জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর পরিচয়-৫
আল্লাহ কে? আল্লাহর পরিচয় কি? আল্লাহ কেমন? আল্লাহ এই পৃথিবী কেন
তৈরী করেছেন? আল্লাহ কিভাবে এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি
করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কেন সৃষ্টি করেছেন? আল্লাহ আমাদেরকে কিভাবে লালন পালন
করছেন? আল্লাহ কোথায় থাকেন? আল্লাহর গুণাবলী কেমন? আল্লাহর ক্ষমতা বা শক্তি
কেমন?
এসব প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা নিজে পবিত্র কুরআনে বিশদভাবে তাঁর পরিচয় তুলেছেন। কমপক্ষে ১৩১টি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন।আমরা ধারাবাহিকভাবে সেসব আয়াতের অর্থ ও তাফসীর নিয়ে আলোচনা করবো।এসব আয়াতে বিশ্বাসীদর জন্য রয়েছে নিদর্শন।
আল-বায়ান
31. Say, "Who provides for you from the heaven and the earth? Or who controls hearing and sight and who brings the living out of the dead and brings the dead out of the living and who arranges [every] matter?" They will say, "Allah," so say, "Then will you not fear Him?"
Sahih International
৩১. বলুন, কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরুণ সরবরাহ করেন অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন(১), জীবিতকে মৃত থেকে কে বের করেন এবং মৃতকে জীবিত হতে কে বের করেন এবং সব বিষয় কে নিয়ন্ত্রণ করেন? তখন তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। সুতরাং বলুন, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?(২)
(১) অর্থাৎ যিনি তোমাদেরকে শোনার শক্তি ও দেখার শক্তি দান করেছেন তিনি যদি ইচ্ছে করেন সেগুলোকে নিয়ে যেতে পারেন। সেগুলো তোমাদের থেকে ছিনিয়ে নিতে পারেন। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, “বলুন, তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ।” [সূরা আল-মুলক; ২৩] আরও বলেন, “বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের হৃদয় মোহর করে দেন তবে আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ আছে যে তোমাদের এগুলো ফিরিয়ে দেবে? [সূরা আল-আনআমঃ ৪৬]
(২) আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াতসমূহে মুশরিকদের উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করছেন যে, তাদেরই স্বীকৃতি মোতাবেক যদি তিনি আল্লাহই একমাত্র রব হয়ে থাকেন, তবে একমাত্র তার ইবাদত কেন করা হবে না? তাই তিনি বলছেন যে, কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করেন? অর্থাৎ কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তার ক্ষমতায় যমীন ফাটিয়ে তা থেকে বের করে আনেন, “নিশ্চয় আমরা প্রচুর বারি বর্ষণ করি, তারপর আমরা যমীনকে যথাযথভাবে বিদীর্ণ করি, অতঃপর তাতে আমরা উৎপন্ন করি শস্য; আংগুর, শাক-সবজি, অনেক গাছবিশিষ্ট উদ্যান, ফল এবং গবাদি খাদ্য [সূরা আবাসাঃ ২৫–৩১] তিনি ছাড়া কি আর কোন ইলাহ আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা অবশ্যই বলবে যে, এটা শুধু আল্লাহই করে থাকেন। অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেন, “এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযক দান করবে, যদি তিনি তার রিযক বন্ধ করে দেন? [সূরা আল-মুলকঃ ২১]।
তাফসীরে জাকারিয়াআল-বায়ান
109. Say, "If the sea were ink for [writing] the words of my Lord, the sea would be exhausted before the words of my Lord were exhausted, even if We brought the like of it as a supplement.
