আল আকসা মসজিদের ইতিকথা | ইসরাইল রাষ্ট্রের ইতিহাস | ইহুদী জাতীয়তাবাদ | ইহুদীদের ধর্মীয় চিন্তাধারা (আল-আকসা-১o)

আল আকসা মসজিদের ইতিকথা শীর্ষক এই প্রবন্ধগুলো এ এন এম সিরাজুল ইসলামের লেখা “আল আকসা মসজিদের ইতিকথা” গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুন্দর তথ্যবহুল এই গ্রন্থটি বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত।


ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ইতিহাস

১৯৪৮ খৃঃ ১৫ই মে মুসলিম ফিলিস্তিনে বিষফোঁড়া ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ইহুদীরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিল এবং তাদের কোন সুনির্দিষ্ট জাতীয় বাসস্থান বা দেশ ছিল না। যে দেশে তারা বাস করতো, তারা সেই দেশেরই নাগরিক ছিল।

কিন্তু ১৮৯৭ খৃঃ ইহুদী নেতা ও দার্শনিক থিওডোর হাজ্জল এক আন্তর্জাতিক ইহুদী সম্মেলন আহ্বান করেন। তাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫০ জন ইহুদী পণ্ডিত, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ অংশ নেন। সুইজারল্যান্ডের বেসলে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে ইহুদীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইহুদীরা ফরাসী সেনাপতি নেপোলিয়ান বোনাপার্টের মাধ্যমে প্রথমে সাইপ্রাস, ল্যাটিন আমেরিকা, উগান্ডা কিংবা দক্ষিণ সুদানে একটি ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে তারা সফল হতে না পেরে পরে ১৯০৫ খৃঃ বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেসের ২য় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মুতাবিক ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়। তারা প্রথমে তুর্কি সুলতানের অধীন ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ভূমি কেনার প্রস্তাব করে। কিন্তু সুলতান আবদুল হামিদ এক বিঘত জায়গা দিতেও অস্বীকার করায় তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।

বৃটেন ছিল তদানীন্তন পরাশক্তি। তখন ইহুদীরা সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল বৃটিশ সাম্রাজ্যের দ্বারস্থ হয়। বৃটেন ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ওয়াইজম্যান তার স্মারকে উল্লেখ করেছেন, বেলফোর ছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট খৃস্টান। তিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট তাওরাতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইহুদীরা পুনরায় ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন করবে। তিনি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহর কাছে এর উত্তম বিনিময়ের আশা করেছিলেন। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তখন বৃটিশ শক্তি ভংগুর অবস্থার শিকার। তাই ইহুদীরা তাদের কেন্দ্ৰ বৃটেন থেকে আমেরিকায় পরিবর্তন করে এবং মার্কিন প্রশাসন, প্রচারযন্ত্র অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর ইহুদীরাও মার্কিন ঘাড়ে সওয়ার হয়ে বসে এবং মার্কিন কংগ্রেস সিনেট ও হোয়াইট হাউজের প্রশাসনে জ্বিনের মত প্রভাব বিস্তার করে। তারা নিজেদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সকল কাজ আদায় করিয়ে নেয় এবং ইহুদীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোন চিন্তা ও পরিকল্পনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বহু দূরে রাখে। এমন কি ইহুদীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রচার মাধ্যমের সমর্থন ছাড়া কোন দল বা ব্যক্তির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে কিংবা সিনেটের নির্বাচনে জয়লাভ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

ইসরাইল নামক এই বিষাক্ত সাপটিকে যুক্তরাষ্ট্র দুধ-কলা দিয়ে পুষে যাচ্ছে। ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যে কোন অন্যায় করে বসতে পারে এবং দুনিয়ার আন্তর্জাতিক মতামতকে উপেক্ষা করতে পারে। এখনও আন্তর্জাতিক ইহুদী সংস্থা বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলোকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তারা ঐ সকল দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রচারমাধ্যম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বৃটেন ও চীনে তাদের এই অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। পক্ষান্তরে মুসলমানরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বেখবর ও উদাসীন।

