বিষয় ভিত্তিক আয়াত (পর্ব -১৩) || আল কুরআনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য ||

আল কুরআনে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য

এই বিশাল পৃথিবী, আকাশমন্ডলী, গ্রহ নক্ষত্র, ইহকাল-পরকাল ও মানব জীবনের সকল রহস্যই মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআনে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কোনটা সুস্পষ্টভাবে কোন অস্পষ্টভাবে। যারা অবিশ্বাসী তারা অস্পষ্ট বর্ণনা থেকে আল্লাহ পাকের বিধানকে বিতর্কিত করার প্রয়াস চালায়। আর জ্ঞানীরা এসব বর্ণনা থেকে আল্লাহর নির্দশাবলী তালাশ করেন। আল্লাহ পাক মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনে মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করেছেন অনেক জায়গায়। আমরা সেসব নিয়ে এখানে ধারাবাহিক আলোচনা করছি। কুরআন পাকের এই আলোচনা প্রকৃত জ্ঞানীদের মনে প্রভাব বিস্তার করবে ইন শা আল্লাহ।

সূরা ইয়াসীন, আয়াতঃ ৩৭-৪০

৩৬:৩৭ وَ اٰیَۃٌ لَّهُمُ الَّیۡلُ ۚۖ نَسۡلَخُ مِنۡهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمۡ مُّظۡلِمُوۡنَ
৩৬:৩৮ وَ الشَّمۡسُ تَجۡرِیۡ لِمُسۡتَقَرٍّ لَّهَا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ
৩৬:৩৯ وَ الۡقَمَرَ قَدَّرۡنٰهُ مَنَازِلَ حَتّٰی عَادَ کَالۡعُرۡجُوۡنِ الۡقَدِیۡمِ
৩৬:৪০ لَا الشَّمۡسُ یَنۡۢبَغِیۡ لَهَاۤ اَنۡ تُدۡرِکَ الۡقَمَرَ وَ لَا الَّیۡلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ

সূরা ইয়াসীন আয়াতঃ ৩৭-৪০ এর বাংলা অর্থ

আর রাত তাদের জন্য একটি নিদর্শন; আমি তা থেকে দিনকে সরিয়ে নেই, ফলে তখনই তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ০ আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট পথে, এটা মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ)-র নির্ধারণ। ০ আর চাঁদের জন্য আমি নির্ধারণ করেছি মানযিলসমূহ, অবশেষে সেটি খেজুরের শুষ্ক পুরাতন শাখার মত হয়ে যায়। ০ সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাতের জন্য সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা, আর প্রত্যেকেই কক্ষ পথে ভেসে বেড়ায়। ০ 
আল-বায়ান

English meaning of Surah Yasin Ayat: 37-40

And a sign for them is the night. We remove from it [the light of] day, so they are [left] in darkness. ০ And the sun runs [on course] toward its stopping point. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. ০ And the moon - We have determined for it phases, until it returns [appearing] like the old date stalk. ০ It is not allowable for the sun to reach the moon, nor does the night overtake the day, but each, in an orbit, is swimming. ০ 
Sahih International

সূরা ইয়াসীন আয়াতঃ ৩৭-৪০ এর তাফসীর

৩৭. আর তাদের জন্য এক নিদর্শন রাত, তা থেকে আমরা দিন অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।(১)

(১) কাতাদা বলেন, এর অর্থ, রাতকে দিনে প্রবিষ্ট করাই, আর দিনকে রাতে প্রবিষ্ট করাই। [তাবারী]

৩৮. আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে(১), এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নির্ধারণ।

(১) এ আয়াতের দুটি তাফসীর হতে পারে।
এক. কোন কোন তাফসীরবিদ এখানে কালগত অবস্থানস্থল অর্থ নিয়েছেন, অর্থাৎ সেই সময়, যখন সূর্য তার নির্দিষ্ট গতি সমাপ্ত করবে। সে সময়টি কেয়ামতের দিন। এ তাফসীর অনুযায়ী আয়াতের অর্থ এই যে, সূর্য তার কক্ষ পথে মজবুত ও অটল ব্যবস্থাধীনে পরিভ্রমণ করছে। এতে কখনও এক মিনিট ও এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। সূর্যের এই গতি চিরস্থায়ী নয়। তার একটি বিশেষ অবস্থানস্থল আছে; যেখানে পৌছে তার গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে। সেটা হচ্ছে কেয়ামতের দিন। এ তাফসীর প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদাহ থেকে বর্ণিত আছে।

