পবিত্রতা অর্জন মুমীনের বৈশিষ্ট্য
পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল, অযু, তায়াম্মুম
অজুর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
আমেরিকার 'কাউন্সিল ফর বিউটি'র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লেডিবিচার এক আশ্চর্য ও চমৎকার তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তার বক্তব্য হলো, মুসলমানদের কোনো জাতীয় মেডিকেটেড লোশনের প্রয়োজন নেই। তারা ইসলামী আচার ব্যবস্থা অজুর মাধ্যমে চেহারা ধুতে থাকে এবং মুসলমানরা কয়েকটি রোগ থেকে বেঁচে থাকে। -পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে মুহাম্মদ (সা.) :পৃষ্ঠা- ১১২।
কেউ চশমা পরলেই যে বুদ্ধিদীপ্ত এমন কিন্তু নয়। আপনার সেলফি দেখে কিন্তু এখন আপনি আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন যে, আপনি কি বুদ্ধিমান নাকি নির্বোধ। যদিও কে কতটা স্মার্ট তা পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট উপাত্ত বের করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জীবনযাত্রা, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে কিনা তা লক্ষণীয়।
অজুর সময় ত্বকের উপরিভাগ ভালোভাবে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করার ফলে নানাবিধ রোগ-জীবাণু উধাও হয়ে যায়। বিশেষত ত্বক ঘষে-মেজে, মালিশ করে পরিষ্কার করার মাধ্যমে পূর্ণরূপে অজু সম্পন্ন হয়। এ কারণে অজুর পর মানুষের শরীরে সাধারণত অপরিচ্ছন্নতা ও রোগ-জীবাণু আর অবশিষ্ট থাকে না। মুখ ও ত্বকের পাপ-পঙ্কিলতা বিদূরিত হয়, যা আমরা হাদিস শরিফের ভাষ্যমতে জানতে পারি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'অজুকারী যখন নিজ চেহারা ধৌত করে তখন তার চেহারার গুনাহগুলো ঝরে যায়। এমনকি চোখের পালকের শিকড় হতেও বের হয়ে যায়। এর পর রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, অজুকারী যখন মুখমণ্ডল ধোয়, তখন সব গুনাহ এবং অপরাধ থেকে সে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেন আজই তার মা তাকে জন্ম দিয়েছেন। -মুসনাদে আহমাদ :হাদিস নং ১৯০৯১
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ কথা প্রমাণিত যে, কুলি করার কারণে মুখগহ্বর প্রদাহের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দাঁতের মাড়ি ফোলা, ক্ষত সৃষ্টি ও পুঁজ থেকে রক্ষা হয়। অনুরূপভাবে দাঁতকেও রক্ষা করে এবং খাদ্য গ্রহণের পরে দাঁতের ফাঁকে যেসব খাদ্যকণা আটকে থাকে, তা অপসারণ করে দাঁতকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে। কুলি করার আরও একটি চমকপ্রদ উপকারিতা এই যে, তা মুখের মাংসপেশিকে শক্ত রাখে। মুখের সজীবতা ও উজ্জ্বলতা রক্ষা করে এবং চেহারাকে পরিপাটি রাখে। শরীরচর্চা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে কুলি করা শরীরচর্চার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কুলি করার সময় যদি মুখের মাংসপেশিকে যথাযথভাবে সঞ্চালন করা হয়, তাহলে তা মানসিক প্রশান্তি অর্জনে যথেষ্ট সহায়তা করে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে, সূর্যের আলোকরশ্মির প্রভাবে বিশেষত বেগুনি রশ্মি বিচ্ছুরণের ফলে ত্বকের ক্যান্সার হয়। নিয়মিত অজুর ফলে ত্বকের উপরিভাগ স্থায়ীভাবে আর্দ্র ও সিক্ত থাকার কারণে এর প্রভাব ও কার্যকারিতা প্রতিরুদ্ধ হয়। বিশেষত দেহের উন্মুক্ত অংশে ত্বকের উপরিভাগ ও অভ্যন্তর ভাগে সূর্যরশ্মির ক্ষতির প্রভাব থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে।
মুসলমান অজু করলে তার এই স্বাস্থ্য বিধান সহজেই পালিত হয়। আর মুসলমানগণ দৈনিক কমপক্ষে পাঁচবার অজু করে থাকে সুতরাং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও অজুর মাঝে মানুষের স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা রয়েছে। (জামেউস সুনান, পৃষ্টা-২৫)
