দ্বীন থেকে ছিটকে পড়া এবং দ্বীনে ফিরে আসা



দ্বীন থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার গল্প এবং হিদায়াত

 

দ্বীনে ফেরার কত গল্প আমরা শুনি! অন্ধকার থেকে আলোয় আসার গল্প। তবে বাস্তবতার কিছু ভিন্ন চিত্রও থাকে। অপ্রিয় চিত্র। অপছন্দনীয় চিত্র।

দ্বীন থেকে ছিটকে পড়ার গল্পগুলো সেরকমই: ভয়ানক, কষ্টদায়ক, বাস্তব! আসুন এরকম কিছু গল্প আমরা জেনে নেই। যাতে করে নিজেরা সাবধান হতে পারি এবং নিজেদের আপনজনকে দ্বীন থেকে ছিটকে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে পারি।

 

১.

ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়েদের দিকে চোখ পড়লে যে মেয়েটি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে তাদের হিদায়াতের জন্য দু’আ করত, সেই বোরকা পড়া মেয়েটিই আজ বোরকা ছেড়ে টাইট জিন্স এবং ফতুয়া পড়ে দিব্যি রাস্তায় হেঁটে চলে! সেতো এখন নামী দামী একটি প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্রী। যুগের হাওয়ার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বেচারী নিজেকেই ছেড়ে দিল…

 

২.

ফিৎনা ছড়ানোর ভয়ে ছবি তোলা হাসিমুখে অ্যাভয়েড করা মেয়েটিও আজ ছেলেদের সাথে অনায়াসে সেলফি তোলে! সেই ছবি ফেইবুক, ইস্টাগ্রামের মাধ্যমে শত শত গায়েরে মাহরামদের মাঝে ছড়িয়ে পরে।

দলবেঁধে ছেলে বন্ধুরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তার শরীরটা চোখ দিয়ে মেপে নেয়। মেয়েটির নাকি কিছুই গায়ে লাগে না! কারণ, মেয়েটি এখন দামী একটা ভার্সিটিতে পড়ে।

 

৩.

যেই মেয়েটি এককালে বিষন্নতার ঔষধ হিসেবে নামাজ, যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতকে বেছে নিতো, আজকাল সে হারাম গানবাজনা, হ্যাঙ্গআউট, নাইট আউটের মাদকের নেশার তালে বুঁদ হয়ে থাকে! আধুনিকতার মায়াজাল ওকে বশ করে ফেলেছে।

 

৪.

যে ছেলেটাকে কোনো বাধা বিপত্তিই মসজিদে যাওয়ার পথে আটকাতে পারতো না, সেই ছেলের কানে কেন আজ আযানের ধ্বনি পৌছায় না! কারণ, ছেলেটি আজ নামকরা কলেজে বা ভার্সিটিতে পড়ে। জ্ঞানের মহা সাগরে পড়ে বেচারা নিজেই আজ অজ্ঞান……

 

৫.

মাদ্রাসায় পড়ুয়া দ্বীনের পথে অবিচল থাকা ছেলেটি যখন ভার্সিটিতে পদার্পণ করে তখন তার সঙ্গী  হয়ে উঠলো দুই আঙ্গুলের মাঝে ফুঁকতে থাকা সিগারেট আর এক হারাম সম্পর্ক ...! কীভাবে ধোয়া গুলোর সাথে সেও হারিয়ে গেল, নিজেও টের পেল না!!

অবশ্যই দ্বীনের পথে আসা কঠিন। তার চেয়েও কঠিন আমৃত্যু এই পথে হেঁটে চলা। সবাই যেমন এ পথে আসতে পারে না, তেমনি এই পথে এসে গেলে সবাই টিকেও থাকতে পারে না। তাওফিক লাগে, ইচ্ছাশক্তি লাগে, পরিশ্রম লাগে, আল্লাহর রহমত এবং বারাকাহ লাগে!

