ইসরাইলের নৃশংসতার কারণে ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী কৌতূহল বাড়ছে | ইয়েমেন উপকুলে জাহাজ চলাচল স্থগিত করলো বৃহৎ ৫টি দেশ

ইসরাইলের নৃশংসতার কারণে ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী কৌতূহল বাড়ছে



গাজায় এমন কোনো স্থান নেই যেখানে কোনো মানুষ নিরাপত্তাবোধ করতে পারে। হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র, মসজিদ, গির্জা, স্কুল-কলেজ সব কিছুতে হামলা চালিয়েছে বর্বর ইসরায়েল এবং প্রতিনিয়তই হামলা চালানো হচ্ছে।

এখনও যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রাণটাও যেকোনো সময় কেড়ে নিতে পারে ঘাতক ইসরাইলের বুলেট বা বোমা। তবু গাজার মানুষগুলো অলৌকিক শক্তিতে শক্তিমান। গাজাবাসীদের এই শক্তি, এই মনোবল বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে। 

এক মার্কিন তরুণীর কুরআনের প্রতি আগ্রহ

সম্প্রতি এমনই এক মার্কিন তরুণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের কৌতূহলের কথা জানিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী গাজা পরিস্থিতি নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, 'আমি একজন নারীর ভিডিও দেখেছি। ঐ নারী তার নিজের সন্তানের লাশ কোলে নিয়ে বলছিলেন (হে আল্লাহ) আমরা তোমার কাছ থেকে এসেছি, তোমার কাছেই ফিরে যাব। এ সময় এই নারী আল্লাহর প্রতি ব্যাপক সন্তুষ্টি প্রকাশ করছিলেন। আমি নিজে নিজে বলছিলাম এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে পারব না। মনের ভেতর যে প্রশ্নটা উকি দিল তাহলো কীভাবে ঈমানকে এতটা মজবুত করা সম্ভব? এরপর আমি (মুসলমানদের) কুরআন পড়ার প্রতি আগ্রহী হই।'

গাজা যুদ্ধের কারণে পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা এই তরুণী আরও বলেছেন, 'একজন মা হিসেবে সন্তানের লাশ বুকে নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করার মতো শক্তি ও ক্ষমতা আমার মধ্যে নেই। আমার কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনি মায়েরা তা পারছেন। তারা সন্তানের লাশ কোলে নিয়ে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করছেন। ফিলিস্তিনি মায়েরা কুরআন নিয়ে কথা বলছিল। আমি দেখতে চাইলাম তারা যে কুরআন থেকে এত শক্তি পেয়েছে, সেই কুরআনে কী লেখা আছে। এই কুরআন তাদেরকে কীভাবে এত দৃঢ়তা দিয়েছে। এ কারণে আমি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরও কুরআন হাতে নিলাম এবং কুরআন খুললাম। প্রথম বাক্য পড়েই বাস্তবিক অর্থেই আমি বিস্মিত হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে কুরআন সরাসরি আমার সাথে কথা বলছে। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আল্লাহ কুরআনের বাক্যগুলোর মাধ্যমে আমার সঙ্গে কথা বলছে। সত্যিই তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল।'

ভিডিওতে এই তরুণীর নাম উল্লেখ নেই, তবে তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট গাজার মুসলমানদের ঈমানি শক্তি স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। আল্লাহর প্রতি তাদের বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় যে, তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না। তারা বিশ্বাস করে জালিম ও দখলদার ইসরাইলের বুলেট-বোমার আঘাতে যে শহীদি মৃত্যু হচ্ছে তাতে তাদের জন্য জান্নাতি দুয়ার খুলে যাচ্ছে।

গাজা যুদ্ধে নিহত ইসরাইলি সেনার সংখ্যা বেড়ে ৪৫৯-এ দাঁড়িয়েছে

আরো ৫ সেনার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সেনা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ঘোষণা অনুযায়ী গাজা যুদ্ধে তাদের নিহত সেনাদের সংখ্যা বেড়ে ৪শ ৫৮তে দাঁড়িয়েছে।

ফার্স বার্তা সংস্থা আরও জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী আজ (সোমবার) একটি বিবৃতি দিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে গাজা যুদ্ধের সূচনা থেকে এ পর্যন্ত তাদের ৪৫৯ সেনা নিহত হয়েছে। সেইসঙ্গে গাজায় স্থলযুদ্ধে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হাতে তাদের ১২৬ সেনা নিহত হয়েছে।

ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র গত রাতে স্বীকার করেছেন তাদের সেনারা গাজা যুদ্ধের চরম ক্লান্তিতে ভুগছে এবং তাদের কেউ কেউ দেড় মাস ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছে।