অজু ফরজ হয় কখন
১. প্রত্যেক নামাযের ক্ষেত্রে অজু ফরয, সে নামায ফরয হোক বা ওয়াজিবই হোক, সুন্নাত বা নফলই হোক।
২. যানাযার নামাযে অজু করা ফরয
৩. সিজদায়ে তিলাওয়াতের অজু করা ফরজ।
অজু ওয়াজিব হয় কখন
১. কাবা শরীফ তাওয়াফের ক্ষেত্রে।
২. কুরআন স্পর্শ করার ক্ষেত্রে।
যেসব কারণে অজু করা সুন্নত
১. ঘুমানোর পূর্বে অজু করা সুন্নাত।
২. গোসলের পূর্বে অজু করা সুন্নাত
যে যে অবস্থায় অজু করা মুস্তাহাব
১. আযান ও তাকবীর অজু মুস্তাহাব।
২. খুতবা পাঠের সময়।
৩. দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার সময়কালে।
৪. যিকরে ইলাহীর সময়ে।
৫. ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে।
৬. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পরে।
৭. রাসূল (সা)-এর রওজা মুবারক যিয়ারতকালে।
৮. আরফার মাঠে অবস্থানের সময়কালে
৯. সাফা ও মারওয়া সাঈ তথা দৌড়ানোর সময়কালে।
১০. জানাবাত অবস্থায় খাবার পূর্বে।
১১. হায়িয-নিফাসের সময় প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে।
১১. সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা মুস্তাহাব বলে গণ্য।
অজুর ফরয সমূহ
অজুর ফরয চারটি। এ চারটির নাম মূলত অজু। এ চারের ক্ষেত্রে কোন একটি বাদ গেলে বা চুল পরিমাণ কোন স্থান শুকনা থাকলে অজু হবে। যেমনঃ
১. একবার সমস্ত চেহারা ধুয়া। অর্থাৎ কপালের উপর মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনির নিচ এবং এক কানের গোড়া থেকে অন্য কানের গোড়া পর্যন্ত সমস্ত মুখমণ্ডল ধুয়া ফরয।
২. দু’হাত অন্তত একবার কুনুই পর্যন্ত ধুয়া।
৩. একবার মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা।
৪. একবার দু’পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নেয়া।
অজু করার সুন্নাত তরীকা
১। অজুর শুরুতে নিয়ত করা। অর্থাত পবিত্রতা লাভের জন্য অথবা নামাজ আদায়ের জন্য বা কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য অজু করতেছি, এ নিয়ত করা। (নাসায়ী শরীফ, পৃষ্টা-১২)।
২। অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পাঠ করা সুন্নাত। (ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং-৩৯১) অথবা এই দোয়া পড়ে অজু শুরু করা। (ফাতাওয়ায়ে শামী-১/২২৭)
بسم الله العلى العظيم والحمدلله على ملت الا سلام
আল্লাহ তায়ালার নামে শুরু করছি, এবং সকল প্রশাংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি ইসলামের দৌলত প্রদান করেছেন।
এক হাদিসে আছে, “বিসমিল্লাহে ওয়ালহামদুলিল্লাহে” পড়ে অজু করলে ঐ অজু যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ ফেরে্স্তারা তার নামে সওয়াব লিখতে থাকবেন। যদিও সে কোন বৈধ কাজে লিপ্ত থাকে। (মুজামুল কাবীর, লিত তাবরানী, হাদীস নং-১২২, মুজামুছ ছগীর লিত তবরানী, হদীস নং-১৯৫)
৩। অজুর অঙ্গগুলো ডান দিক থেকে ধোয়া শুরু করা। (বুখারী শরীফ)
৪। উভয় হাত পৃথকভাবে কব্জিসহ তিনবার ধোয়া। (বুখারী শরীফ-১/২৯, মিশকাত শরীফ, তিরমিজি শরীফ)
৫। মেসওয়াক করা। (মুসনাদে আহমাদ-২/২৫০, তিরমিযী শরীফ)
৬। তিনবার কুলি করা। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
৭। নাকের নরম জায়গায় তিনবার পানি পৌছানো। (তিরমিযী শরীফ-১/৭, মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
মাসয়ালা, রোজাদার না হলে গড়গড়ার সাথে কুলি করা এবং নাকের নরম জায়গায় পানি পৌছানো উত্তম। কিন্তু রোজাদার হলে হালকাভাবে কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে।
৮। বাম হাত দিয়ে নাক পরিস্কার করতে হবে। (মায়ারিফুল হাদীস)
৯। সমস্ত মুখ তিনবার ধোয়া। (বুখারী শরীফ)
