি সহীহ হাদীসের বিরোধী। সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইহুদীরা আশুরার দিনে উৎসব বা আনন্দ করবে, তোমরা তাদের বিরোধিতা করবে; এ দিনে সিয়াম পালন করবে এবং উৎসব বা আনন্দ করবে না। ১২

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে-

مَنْ اكْتَحَلَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ بِالْإِثْمَلِ لَمْ تَرْمَدُ عَيْنُهُ أَبَدًا ۔در

“যে ব্যক্তি আশুরার দিনে চোখে 'ইসমিদ' বা সুরমা ব্যবহার করবে কখনোই চোখ উঠবে না।” উপরের হাদীসটির মতই এ হাদীসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। প্রত্যেক সনদেই অত্যন্ত দুর্বল বা মিথ্যাবাদী রাবী রয়েছে। কোনো কোনো মুহাদ্দীস একাধিক সনদের কারণে হাদীসটিকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করলেও অধিকাংশ মুহাদ্দীস হাদীসটিকে জাল বা বানোয়াট হিসেবে গণ্য করেছেন। তারা বলেন, ইমাম হুসাইনের হত্যাকারীগণ আশুরার দিনে সুরমা মাখার বিদ'আতটি চালু করেন। এ কথাটি তাদেরই বানানো। কোনো দুর্বল রাবী বেখেয়ালে তা বর্ণনা করেছেন । ১৩

মুহাররম সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা


উপরের কথাগুলো কোনো কোনো মুহাদ্দিস জাল বলে গণ্য করলেও কেউ কেউ তা দুর্বল বলে গণ্য করেছেন। কিন্তু নিচের কথাগুলো সকল মুহাদ্দিস একবাক্যে জাল বলে স্বীকার করেছেন। এগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি: প্রথমত, মুহাররম বা আশুরার সিয়ামের ফযীলতের বিষয়ে জাল কথা, দ্বিতীয়ত, আশুরার দিনের বা রাতের জন্য বা মুহাররম মাসের জন্য বিশেষ সালাত ও তার ফযীলতের বিষয়ে জাল কথা এবং তৃতীয়ত, আশুরার দিনে অতীত ও ভবিষ্যতে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটবে বলে জাল কথা ।

মুহাররম বা আশুরার সিয়াম


আশুরার দিনে সিয়াম পালন করলে পূর্ববর্তী এক বৎসরের গুনাহের কাফফারা হবে বলে সহীহ হাদীসে আমরা দেখতে পেয়েছি। জালিয়াতগণ আরো অনেক কথা এ সম্পর্কে বানিয়েছে। প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃতি করছি-

“হাদীসে আছে- যে ব্যক্তি মুহাররম মাসে রোযা রাখবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে ৩০ দিন রোযা রাখার সমান ছাওয়াব দিবেন। আরও হাদীসে আছে- যে ব্যক্তি আশুরার দিনে একটি রোযা রাখবে সে দশ হাজার ফেরেশতার, দশ হাজার শহীদের ও দশ হাজার হাজীর ছাওয়াব পাবে ।

আরও হাদীসে আছে- যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে স্নেহ-পরবশ হয়ে কোনো এতিমের মাথায় হাত ঘুরাবে, আল্লাহ তা'আলা ঐ এতিমের মাথার প্রত্যেক চুলের পরিবর্তে তাকে বেহেশতের এক একটি 'দরজা' প্রদান করবেন। আর যে ব্যক্তি উক্ত তারিখের সন্ধ্যায় রোযাদারকে খানা খাওয়াবে বা ইফতার করাবে, সে ব্যক্তি সমস্ত উম্মতে মোহাম্মদীকে খানা খাওয়াবার ও ইফতার করবার ন্যায় ছাওয়াব পাবে।

রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখবে, সে ৬০ বৎসর রোযা নামায করার সমতুল্য ছাওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি ঐ তারিখে বিমার পোরছী করবে, সে সমস্ত আওলাদে আদমের বিমার পোরছী করার সমতুল্য ছাওয়াব পাবে।.... তার পরিবারের ফারাগতি অবস্থা হবে। ৪০ বৎসর গুনাহর কাফ্ফারা হয়ে যাবে।.... (হাদীস)”১৪ অনুরূপ আরেকটি মিথ্যা কথা হলো-

