সাহু সিজদার সঠিক নিয়ম


নামাজে একাগ্রতা বা মনযোগী থাকা খুবই জরুরী। তারপরও নামাজে বিভিন্ন রকম ভুল ত্রুটি হয়েই যায়। নামাজে কোন পর্যায়ে কিরূপ ভুল হলে, কোন অবস্থায় কখন কিভাবে সাহু সিজদা দিয়ে সেই নামাজকে শুধরানো যায় আসুন আমরা এখান থেকে সহীহ হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জেনে নেই।


সাহু সিজদাহ দেওয়ার পদ্ধতি

সাহু সেজদার চার অবস্থাঃ 

১. যদি মুছল্লী সালাতের কোন কাজ ভুলে বাড়িয়ে ফেলে, তাহলে তার উপর সাহু সেজদা ওয়াজিব। যেমন কিয়াম (দাঁড়ানো), বা রুকু বা সেজদা যেমন: দুইবার রুকু করা অথবা বসার সময় না বসে উঠে যাওয়া অথবা চার রাকাত সালাত পাঁচ রাকাত আদায় করা ইত্যাদি। এ সকল কাজ ভুলে বেশি হয়ে গেলে সালাতের সালামের পরে সাহু সেজদা করতে হবে। ভুলের স্মরণ সালাম ফিরানোর আগে হোক বা পরে হোক, সাহু সেজদা সালাম ফিরানোর পরেই করবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, —(বুখারী হা/১২২৬, তাওহীদ প্রকাশনী)। 

২. যদি মুছল্লী সালাতের কোন রোকন ভুলে যায় আর যদি পরের রাকাতে সেই রোকন আসার আগেই স্মরণ হয়, তাহলে পূর্বের রাকাতে ফিরে এসে উক্ত রোকন পূরণ করবে। আর যদি পরের রাকাতে সেই রোকন পর্যন্ত পৌঁছার পরে স্মরণ হয় তাহলে তার পূর্বের রাকাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি সালাম ফিরানোর পরে স্মরণ হয়, তাহলে সেই রোকন ও তার পরের কাজ গুলো পূরণ করে সালামের পর সাহু সেজদা কররে। আর যদি সালাতের মধ্যে কোন কাজ ছুটে যায় এবং সালাম ফিরিয়ে ফেলে। যেমন : চার রাকাত বিশিষ্ট সালাতে যদি ভুলে এক রাকাত ছুটে যায় এবং তিন রাকাত আদায় করার পরে সালাম ফিরেয়ে ফেলে এবং সালামে পরেই তা বুঝতে পারে, তাহলে নতুন করে তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া শুধুমাত্র সালাতের নিয়তে বাকি রাকাতই আদায় করবে এবং শেষ বৈঠক করে আত্তাহিয়্যাতু ও দরুদ ইত্যাদি পড়ে সালাম ফিরাবে। তার পর সাহু সেজদা করবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, — (বুখারী হা/১২২৮, তাওহীদ প্রকাশনী)। ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) বর্ণনায়, — (মুসলিম, মিশকাত হা/১০২১)। 

৩. যদি মুছল্লীর সালাতে ভুলক্রমে কোন ওয়াজিব ছুটে যায় যেমন: যদি কেউ প্রথম বৈঠক করতে ভুলে যায়; তাহলে সালামের পূর্বেই সাহু সেজদা করে নিবে। আবদুল্লাহ ইবনে বুহাইনাহ (রাঃ)হতে বর্ণিত-(বুখারী হা/১২২৫, তাওহীদ প্রকাশনী)। 

৪. মুছল্লী যদি তার রাকাতের সংখ্যায় সন্দেহ করে। যেমন: তিন রাকাত, না চার রাকাত? তাহলে কম সংখ্যা অর্থাৎ তিন রাকাত ধরে বাকি রাকাত পূরণ করবে এবং সালামের পূর্বেই সাহু সেজদা করবে। কিন্তু যদি সন্দেহের পাল্লা কোন এক দিকে ভারি হয়, তাহলে তার উপর ভিত্তি করে আমল করবে এবং সালামের পরে সাহু সেজদা করবে। ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন, রাসূল বলেনঃ ‘আমি তোমাদেরই মত মানুষ, আমিও ভুলে যাই, যেমন তোমরা ভুলে যাও। সুতরাং আমি যখন ভুল করি তখন তোমরা মনে করিয়ে দিও, আর তোমাদের যখন কেউ সন্দেহ করবে তখন সে একটা রায় কায়েম করবে। তারপর ঐ রায় মোতাবেক সালাত পুরো করে ছালাম ফিরাবে এবং দ্বিতীয় সিজদাহ দিবে’। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১০১৭,৯৪৮)।

