সমকামীতা ও আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধাচরণের ফল
লুত (আ:) স্ত্রী সমকামীদের সহযোগী ছিল এবং নবীর উপর বিশ্বস্ত ছিল না। সে আল্লাহর নির্দেশ |
সমকামিতার শাস্তি
মূর্তিটির অবস্থান জর্ডানের মৃত সাগরের তীরে। ইহুদি
ও খ্রিস্টানদের বিশ্বাস মূর্তিটি লুত আঃ এর স্ত্রীর। সমকামিতার শাস্তি হিসেবে
আল্লাহ তায়া’লা যখন কওমে লুতের উপর পাথুরে বৃষ্টির আযাব প্রেরণ করেন, তখন নির্দেশ
অমান্য করে লুত আঃ এর স্ত্রী 'ওয়াইলা' পেছনের দিকে তাকান এবং তাঁকেও আল্লাহর আযাব
গ্রাস করে নেয়।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়া’লা বলেন... فَاَنۡجَیۡنٰہُ وَ اَہۡلَہٗۤ اِلَّا امۡرَاَتَہٗ ۫ۖ کَانَتۡ مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۸۳﴾
পরিশেষে, আমি তাকে এবং
তার পরিবারের লোকদেরকে, তার স্ত্রী ছাড়া, শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম, তার স্ত্রী
তাদের সাথে পিছনেই রয়ে গিয়েছিল।
নবী এবং রাসূলগণের শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি যারা মিথ্যারোপ করেছিল
এবং পাপাচারী কাওম বলে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল হযরত ইব্রাহীম
আ. ও হযরত লুত আ. এর কাওম। বিশেষ করে হযরত লুত আ.-এর কাওমের লোকেরা ছিল যৌনাচারী।
তারা অবাধে শুধু নারী-পুরুষই নয়, বরং পুরুষে পুরুষেও যৌনকর্ম সম্পাদন করত।
ঢালাওভাবে যৌনাচারের প্রবল স্রোতে তারা ছোট-বড় নির্বিশেষে গা ভাসিয়ে দিয়ে ছিল।
তারা হযরত ইব্রাহীম আ. ও হযরত লুত আ. কে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘আর ইব্রাহীমের কাওম ও লুতের কাওম (পাপাচারী ও
যৌনাচারীতে) নিমগ্ন ছিল।’ (সূরা আল হাজ্জ : আয়াত ৪৩)।
হযরত লুত আ. তার কাওমকে যে সদুপদেশ দিয়েছিল এবং তার কাওমের লোকেরা
যে প্রতি উত্তর দিয়েছিল এবং তাদের ওপর যে আযাব নাজিল হয়েছিল তা সবিস্তারে আল
কোরআনে বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং লুতকেও আমি নবী রূপে প্রেরণ করেছিলাম। সে তার কাওমকে বলল,
তোমরা এমন নিকৃষ্ট কর্ম করে চলেছ যা তোমাদের আগে পৃথিবীতে কেউ করেনি। তোমরা
যৌনতৃপ্তি পূরণের জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন করছ, আসলে তোমরা
সীমালঙ্ঘনকারী কাওমে পরিণত হয়েছো।
লুতের কাওমের লোকদের একথা ছাড়া কোনো উত্তর ছিল না যে, তারা বলল, তাকে
তোমাদের আবাসভূমি হতে বের করে দাও। তারা পবিত্রতা পছন্দকারী শ্রেণীর মানুষ। সুতরাং
আমি লুত ও তার পরিবার পরিজনকে মুক্তি দিলাম তার স্ত্রীকে ছাড়া। কেননা সে ছিল
পশ্চাদবর্তী দলের অন্তর্ভূক্ত। আমি তাদের প্রতি পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। তাই,
লক্ষ্য কর যে, পাপীদের পরিণাম কি দাঁড়িয়ে ছিল। (সূরা আল আ’রাফ : আয়াত ৮৩-৮৪)।
আল্লাহপাক পাপাচারী ও যৌনচারী কাওমে লুতকে ধ্বংস করার ফায়সালা গ্রহণ করলেন। তিনি
একদল ফিরিশতাকে সুন্দর ও মনোহর বালকের আকৃতিতে কাওমে লুতকে ধ্বংস করার জন্য হযরত