“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মুহাররম মাসের ১০ দিন রোযা রাখবে, সে ব্যক্তি যেন ১০ হাজার বৎসর যাবৎ দিনের বেলা রোজা রাখল এবং রাত্রিবেলা ইবাদতে জাগরিত থাকল।... মুহাররম মাসে ইবাদতকারী ব্যক্তি যেন কদরের রাত্রির ইবাদতের ফযীলত লাভ করল ।... তোমরা আল্লাহ তা'আলার পছন্দনীয় মাস মুহাররম মাসের সম্মান করিও । যে ব্যক্তি মুহাররম মাসের সম্মান করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে জান্নাতের মধ্যে সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নামের আযাব হতে বাঁচিয়ে রাখবেন... মুহাররমের ১০ তারিখে রোজা রাখা আদম (আ.) ও অন্যান্য নবীদের ওপর ফরজ ছিল। এ দিবসে ২০০০ নবী জন্মগ্রহণ করেছেন এবং ২০০০ নবীর দু'আ কবুল করা হয়েছে....। ১৫

মুহাদ্দীসগণ একমত যে, এগুলো সবই বানোয়াট কথা ও জাল হাদীস। ১৬ 

মুহাররম মাসের সালাত


মুহাররম মাসের কোনো দিবসে বা রাত্রে এবং আশুরার দিবসে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের কোনো প্রকার নির্দেশনা বা উৎসাহ কোনো হাদীসে বর্ণিত হয় নি। এ বিষয়ক সকল কথাই বানোয়াট। আমাদের দেশে প্রচলিত কোনো কোনো পুস্তকে মুহাররম মাসের ১ম তারিখে দুই রাকা'আত সালাত আদায় করে বিশেষ ফযীলতের বিবরণ দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।"  ১৭

আশুরার দিনে বা রাতে বিশেষ সালাত


আশুরার দিনে সিয়াম পালনের উৎসাহ দেয়া হলেও হাদীস শরীফে আশুরার দিবসে বা রাতে বিশেষ সালাত আদায়ের বিধান দেয়া হয় নি। তবে জালিয়াতগণ অনেক কথা বানিয়েছে। যেমন, যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে... অথবা আশুরার রাত্রিতে এত রাকাত সালাত অমুক অমুক সূরা এতবার পাঠ করে আদায় করবে... সে এত এত পুরস্কার লাভ করবে। সরলপ্রাণ মুসলিমদের মন জয় করার জন্য জালিয়াতগণ এ সকল কথা বানিয়েছে, যা অনেক সময় সরলপ্রাণ আলেম ও বুযুর্গকেও ধোঁকাগ্রস্ত করেছে। ১৮

আশুরায় অতীত ও ভবিষ্যত ঘটনাবলির বানোয়াট ফিরিস্তি


মিথ্যাবাদীরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নামে জালিয়াতি করে বলেছে-

আশুরার দিনে আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।

এ দিনে তিনি পাহাড় পর্বত, নদ নদী সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি লাওহে মাহফুজ সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি আরশ সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি আরশের উপরে সমাসীন হয়েছেন। এ দিনে তিনি কুরসী সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি জিবরাঈল (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি ফিরিশতাগণকে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এ দিনে তিনি আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন। এ দিনে তিনি ইদরীস (আ.) কে আসমানে উঠিয়ে নেন। এ দিনে তিনি নূহ (আ.)-কে নৌকা থেকে বের করেন। এ দিনে তিনি দাউদ (আ.) এর তাওবা কবুল করেছেন। এ দিনে তিনি সোলাইমান (আ.)-কে রাজত্ব প্রদান করেছেন। এ দিনে তিনি আইউব (আ.)-এর বিপদ-মসিবত দূর করেন। এ দিনে তিনি তাওরাত নাযিল করেন। এ দিনে ইবরাহীম (আ.) জন্মগ্রহণ করেন ও খলীল উপাধি লাভ করেন। এ দিনে ইবরাহীম (আ.) নমরূদের অগ্নিকুন্ডু থেকে রক্ষা পান। এ দিনে ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানী করা হয়েছিল। এ দিনে ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে বের হন। এ দিনে আল্লাহ ইউসূফকে (আ.) জেলখানা থেকে বের করেন। এ দিনে ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান। এ দিনে ইয়াকুব (আ.) ইউসূফ (আ.) এর সাথে সম্মিলিত হন। এ দিনে মুহাম্মদ (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন।

