শিক্ষনীয় গল্প, গরীব কৃষকের জুতা
শিক্ষনীয় গল্প
গরীব কৃষকের জুতা
কথিত আছে যে, একজন পণ্ডিত তাঁর
এক শিষ্যকে নিয়ে মাঠের মাঝে হাঁটছিলেন। চলতে চলতে তারা একটি পুরানো জুতা দেখতে পেয়েছিল।
তারা ভেবেছিল কাছের জমিতে কোন কৃষক কাজ করে, শীঘ্রই নিতে আসবে।
শিষ্য তার শায়খকে বললো –
মুহতারম! যদি কৃষকের রেখে যাওয়া
জুতা নিয়ে কৌতুক করি অর্থাৎ তার জুতাজোড়া লুকিয়ে রাখি এবং যখন সে কাজ শেষ করে জুতা
নিতে এসে তা না পায়, তখন তার অবস্থা কেমন হয়?
শায়খ জবাব দিলেন:
“আমরা অবশ্যই অন্যের দুঃখ নিয়ে নিজেরা কৌতুক করতে পারি না, বরং আমি
যা বলি সেভাবে কৌতুক করে তাকে তুমি সুখ দিতে পারো। তুমি ধনীর দুলাল, চাইলে তুমি কৌতুকটা
এভাবে করতে পারো- তার জুতার নিচে কিছু টাকা রেখে দাও। যখন দরিদ্র কৃষক জুতা পায়ে দিতে
এসে সেখানে টাকা পাবে, তখন তার অবস্থা কেমন হয় বা এই মুদ্রা তাকে কিভাবে প্রভাবিত
করে, লুকিয়ে দেখতে পারো।”
ছাত্র প্রস্তাবটি শুনে মুগ্ধ হলো।
সে কৃষকের জুতাতে মুদ্রা রেখে
সে এবং তার শায়খ ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর দরিদ্র কৃষক কাজ শেষে করে
জুতা নিতে আসলো, সেখানে রাখা কাপড়-চোপড় নিয়ে জুতার ভিতরে পা রাখলো, তখন অনুভব করলো
ভিতরে কিছু একটা আছে! এবং হাতে নিয়ে সেখানে টাকা দেখে অবাক হলো। ঠিক দ্বিতীয় জুতাতেও
টাকা পেলো!! টাকার দিকে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে রইলো, আর ভাবতে লাগলো আমি স্বপ্ন দেখছি
নাতো! চিমটি কাটতে লাগলো! তারপর চারদিকে তাকালো কিন্তু আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না!!
কৃষক টাকাগুলো পকেটে রেখে হাঁটু
গেড়ে বসে অশ্রু নয়নে আকাশের দিকে তাকাল। এবং বলতে লাগল,
- হে আমার রব! আমি তোমার কৃতজ্ঞতা জানাই, তুমি জানো আমার স্ত্রী অসুস্থ,
সন্তানগুলো অনাহারে আছে, আমি এই টাকা দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারবো। লোকটি আকাশের
দিকে চেয়ে দীর্ঘক্ষণ কাঁদতে থাকলো পরে সেদজায় লুটিয়ে পড়লো। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়
করলো।
দৃশ্যটি দেখে ছাত্র খুব প্রভাবিত
হলো এবং তার চোখের কোণায় পানি চলে আসলো।
তখন শায়খ ছাত্রকে বললেন: তার
জুতা লুকিয়ে রেখে কৌতুক করা অপেক্ষা এই দৃশ্য কি তোমাকে বেশি আনন্দ দিতে পারেনি?
শিক্ষার্থী জবাব দিল: মুহতারাম
আপনার কাছ থেকে “আমি এমন একটি শিক্ষা শিখেছি যা কখনই ভুলব না। এখন বুঝতে পেরেছি আপনার
সেই কথা:
“নিজে গ্রহণ করা অপেক্ষা অন্যকে প্রদানে বেশি সুখ” চমৎকার উক্তি।
উস্তাদ তাকে আরো বললেন:
অনুগ্রহ কয়েক ভাবে করা যায়।
– প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকার পরও মাফ করা।
– ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করা।
– ক্ষমা করা এবং মন্দ ধারণা পরিহার করা।
– ভাইয়ের অনুপস্থিতি মানহানীকর কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।
|| ★★সমাপ্ত★★ ||
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url