ইব্রাহীম আ.-এর নিকট প্রেরণ করলেন। এই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা আল কোরআনে এভাবে
তুলে ধরা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার প্রেরিত ফিরিশতারা ইব্রাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল।
তারা বলল, সালাম, সে উত্তর করল সালাম। অতিসত্বর সে গো-বৎস ভূনা গোশত নিয়ে আসল।
ফিরিশতারা সে দিকে হাত বাড়ালো না, সে তা অবলোকন করে গর্হিত ভাবল এবং হৃদয়ে ভীতির
সঞ্চার হল। তারা বলল, ভয় করবেন না। আমরা লুতের কাওমের প্রতি প্রেরীত হয়েছি।
এ সময়ে ইব্রাহীমের স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে দিল। পরে তাকে ইসহাকের সুসংবাদ
দিলাম। ইসহাকের পরে ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম। সে বলল, কী আশ্চর্য, আমি এ বৃদ্ধা
বয়সে সন্তানের জননী হব, আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এটাতো ভারী তাজ্জবের কথা। ফিরিশতাগণ
বলল, আল্লাহর কাজে তুমি অবাক বোধ করছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের প্রতি আল্লাহ রহমত ও
কল্যাণ রয়েছে, নিশ্চয়ই তিনি প্রসংশিত, সম্মানীত।
ইব্রাহীমের
ভয় তিরোহীত হলে এবং তার কাছে সুসংবাদ আসলে সে আমার সাথে কাওমে লুত সম্পর্কে অনুনয়
বাক্য শুরু করল। ইব্রাহীম একান্তই সহনশীল, কোমল হৃদয় বিনীত ছিল। আমি বললাম, হে
ইব্রাহীম, এ থেকে দূরে থাক, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ এসে গেছে এবং তাদের ওপর
অনিবার্য আযাব আসবেই। আমার ফিরিশতারা লুতের সমীপে পৌঁছলে সে নাখোশ হল এবং তাদেরকে
হেফাজত করতে নিজেকে অসমর্থ ভাবল এবং বলল, তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর দিবস।
তার কাওম
তার কাছে দৌঁড়ে উদভ্রান্তের মত ছুটে আসল। তারা পূর্ব হতেই দুস্কর্মচারী ছিল। লুত
বলল, হে কাওম, এরা আমার কন্যা, এরা তোমাদের জন্য পরম পবিত্র, আল্লাহকে ভয় কর এবং
আমার মেহমানদের সম্পর্কে আমাকে লজ্জিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি সৎলোক নেই? তারা
বলল, তুমি জান তোমার কন্যাগণ আমাদের কোনো দরকার নেই এবং আমাদের ইচ্ছা সম্বন্ধে
তুমি পরিজ্ঞাত। সে বলল, আমার তোমাদের বিরুদ্ধে যদি শক্তি থাকত কিংবা কোনো বৃহৎ
শক্তির যদি আশ্রয় নিতে পারতাম (তা হলেই) ভালো হত।
ফিরিশতাগণ
বলল, হে লুত, আমরা তোমার পরওয়ারদিগার কর্তৃক প্রেরীত। তারা আদৌ তোমার নিকট
পৌঁছাতে পারবে না, তাই নিজ স্বজনদেরসহ রাতের কোনো এক সময় বের হয়ে পড় এবং তোমাদের
কেউ পেছনে তাকাবে না, কিন্তু তোমার স্ত্রীরও তা-ই ঘটবে, যা তাদের ভাগ্যে রয়েছে।
তাদের নির্দিষ্টকাল ভোর বেলা, ভোর বেলা কি নিকটবর্তী নয়? তারপর যখন আযাবের নির্দেশ
এসে পৌঁছল, তখন আমি নগরগুলো উল্টে দিলাম ওপরে-নিচে ও বর্ষণ করলাম জমাট বাঁধা
প্রস্তর। যা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে নির্দিষ্ট ছিল এবং তা জালিমদের থেকে দূরে
নয়।’ (সূরা হুদ : আয়াত ৬৯-৮৩)।
ট্যাগ:
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url