কেউ কেউ বানিয়েছে: মুহররাম এর দুই তারিখে নূহ (আ.) প্লাবন হতে মুক্তি পেয়েছেন, ৩ তারিখে ইদরীস (আ.)-কে আসমানে উঠানো হয়েছে, ৪ তারিখে ইব্রাহীম (আ.)-কে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে ... ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এরূপ অগণিত ঘটনা এ মাসে বা এ দিনে ঘটেছে বা ঘটবে বলে উল্লেখ করেছে জালিয়াতরা তাদের এ কল্প কাহিনীতে। মোটকথা হলো, আশুরার দিনে মূসা (আ.) ও তাঁর সাথীদের মুক্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো ঘটনা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। আদমের (আ.) তাওবা কবুল, নূহ (আ.) এর নৌকা জুদি পর্বতের ওপর থামা। ঈসা (আ.) জন্ম গ্রহণ করার কথা অনির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো কোনো সাহাবী-তাবেয়ী থেকে বর্ণিত। আশুরা বা মুহররাম সম্পর্কে আর যা কিছু বলা হয় সবই মিথ্যা ও বাতিল কথা। দুঃখজনক হলো,আমাদের দেশে মুহররাম বা আশুরা বিষয়ক বই পুস্তকে, আলোচনা ও ওয়ায়েযে এ সমস্ত ভিত্তিহীন কথা বার্তা উল্লেখ করা হয়। ১৯


তথ্যসূত্র
১. সূরা তাওবা, আয়াত নং : ৩৬
২. সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ৩১৯৭। সহীহ মুসলিম নং১৬৭৯
৩. সহীহ মুসলিম-১১৬৩, আবু দাউদ-২৪২৯, তিরমিযী-৪৩৮, বায়হাকী-১৭৪২নাসিরুদ্দীন আলবানী সহীহ বলেছেন।
৪. সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯৪৩; সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১১৩০।
৫. সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ৪৫০৪ 
৬. সহীহ বুখারী, হাদীস নং : ১২৯৭
৭. কামিলি ইবনে আসির, খ. ৪, পৃ. ২৪।
৮. সূরা ৯ : তাওবা, আয়াত, ৩৬।
৯. মুসলিম, আস- -সহীহ-১১৬২।
১০. বুখারী, আস-সহীহ ২/৭০৪, ৩/১২৪৪, মুসলিম, আস-সহীহ ২/৭৯৬।
১১. ইবনু রাজাব,লাতাইফ ১/৭৮; আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার পৃ. ৯৫/৯৬।
১২. ইবনু তাইমিয়া, আহাদীসুল কুস্সাস, পৃ. ৭৯, ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু'আত ২/১১৩-১১৭; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১০৯-২১৩: সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৪২৭; আল-যারকশী, আত- তাযকিরা ৩৪, ১১৮; ইবনু ইরাক, তানযীহ ২/১৫০-১৫৭; ইবনু রাজাব, লাতাইফ ১/৭৯; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৪৪ ২৪৫; শাওকানী, আল ফাওয়াইদ ১/১৩২-১৩৩; আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার পৃ. ১০০ / ১০২।
১৩. ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু'আত ২/১১৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/২১১: সাখাবী, আল-মাকাসিদ পৃ. ৪০১; ইবনু ইরাক, তানযীহ ২/১৫৭; ইবনু রাজাব, লাতাইফ ১/৭৯: মোল্লা কারী, আল- আসরার, পৃ.২২২; মাসনু, পৃ. ১৪১; শাওকানী, আল ফাওয়াইদ ১/১৩১-১৩২: আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার প. ১০০ / ১০২।
১৪. মাও. গোলাম রহমান, মকছুল মো'মেনীন, পৃ.৪৩০-৪৩১, পুনশ্চ: মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফজীলত, পৃ. ১৩; অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল পৃ. ২৯৮-৩০০ ।
১৫. মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফজীলত, পৃ. ১৩ ।
১৬. ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু'আত ২/১১২-১১৭; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১০৮-১০৯; ইবনু ইরাক, তানযীহ ২/১৪৯-১৫১; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ২৯৪; শাওকানী আল ফাওয়াইদ ১/১২৯-১৩০; আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার পৃ. ৯৪-৯৫ ।
১৭. মুফতি হাবীব ছামদানী, বার চান্দের ফজীলত, পৃ. ১১-১২; অধ্যাপিকা কামরুন নেসা দুলাল পৃ.
২৯৮ ।
১৮. ইবনুল জাওযী, আল-মাওদু'আত ২/৪৫-৪৬; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/৫৪; ইবনু ইরাক, তানযীহ ২/৮৯; শাওকানী আল ফাওয়াইদ ১/৭৩; আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার পৃ. ৯০, ১১০-১১১।
১৯. ইবনুল জাওযী, আল-মাওদূ'আত ২/১১২-১১৭; ইবনুল কাইয়িম, আল-মানার পৃ. ৫২; যাহাবী, মীযানুল ই'তিদাল ২/১৯০; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ২/১৬৯; সুয়ূতী, আল-লাআলী ২/১০৮- ১০৯; ইবনু ইরাক, তানযীহ ২/১৪৯; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ৩০০; আব্দুল হাই লাখনবী,আল আসরার, পৃ. ৯৪-৯৭; দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২৭৭-২৭৮; আজলূনী, কাশফুলখাফা ২/২৫৭। 




****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url