ইহুদী জাতি বা ইহুদীবাদ

ইহুদীবাদ হচ্ছে হিব্রুদের ধর্ম। হযরত ইয়াকুবের বংশদরদের পরবর্তীতে বনি ইসরাইল বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-কে তাওরাত দিয়ে পাঠিয়েছেন। বনি ইসরাইল পরবর্তীতে ইহুদী জাতি নামে পরিচিত হয়। ইয়াহুদা' নামক রাষ্ট্রের নামানুসারে বনি ইসরাইল ‘ইহুদী' নামে পরিচিতি লাভ করে ।

ব্যাবিলনের শাসক বখতে নসর জেরুজালেম, হাইকালে সুলাইমানী এবং তাওরাত ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ইহুদীরা ব্যাবিলনের উপর বিজয় লাভকারী পারস্য সম্রাট আরতাখ সাসনার কাছে ওজাইরের নেতৃত্বে ব্যাবিলনে বন্দী ইহুদীদেরকে জেরুজালেম ফেরত পাঠানোর আবেদন জানায় । মূল তাওরাত ধ্বংস হওয়ার পর ওজাইর ব্যাবিলনে বসে তাওরাত পুনরায় লিপিবদ্ধ করেন। ফলে, মূল তাওরাত আর সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। ব্যাবিলনের কিসসা-কাহিনী ও কিংবদন্ত তাওরাতের মূলন্ত প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ৷

গোস্তাব লোভন তাঁর 'প্রাথমিক সভ্যতায় ইহুদী' নামক বইতে লিখেছেন, পবিত্র তাওরাত গ্রন্থের কাহিনীসমূহ কালদানী কিংবদন্তী থেকে সংযোজন করা হয়েছে। এগুলো ইতিপূর্বে আশুরীয় গ্রন্থেও লিপিবদ্ধ ছিল। কালদানী কাহিনীগুলো কখনও বাস্তবে সংঘটিত হয়নি। এগুলো হচ্ছে কাল্পনিক। কিন্তু পরবর্তীতে ইসরাইলীরা সেই কাল্পনিক ঘটনাগুলোকে সত্য বলে মনে করতে থাকে । এর মধ্যে শামসুন হিরক্লিয়াস ইহুদীর কাহিনী অন্যতম । ২৭

ওজাইর মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী ইহুদীদেরসহ পুনঃলিপিবদ্ধ তাওরাত নিয়ে জেরুজালেম ফিরে আসেন। মূসা (আ)-এর পর ধ্বংসকৃত তাওরাত পুনঃ লিপিবদ্ধ করায় এবং জেরুজালেমে পুনরায় হাইকাল নির্মাণ করার কারণে ইহুদরীরা তাঁকে ‘আল্লাহর ছেলে' বলে অভিহিত করে। তারা তাকে আজরা বলে ডাকে। তিনি একজন নেকলোক ছিলেন।

ইহুদীদের ধর্মীয় চিন্তাধারা

আল্লাহকে মা'বুদ মানা সত্ত্বেও তারা গো-বাছুরের পূজা করে। তারা তামার তৈরি সাপকেও পবিত্র মনে করে এবং প্রাচীন ইহুদীরা তার পূজা করত। কেননা, হযরত মূসার হাতের লাঠি আল্লাহর কুদরতে সাপ হয়ে গিয়েছিল। তাদের মা'বুদের নাম হচ্ছে 'ইয়াহওয়া' বা যিহোভা। সেই ইলাহ ভুল-ভ্রান্তি করে এবং লজ্জিত হয়। তিনি শুধু বনি ইসরাইলের ইলাহ, অন্যদের নয়।