দুই. কতক তাফসীরবিদ আয়াতে স্থানগত অবস্থানস্থল অর্থ নিয়েছেন। [ইবন কাসীর] তাদের মতের সমর্থনে এক হাদীসে এসেছে, আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে সুর্যাস্তের সময় মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আবু যর, সূর্য কোথায় অস্ত যায় জান? আবু যর বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সূর্য চলতে চলতে আরশের নীচে পৌঁছে সিজদা করে। অতঃপর বললেন, (وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا) আয়াতে مستقر বলে তাই বোঝানো হয়েছে। [বুখারী: ৪৮০২, ৪৮০৩, মুসলিম: ১৫৯]

আব্দুল্লাহ ইবন উমর থেকে এ সম্পর্কে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক দিন সূর্য আরশের নীচে পৌঁছে সিজদা করে এবং নতুন পরিভ্রমণের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে। অনুমতি লাভ করে নতুন পরিভ্রমণ শুরু করে। অবশেষে এমন একদিন আসবে, যখন তাকে নতুন পরিভ্রমণের অনুমতি দেয়া হবে না, বরং যেখান থেকে অস্ত গিয়েছে সেখানেই উদিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হবে। এটা হবে কেয়ামত সন্নিকটবর্তী হওয়ার একটি আলামত। তখন তাওবাহ ও ঈমানের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কোন গোনাহগার, কাফের ও মুশরিকের তাওবাহ কবুল করা হবে না। [বুখারী: ৩১৯৯, মুসলিম: ১৫৯]

এখানে আরও একটি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা জরুরী, তা হচ্ছে, বৈজ্ঞানিকগণ কিছু দিন আগেও বলতেন যে, সূর্য স্থায়ী, পৃথিবী এর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু বর্তমানে তারা তাদের মত পাল্টিয়ে বলতে শুরু করেছে যে, সূৰ্যও তার কক্ষপথে ঘুরে। এটি কুরআনের এ বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা যা এখন আবিষ্কার করে বলেছে, আল্লাহ তা'আলা তা বহু শতক পূর্বে কুরআনে বলে দিয়েছেন। যা কুরআনের সত্যতার উপর প্রমাণবাহ।
তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) এবং চন্দ্রের জন্য আমি বিভিন্ন কক্ষ নির্দিষ্ট করেছি;[1] অবশেষে তা পুরাতন খেজুর মোছার ডাঁটার আকার ধারণ করে। [2]

[1] চাঁদের ২৮টি কক্ষপথ আছে। প্রত্যহ একটি করে কক্ষপথ অতিক্রম করে। অতঃপর দুই রাত্রি অদৃশ্য থেকে তৃতীয় রাত্রে বের হয়ে আসে।
[2] অর্থাৎ, যখন শেষ কক্ষে পৌঁছে যায়, তখন একেবারে সরু হয়ে যায়; যেমন খেজুরের পুরাতন মোছার ডাঁটা, যা শুকিয়ে বাঁকা হয়ে যায়। চাঁদের এই বৃদ্ধি-হ্রাসযুক্ত পরিভ্রমণ দ্বারা পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ নিজেদের দিন, মাস ও বছরের হিসাব এবং ইবাদতের সময় নির্ণয় করে থাকে।

(৪০) সূর্যের পক্ষে চন্দ্রের নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়,[1] রজনীও দিবসকে অতিক্রম করতে পারে না[2] এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে। [3]

[1] অর্থাৎ, সূর্যের জন্য সম্ভব নয় যে, সে চাঁদের কাছাকাছি হবে এবং তার ফলে তার আলো শেষ হয়ে যাবে। বরং উভয়ের নিজ নিজ কক্ষপথ ও আলাদা আলাদা গন্ডিসীমা আছে। সূর্য দিনে ও চাঁদ রাতেই উদিত হয়, কখনও এর ব্যতিক্রম না ঘটা এ কথারই প্রমাণ যে, এ সবের নিয়ন্তা ও পরিচালক একজন আছেন।
[2] বরং এরাও এক নিয়ম-সূত্রে আবদ্ধ হয়ে আছে এবং এক অপরের পরে আসতে থাকে।
[3] كُلٌّ বলতে সূর্য, চন্দ্র, অথবা তার সাথে অন্য নক্ষত্রকেও বুঝানো হয়েছে। সব কিছু নিজ নিজ কক্ষপথে পরিক্রমণ করে, তাদের কারো একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হয় না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান

সূরা ইয়াসীন আয়াতঃ ৭৭-৮৩

৩৬:৭৭ اَوَ لَمۡ یَرَ الۡاِنۡسَانُ اَنَّا خَلَقۡنٰهُ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ فَاِذَا هُوَ خَصِیۡمٌ مُّبِیۡنٌ
৩৬:৭৮ وَ ضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّ نَسِیَ خَلۡقَهٗ ؕ قَالَ مَنۡ یُّحۡیِ الۡعِظَامَ وَ هِیَ رَمِیۡمٌ
৩৬:৭৯ قُلۡ یُحۡیِیۡهَا الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّۃٍ ؕ وَ هُوَ بِکُلِّ خَلۡقٍ عَلِیۡمُۨ 
৩৬:৮০ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمۡ مِّنَ الشَّجَرِ الۡاَخۡضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنۡتُمۡ مِّنۡهُ تُوۡقِدُوۡنَ 
৩৬:৮১ اَوَ لَیۡسَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤی اَنۡ یَّخۡلُقَ مِثۡلَهُمۡ ؕ؃ بَلٰی ٭ وَ هُوَ الۡخَلّٰقُ الۡعَلِیۡمُ
৩৬:৮২ اِنَّمَاۤ اَمۡرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَیۡئًا اَنۡ یَّقُوۡلَ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ
৩৬:৮৩ فَسُبۡحٰنَ الَّذِیۡ بِیَدِهٖ مَلَکُوۡتُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ

সূরা ইয়াসীন আয়াতঃ ৭৭-৮৩ এর বাংলা অর্থ

মানুষ কি দেখেনি যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ সে (বনে যায়) একজন প্রকাশ্য কুটতর্ককারী। ০ আর সে আমার উদ্দেশ্যে উপমা পেশ করে, অথচ সে তার নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে, ‘হাড়গুলো জরাজীর্ণ হওয়া অবস্থায় কে সেগুলো জীবিত করবে’? ০ বল, ‘যিনি প্রথমবার এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন তিনিই সেগুলো পুনরায় জীবিত করবেন। আর তিনি সকল সৃষ্টি সম্পর্কেই সর্বজ্ঞাত। ০ যিনি সবুজ বৃক্ষ থেকে তোমাদের জন্য আগুন তৈরী করেছেন। ফলে তা থেকে তোমরা আগুন জ্বালাও। ০ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, তিনিই মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। ০ তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, কোন কিছুকে তিনি যদি ‘হও’ বলতে চান, তখনই তা হয়ে যায়। ০ অতএব পবিত্র মহান তিনি, যার হাতে রয়েছে সকল কিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ০
আল-বায়ান

English meaning of Surah Yasin verse: 77-83

Does man not consider that We created him from a [mere] sperm-drop - then at once he is a clear adversary? ০ And he presents for Us an example and forgets his [own] creation. He says, "Who will give life to bones while they are disintegrated?" ০ Say, "He will give them life who produced them the first time; and He is, of all creation, Knowing." ০ [It is] He who made for you from the green tree, fire, and then from it you ignite. ০ Is not He who created the heavens and the earth Able to create the likes of them? Yes, [it is so]; and He is the Knowing Creator. ০ His command is only when He intends a thing that He says to it, "Be," and it is. ০ So exalted is He in whose hand is the realm of all things, and to Him you will be returned. ০
Sahih International

সূরা ইয়াসীন আয়াতঃ ৭৭-৮৩ এর তাফসীর

৭৭. মানুষ কি দেখে না যে, আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী।
৭৮. আর সে আমাদের সম্বন্ধে উপমা রচনা করে(১), অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়।(২) সে বলে, কে অস্থিতে প্ৰাণ সঞ্চার করবে। যখন তা পচে গলে যাবে?

