আকাশ সৃষ্টির রহস্য


আকাশ সৃষ্টির রহস্য


আল্লাহ পাকের এক অপূর্ব সৃষ্টি নীল আকাশ

মাথার ওপর বিস্তৃত ওই যে নীল শামিয়ানা, নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রেখেছে নিখিল ধরণীকে, তার নাম আকাশ। মহান আল্লাহতায়ালার অজস্র সৃষ্টির মধ্যে এক রহস্যময় সৃষ্টি। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার মুগ্ধতাই অন্যরকম।

আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করার অনুভূতি অন্যরকম

মানবজীবনের যত দুঃখ, কষ্ট, জরাজীর্ণ যাই থাকুক না কেন, আকাশের দিকে এক পলক তাকালে অধরা ওই আকাশই যেন সব দুঃখকে বুকে টেনে নিয়ে উজাড় করে দেয় পরম মমতা। মায়াময় অদৃশ্য হাতে মুছে দেয় কষ্টের গ্লানি। খুঁটিহীন আকাশের দিকে তাকালে মনের গহিনে যখন প্রশ্ন উঁকি দেয়, কে সেই কারিগর?

মহাকাশের স্রষ্টা

যে খুঁটিহীন বিশাল আকাশকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন আপন কুদরতে? তখন মনের গহিনে অদৃশ্য শব্দরা ঘোষণা করে- সুনিপুণ আকাশ, সে তো মহান আল্লাহরই সৃষ্টি পবিত্র কোরআনেও আল্লাহতায়ালা সে কথাই বলেছেন, আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর মজবুত সপ্ত আকাশ। (সূরা নাবা, আয়াত ১২)

মহাকাশের সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞানের গবেষণা

নিখিল জাহানে আল্লাহতায়ালা যত রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছেন, আকাশ যেন সেসব রহস্যের আকর। এর রহস্যের শেষ কোথায় তা আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সপ্তস্তর বা সাত আকাশের পুরুত্ব দূরত্ব নিয়ে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা করেছেন তাদের ধারণা, সপ্তকাশের প্রথম স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক . ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় আকাশের ব্যাস ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ, তৃতীয় স্তরের বিস্তার মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম স্তরটি বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে, ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের আর সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত।

আকাশের সৌন্দর্য্য

আকাশ শুধু রহস্য দিয়েই ছাওয়া নয়, আকাশের রয়েছে অনন্য সৌন্দর্যতাও সেই সৌন্দর্যের বিমুগ্ধতা আচ্ছন্ন করে উদাসী চিত্তকে।

আকাশ মানেই মেঘেদের অবাধ বিচরণ। শুধু মেঘ আর মেঘ। পাল তোলা নৌকার মতো আকাশ দাপিয়ে বেড়ানো মেঘমালা এনে দেয় সস্থির আবেশ। আকাশের প্রকৃত রূপ-সৌন্দর্য ফুটে ওঠে সন্ধ্যালগ্নে। সন্ধ্যায় অস্তগামী সূর্যের সাত রং পশ্চিম আকাশে ছড়িয়ে পড়লে যে মোহনীয় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, সে সৌন্দর্যের যথাযথ বর্ণনা করে সাধ্য কার? সৌন্দর্যময় আকাশের সৌন্দর্যের কি শেষ আছে? দিনে এর এক রকম সৌন্দর্য, তো রাতে আরেক রকম সৌন্দর্য। দিবসের নীল আকাশ নির্জন রজনীতে সাজে কালো রঙের আবরণে। তখন কালো আকাশের গায়ে জ্বলে ওঠে লাখো কোটি নক্ষত্রের রুপালি আলো।

আকাশের গায়ে প্রজ্বলিত নক্ষত্র খচিত কালো বেনারসি রাতের আকাশকে করে আরও সৌন্দর্যময়। আর চাঁদের নির্মল আলোয় হয়ে ওঠে মোহনীয়। সে মোহনীয় সৌন্দর্যের অজস্র ধারায় স্নাত হয় নীরব প্রকৃতি। মাঝে মাঝে আকাশকে মায়ের আঁচল মনে হয়। অথবা যেন একটি নীল সমুদ্র। আহা! একটিবার যদি নীল সমুদ্রে সাঁতার কাটতে পারতাম। তা কি আর সম্ভব? তাই আকাশের কূলঘেঁষে ওই যে নোলকের মতো মেঘধনু হাসি ছড়ায়, তার সঙ্গে গড়ি সখ্যতার মিতালি।

আকাশ চিন্তাশীলদের জন্য চিন্তার খোরাক

আকাশের রূপ-রহস্য শুধু উদাস মনের ভালোলাগাই নয়, যে চিন্তাশীলদের মনের খোরাকও। বিশাল আকাশের নান্দনিকতা, নিপুণত, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে স্রষ্টার পরিচয় পাওয়া যায়। কেননা এর পরতে পরতে যে রয়েছে তার অসীম কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন। পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ভূমণ্ডল সৃজনে এবং দিন রাতের পরিবর্তনে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং নভোমণ্ডল ভূমণ্ডল নিয়ে চিন্তাভাবনা করে, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয়- হে আমার প্রতিপালক! আপনি এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্রতম। (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৯০-১৯২।)

আমরা কত সময় অযথা নষ্ট করি। অথচ একটু সময় করে আল্লাহতায়ালার সুনিপুণ আকাশ নিয়ে ভাবি না। তাই তো আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আকাশের নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৩২) আমাদের কি উচিত নয়, নভোমণ্ডল ভূমণ্ডেলর সৃষ্টিকে নিয়ে ভাবা? যে মহান স্রষ্টা আমাদের মাথার ওপর আকাশকে ছাদ রূপে সৃষ্টি করেছেন, সে মহানের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আসুন, যে আকাশে মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষভাগে হাজির হয়ে বান্দাকে ডাকেন, সেই আকাশের মালিকের ডাকে সাড়া দিই।


===============================
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আরও বেশি মানুষের কাছে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দিতে শেয়ার ও কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url