ইহুদীরা মূলত তাওহীদপন্থী ও এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। কিন্তু তাওরাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ওজাইর তা লোকদের কাছে শুনে শুনে পুনরায় লিপিবদ্ধ করায় তারা তাকে আল্লাহর সন্তান বলে অভিহিত করে শিরকে লিপ্ত হয়। তাদের মতে, ইবরাহীম (আ) ইসমাঈলকে নয়, ইসহাককেই জবেহ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন।

তাদের ধর্মে পুনরুত্থান, অনন্ত জীবন, সওয়াব ও শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোন বক্তব্য নেই। তাদের মতে, শাস্তি ও পুরস্কার এই দুনিয়াতেই হবে। সওয়াব হচ্ছে বিজয় এবং শাস্তি হচ্ছে লোকসান, অপমান ও গোলামী ।

শনিবার মাছ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় আল্লাহ সংশ্লিষ্ট পাপীদেরকে বানর বানিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাদের একটি পবিত্র বাক্স আছে, তাতে আগে মহামূল্যবান জিনিস, দলীল ও পবিত্র কিতাব হেফাজত করা হত ।

হযরত সুলাইমান (আ) ইবাদতের উদ্দেশ্যে যে ঘর তৈরি করেছেন, তা তাদের কাছে পবিত্র এবং এটাকে তারা হাইকালে সুলাইমানী বলে। ইহুদীরা মনে করে, তারা আল্লাহর নির্বাচিত মনোনীত বিশেষ জাতি। ইহুদীদের রূহ আল্লাহর রূহের অংশ বিশেষ । মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ইহুদী ও অ-ইহুদীর পার্থক্য। অর্থাৎ ইহুদীরা মানুষ, আর অন্যরা পশু সমতুল্য।

ইহুদী জাতির পক্ষে অন্য জাতির সম্পদ চুরি-ডাকাতি করা ও তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে সুদ খাওয়া বৈধ। তাই তারা বিশ্বব্যাপী সুদী কারবারে লিপ্ত। তারা অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে এবং অ-ইহুদীদের সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধ্য নয় । কেননা, অইহুদীরা হচ্ছে কুকুর, শুকর ও পশুর মত । তাদের সাথে নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষার কোন প্রয়োজন নেই ।

হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদের বক্তব্য হল, খৃস্টান ঈসা দোজখের আগুন ও গ্যাসের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাঁর মা মরিয়ম বান্দারা নামক জনৈক সৈনিকের দ্বারা গর্ভধারণ করে ঈসাকে অবৈধভাবে জন্ম দিয়েছে। তাই খৃস্টানদের গীর্জা আবর্জনা সমতুল্য এবং তাদের ধর্মীয় বক্তারা হচ্ছে ঘেউ ঘেউকারী কুকুর।

তাদের মতে, ইয়াকুব (আ) আল্লাহর সাথে ধস্তাধস্তি করেছিলেন এবং নৃত (আ) মদপান করেছিলেন ও নিজের দুই কন্যার সাথে যেনা করেছিলেন। এছাড়াও আল্লাহর কাছে দাউদ (আ) ছিলেন মন্দ ব্যক্তি । (নাউজুবিল্লাহ) বিয়ের পরে স্ত্রীকে স্বামীর মালিকানাধীন বিবেচনা করা হয় এবং স্ত্রীর সকল সম্পদের উপর স্বামীর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরে তা নিয়ে বহু বিতর্কের পর ঠিক হয় যে, স্ত্রী সম্পদের মালিকানা লাভ করবে বটে, তবে লাভের মালিকানা থাকবে স্বামীর ।

বিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর বিয়ে না করলে অভিশাপের যোগ্য হয়। ইহুদী ধর্মে একাধিক বিয়ে বৈধ এবং তাতে কোন সীমিত সংখ্যা নেই। তবে তাদের মধ্যে সূফীবাদীরা ৪ স্ত্রী পর্যন্ত সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দিলেও অন্যরা ঐ সংখ্যা সীমাহীন রেখেছে।