(১) সূরা ইয়াসীনের আলোচ্য সর্বশেষ পাঁচটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে, যা কোন কোন রেওয়ায়াতে উবাই ইবনে খলফের ঘটনা বলে এবং কোন কোন রেওয়াতে আস ইবনে ওয়ায়েলের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উভয়ের তরফ থেকে ঘটনাটি সংঘটিত হওয়াও অসম্ভব নয়। ঘটনাটি এই যে, আস ইবনে ওয়ায়েল মক্কা উপত্যকা থেকে একটি পুরাতন হাড় কুড়িয়ে তাকে স্বহস্তে ভেঙে চূৰ্ণ-বিচূর্ণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, এই যে হাড়টি চূর্ণ বিচূর্ণ অবস্থায় দেখছেন, আল্লাহ তা'আলা একেও জীবিত করবেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে মৃত্যু দেবেন, পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং জাহান্নামে দাখিল করবেন। [মুস্তাদরাকঃ ২/৪২৯]

(২) অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্ট এ মানুষ আল্লাহর কুদরত অস্বীকার করে কেমন খোলাখুলি বাকবিতণ্ডায় প্রবৃত্ত হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাতে থুথু ফেললেন। তারপর তার তর্জনী সেখানে রাখলেন এবং বললেন, আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম! কিসে আমাকে অপারগ করল? অথচ তোমাকে এ ধরণের বস্তু থেকে আমি সৃষ্টি করেছি। তারপর যখন তোমার আত্মা তোমার কণ্ঠনালীর কাছে পৌঁছায় তখন তুমি বল, আমি সাদাকাহ করব। তোমার সাদাকাহ দেয়ার সময় তখন আর কোথায়? [ইবন মাজহ: ২৭০৭, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫০২]

৭৯. বলুন, তাতে প্ৰাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি তা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন(১) এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।

(১) অর্থাৎ এ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করার সময় সে নিজের সৃষ্টিতত্ত্ব ভুলে গেল যে, নিত্যপ্রাণ একটি শুক্রবিন্দুতে প্রাণসঞ্চার করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি সে এই মূল তত্ত্ব বিস্মৃত না হত, তবে এরূপ দৃষ্টান্ত উপস্থিত করে আল্লাহর কুদরতকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বনী ইসরাইলের এক মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু সময় উপস্থিত হলো, সে তার পরিবারপরিজনকে এ বলে আসিয়ত করল যে, যখন আমি মারা যাব তখন তোমরা আমার জন্য কাঠ সংগ্রহ করে আমাকে আগুনে পুড়িয়ে দিও। তারপর যখন আগুন আমার গোস্ত খেয়ে ফেলবে এবং আমার হাড় পর্যন্ত কঙ্কাল হয়ে যাবে তখন তা নিয়ে গুড়ো করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিও। তারা তাই করল। তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাকে পুরোপুরি একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলল, আপনার ভয়ে। আল্লাহ তখন তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [বুখারী: ৩৪৫২, ৩৪৮১, ৩৪৭৮, মুসলিম: ২৭৫৬, ২৭৫৭]

৮০. তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপাদন করেন, ফলে তোমরা তা থেকে আগুন প্ৰজ্বলিত কর।
৮১. যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সমর্থ নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়। আর তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
৮২. তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছে করেন, তিনি বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।
৮৩. অতএব পবিত্র ও মহান তিনি, যার হাতেই প্রত্যেক বিষয়ের সর্বময় কর্তৃত্ব; আর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।(১)

(১) অনুরূপবর্ণনা পবিত্র কুরআনের অন্যান্য সূরায় এসেছে, [যেমন: সূরা আল-মুমিনুন: ৮৮, সূরা আল-মুলক: ১] এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিজ সত্তাকে পবিত্র ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত এবং সমস্ত ক্ষমতা যে তাঁরই হাতে সে ঘোষণা দিয়ে বান্দাকে আখেরাতের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাচ্ছেন যে, তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে তখন তিনি সবাইকে তার কাজ ও কথার সঠিক প্রতিফল প্ৰদান করবেন। আয়াতে ব্যবহৃত ملكوت এবং ملك একই অর্থবোধক। যার অর্থ ক্ষমতা, চাবিকাঠি ইত্যাদি। তবে ملكوت এর পরিধি ব্যাপক। [দেখুন: ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া


