চোখের জলের মূল্য



আল্লাহর কাছে চোখের জলের মূল্য অপরিসীম


একজন মুমিন বান্দার জন্য তার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত হলো সেই মুহূর্ত, যখন সে একাকী নির্জনে, জায়নামাজে বসে, মাওলার দরবারে দুখানা হাত উঠিয়ে, অনবরত চোখেরজল বিসর্জন দেয়। এভাবে চোখেরজল বিসর্জন যে কতটা তৃপ্তিকর, কতটা স্বাদের; কতটা প্রশান্তির, তা একমাত্র অশ্রুবিসর্জনকারী বান্দা-ই বুঝতে পারে। তখন মনে এতোটাই শান্তির শীতল পরশ অনুভূত হয় যে, মন চায়--আহ, যদি জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে এরকমভাবে মাওলার দরবারে অশ্রুবিসর্জন দিতে পারতাম! বিশ্বাস না হলে, একটিবার করেই দেখুন না!

 

আকাশ বৃষ্টিবর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু যেকোনো সময় বৃষ্টিবর্ষণ করে না। যখন আকাশে মেঘের ঘনকালো চাকা দেখা দেয়, তখনই আকাশ বৃষ্টি দেয়। ঠিক তেমনি মানুষের আঁখিযোগলও অশ্রুপাত করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু চাইলেই অশ্রুপাত করতে পারে না। যখন মনের মধ্যে দুঃখ, ব্যথা, বেদনা ও কষ্টের চাকা জমে থাকে, তখন সেই চাকা আস্তে আস্তে, গলে গলে অশ্রুজল হয়ে চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে।

 

আমরা মানুষ। দিল সবসময় এক থাকে না। কখনও বা নরম হলেও বেশিরভাগ সময় পাথর হয়ে থাকে। কান্না করতে চাইলেও কান্না আসে না। কিন্তু দুঃখ, ব্যথা, বেদনা ও কষ্টের আঘাতে যখন মন নরম হয়ে পড়ে, তখনই কান্না আসে। না চাইলেও এসে যায়। ইচ্ছা করলেও রোধ করা যায় না। তখন এক কাজ করতে পারেন, চটজলদি রুমের দরজা লাগিয়ে দেবেন। নিজেকে একাকী করে নেবেন। জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়বেন। সেজদায় পড়ে মাওলার কুদরতি কদমে আপনার অশ্রুগুলো বিসর্জন দেবেন।

 

সেজদায় সম্ভব না হলে, নামাজান্তে দুহাত উঠিয়ে মুনাজাতে অশ্রুগুলো বিসর্জন দিয়ে ফেলবেন। এতে করে আপনার অশ্রুগুলো কাজে লাগবে। নইলে এই অশ্রুগুলো বেকার ঝরবে। মূল্যহীন হয়ে যাবে। জানেন না, আল্লাহর কাছে একজন বান্দার চোখেরজল কতইনা দামি! এই দামি জিনিসটাকে কেন বেহুদা খরচ করবেন? অথচ, চাইলেই সময়মতো এই দামি জিনিসটাকে আপনি খরচ করতে পারেন না। বাহানা করেও দুফোঁটা তপ্ত অশ্রু ঝরাতে পারেন না। নিজেকে পাথুরে দিলের মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করেন তখন!

 

এমনিই কি আর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত প্রকার লোককে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন। সেই সাতপ্রকার লোকদের মধ্য থেকে একপ্রকার লোক হলো সে, যে নির্জনে বসে আল্লাহকে ডাকে, আর তার চোখ অশ্রুপ্লাবিত হয়! (সহিহ বুখারি: ২/১৪৪, আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত)

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি; তিনি বলেছেন, ‘দুটি চোখকে দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না; প্রথম হলো সেই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। আর দ্বিতীয় হলো সেই চোখ; যা আল্লাহর পথে (জিহাদে) পাহারায় রাতযাপন করে। (তিরমিজি)

 

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন এ আয়াতটি নাজিল হয়।

أَفَمِنْ هَذَا الْحَدِيْثِ تَعْجَبُوْنَ، وَتَضْحَكُوْنَ وَلاَ تَبْكُوْنَ

অর্থাৎ ‘তবে কি তোমরা এ কথায় বিস্ময়বোধ করছ? হাসছ এবং কান্না করছ না?!’

 

তখন আহলে সুফফার (একদল সাহাবা) সবাই ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে কাঁদতে লাগলেন এবং তাদের চোখের পানি গাল বেয়ে বইতে লাগলো। তাঁদের কান্নার শব্দ শুনে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও কাঁদতে লাগলেন। তাঁর কান্না দেখে আমরাও কাঁদতে লাগলাম।




****************************************

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url