ইহুদীদের মধ্যে ৮টি দল

ইহুদীদের মধ্যে ৮টি দল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে :
১. চরমপন্থী বা কট্টরপন্থীঃ তারা মূলতঃ সূফী ও চিরকুমার।
২. সেদকীঃ তারা পুনরুত্থান, মিজান, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, ঈসা ও তালমুদকে অস্বীকার করে ।
৩. সাম্প্রদায়িকঃ তারা কট্টরপন্থীদের অনুরূপ ও ক্ষমার বিরোধী।
৪. ইহুদী ওয়ায়েজ বা বক্তাঃ তারা ওয়াজ-নসীহতকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
৫. কোরআউনঃ তারা তাওরাত ছাড়া অন্য কোন কিছু গ্রহণ করে না এবং তালমুদকেও অস্বীকার করে।
৬. সামেরী সম্প্রদায়ঃ তারা মূসা, হারুন এবং ইউশা বিন নূনকে ছাড়া আর কাউকে নবী হিসেবে স্বীকার করে না।
৭. সাবাঈ দলঃ তারা আবদুল্লাহ বিন সাবার অনুসারী। আবদুল্লাহ বিন সাবা ইসলামকে আভ্যন্তরীণ দিক থেকে ধ্বংস করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা সৃষ্টি করে। যার ফলে, হযরত উসমানকে শহীদ এবং ইসলামী খেলাফতকে ধ্বংস করা সহজ হয়।
৮. হাখামঃ তারা হচ্ছে সর্বোচ্চ ইহুদী আলেম। তারা ধর্মীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে ।

অবিকৃত তাওরাতের অনুসারী সঠিক হিব্রু ইহুদীর কোন অস্তিত্ব কোথাও নেই । বিকৃত তাওরাতের অনুসারী হিসেবে তাদের ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসও বিকৃত রুচিসম্পন্ন।

ইহুদীদের ধর্মীয় আচার

ইসরাইলের মুক্তি সপ্তাহ

ইহুদীদের ধর্মীয় দিবসের মধ্যে রয়েছে ১৪-১২ এপ্রিল, ফেরাউনের যুগে মিসর থেকে বনি ইসরাইলের মুক্তি সপ্তাহ পালন। সেদিন মদবিহীন রুটি খেতে হয়। 

ক্ষমা দিবস

ইহুদী সালের ১০ম মাসের প্রথম ৯ দিন রোযা, ইবাদত ও তাওবাহ করার পর ১০ম দিবস হচ্ছে, ক্ষমা দিবস। সেদিন খানা-পিনা বন্ধ রেখে পুরো দিন ইবাদতে কাটিয়ে দিতে হবে। ফলে, অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং এভাবে নতুন বছরকে স্বাগতম জানানো হয় ।

বাইতুল মাকদিস যেয়ারত

প্রতিবছর প্রত্যেক ইহুদীকে ২ বার বাইতুল মাকদিস যেয়ারতে যেতে হবে। এবং এটা অত্যন্ত জরুরী।

চাঁদ দেখে আনন্দ

প্রত্যেক চান্দ্রমাসের নতুন চাঁদ দেখে আনন্দ প্রকাশ করা। তারা বাইতুল মাকদিসে বিউগল বাজিয়ে এবং আগুন জ্বালিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে ।

ইহুদীদের ছুটির দিন

শনিবার দিন ছুটির দিন। সেদিন কোন কাজ করা যাবে না। তাদের মতে, আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পর শনিবার দিন বিশ্রাম গ্রহণ করেন। তিনি নিজ আরশে পিঠের উপর শুয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে বিশ্রাম করেন। ২৮

ইহুদীদের চরিত্র

ইহুদীদের শত্রুতা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবিলার জন্য তাদের মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও অন্যান্য চারিত্রিক গুণাবলী জানা প্রয়োজন। আল্লাহ কুরআনে ইহুদীদের ঐ সকল গুণাবলী তুলে ধরেছেন। এখন আমরা কুরআনে বর্ণিত ইহুদী চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করবো ।

