দুনিয়াজীবন অতি ক্ষুদ্র || দুনিয়ার জীবনের উপমা ||




দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী


আমাদের দুনিয়াজীবন অতি ক্ষুদ্র! এই দুনিয়াকে জ্ঞানীগুণীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপমা দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ বলেন, আমাদের হায়াত হলো, ইকামাত নামাযের মধ্যবর্তী যে সময়টুকু অবশিষ্ট থাকে সে সময়টুকু। অর্থাৎ ইকামাত নামাযের মধ্যবর্তী সময় একমিনিট বা তার কম। আপনি বলতে পারেন, ষাট-সত্তর বছরের হায়াতকে সামান্য সময়ের সাথে কীভাবে তুলনা করলেন? আসলে এখানে আখিরাতের অফুরন্ত হায়াতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আখিরাতের অফুরন্ত হায়াতের তুলনায় দুনিয়ার হায়াত অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র! অনেক গবেষক এর থেকেও কম বলেছেন।

 

 

কিন্তু সেই সময়টুকু কাটাই আমরা অবহেলায়, অবলীলায়। এই দুনিয়াজীবনে যে পুণ্য করবে সে জাযা হিসেবে পাবে জান্নাত, যে খারাপ কাজ করবে সে পাবে জাহান্নাম। এতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলার ফরমান,

যে লোক পুরুষ হোক কিংবা নারী, কোন সৎকর্ম করে এবং বিশ্বাসী হয়, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণ নষ্ট হবে না। যে পুণ্যের বিপরীত (খারাপ কাজ) করবে, সে জান্নাতের বিপরীত (জাহান্নামী) হবে।

 

 

আল্লাহ তাআলার ভাষ্যমতে দুনিয়া হলো পরীক্ষার হল। মানুষ হলেন পরীক্ষার্থী। মানুষের সুবিধার্থে সৃষ্টি করেছেন জীবজন্তু, গাছপালা। আল্লাহ তাআলার ফরমান, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।

 

 

তবে এই পরীক্ষার হল আমাদের পরীক্ষার হলের মতো না। আমাদের পরীক্ষা কাগজে-কলমে কিংবা মুখে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পুরস্কার হিসেবে খাতা-কলম, ব্যাগ ইত্যাদি দেই। কিন্তু এই দুনিয়া নামক হল তার ভিন্ন। পরীক্ষার রীতিনীতিও ভিন্ন। এখানে পরীক্ষা করা হয় ক্ষুধা দিয়ে, ধনসম্পদ ক্ষতির মাধ্যমে, ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। পরীক্ষার নিয়মটা আল্লাহই ফরমান, ‘অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল জানের ক্ষতি ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।

 

 

কেউ কেউ দুনিয়াকে বিদেশের সাথে উপমা দেন। তারা বলেন, দুনিয়া হলো আমাদের জন্য বিদেশ, অস্থায়ী ঠিকানা। দুনিয়া হলো কামাই করার জায়গা। যেভাবে বিদেশে গিয়ে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাই। বাবা-মা, ভাই-বোন সেই অর্থ দিয়ে আমাদের জন্য ঘর তৈরি করে রাখেন, যাতে আমরা বিদেশ থেকে এসে সুখে দিনাতিপাত করতে পারি। যদি কামাই করে কিছুই না পাঠাই, তাহলে দেশে এসে এর ফল ভোগ করতে হবে।

 

 

ঠিক তেমনি দুনিয়া হলো উপার্জনের জায়গা, কামাই করার জায়গা। দুনিয়া থেকে কামাই করে আখেরাতে পাঠাব। সেখানে আমার উপার্জিত আমল অনুযায়ী আমার সাথে মুআমেলা করা হবে। তিল পরিমাণ যুলুম করা হবে না। দুনিয়া থেকে ভাল কাজ করে পাঠালে জান্নাত লাভ করবে, অন্যথা কষ্ট ভোগ করতে হবে।

 

 

কেউ কেউ উপমা দেন, দুনিয়া কুড়িয়ে নেওয়ার জায়গা। ধরুন- একজন ধনবান ব্যক্তি এক গরীব ব্যক্তিকে বলল, তুমি এই রুম থেকে যত ইচ্ছা স্বর্ণ, রৌপ্য, টাকা-পয়সা যা ইচ্ছা কুড়িয়ে নাও। তবে সেটা আজকের মধ্যেই। কালকে আর এই সুযোগ পাবে না। শত চেষ্টা করলেও এই সুযোগ আর মিলবে না।

 

 

গরীব লোকটি রুমে ঢুকতে দেরী করল না। ঢুকতেই চোখ ছানাবড়া! স্বর্ণ, রৌপ্যে ভর্তি রুম। সে কিছুক্ষণ সেগুলো দেখল। ভাবল, পরে কুড়িয়ে নেব, আগে একটু দেখে নিই। পুরো দিন তো পড়ে আছে। হেঁটে হেঁটে সব দেখতে লাগল। হঠাৎ চোখে পড়ল একটি স্বর্ণের বিছানা। সে ভাবল, পুরো দিন তো পড়ে আছে, একটু বিছানায় বিশ্রাম করি। ঘুম থেকে উঠে না হয় কুড়িয়ে নেব। এই ভেবে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই দেখে দিন ফুরিয়ে গেছে। এখন সে শত চেষ্টার পরেও কিছু কুড়িয়ে নিতে পারে নি। দিনশেষে খালি হাতে রুম থেকে বের হলো।

 

 

ঠিক তেমনি আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানো হলো। বলা হলো, তোমরা দুনিয়াজীবনে যত ইচ্ছা কুড়িয়ে নিবে। আখেরাতে তার ফল ভোগ করবে। অন্যথা সাজা ভোগ করতে হবে। আমরা এই সময়টুকুকে কাটিয়ে দিচ্ছি অবহেলায়, অবলীলায় এই ভেবে যে আমাদের হায়াত তো পড়ে আছে। শেষ বয়সে কুড়িয়ে নেব। শেষ বয়সে আমল করব। হঠাৎ দেখে আযরাঈল . তার দরজায় কড়া নাড়ছে। আর সুযোগ হয় নি কুড়িয়ে নেওয়ার।

 

 

রেফারেন্স :

. সূরা নিসা - ১২৪

. সূরা মূলক - ০২

. সূরা বাকারাহ - ১৫৫

 সূরা নিসা-১২৪

সূরা মূলক-০২

সূরা বাকারাহ-১৫৫

 দুনিয়াজীবন অতি ক্ষুদ্র

দুনিয়ার জীবনের উপমা

আকামত ও নামাজের মধ্যবর্তী সময়ের চেয়ে অল্প

দুনিয়া হল মুমীনের জন্য পরীক্ষার স্থান

দুনিয়া হল পাপীর জন্য আরামের স্থান

দুনিয়া হল আখেরাতের শষ্য ক্ষেত্র

 

****************************************

>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url