সূরা হা মীম আস সাজদাহ আয়াতঃ ৯-১২


৪১:৯ قُلۡ اَئِنَّکُمۡ لَتَکۡفُرُوۡنَ بِالَّذِیۡ خَلَقَ الۡاَرۡضَ فِیۡ یَوۡمَیۡنِ وَ تَجۡعَلُوۡنَ لَهٗۤ اَنۡدَادًا ؕ ذٰلِکَ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۚ
৪১:১০ وَ جَعَلَ فِیۡهَا رَوَاسِیَ مِنۡ فَوۡقِهَا وَ بٰرَکَ فِیۡهَا وَ قَدَّرَ فِیۡهَاۤ اَقۡوَاتَهَا فِیۡۤ اَرۡبَعَۃِ اَیَّامٍ ؕ سَوَآءً لِّلسَّآئِلِیۡنَ 
৪১:১১ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ هِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا اَوۡ کَرۡهًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیۡنَا طَآئِعِیۡنَ
৪১:১২ فَقَضٰهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوَاتٍ فِیۡ یَوۡمَیۡنِ وَ اَوۡحٰی فِیۡ کُلِّ سَمَآءٍ اَمۡرَهَا ؕ وَ زَیَّنَّا السَّمَآءَ الدُّنۡیَا بِمَصَابِیۡحَ ٭ۖ وَ حِفۡظًا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ

সূরা হা মীম আস সাজদাহ আয়াতঃ ৯-১২ এর বাংলা অর্থ

বল, ‘তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবে যিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন? আর তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ বানাতে চাচ্ছ? তিনিই সৃষ্টিকুলের রব’।  ০ আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন। ০ তারপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। তা ছিল ধোঁয়া। তারপর তিনি আসমান ও যমীনকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় আস’। তারা উভয়ে বলল, ‘আমরা অনুগত হয়ে আসলাম’। ০ তারপর তিনি দু’দিনে আসমানসমূহকে সাত আসমানে পরিণত করলেন। আর প্রত্যেক আসমানে তার কার্যাবলী ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। আর আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপমালার দ্বারা সুসজ্জিত করেছি আর সুরক্ষিত করেছি। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নির্ধারণ। ০
আল-বায়ান

English meaning of Surah Ha Meem As Sajdah Verses 9-12

Say, "Do you indeed disbelieve in He who created the earth in two days and attribute to Him equals? That is the Lord of the worlds."  ০ And He placed on the earth firmly set mountains over its surface, and He blessed it and determined therein its [creatures'] sustenance in four days without distinction - for [the information] of those who ask. ০ Then He directed Himself to the heaven while it was smoke and said to it and to the earth, "Come [into being], willingly or by compulsion." They said, "We have come willingly." ০ And He completed them as seven heavens within two days and inspired in each heaven its command. And We adorned the nearest heaven with lamps and as protection. That is the determination of the Exalted in Might, the Knowing. ০
Sahih International

সূরা হা মীম আস সাজদাহ আয়াতঃ ৯-১২ এর তাফসীর

৯. বলুন, তোমরা কি তাঁর সাথেই কুফারী করবে। যিনি যমীন সৃষ্টি করেছেন(১) দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ তৈরী করছ? তিনি সৃষ্টিকুলের রব্ব্‌!

(১) আলোচ্য আয়াতে মুশরিকদেরকে তাদের শিরক ও কুফরের কারণে এক সাবলীল ভঙ্গিতে হুশিয়ার করা উদ্দেশ্য। এতে আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিগুণ তথা বিরাটকায় আকাশ ও পৃথিবীকে অসংখ্য রহস্যের উপর ভিত্তিশীল করে সৃষ্টি করার বিশদ বিবরণ দিয়ে তাদেরকে এই বলে শাসানো হয়েছে যে, তোমরা এমন নির্বোধ যে, মনে স্রষ্টা ও সর্বশক্তিমানের সাথেও অপরকে শরীক সাব্যস্ত কর? এমনি ধরনের হুশিয়ারী ও বিবরণ পবিত্র কুরআনের অন্যত্র এভাবে উল্লেখিত হয়েছে, (كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ) [সূরা আল-বাকারাঃ ২৮]

১০. আর তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে দিয়েছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে(১) এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন সমভাবে যাচ্ঞাকারীদের জন্য।