১. কাপুরুষতাঃ ইহুদীরা ভীরু ও কাপুরুষ । আল্লাহ বলেন :

لا يَقَاتِلُوْ نَكُمْ جَمِيعًا إِلا فِي قُرَى مُحَصَّنَةٍ أَوْ مِنْ وَرَاءِ جُدُرِ

অর্থ : 'তারা সবাই মিলেও তোমাদের সাথে লড়াই করবে না হাঁ, সুরক্ষিত জনপদ কিংবা দুর্গের দেয়ালের আড় থেকেই লড়াই করার সাহস করবে'। (সূরা হাশর-১৪) তাই বীরত্ব সম্পর্কে ইহুদী দাবী মুসলমানদের কাছে অর্থহীন। 

২. চুক্তি ভঙ্গ করাঃ ইহুদীরা সর্বদা নবী-রাসূল এবং আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এখন তারা যে কোন চুক্তি ও সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। স্বার্থপরতা তাদের বৈশিষ্ট্য। তাই তারা জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবাবলী প্রত্যাখ্যান করে চলছে। আল্লাহ বলেন,

فَبِمَا نَقْضِهِمْ مَيْثَاقَهُمْ وَ كُفْرِهِمْ بِايَاتِ اللهِ وَقَتْلِهِمُ الأَنْبِيَاءَ بِغَيْرِ حَق

অর্থ : 'তাদের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করার কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে গোমরাহীর সীল মেরে দিয়েছেন'। (সূরা নিসা)
.
৩. পাশবিকতাঃ উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর প্রিয় নবীদেরকে হত্যা করার জঘন্য তৎপরতা চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তাদের স্বার্থের পরিপন্থী যে কোন লোককে হত্যা করা সম্ভব। তারা ২ জন নবীকে হত্যা করেছে এবং আরেকজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়। তাদের এই পৈশাচিক মনোভাব এখনও বিদ্যমান।

৪. অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টিঃ ইহুদীরা পৃথিবীর দেশে দেশে অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টি করে। মুসলমান ও খৃস্টানদের মধ্যে ঢুকে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যায় নিক্ষেপ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বলেনঃ

كُلَّمَا أَوْقَدُوا نَارًا للحَرْبِ أَطْفَاهَا اللهُ ويَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا واللهُ يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ

অর্থ : ‘যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা যমীনে ফেতনা-ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না।' (আল মায়িদা)

৫. অন্য ধর্মের প্রতি অসহনশীলতাঃ তারা যেহেতু নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর নির্বাচিত উত্তম মানুষ বলে মনে করে, সেহেতু অন্য ধর্ম ও আদর্শের প্রতি তাদের অসহনশীলতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক । আল্লাহ বলেন,

لَنْ تَرْضَى عَنْكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ

অর্থঃ ‘ইহুদী ও খৃস্টানরা সে পর্যন্ত আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্ম ও মিল্লাতের অনুসরণ করেন' ।

৬. মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতাঃ ইহুদীরা মুসলমানদের সর্বপ্রধান শত্রু মনে করে। পক্ষান্তরে, অন্যদের সাথে তাদের কিছুটা মিত্রতা গড়ে ওঠে। আল্লাহ বলেনঃ


لتجدنْ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةٌ لِلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا

অর্থ : 'হে নবী, আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলমানদের কঠোর শত্রু হিসেবে দেখতে পাবেন।' (আল মায়িদা : ৮২)

৭. আল্লাহর প্রতি কলংক আরোপঃ তাদের নির্যাতন, ষড়যন্ত্র ও ফাসাদ থেকে মানুষতো দূরে থাক, স্বয়ং আল্লাহও মুক্ত নন । আল্লাহ বলেনঃ

وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللهِ مَغلُولَةٌ غُلَتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ

(সূরা আল মায়েদা)
অর্থ : ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বদ্ধ। আসলে তাদের হাতই বদ্ধ; তাদের এই বক্তব্যের জন্য তাদের উপর অভিশাপ। বরং আল্লাহর হাত প্রসারিত ও উন্মুক্ত। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।'