কেউ হেরে যায় জীবনের কাছে, কেউ বাস্তবতার কাছে, কেউ বা নফস, ‌ শয়তান অথবা সমাজের কাছে!

 

ভয় লাগে। প্রচন্ড ভয় লাগে। হিদায়াত থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়! গন্তব্যে পৌছানোর আগেই যদি ছিটকে যাই!! জান্নাতের দরজা থেকে যদি ফিরে আসতে হয়, এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কি হতে পারে!!!

সেজন্য আমরা যেন বেশি বেশি এই দুয়াটা করি,

ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻻَ ﺗُﺰِﻍْ ﻗُﻠُﻮﺑَﻨَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺇِﺫْ ﻫَﺪَﻳْﺘَﻨَﺎ ﻭَﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻟَّﺪُﻧﻚَ

ﺭَﺣْﻤَﺔً ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻮَﻫَّﺎﺏُ

হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।

(সূরা আল ইমরানঃ ৮)

 

ﻳَﺎ ﻣُﻘَﻠِّﺐَ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ ﺛَﺒِّﺖْ ﻗَﻠْﺒِﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺩِﻳﻨِﻚَ

হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন।

-(তিরমিজীঃ ৩৫২২)

 

প্রকৃত মুসলমানের সব থেকে বড় কাজ ও সুমহান বৈশিষ্ট্য হলো স্বীয় দ্বীনের (ইসলামের) বিধানের ওপর অটল ও অবিচল থাকা।

 

সুসাব্যস্ত ক্রিস্টাল ক্লিয়ার এর মত পরিষ্কার সত্য ধর্ম এবং সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার পর আবার তা পরিত্যাগ করা ইসলাম ও ঈমানদারের কাজ নয়; বরং তা অবিশ্বাসী ও মুনাফিকী চরিত্রের লোকের কাজ।

আমরা যেন ঐ সমস্ত মানুষের মতো না হই যারা একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে। একটু সামান্য পরীক্ষা কি আসলো, আর সাথে সাথে দীনকে ছেড়ে দেয়। ছিটকে পড়ে যায় অতল গহবরে! এদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, (তাহলে তার হৃদয় ও মন) প্রশান্তি লাভ করে।

আর যদি কোনো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকাল (দুনিয়া) ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। আর এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি।

(সূরা হজ: আয়াত ১১)

 

যে ব্যক্তি কুরআন এবং সুন্নাহ অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে মুক্তি দান করবেন এবং যে ব্যক্তি কুরআনের প্রতি আহ্বান জানাবেন, আল্লাহ তাআলা তাকে সঠিক ও সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ (সরল পথ) প্রদর্শন করাবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর রশিকে শক্তভাবে ধরে থাকবে, ইনশাআল্লাহ সে হারিয়ে যাবে না, হতাশ হবে না, ব্যর্থ হবে না!

 

জাহিলিয়াতকে বিসর্জন দিয়ে মশগুল হয়ে থাকতে হবে ঈমানী আলোচনায়। আল্লাহর দ ‘আ, যিকির ও মাসনুনে। পরিবর্তন আনতে হবে নিজের অবস্থানের। উঠে আসতে হবে অন্ধকার থেকে আলোর জীবনে। আবু বকর (রাঃ) এর এই দু’আ টা আমরা প্রতিনিয়ত করতে থাকি! ইস কি সুন্দর এই দু’আ।

" হে আল্লাহ, আমার জীবনের সর্বশেষ পর্বটা যেন সর্বোত্তম হয়, আমার জীবনের ‌সর্বশেষ আমলটা যেন আপনার সবচেয়ে প্রিয় হয়, এবং আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনটা যেন হয় যেদিন আপনার সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে!"

আল্লাহুম্মা আমীন!

 


No matter what language you are a reader of, you can choose your language from over a hundred languages at the bottom right of our web site. May Allah help us.



****************************************

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url