জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয়-১০
আল কুরআনে আল্লাহ পাকের পরিচয়
আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহ কেমন? আল্লাহ এই জগৎ কেন তৈরী করেছেন? আল্লাহ কিভাবে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন তৈরী করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কিভাবে লালন পালন করছেন? এসব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে তাঁর পরিচয় তুলেছেন। কমপক্ষে ১৩১টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব আয়াতের অর্থ ও তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো। এসব আয়াতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
Sahih International
৫৮. আর আপনি নির্ভর করুন তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তার সপ্ৰশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন, তিনি তার বান্দাদের পাপ সম্পর্কে অবহিত হিসেবে যথেষ্ট।
৫৯. তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন। তিনিই রাহমান, সুতরাং তাঁর সম্বন্ধে যে অবহিত তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
তাফসীরে জাকারিয়াআল-বায়ান
Sahih International
(৬১) কত প্রাচুর্যময় তিনি যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন[1] এবং ওতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ (সূর্য) ও জ্যোতির্ময় চন্দ্র।[2]
[1] بُرُوج শব্দটি بُرْج শব্দের বহুবচন। (এর আসল অর্থ হল প্রকাশ। রাশিচক্র নক্ষত্রমালার প্রাসাদ ও অট্টালিকার মত। আর তা আকাশে প্রকাশ ও স্পষ্ট হওয়ার কারণে ‘বুরুজ’ বলা হয়।) সালাফদের তফসীরে بُرُوج বলতে বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্রকে বুঝানো হয়েছে। আর এই তফসীরে আয়াতের বাগধারায় অর্থ দাঁড়ায় যে, বরকতময় সেই সত্তা, যিনি আকাশে বড় বড় গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তী যুগের তফসীরকারগণ জ্যোতিষীদের পরিভাষার (কল্পিত) রাশিচক্র অর্থ নিয়েছেন। যার সংখ্যা হল বারটি; মেষরাশি, বৃষরাশি, মিথুনরাশি, কর্কটরাশি, সিংহরাশি, কন্যারাশি, তুলারাশি, বৃশ্চিকরাশি, ধনুঃরাশি, মকররাশি, কুম্ভরাশি ও মীনরাশি। আর এই বারটি রাশি সাতটি বড় বড় গ্রহের কক্ষপথ; যাদের নামঃ মঙ্গল, শুক্র, বুধ, চন্দ্র, সূর্য, বৃহস্পতি ও শনি। এই সমস্ত গ্রহ উক্ত রাশিতে এমনভাবে অবস্থান করে যে, ওগুলো যেন তাদের জন্য সুবিশাল প্রাসাদস্বরূপ। (আইসারুত তাফাসীর)
(৬২) এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে। [1]
[1] অর্থাৎ, রাত্রি যায় দিন আসে, আর দিন যায় রাত্রি আসে। দিবারাত্রি একত্রিত হয় না। দিন-রাত্রির উপকারিতার কথা বিশদ বিবরণের অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ خِلْفَة এর অর্থ এক অপরের বিপরীত বলেছেন। অর্থাৎ, রাত্রি অন্ধকার এবং দিন উজ্জ্বল।
৬১. বরং তিনি, যিনি যমীনকে আবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই সমুদ্রের মধ্যখানে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
৬২. বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহবানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে যমীনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে ? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
৬৩. বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তা থেকে ঊর্ধ্বে।
৬৪. বরং তিনি, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করেন, আল্লাহর সাথে কি কোন ইলাহ আছে? বল, ‘তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এসো যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’
আল-বায়ান
60. [More precisely], is He [not best] who created the heavens and the earth and sent down for you rain from the sky, causing to grow thereby gardens of joyful beauty which you could not [otherwise] have grown the trees thereof? Is there a deity with Allah? [No], but they are a people who ascribe equals [to Him].
61. Is He [not best] who made the earth a stable ground and placed within it rivers and made for it firmly set mountains and placed between the two seas a barrier? Is there a deity with Allah? [No], but most of them do not know.