হিব্রু ভাষার ইসরাইলি দৈনিক মা'আরিভ শনিবার একটি প্রতিবেদন করেছে। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে: ৭০ দিন ধরে যুদ্ধের পরও হামাসের পরাজয়ের কোনো লক্ষণই দেখা যায় নি। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলবে।

অপরদিকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনার মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। বিশেষ করে শুক্রবার গাজায় ৩ ইসরাইলি বন্দিকে অন্যায়ভাবে হত্যার ঘটনায় বন্দি পরিবারগুলো ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

হুথি আনসারুল্লাহ ইসরাইলকে চাপে ফেলেছে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতার রাজনৈতিক উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী শামখানি বলেছেন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন ইসরাইলে জাহাজ চলাচল সীমিত করে দখলদারদের মূল চালিকা শক্তিকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে।

তিনি আজ (সোমবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্স' বা সাবেক টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেছেন।

আলী শামখানি আরও বলেছেন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যারাই ইয়েমেনের এই পদক্ষেপে বাধা দিচ্ছে তারাই গাজায় ফিলিস্তিনি শিশু হত্যায় নিজেদেরকে সরাসরি সম্পৃক্ত করছে।

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা অব্যাহত থাকায় লোহিত সাগরের বাবেল মান্দেব প্রণালী দিয়ে ইসরাইল-অভিমুখী জাহাজগুলোর চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে ইয়েমেনের স সামরিক বাহিনী।

বিশ্বের ৪০ শতাংশ বাণিজ্য হয় বাবেল মান্দেব প্রণালী দিয়ে। লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরকে সংযোগ করেছে এই প্রণালী।

ইসরাইলের সাথে জাহাজ চালানো বন্ধ করল ওওসিএল

এবার হংকং-ভিত্তিক চীনা শিপিং কোম্পানি ওরিয়েন্ট ওভারসিস কন্টেইনার লাইন বা ওওসিএল ইহুদিবাদী ইসরাইল অভিমুখী তার সকল কার্গো জাহাজ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ইসরাইল অভিমুখী যেকোনো জাহাজে হামলা চালানোর যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘোষণা দিল চীনা জাহাজ কোম্পানিটি।

ইয়েমেনের সেনাবাহিনী দেশটির উপকূলে ইসরাইলগামী দু’টি কন্টেইনার জাহাজে হামলা চালানোর দু’দিন পর রোববার ওওসিএল এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিল।  বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইসরাইল থেকে এবং ইসরাইল অভিমুখে কোনো জাহাজ পরিচালনা করবে না ওওসিএল।”

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বর্বরতার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইল অভিমুখী বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সেনাবাহিনী। ইয়েমেন বলেছে, যতদিন গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ চলবে ততদিন এরকম হামলাও অব্যাহত থাকবে। দেশটির সেনাবাহিনী আরো বলেছে, যেসব জাহাজ ইসরাইলের কোনো বন্দরে যাবে না সেসব জাহাজের কোনো ক্ষতি করা হবে না।

ইয়েমেনের হামলার ভয়ে এরইমধ্যে ইসরাইলের মালিকানাধীন জাহাজগুলো লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালি এড়িয়ে বিকল্প ব্যয়বহুল রুট বেছে নিয়েছে। 

সম্প্রতি ইসরাইলি নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার এলিজার মারুম বলেন, ইসরাইলের শতকরা ৯৫ ভাগ আমদানি রপ্তানি লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়। “কাজেই ইয়েমেন কার্যত আমাদের বিরুদ্ধে নৌ অবরোধ আরোপ করেছে।”

ইয়েমেন উপকুলে জাহাজ চলাচল স্থগিত করলো বৃহৎ ৫টি দেশ

চীনা কোম্পানিটির আগে শুক্রবার প্রথমবারের মতো বিশ্বের দু’টি বৃহৎ শিপিং কোম্পানি লোহিত সাগর দিয়ে তাদের পণ্য পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করে। ড্যানিশ কোম্পানি মার্স্ক এবং জার্মান কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত লোহিত সাগর থেকে জাহাজ না চালানোর সিদ্ধান্ত জানায়। এরপর শনিবার সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ চলাচলকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেরিনিয়ান শিপিং কোম্পানি বা এমএসসি এবং ফ্রান্সের সিএমএ সিজিএম একই ঘোষণা দিয়েছে।

লোহিত সাগর এড়িয়ে চলতে হলে ইসরাইল অভিমুখী যেকোনো জাহাজকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে ১৩,০০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে ইসরাইলে পৌঁছাতে হবে।

💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url