* যদি সালাতের কোন কাজ সালাতের অন্য কোন স্থানে বৃদ্ধি করে দেয়, তাহলে তার সালাত বাতিল হবে না এবং এতে সাহু সেজদাও ওয়াজিব হবে না। তবে এক্ষেত্রে সাহু সেজদা করা উত্তম। যেমন: রুকুতে বা সেজদাতে কুরআন পাঠ করা, দাঁড়ানো (কিয়াম) অবস্থায় আত্তাহিয়্যাতু পড়া ইত্যাদি। 
* ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করার সময় কোন ওজরের কারণে যদি মুক্তাদী সালাতের কোন রোকন বা তার চেয়ে বেশি অংশ আদায়ে ইমামের পিছে পড়ে যায়, তাহলে সে অপূর্ণ অংশ আদায় করে ইমামের সাথে মিলিত হবে। (কুরআন সুন্নার আলোকে ইসলামি ফিকাহ মুহাম্মদ বিন ইবরাহীম আত তুয়াইজিরী ২/৩ পৃষ্টা)। শুধুমাত্র ডান দিকে ছালাম ফিরিয়ে সহো সিজদাহ দেওয়াঃ হিদায়ার ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী বলেনঃ একদিকে ছালাম ফিরাকে বিদ’আত বলা হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর ১/২২২ পৃষ্ঠা)। পাকিস্তানের হাদীস ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ ভারতের বিখ্যাত মনীষী আল্লামা আবদুল জলিল সামরুদী এবং পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা সাদেক সিয়ালকোটী (রহঃ) বলেনঃ স্রেফ একদিকে ছালাম ফিরানোর পর সহো সিজদাহ দেওয়া কোন হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়। (আইনী তুহফা সালাতে মুস্তফা বরাতে যাহরাহ ২০০ পৃষ্ঠা)। হানাফী মাযহাবের নামে মত প্রকাশ করতে যেয়ে ইমাম ফখরুল ইসলাম (রঃ) এর মতঃ চেহারা ডানে বামে কোনদিকে না ফিরিয়ে সোজা রেখেই এক ছালাম করবে এবং সিজদায় চলে যাবে। ইমাম কারখী (রঃ) এর মতে ডান দিকে এক ছালাম করবে ইমাম নাখঈ ও এই মত পোষন করেছেন। (আল হেদায়া প্রথম খন্ড টিকা পৃঃ ১৩৫; ইঃ ফাঃ)। এটা শুধুই মত দলীল নেই, দলীল উল্লেখ করেননি। 
বাংলাদেশ সোলেমানিয়া বুক হাউস প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ মুসলিম শরীফের হাদীস ও আবু দাউদ গ্রন্থে ‘এক দিকে সালাম ফিরাবার পর’ কথাটা এবং ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ১৪৪৫ নং হাদীসে সহ বিভিন্ন প্রকাশনীর অনুবাদে পাওয়া যায়, যা মূল গ্রন্থে নেই। এটা অনুবাদকের বাড়তি যোগ করা বলে প্রতিয়মান হয়। হাদীসটিঃ ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ)  আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল বলেছেন, তোমরা কেউ যখন সালাতে দাড়াও, তখন শয়তান তার কাছে এসে তাকে সন্দেহ ও দ্বিধা দ্বন্দের মধ্যে ফেলে দেয়। এমনকি সে কয় রাক’আত সালাত আদায় করলো তাও স্মরণ করতে পারে না। তোমরা কেউ এরূপ অবস্থা হতে দেখলে যেন বসে বসেই দু’টি (অতিরিক্ত) সিজদাহ করে নেই। (মুসলিম হা/৮৮৩, ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-৩৮, তাওহীদ প্রকাশনী)। পিস টিভির স্কলার আলেমগণ তাদের আলোচনায় বলেন, শুধু ডান দিকে সালাম ফিরানোর পর সিজদাহ দেওয়া অতঃপর আবার তাশাহুদ পড়ার সহীহ কোন দলীল নেই এটা ভিত্তিহীন। সহো সিজদাহ দেওয়ার পর তাশাহুদ পড়ে ছালাম ফিরানোঃ সালমা ইবনে আলকামাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মোহাম্মদ (ইবনু সিরীন)(রহঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম,সিজদাহ সাহুর পর তাশাহুদ আছে কি? তিনি বললেন,আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এর হাদীসে তা নেই। (বুখারী ইঃ ফাঃ হা/১১৫৬)। সহো সিজদাহ দেওয়ার পর তাশাহুদ পড়া সম্পর্কে ইমরান বিন হুসাইন বর্ণিত আবু দাউদ ১০৩৯ নম্বরে যে বর্ণনা এসেছে তা যঈফ এবং তিরমিযী শরীফে যে হাদীস এসেছে তা যঈফ। দ্বিতীয়তঃ একই রাবী কর্তৃক বর্ণিত বুখারী ও মুসলিমে তাশাহুদের কথা নেই। একইভাবে আলবানী বলেনঃ কেবলমাত্র ডানে ছালাম ফিরিয়ে সহো সিজদাহ দেওয়ার কোন প্রমান নেই। হাফিয যায়লাঈ হানাফী বলেন, সহো সিজদাহর পর তাশাহুদ পড়ার কোন সহীহ হাদীস নেই। (নাসবুর রায়াহ, মাসায়েল ও সালাত শিক্ষা ৫৩ পৃষ্ঠা)। শাওকানী বলেন, দ্বিতীয়বার তাশাহুদ পড়া সম্পর্কে ইমরান, ইবনে মাস’উদ, মুগীরাহ ও আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে হাদীসগুলো পাওয়া যায় তার সবগুলোই যঈফ ও দুর্বল। (নায়লুল আওতার ২য় খন্ড ৩৭৩ পৃষ্ঠা)। সালাতের কম বেশি যাই-ই হোক সালামের আগে বা পরে দু’টি ‘সিজদায় সাহো’ দিতে হবে। (মুসলিম হা/১১৮৭, ৫৭২)।





সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আরও বেশি মানুষের কাছে ইসলামের জ্ঞান পৌঁছে দিতে শেয়ার ও কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url