62. Is He [not best] who responds to the desperate one when he calls upon Him and removes evil and makes you inheritors of the earth? Is there a deity with Allah? Little do you remember.
63. Is He [not best] who guides you through the darknesses of the land and sea and who sends the winds as good tidings before His mercy? Is there a deity with Allah? High is Allah above whatever they associate with Him.
64. Is He [not best] who begins creation and then repeats it and who provides for you from the heaven and earth? Is there a deity with Allah? Say, "Produce your proof, if you should be truthful."
Sahih International
৬০. নাকি তিনি(১), যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও যমীন এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্য বর্ষণ করেন বৃষ্টি, তারপর আমরা তা দ্বারা মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, তার গাছ উদগত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? বরং তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা (আল্লাহর) সমকক্ষ নির্ধারণ করে।(২)
(১) পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে ‘নাকি তিনি’ বলে এটা বলাই উদ্দেশ্য যে, যিনি এ কাজগুলো করতে পারেন, তিনি কি তাদের মত, যারা কিছুই করতে পারে না? কথার আগ-পিছ থেকে এটা বোঝা যায়, যদিও দ্বিতীয়টি এখানে বর্ণিত হয়নি। তাছাড়া আগের আয়াত “শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ, নাকি তারা যাদেরকে শরীক করে তারা?” এ কথা এর উপর প্রমাণবিহ। [ইবন কাসীর]
(২) মূলে يَعْدِلُونَ শব্দ এসেছে, এ শব্দটির পরে যদি ب অব্যয় যুক্ত হয়ে তখন এর অর্থ হয়, সমকক্ষ দাঁড় করানো যেমন, সূরা আল-আন’আমের ১ম আয়াতে এসেছে। কিন্তু যদি এর পরে عن অব্যয় আসে তখন এর অর্থ হয়, কোন কিছু ত্যাগ করে অন্য কিছু গ্ৰহণ করা। এ আয়াতে যেহেতু কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সেহেতু এর অর্থ নির্ধারণে দুটি মত এসেছে, একঃ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা আল্লাহর সাথে সমকক্ষ দাঁড় করায়। দুইঃ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা হক্বকে পরিত্যাগ করে বাতিলকে গ্ৰহণ করেছে। [ফাতহুল কাদীর] তবে এখানে প্রথম অর্থটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। [ইবন কাসীর] তাছাড়া يَعْدِلُونَ শব্দের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, ইনসাফ করা। যেমন সূরা আল-আ'রাফঃ ১৫৯, ১৮১। কিন্তু এ অর্থ এখানে উদ্দেশ্য নয়।
৬১. নাকি তিনি, যিনি যমীনকে করেছেন বসবাসের উপযোগী এবং তার মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদীনালা এবং তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দুই সাগরের মাঝে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায়(১); আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
(১) অর্থাৎ মিঠা ও নোনা পানির ভাণ্ডার। এ ভাণ্ডার এ পৃথিবীতেই রয়েছে কিন্তু তারা কখনো পরস্পর মিশে যায় না। ভূ-গর্ভের পানির স্রোতও কখনো একই এলাকায় মিঠা পানির স্রোত আলাদা এবং নোনা পানির স্রোত আলাদা দেখা যায়। নোনা পানির সাগরেও দেখা যায় কোথাও মিঠা পানির স্রোত আলাদা প্রবাহিত হচ্ছে। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]
৬২. নাকি তিনি, যিনি আর্তের ডাকে(১) সাড়া দেন, যখন সে তাকে ডাকে এবং বিপদ দূরীভূত করেন(২), আর তোমাদেরকে যমীনের প্রতিনিধি বানান।(৩) আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তোমরা খুব অল্পই শিক্ষা গ্ৰহণ করে থাক।