ইহুদী জাতীয়তাবাদ

ইসলাম সকল ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার করে। তাই ইসলামের সাথে ইহুদী ধর্মের কোন সংঘাত নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে, ইহুদী ধর্ম বিকৃত। বিকৃত না হলে তারা শেষ নবী মুহাম্মদ (সা)-এর অনুসারী হয়ে মুসলমান হয়ে যেত । মুসলমানদের সংঘাত হচ্ছে, সাহ্ইউনী বা যায়নবাদী ইহুদী জাতীয়বাদের সাথে। পূর্ব জেরুজালেমের সাহইউন পাহাড়ের নামানুসারে এই জাতীয়তাবাদের নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজীতে এটাকে Zionism বলে এবং বাংলায় যায়নবাদ' বলে।

ইহুদীবাদ ও যায়নবাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ইহুদী ধর্মের অনুসারীকে ইহুদী বলা হয়। কিন্তু যায়নবাদের জন্য ইহুদীবাদের অনুসরণ জরুরী নয়। যায়নবাদে বিশ্বাসী অন্য ধর্মের অনুসারীও যায়নবাদী হতে পারে। যায়নবাদের মূলকথা হল, সাহ্ইউন পাহাড়ে পুনঃ প্রত্যাবর্তন। তারা ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। ১৮৯৭ খৃঃ থিওডোর হার্জল বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেস গঠন করে সর্বপ্রথম এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। বহু অ-ইহুদী যায়নবাদে বিশ্বাসী। এর মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, বেলফোর ঘোষণাদানকারী জেমস আর্থার বেলফোর এবং শান্তির মধ্যস্থতাকারী সুইস দূত কাউন্ট বার্নাদোত রয়েছেন। তারা খৃস্টান হয়েও যায়নবাদ বিশ্বাস করতেন। পরবর্তীতে ক্রিশ্চিয়ান যায়নবাদের কারণে আরো বহু লোক যায়নবাদী হয়ে গেছে : যায়নবাদকে তিনভাগে ভাগ করা যায় ।

১. রাজনৈতিক যায়নবাদঃ এই নীতির আলোকে মিসরের নীলনদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত ইহুদীদের বৃহত্তর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তাদের মতে, অন্যান্য জাতির সাথে ইহুদীদের বাস করা ঠিক নয়। তাদের জন্য বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।

২. ধর্মীয় যায়নবাদঃ এটি তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হচ্ছে, ক. আল্লাহ খ. আল্লাহর মনোনীত জাতি ও গ. ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এই তিন মূলনীতির উপর যায়নবাদীরা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছে।

৩. আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক যায়নবাদঃ এর মূলে রয়েছে ইহুদীদের মুক্তির শ্লোগান। তারা বিশ্বাস করে, বনি ইসরাইলে এমন একজন নবীর আগমন হবে যিনি তাদেরকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে এক জায়গায় সমবেত করবেন। এটা তাদের একটা মিথ্যা ধারণা ছাড়া আর কিছু নয় ।

যায়নাবাদকে শুধু ইহুদী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বলাই ঠিক বরং তাকে বর্ণবাদও (Racism) বলা হয়। তারা কোন অ-ইহুদীর অস্তিত্ব সহ্য করতে রাজী নয়। জেরুসালেমকে মুসলমানদের হাত থেকে উদ্ধার করে তাতে ইহুদী- খৃষ্টান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

তথ্যসূত্রঃ
২৭. উরুশ লিম-কাতিলাতুল আম্বিয়া, মাহমুদ শারকাওয়ী।
২৮. আল-মাওসুআতুল মুইয়াসারাহ ফিল আদইয়ান ওয়াল মাজাহেব আল- মুয়াসেরা, প্রকাশক WAMY, রিয়াদ, প্রকাশকাল : ১৯৮৯।


>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url