Sahih International
১০৯. বলুন, আমার রব-এর কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সাগর যদি কালি হয়, তবে আমার রব-এর কথা শেষ হওয়ার আগেই সাগর নিঃশেষ হয়ে যাবে— আমরা এর সাহায্যের জন্য এর মত আরো সাগর আনলেও।(১)
(১) অর্থাৎ যদি সাগরের পানি আল্লাহর কালেমাসমূহ লেখার কালি হয়ে যায়, তবে আল্লাহর কালেমাসমূহ শেষ হওয়ার আগেই সাগরের পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। যদিও এর কালি বাড়ানোর জন্য আরও সাগর এর সাথে যুক্ত করা হয়। [আদওয়াউল বায়ান] অনুরূপ অন্য স্থানেও আল্লাহ বলেছেন। যেমন, “আর যমীনের সব গাছ যদি কলম হয় এবং সাগর, তার পরে আরো সাত সাগর কালি হিসেবে যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।” [সূরা লুকমান: ২৭]
এ আয়াতসমূহ প্রমাণ করছে যে, আল্লাহর কালেমাসমূহ কখনও শেষ হবে না। [আদওয়াউল বায়ান] হাদীসে এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ বর্ণিত হয়েছে। তা হচ্ছে, কুরাইশ সর্দাররা ইয়াহুদীদের কাছে এসে বলল, আমাদেরকে এমন কিছু দাও যা আমরা ঐ লোকটাকে প্রশ্ন করতে পারি। তারা বলল, তাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন কর। তারা তাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে নাযিল হল, (وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُمْ مِنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا) অর্থাৎ আর আপনাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলুন, ‘রূহ আমার রবের আদেশঘটিত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে অতি সামান্যই।” [সূরা আল-ইসরা: ৮৫] এটা শুনে ইয়াহুদীরা বলতে লাগল, আমাদেরকে তো অনেক জ্ঞান দেয়া হয়েছে। আর তা হচ্ছে তাওরাত। আর যাকে তাওরাত দেয়া হয়েছে তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়েছে। তখন এ আয়াতটি নাযিল হয়। [তিরমিযী: ৩১৪০]
৬৫. তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে, সে সবের রব। কাজেই তারই ইবাদাত করুন এবং তার ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকুন(১)। আপনি কি তাঁর সমনামগুণসম্পন্ন কাউকেও জানেন?(২)
(১) اصطبار শব্দের অর্থ পরিশ্রম ও কষ্টের কাজে দৃঢ় থাকা। [ফাতহুল কাদীর] এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইবাদাতের স্থায়িত্ব পরিশ্রম সাপেক্ষ। ইবাদতকারীর এ জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিত। আয়াতের অর্থ এই দাঁড়ায়, তাঁর আদেশ ও নিষেধ সবরের সাথে পালন করুন। [বাগভী]
(২) মূলে سَمِيًّا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “সমনাম”। এটা আশ্চর্যের বিষয় বটে, মুশরিক ও প্রতিমা পূজারীরা যদিও ইবাদতে আল্লাহ তা'আলার সাথে অনেক মানুষ, ফেরেশতা, পাথর ও প্রতিমাকে অংশীদার করেছিল এবং তাদেরকে ‘ইলাহ’ তথা উপাস্য বলত; কিন্তু কেউ কোনদিন কোন মিথ্যা উপাস্যের নাম আল্লাহ রাখেনি। এ জন্যেই বলা হচ্ছে যে, কেউ কি আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে এ নামে ডেকেছে? [বাগভী] সৃষ্টিগত ও নিয়ন্ত্ৰণগত ব্যবস্থাধীনেই দুনিয়াতে কোন মিথ্যা উপাস্য আল্লাহ নামে অভিহিত হয়নি। তাই এই প্রসিদ্ধ অর্থের দিক দিয়েও আয়াতের বিষয়বস্তু সুস্পষ্ট যে, দুনিয়াতে আল্লাহর কোন সমনাম নেই।
মুজাহিদ, সাঈদ ইবন জুবায়ের, কাতাদাহ, ইবনে আব্বাস প্রমুখ তফসীরবিদ থেকে এ স্থলে سَمِيًّا শব্দের অর্থ অনুরূপ সদৃশ বর্ণিত রয়েছে। এর উদ্দেশ্য এই যে, নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহ তা'আলার সমতুল্য, সমকক্ষ কেউ নেই। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের জানা মতে দ্বিতীয় কোন আল্লাহ আছে কি? যদি না থাকে এবং তোমরা জানো যে নেই, তাহলে তোমাদের জন্য তাঁরই বন্দেগী করা এবং তাঁরই হুকুমের দাস হয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোন পথ থাকে কি? তোমরা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট কোন নাম ও গুণ অন্যকে দিও না। সৃষ্টিজগতের কোন নাম-গুণও তাঁর জন্য সাব্যস্ত করো না। সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণগুলো তো তারই জন্য। তিনিই এসব গুণে গুণান্বিত হওয়ার বেশী হকদার। যাদের কোন গুণ নেই, কাজ নেই, যাদের নামের বাস্তবতাও নেই তারা নিজেরাও অস্তিত্বহীন হওয়াটাই বেশী যুক্তিযুক্ত। [ইবনুল কাইয়্যেম, আসসাওয়ায়িকুল মুরসালাহ: ৩/১০২৮]
তাফসীরে জাকারিয়া
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url