(১) আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয় পবিত্র কুরআনে সংক্ষেপে ও বিস্তারিতভাবে বহু জায়গায় বিবৃত হয়েছে, কিন্তু কোনটির পরে কোনটি সৃজিত হয়েছে, এর উল্লেখ সম্ভবত: মাত্র তিন আয়াতে করা হয়েছে- (এক) হা-মীম সাজদার আলোচ্য আয়াত, (দুই) সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াত (هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُمْ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ) এবং (তিন) সূরা আন-নাযি’আতের নিম্নোক্ত আয়াতঃ (أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ بَنَاهَا ٭ رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا ٭ وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا ٭ وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَٰلِكَ دَحَاهَا ٭ أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءَهَا وَمَرْعَاهَا ٭ وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا) বাহ্যদৃষ্টিতে এসব বিষয়বস্তুর মধ্যে কিছু বিরোধও দেখা যায়। কেননা, সূরা বাকারাহ ও সূরা হা-মীম সেজদার আয়াত থেকে জানা যায় যে, আকাশের পূর্বে পৃথিবী সৃজিত হয়েছে এবং সূরা আন-নাযি আতের আয়াত থেকে এর বিপরীতে জানা যায় যে, আকাশ সৃজিত হওয়ার পরে পৃথিবী সৃজিত হয়েছে।

সবগুলো আয়াত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে মনে হয় যে, প্রথমে পৃথিবীর উপকরণ সৃজিত হয়েছে। এমতাবস্থায়ই ধুম্রকুঞ্জের আকারে আকাশের উপকরণ নির্মিত হয়েছে। এরপর পৃথিবীকে বর্তমান আকারে বিস্তৃত করা হয়েছে এবং এতে পর্বতমালা, বৃক্ষ ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর আকাশের তরল ধূম্রকুঞ্জের উপকরণকে সপ্ত আকাশে পরিণত করা হয়েছে। আশা করি সবগুলো আয়াতই এই বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বাকী প্রকৃত অবস্থা আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন। সহীহ বুখারীতে এ আয়াতের অধীনে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে কতিপয় প্রশ্ন ও উত্তর বর্ণিত হয়েছে। তাতে ইবন আব্বাস এ আয়াতের উপযুক্তরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। [বুখারী কিতাবুত তাফসীর, বাব হা-মীম-আস-সাজদাহ]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, “আল্লাহ্ মাটি সৃষ্টি করেছেন শনিবার, আর তাতে পাহাড় সৃষ্টি করেছেন রবিবার, গাছ-গাছালি সোমবার, অপছন্দনীয় সবকিছু মঙ্গলবার, আলো সৃষ্টি করেছেন বুধবার, আর যমীনে জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন বৃহস্পতিবার। আর আদমকে শুক্রবার আছরের পরে সর্বশেষ সৃষ্টি হিসেবে দিনের সর্বশেষ প্রহরে আসর থেকে রাত পর্যন্ত সময়ে সৃষ্টি করেছেন।” [মুসলিম: ২৭৮৯] এই হিসাব মতে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সাত দিনে হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু কুরআনের আয়াত থেকে পরিস্কারভাবে জানা যায় যে, এই সৃষ্টিকাজ ছয় দিনে হয়েছে। এক আয়াতে আছেঃ “আমি আকাশ পৃথিবী ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।” [সূরা কাফ: ৩৮]

এ কারণে হাদীসবিদগণ উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনাটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা প্ৰদান করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে অগ্রাহ্য বলে মনে করেছেন। আবার কেউ কেউ বর্ণনাটিকে কাব আহবারের উক্তি বলেও অভিহিত করেছেন। [ইবনে কাসীর] কিন্তু যেহেতু হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, তাই এটাকে অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই। আল্লামা মুহাম্মাদ নাসেরুদ্দিন আল-আলবানী বলেন, এ হাদীসের সনদে কোন সমস্যা নেই। আর এ বর্ণনাটি কোনভাবেই কুরআনের বিরোধিতা করে না। যেমনটি কেউ কেউ মনে করে থাকে। কেননা, হাদীসটি শুধুমাত্র যমীন কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা বর্ণনা করে। আর তা ছিল সাতদিনে। আর কুরআনে এসেছে যে, আসমান ও যমীন সৃষ্টি হয়েছিল ছয় দিনে। আর যমীন সৃষ্টি হয়েছিল দুই দিনে। আসমান ও যমীন সৃষ্টির ছয়দিন এবং এ হাদীসে বর্ণিত সাতদিন ভিন্ন ভিন্ন সময় হতে পারে। আসমান ও যমীন ছয়দিনে সৃষ্টি হওয়ার পর যমীনকে আবার বসবাসের উপযোগী করার জন্য সাতদিন লেগেছিল। সুতরাং আয়াত ও সহীহ হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

