আল কুরআনে মানব সৃষ্টির রহস্য-৬
মানব সৃষ্টির রহস্য-৬
আল্লাহ মানুষকে কেন সৃষ্টি করেছেন? তিনি কিভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? মানব সৃষ্টির পিছনে কি তার রহস্য? পবিত্র কুরআন পাকে কমপক্ষে ৮২টি আয়াতে আল্লাহ পাক তাঁর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানব সৃষ্টির রহস্য উম্মোচন করেছেন। আমরা ধারাবাহিকভাবে “মানব সৃষ্টির রহস্য” নিয়ে এখানে প্রতিটি আয়াতের বাংলা ও ইংরেজি অর্থ এবং এর ব্যাখ্যা বা তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো। জ্ঞানীদের জন্য এসব আয়াতে রয়েছে আল্লাহ পাকের নির্দশন ইন শা আল্লাহ।
১৮. তিনি তাকে কোন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন?
১৯. শুক্রবিন্দু থেকে, তিনি তাকে সৃষ্টি করেন, পরে তার পরিমিত বিকাশ সাধন করেন(১),
(১) قدّره অর্থাৎ সুপরিমিত করেছেন, তার গঠন-প্রকৃতি, আকার-আকৃতি সুপরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছেন। قدّره শব্দের এরূপ অৰ্থও হতে পারে যে, মানুষ যখন মাতৃগর্ভে সৃষ্টি হতে থাকে তখন আল্লাহ তা'আলা তার কাজ, বয়স, রিযিক, ভাগ্য ইত্যাদি তকদীর নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাছাড়া পূর্ব থেকেই প্রতিটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করা আছে তার গায়ের রং কি হবে, সে কতটুকু উচু হবে, তার দেহ কতটুকু কি পরিমাণ মোটা ও পরিপুষ্ট হবে। এত সব সত্বেও সে তার রবের সাথে কুফরী করে। [দেখুন: কুরতুবী]
২০. তারপর তার জন্য পথ সহজ করে দেন(১);
(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা স্বীয় ক্ষমতা-বলে মাতৃগর্ভে মানুষকে সৃষ্টি করেন। তারপর তিনিই তার অপার শক্তির মাধ্যমে মাতৃগর্ভ থেকে জীবিত ও পুর্নাঙ্গ মানুষের বাইরে আসার পথ সহজ করে দেয়। ফলে দেহটি সহী-সালামতে বাইরে চলে আসে এবং মায়েরও এতে তেমন কোন দৈহিক ক্ষতি হয় না। এছাড়া আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ায় তিনি তার জন্য নিজের জন্য ভালো বা মন্দ, কৃতজ্ঞতা বা অকৃতজ্ঞতা আনুগত্য বা অবাধ্যতার মধ্যে সে কোন পথ চায় তা তার সামনে খুলে রেখে দিয়েছেন এবং পথ তার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। ফলে সে শুকরিয়া আদায় করে সৎপথ গ্রহণ করতে পারে, আবার কুফরী করে বিপথে যেতে পারে। [দেখুন: ইবন কাসীর]
২১. এরপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন।
২২. এরপর যখন ইচ্ছে তিনি তাকে পুনর্জীবিত করবেন।(১)
(১) অর্থাৎ মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তা'আলাই মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। একমাত্র তিনিই এগুলো করার ক্ষমতা রাখেন। তারপরও মানুষ তাঁকে অস্বীকার করে, তাঁর হক আদায় করে না। [সা’দী] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দুই ফুঁৎকারের মধ্যবর্তী সময় হবে চল্লিশ। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথীরা বলল, চল্লিশ দিন? আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এটা বলতে অস্বীকার করছি, তারা বলল, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি এটা বলতেও অস্বীকার করছি। তারা বলল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? তিনি বললেন, আমি এটাও বলতে অস্বীকার করছি। তবে মানুষের সবকিছু পঁচে যায় একমাত্র মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের একটি ছোট্ট কোষ ব্যতীত। তার উপরই আবার সৃষ্টি জড়ো হবে।” [বুখারী ৪৮১৪, মুসলিম: ২৯৫৫]
২৩. কখনো নয়, তিনি তাকে যা আদেশ করেছেন, সে এখনো তা পূর্ণ করেনি।
২৪. অতঃপর মানুষ যেন তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করে!(১)
(১) মানবসৃষ্টির সূচনা উল্লেখ করার পর মানুষ যে খাদ্যের নেয়ামত ভোগ করে, এখানে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ খাদ্য সম্পর্কে তার একবার চিন্তা করা প্রয়োজন- কিভাবে এই খাদ্য উৎপন্ন হয়। আল্লাহ যদি এর উপকরণগুলো সরবরাহ না করতেন তাহলে কি জমি থেকে এই খাদ্য উৎপন্ন করার ক্ষমতা মানুষের ছিল? এসব নেয়ামতসমূহ তিনি মানুষকে দিয়েছেন যাতে মানুষ কিয়ামতের প্রস্তুতির জন্য এর সাহায্যে আল্লাহর ইবাদত করে। [কুরতুবী]
২৫. নিশ্চয় আমরা প্রচুর বারি বর্ষণ করি,
২৬. তারপর আমরা যমীনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি;
২৭. অতঃপর তাতে আমরা উৎপন্ন করি শস্য;
২৮. আঙ্গুর, শাক-সবজি,
২৯. যায়তুন, খেজুরগাছ,
৩০. অনেক গাছবিশিষ্ট উদ্যান,
৩১. ফল এবং গবাদি খাদ্য(১),
(১) أبّ শব্দটির উপরোক্ত অর্থ ইবনে আব্বাস ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। [সহীহ ইবনে খুযাইমাহ: ২১৭২]
৩২. এগুলো তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের ভোগের জন্য।(১)
(১) অর্থাৎ কেবল তোমাদের জন্যই নয়, তোমাদের যেসব গবাদি-গৃহপালিত পশু রয়েছে, তাদের জন্যও। এসব নেয়ামতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মহান আল্লাহর ইবাদত, তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করা ও তার নির্দেশাবলি মেনে চলার প্রয়োজনীয়তা ফুটে ওঠে।
তাফসীরে জাকারিয়া
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url