মাসয়ালা, মুখ ধোয়ার সময় চেহারায় জোরে পানি মারা মাকরুহ এবং চেহারা ধোয়ার সময় দুই হাত ব্যবহার করা মুস্তাহাব।
১০। মুখ ধোয়ার সময় আঙ্গুল দিয়ে দাড়ি খেলাল করা সুন্নাত।
অজুতে দাড়ি খেলাল করার সুন্নাত তরীকা
তিনবার মুখ ধোয়ার পর ডান হাতে পানি নিয়ে চিবুকের কাছাকাছি চোয়ালে ঢেলে দাড়ির ভিতরে পানি পৌছাতে হবে এবং হাতের তালু গলার দিক দিয়ে ঢুকিয়ে আঙ্গুলগুলো উপরের দিকে উঠাতে হবে। (আবু দাউদ শরীফ-১/১১৭)
১১। দুই হাত তিনবার ধোয়া। (বুখারী শরীফ)
অজুতে হাত ধোয়ার সুন্নাত তরীকা
প্রথমে ডান হাতের তালুতে পানি নিয়ে কনুইয়ের দিকে পানি ছেড়ে দিতে হবে, এরূপ তিনবার করা। তদ্রুপ বাম হাতের তালুতে পানি নিয়ে কনুইয়ের দিকে পানি ছেড়ে দিতে হবে। এরূপ তিনবার করা। এভাবে করলে সুন্নাত মোতাবেক হাত ধোয়া হবে। (কনুই থেকে আঙ্গুলের দিকে পানি ঠেলে হাত ধোয়া সুন্নাত তরীকা নয়)
১২। হাত পা ধোয়ার সময় আঙ্গুলগুলো খেলাল করা সুন্নাত। (তিরমিযী শরীফ-১/১৬)
হাতের আঙ্গুল খেলাল করার তরীকা
হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া দিতে হবে
১৩। একবার সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা সুন্নাত। (তিরমিযী শরীফ-১/১২০)
অজুতে মাথা মাসেহ করার সুন্নাত তরীকা
ক. উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও শাহাদাত আঙ্গুলকে আলাদা করে বাকী তিন আঙ্গুলের পেট দ্বারা মাথার অংশের সামনের দিক থেকে পিছনের দিকে টেনে আনতে হবে
খ. তারপর দুই হাতের তালু মাথার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে দুই পাশ দিয়ে টেনে আনতে হবে।
গ. এরপর শাহাদাত আঙ্গুলের মাথা কানের লতিতে রেখে কানের ভাঁজে ভাঁজে উপরের দিকে ঘুরিয়ে আনতে হবে।
ঘ. তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলের পেট দ্বারা কানের পিঠের উপর মাসেহ করতে হবে। এ পর্যন্ত উভয় হাতের তালু ও আঙ্গুলগুলোর তালু দ্বারা মাসেহ শেষ হলো।
ঙ. এরপর হাতের পূর্ণ পিঠ দ্বারা ঘাড় মাসেহ করতে হবে
ঘাড় মাসেহ করার সময় দুই হাতের পিঠ ঘাড়ের উপর রেখে চাপ দিয়ে সামান্য টেনে আনলেই হবে। তবে গলার দিকে বেশি টানা যাবে না। (হেদায়া ১/২১)
১৪। মাথা মাসেহ করার সাথে সাথে কানও মাসেহ করা সুন্নত। (হেদায়া ১/১৮)
১৫। মাথা সামনের দিক থেকে মাসেহ শুরু সুন্নত। (বুখারী শরীফ-১/৩১)
১৬। গর্দান মাসেহ করা। কিন্তু গলা মাসেহ করা যাবে না, কেননা গলা মাসেহ করা বেদআত। (মারাকিউল ফালাহ-৪১)
১৭। উভয় পা তিনবার ধোয়া সুন্নত।
১৮। পায়ের আঙ্গুল খেলাল করা সুন্নত। (হেদায়া-১/১৯)
অজুতে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার সুন্নত তরীকা
পায়ের আঙ্গুল খিলাল করার নিয়ম হল, খিলালের জন্য বাম হাতের কনিষ্ঠা ব্যবহার করবে এবং ডান পায়ের কনিষ্ঠা থেকে শুরু করবে। খিলালের সময় পায়ের উপর দিক দিয়ে আঙ্গুল প্রবেশ করাবে অতঃপর আঙুলের গোড়া থেকে উপরের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
-সুনানে আবু দাউদ ১/১৯-২০; জামে তিরমিযী ১/১৬; মুসনাদে আহমদ ২৯/৩৮৮, ২৬/৩০৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৭; রদ্দুল মুহতার ১/১১৭। সূত্র: আল কাউসার।
১৯। অজুর সমস্ত অঙ্গ ডলে ডলে ধোয়া সুন্নত। (যাদুল মায়াদ)
২০। ধারাবাহিকভাবে অঙ্গগুলো ধোয়া। অর্থাৎ কুরআন হাদিসে যে ধারাবাহিকতা উল্লেখ আছে সেভাবেই অজু করা সুন্নত। যেমন হাত ধোয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া, নাক পরিস্কার করা, চেহারা ধোয়া, কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথা মাসেহ করা, কান মাসেহ করা, গর্দান মাসেহ করা, দুই পা ধোয়া। (হেদায়া, ফেকহুল মুয়াসসার)
২১। সচল গতিতে অজু করা। অর্থাৎ এক অঙ্গ ধোয়ার পরে আরেক অঙ্গ ধুতে দেরী না করা।