(১) مضطر শব্দটি اضطرار থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ, কোন অভাব হেতু অপারগ ও অস্থির হওয়া। এটা তখনই হয়, যখন কোন হিতকামী, সাহায্যকারী ও সহায় না থাকে। কাজেই এমন ব্যক্তিকে مضطر বলা হয়, যে দুনিয়ার সব সহায় থেকে নিরাশ হয়ে একান্তভাবে আল্লাহ তা’আলাকেই সাহায্যকারী মনে করে এবং তাঁর প্রতি মনোযোগী হয়। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকম পরিস্থিতিতে যে দো'আ করতে বলেছেন তা হলোঃ اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ “হে আল্লাহ্ আমি আপনার রহমতের আশা করি। অতএব, মুহুর্তের জন্যেও আমাকে আমার নিজের কাছে সমৰ্পণ করবেন না। আর আপনি আমার সবকিছু ঠিক-ঠাক করে দিন। আপনি ছাড়া কোন হক্ক ইলাহ নেই।” [আবু দাউদঃ ৫০৯০, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৪২]
(২) নিঃসহায়ের দোআ কবুল হওয়ার মূল কারণ হলো, আন্তরিকতা। কারণ, দুনিয়ার সব সহায় থেকে নিরাশ এবং সম্পর্কাদি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকেই কার্যেদ্বারকারী মনে করে দো'আ করার মাধ্যমে ইখলাস প্রকাশ পায়। আল্লাহ তা'আলার কাছে ইখলাসের মর্তবা ও মর্যাদাই আলাদা। মুমিন, কাফের, পরহেযগার ও পাপিষ্ঠ নির্বিশেষে যার কাছ থেকেই ইখলাস পাওয়া যায় তার প্রতিই দুনিয়াতে আল্লাহ তা'আলার করুণা হয়। [ফাতহুল কাদীর]।
যেমন কোন কোন আয়াতেও এসেছে যে, “তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌযানে আরোহন কর এবং সেগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বেরিয়ে যায় এবং তারা তাতে আনন্দিত হয়, তারপর যখন দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে এবং চারদিক থেকে উত্তাল তরংগামালা ধেয়ে আসে, আর তারা নিশ্চিত ধারণা করে যে, এবার তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে, তখন তারা আল্লাহকে তাঁর জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে ডেকে বলেঃ ‘আপনি আমাদেরকে এ থেকে বাঁচালে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে।’ [সূরা ইউনুস: ২২–২৩]
আরও এসেছে, “তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। তারপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখন তারা শির্কে লিপ্ত হয়”। [সূরা আল-আনকাবূত: ৬৫] অনুরূপভাবে বিভিন্ন হাদীসে যাদের দোআ কবুল হয় বলে ঘোষণা এসেছে সেটার গৃঢ় রহস্যও এ ইখলাসে নিহিত। যেমন, উৎপীড়িতের দোআ, মুসাফিরের দোআ। অনুরূপভাবে সন্তানের জন্য দোআ বা বদ-দোআ। এসব ঐ সময়ই হয় যখন তাদের আর করার কিছু থাকে না। তারা একান্তভাবেই আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। তখনকার অবস্থা অনুযায়ী আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেন। যদিও তিনি জানেন যে, তারা অচিরেই শির্কের দিকে ফিরে যাবে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
(৩) এখানে কাদের স্থলাভিষিক্ত করেন সেটা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। আর তাই সেটা নির্ধারণে কয়েকটি মত রয়েছেঃ এক, তোমাদের এক প্রজন্মকে অন্য প্রজন্মের শেষে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। অর্থাৎ এক প্রজন্ম ধ্বংস করেন এবং তার স্থানে অন্য প্রজন্মকে প্রতিষ্ঠিত করেন। এক জাতির পর আর এক জাতির উত্থান ঘটান। দুই, তোমাদের সন্তানদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। তিন, মুসলিমদেরকে কাফেরদের স্থলাভিষিক্ত করেন, তাদের যমীন ও ভিটে-মাটিতে মুসলিমদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করেন। [ফাতহুল কাদীর]
৬৩. নাকি তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলভূমি ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান(১) এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা থেকে বহু ঊর্ধ্বে।
