শিক্ষনীয় - ১ || গল্প পবিত্র কুরআনে বর্ণিত তিন ভাইয়ের সম্পদ দান না করার ভয়ঙ্কর পরিণতি
কুরআনের গল্প
সম্পদ দান না করার ভয়ঙ্কর পরিণতি
পবিত্র কুরআনের সুরা আল
কলম-এর ঘটনাঃ
বিভিন্ন তাফসীরে উল্লেখ রয়েছে যে, ইয়েমেনের প্রদেশের কোন একটি বাগানের মালিক ছিল একজন আল্লাহভীরু লোক। সে বাগানের ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ গরিব-মিসকিনগণকে দান করতঃ। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার তিন পুত্র তার মালিক হলো। তারা ভাবল যে, আমাদের লোকসংখ্যা অনেক। আমাদের পরিবার-পরিজনের তুলনায় বাগানের ফসল সম্পদ খুবই অপ্রতুল। সুতরাং গরিব-মিসকিনগণকে ফসলের নির্দিষ্ট একটি অংশ দান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর নয়। কিন্তু কোনো এক ছেলে এই চিন্তাধারার বিপরীত ছিল। সে গরিব-মিসকিনের প্রতি ছিল সহানুভূতিশীল। তবে তার কথায় অন্যান্যরা কান দিল না। তারা প্রতিজ্ঞা করল যে, আগামী দিন সকালবেলা আমরা ভিক্ষুকদল আসবার পূর্বেই গিয়ে ফসল কেটে আনবো। কিন্তু এ শপথ ও প্রতিজ্ঞায় আল্লাহর ইচ্ছাকে শমিল করল না। অর্থাৎ, তারা এ কথা বলল না যে, আল্লাহ চাইলে [ইনশাআল্লাহ] আমরা আগামীকল্য সকাল বেলা গিয়ে ফসল কেটে আনবো।
এ ইনশাআল্লাহ না বলা এবং গরিব-মিসকিনগণকে না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের অপরাধে তাদের ঘুমে থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদের বাগানের উপর গজব নজিল করলেন। ফলে প্রচন্ড মরুঝড়-বায়ু বাগানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাগানের ফসলকে মথিত করে সম্পূর্ণরূপে বিনাশ ও ধ্বংশ করে ফেলল। বাগানটি দেখলে মনে হতো যে, মথিত হয়ে চর্বিত ফসলের ন্যায় হয়ে গেছে।
দানের উপকারিতা সম্পর্কিত একটি হাদিসহুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ অতঃপর সেই মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষণ করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটি সেই পানির অনুসরণ করে কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক।’ এটি ছিল সেই নাম, যে নাম মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল। বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, ‘আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ শুনলাম। তুমি কি এমন কাজ কর?’ বাগান-ওয়ালা বলল, ‘এ কথা যখন বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি। অতঃপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজন সহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।’’মুসলিম ২৯৮৪, আহমাদ ৭৮৮১
বাগানের বিনাশ ও ধ্বংসযজ্ঞ অবলোকন করে বলল- আমরা পথ ভুলে হয়তো অন্য কোনো বাগানে এসেছি। আমাদের বাগানতো এটা নয়। আমাদের বাগান কত সুন্দর, সুজলা-সুফলা শস্যভরা, আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু বাগানের চতুর্দিকের সীমানা ও আলামত দেখে তারা চেতনা ফিরে পেল।
তাদের নিজেদের গর্ব-অহংকার ও আল্লাহর সাথে নাফরমানি করার কথা মনে হলো। আর বলল, আমাদের উপর আল্লাহর লানত এসেছে, আমাদেরকে ফসল হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাদের মধ্যে যে লোকটি স্বভাব-চরিত্রে উত্তম ছিল এবং ভিক্ষুকদের প্রতি সংবেদনশীল ছিল, সে বলল, আমি কি পূর্বে তোমাদেরকে আল্লাহর সাথে নাফরমানি না করার জন্য বলেছিলাম না? এটা আল্লাহর সাথে নাফরমানিকরণ, ভিক্ষুকগণকে বঞ্চিত করার ইচ্ছা এবং গর্ব-অহংকারের পরিণতি ছাড়া কিছুই নয়। এখনও সময় রয়েছে, গুনাহ হতে তওবা করো। আল্লাহর মহিমা ঘোষণা এখনও কেন করছ না? সর্বহারা হওয়ার পরই তাদের বিভ্রান্তির দশা কাটল।
তারা মনে মনে তওবা করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার মহিমা প্রকাশ করছি। আপনিই মহাশক্তিধর। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমরা সীমালঙ্ঘণ করে ফেলেছি। ক্ষমা না করলে আমাদের আর কোনা উপায় নেই।
১৭. নিশ্চয় আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেভাবে পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। যখন তারা কসম করেছিল যে, অবশ্যই তারা সকাল বেলা বাগানের ফল আহরণ করবে।১৮. আর তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি।১৯. অতঃপর তোমার রবের পক্ষ থেকে এক প্রদক্ষিণকারী (আগুন) বাগানের ওপর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে গেল, আর তারা ছিল ঘুমন্ত।২০. ফলে তা (পুড়ে) কালো বর্ণের হয়ে গেল।২১. তারপর সকাল বেলা তারা একে অপরকে ডেকে বলল,২২. ‘তোমরা যদি ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল তোমাদের বাগানে যাও’।২৩. তারপর তারা চলল, নিম্নস্বরে একথা বলতে বলতে-২৪. যে, ‘আজ সেখানে তোমাদের কাছে কোন অভাবী যেন প্রবেশ করতে না পারে’।২৫. আর তারা ভোর বেলা দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি নিয়ে সক্ষম অবস্থায় (বাগানে) গেল।২৬. তারপর তারা যখন বাগানটি দেখল, তখন তারা বলল, ‘অবশ্যই আমরা পথভ্রষ্ট’।২৭. ‘বরং আমরা বঞ্চিত’।২৮. তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যক্তিটি বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা কেন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করছ না’?২৯. তারা বলল, ‘আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমরা যালিম ছিলাম’।৩০. তারপর তারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে লাগল।৩১. তারা বলল, ‘হায়, আমাদের ধ্বংস! নিশ্চয় আমরা সীমালঙ্ঘনকারী ছিলাম’।৩২. সম্ভবতঃ আমাদের রব আমাদেরকে এর চেয়েও উৎকৃষ্টতর বিনিময় দেবেন। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের প্রতি আগ্রহী।৩৩. এভাবেই হয় আযাব। আর পরকালের আযাব অবশ্যই আরো বড়, যদি তারা জানত।
তারা আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করে আশা করল যে, আল্লাহ মহান ও অতিশয় দয়ালু। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি যে, তিনি নিজগুণে আমাদের ক্ষমা করে এ বাগানের পরিবর্তে উত্তম বাগান আমাদেরকে দান করতে পারেন। আমরা আমাদের যাবতীয় সমস্যা তাঁর নিকট অর্পণ করলাম এবং তাঁর দিকেই মনোনিবেশ করলাম।
তাফসীরকারগণ লিখেছেন- তাদের এই তওবার ফলে এবং নিজেদের যাবতীয় সমস্যা আল্লাহর নিকট সোপর্দকরণ এবং সত্যদীনের ধারক হওয়ার কারণে আল্লাহ তা’আলা এটার তুলনায় অনেক অনেক গুণ উত্তম ও সুজলা-সুফলা শস্যভরা উদ্যান দান করে অপূর্ব সম্পদশালী করেছিলেন।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url