২২। অজুর মাঝে এই দোয়া পড়া সুন্নত।
اَللَّخُمَّ اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসিলি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফি রিযক্বি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিযিক্বে বরকত দিয়ে দাও।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা-৭/৬২)
তবে শীত বা অন্য কোন কারণে যখন অজু করতে ইচ্ছা হয় না তখন অজুর অঙ্গগুলো উত্তমরূপে ধুয়ে অজু করা সুন্নত। (তিরমিযী শরীফ-১/১৮)
২৩। অজুর শেষে কালেমায়ে শাহাদাত পড়া।
অযুর পর কালেমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-অর্থ : ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’ বলবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম ১/১২২)
অন্য এক বর্ণনায় কালেমায়ে শাহাদাত পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর কথাও আছে। তাই সম্ভব হলে এর উপর আমল করাও ভালো। না করলে গোনাহ হবেনা। তাছাড়া আকাশের দিক মানে উপরের দিক। সুতরাং উপরের তাকিয়ে পড়লেই হবে। এক্ষেত্রে আকাশ দেখা যাওয়া জরুরি নয়। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৩; মুসনাদে আহমদ ১/২৭৪; সুনানে তিরমিযী ১/১৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/২৩৬, ১৫/৪২৩)
ﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَـﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻭَﺣْﺪَﻩُ ﻻَ ﺷَﺮِﻳْﻚَ ﻟَﻪُ ﻭَﺃَﺷْﻬَﺪُ ﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﻋَﺒْﺪُﻩُ ﻭَﺭَﺳُﻮْﻟُﻪُ .
উচ্চারণঃ আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্’দাহু লা শারিকা-লাহু ওয়া-আশহাদু আন্না মুহা’ম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহ।
ওযুর পরে নিচের দোয়াটি পড়া
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺑِﻴْﻦَ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲْ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺘَﻄَﻬِّﺮِﻱْﻥَ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ আ’লনী মিনাত তাওয়্যাবীনা ওয়াজ আ’লনী মিনাল মুতা-ত্বাহহিরীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো। [তিরমিযীঃ ১/৭৯]
অজুর আদবসমূহ
১. অজু করার জন্য উঁচু জায়গায় বসা, যাতে পানির ছিটা গায়ে না লাগে।
২. অজু করতে কিবলামূখী হয়ে বসা।
৩. অন্যের সাহায্য না নেওয়া।
৪. অজু করার সময় দুনিয়াবী কথা বলা।
৫. অজুর মধ্যে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া।
৬. অন্তরে নিয়ত করার সাথে মুখেও নিয়ত করা।
৭. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলা।
৮. কান মাসেহ করার সময় ভিজা কণিষ্ট আঙ্গুলকে কানের ছিদ্রে ঢুকানো।
৯. আংটি পড়া থাকলে তা নড়াচড়া করানো।
১০. কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার জন্য ডান হাতে পানি নেওয়া।
১১. মাজুর (অসুস্থ্য) না হলে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগেই অজু করা।
১২. অজু করার পর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়া।
অজুতে সুন্নাতের খেলাফ কাজ বা মাকরুহসমূহ
১. পানির অপচয় করা।
২. যথেষ্ট পরিমাণ পানি ব্যবহার না করা। অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে কম বা বেশি পানি ব্যবহার করা।
৩. মুখ ধোয়ার সময় মুখে জোড়ে পানি মারা।
৪. দুনিয়াবী কথা বলা।
৫. বিনা প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নেওয়া।
৬. মাথা মাসেহ করার জন্য তিনবার নতুন পানি নেওয়া।
তায়াম্মুমের ফরজ সমূহ
১. নিয়ত করা।
২. চেহারা মাসেহ করা।
৩. দু’হাত মাসেহ করা।
ইমামদের কেউ কেউ আরো কয়েকটি বিষয় ফরজ বলে গণ্য করেছেন। আর তা হলো :