(১) যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর তিনিই তোমাদের জন্য তারকামণ্ডল সৃষ্টি করেছেন যেন তা দ্বারা তোমরা স্থলের ও সাগরের অন্ধকারে পথ খুঁজে পাও।” [সূরা আল-আনআমঃ ৯৭] অর্থাৎ যিনি তারকার সাহায্যে এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছেন যার ফলে তোমরা রাতের অন্ধকারেও নিজেদের পথের সন্ধান করতে পারো। মানুষ জলে-স্থলে যেসব সফর করে, সেখানে তাকে পথ দেখাবার জন্য আল্লাহ এমন সব উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করেছেন যাতে সে সহজেই পথ চিনে নিতে পারে। [দেখুন: ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এ সবই আল্লাহর জ্ঞানগর্ভ ব্যবস্থাপনারই একটি অংশ। অন্যত্র এসবগুলোকে আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। [দেখুন: সূরা আন-নাহল: ১৫–১৬]
৬৪. নাকি তিনি, যিনি প্রথম সৃষ্টি করেন, তারপর সেটার পুনরাবৃত্তি করবেন(১) এবং তোমাদেরকে আসমান যমীন হতে জীবনোপকরণ দান করেন।(২) আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে কি? বলুন, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।(৩)
(১) অর্থাৎ যিনি মাতৃগর্ভে শুক্রের মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা করেন, [জালালাইন]। তারপর তাদের মৃত্যুর পর পুনরায় তাদেরকে উত্থিত করবেন, তার সাথে কি আর কোন শরীক আছে? এ কাজ কি তিনি ব্যতীত আর কেউ করতে পারে? তাহলে তিনি ব্যতীত অন্যরা কিভাবে ইবাদাত পেতে পারে? যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “নিশ্চয় তিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই তার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন।” [সূরা আল-বুরূজঃ ৩০]
(২) এ পৃথিবীতে পশু প্রাণীর বহু শ্রেণী পাওয়া যায়। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা খাদ্যের প্রয়োজন। স্ত্ৰষ্টা তাদের প্রত্যেক শ্রেণীর খাদ্যবস্তু এত বিপুল পরিমাণে এবং প্ৰত্যেকের আহরণ ক্ষমতার এত কাছাকাছি রেখে দিয়েছেন যার ফলে কোন শ্রেণীর কোন একজনও খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে না। তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি নাযিল করেন, এর দ্বারা যমীন থেকে উদ্ভিদ উদগত করেন, যা যমীনের বরকত হিসেবে গণ্য। তিনি আকাশ থেকে যে পানি নাযিল করেন তা তিনি যমীনের অভ্যন্তরে সুচারুরূপে পরিচালিত করেন, তারপর তা থেকে বের করেন হরেক রকম ক্ষেত-খামার, ফল- ফলাদি ও ফুল ইত্যাদি। এসব তো আল্লাহর কাজ। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ কি এগুলো করতে পারেন? যদি আর কেউ করতে না পারে তবে তাকে কিভাবে ইবাদাত করা হবে? [ইবন কাসীর]
(৩) অর্থাৎ এসব কাজে সত্যিই অন্য কেউ শরীক আছে, এর সপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করো অথবা যদি তা না পারো তাহলে কোন যুক্তিসংগত প্রমাণের সাহায্যে একথা বুঝিতে দাও যে, এ সমস্ত কাজ তো একমাত্র আল্লাহরই কিন্তু বন্দেগী ও ইবাদাত লাভের অধিকার লাভ করবে তিনি ছাড়া অন্য কেউ অথবা তাঁর সাথে অন্যজনও। যা আল্লাহ করেন তারা কি তা করতে পারে? যদি তোমাদের কোন দলীল-প্রমাণাদি না থাকে। তবে এ সমস্ত বাতিল ইলাহ ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদাতই শুধু কর। তা না করলে তোমরা কখনো সফলকাম হতে পারবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে, এ বিষয়ে তার নিকট কোন প্রমাণ নেই; তার হিসাব তো তার রব-এর নিকটই আছে; নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না।” [সূরা আল-মুমিনুন: ১১৭] [দেখুন, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url