সারকথা এই যে, পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহকে একত্রিত করার ফলে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিতরূপে জনা যায়, প্রথমত: আকাশ, পৃথিবী ও এতদূভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু মাত্র ছয় দিনে সৃজিত হয়েছে। সূরা হা-মীম সেজদার আয়াত থেকে দ্বিতীয়ত: জানা যায় যে, পৃথিবী, পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি ইত্যাদি সৃষ্টিতে পূর্ণ চার দিন লেগেছে। তৃতীয়ত: জানা যায় যে, আকাশমন্ডলীর সৃজনে দুদিন লেগেছিল। চতুর্থত: আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সৃষ্টির পর যমীনকে বসবাসের উপযোগী করতে সাতদিন লেগেছিল। এ সাতদিনের সর্বশেষ দিন শুক্রবারের কিছু অংশ বেঁচে গিয়েছিল, যাতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কোন কোন মুফাসসির উপরোক্ত হাদীস অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে আসমান ও যমীন সৃষ্টির ক্ষেত্রে শুধু কুরআনের ভাষ্যের উপর নির্ভর করেছেন। তাদের মতে, এসব আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এই যে, আকাশ সৃষ্টির পরে পৃথিবীকে বিস্তৃত ও সম্পূর্ণ করা হয়েছে। তাই এটা অবান্তর নয় যে, পৃথিবী সৃষ্টির কাজ দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম দু'দিনে পৃথিবী ও তার উপরিভাগের পর্বতমালা ইত্যাদির উপকরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর দু’দিনে সপ্ত আকাশ সৃজিত হয়েছে। এরপর দু'দিনে পৃথিবীর বিস্তৃতি ও তৎমধ্যবর্তী পর্বতমালা, বৃক্ষরাজি, নদনদী, ঝর্ণা ইত্যাদির সৃষ্টি সম্পন্ন করা হয়েছে। এভাবে পৃথিবী সৃষ্টির চার দিন উপর্যুপরি রইল না। সূরা হা-মীম সেজদার আয়াতে প্রথমে (خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ) দুদিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলে মুশরিকদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে। অতঃপর আলাদা করে বলা হয়েছে- (وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِن فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ) “আর তিনি স্থাপন করেছেন অটল পর্বতমালা ভূপৃষ্ঠে এবং তাতে দিয়েছেন বরকত এবং চার দিনের মধ্যে এতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন”।

এতে তফসীরবিদগণ একমত যে, এই চার দিন প্রথমোক্ত দুদিনসহঃ পৃথক চার দিন নয়। নতুবা তা সর্বমোট আট দিন হয়ে যাবে, যা কুরআনের বর্ণনার বিপরীত। এখন চিন্তা করলে জানা যায় যে, (خَلَقَ الْأَرْضَ فِي يَوْمَيْنِ) বলার পর যদি পবর্তমালা ইত্যাদির সৃষ্টিও দুদিনে বলা হত, তবে মোট চারদিন আপনা-আপনিই জানা যেত, কিন্তু পবিত্র কুরআন পৃথিবী সৃষ্টির অবশিষ্টাংশ উল্লেখ করে বলেছে, এ হল মোট চার দিন। এতে বাহ্যত: ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এই চার দিন উপর্যুপরি ছিল না; বরং দু’ভাগে বিভক্ত ছিল। দুদিন আকাশ সৃষ্টির পূর্বে এবং দুদিন তার পরে। আয়াতে (وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا) বাক্যে আকাশ সৃষ্টির পরবর্তী অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। [ইবন কাসীর]

১১. তারপর তিনি আসমানের প্রতি ইচ্ছে করলেন, যা (পূর্বে) ছিল ধোঁয়া। অতঃপর তিনি ওটাকে (আসমান) ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।
১২. অত:পর তিনি সেগুলোকে সাত আসমানে পরিণত করলেন দু’দিনে এবং প্রত্যেক আসমানে তার নির্দেশ ওহী করে পাঠালেন এবং আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করলাম প্ৰদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের ব্যবস্থাপনা।
তাফসীরে জাকারিয়া

******************************************

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url