৪. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। অর্থাৎ প্রথমে চেহারা ও পরে দু’হাত মাসেহ করা।
৫. মুয়ালাত তথা অবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা। অর্থাৎ চেহারা মাসেহ করার পর বিলম্ব না করে হাত মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নতসমূহ
১। তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। (জমউল জাওয়ামে : ১/১৫৭৮৭)
২। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৯)
৩। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করার মাঝখানে অন্য কোনো কাজ না করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭২)
৪। মাটির মধ্যে হাত আগে-পিছে নড়াচড়া করা। (দারাকুতনি : ৬৯৭)
৫। মাটির ওপর হাত মারার পর উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৩)
৬। মাটির ওপর হাত রাখার সময় আঙুলগুলো খোলা রাখা। (দারাকুতনি : ৬৯৭)
যেসব কারণে তায়াম্মুম বাতিল হয়ে যায়
১. পানি বর্তমান থাকা।
২. অজু ভঙ্গকারী কোনো কিছু সংঘটিত হওয়া, যেমন বায়ু বের হওয়া।
৪. গোসল ফরজ হয় এমন বিষয় সংঘটিত হওয়া, যেমন স্বপ্নদোষ।
৫. যেসব ওজরের কারণে তায়াম্মুম করা শরীয়তসিদ্ধ সেসব কারণ দূর হয়ে যাওয়া। যেমন অসুস্থতা ইত্যাদি।
জমিনের মাটি তার পরমাণুগুলোতে পবিত্রতাকারী পদার্থ বহন করে। এ পদার্থ সকল প্রকার জার্ম ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। যেকোনো মাইক্রোব অথবা ভাইরাস ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।
গোসল ফরজ হওয়ার কারণসমূহ
১. জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত হওয়া। কিন্ত নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হয়ে বীর্যপাত হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না। তবে যে কাপড় পরে শোয়া হয়েছে সে কাপড়ে বীর্যের চিহ্ন না দেখা গেলে গোসল ফরয হয় না।
২. স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী
৩. লজ্জাস্থান একত্রিত হলেই গোসল করা ফরয হয়ে যাবে, স্বামী অথবা স্ত্রীর বীর্যপাত হোক বা না হোক।
৪. নারীদের হায়েয (মাসিক) হবার পর যখন রক্ত বন্ধ হয় তখন তাদের জন্য গোসল ফরয হয়।
৫. নারীদের নেফাসের (সন্তান প্রসবের পরের স্রাব)রক্তস্রাব বন্ধ হবার পর গোসল ফরয হয় ।
৬. হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত হলেও গোসল করা ফরয হয়ে যাবে। উল্লেখ্য হস্তমৈথুন হারাম ও কবীরা গুনাহ।
যেসব কারনে গোসল করা ফরয হয় না
১. যদি কোন রোগের কারনে ধাতু পাতলা হয়ে বা কোন আঘাতে বিনা উত্তেজনায় ধাতু নির্গত হলে গোসল ফরয হয় না ।
২. স্বামী স্ত্রী যদি লিঙ্গ স্পর্শ করে ছেড়ে দেয়, ভিতরে প্রবেশ না করায় এবং বীর্যপাতও না হয় ৷ তবে গোসল ফরয হবে না ৷
৩. শুধু মযী বের হলে অজু ভেঙ্গে যায় , গোসল ফরয হয় না ।
৪. ঘুম থেকে ওঠার স্বপ্ন মনে আছে, কিন্ত কাপড়ে বা শরীরে বীর্যের কোন চিহ্ন না পাওয়া গেলে গোসল ফরয হয় না ।
৫. যৌন উত্তেজনার কারণে মযী (পানির মত পাতলা বীর্য যা অল্প পরিমানে বের হয়, কিন্তু উত্তেজনা হ্রাস হয়না) বের হলে ওযু ভাংবে, কিন্ত গোসল করা ফরয হবেনা
কারো মযী বের হলে, প্রস্রাব যেমন শরীর বা কাপড়ে লাগলে তা ধুয়ে পাক করতে হয়, তেমনী মযী শরীরে বা কাপড়ে লাগলে শরীর ও কাপড় ধুয়ে পাক করতে হয় ৷ মযী শুকিয়ে গেলে কিছুই করতে হবেনা, ঐ কাপড়েই নামায পড়তে পারবে। আর উত্তেজনার সাথে মনী (ঘন আঠালো সাদা বীর্য)বের হলে ও।
গোসলের ফরজসমূহ
গোসলের ফরজ তিনটি-
১. কুলি করা,
২. নাকে পানি দেয়া,
৩. সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া যাতে চুল পরিমাণও শুকনো না থাকে।
***************************************************
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url