সুলতান মুরাদের ঘটনা || পড়লে চোখের পানি চলে আসবে ||





যা দেখা যায় সব সত্যি নয়

 

উসমানীয় সুলতান মুরাদের একদিনের ঘটনা

 

সুলতান মুরাদ এক রাত বিছানায় শুয়ে দমবন্ধ হয়ে আসছে। কোন ভাবেই তাঁর ঘুম আসছে না। কেন এমন অস্থির লাগছে বুঝতে পারছেন না। এমতাবস্থায় তিনি নিরাপত্তাকর্মীকে ডাকলেন। বাদশাহ হিসেবে সুলতান মুরাদের অভ্যাস ছিল যে, পোশাক পরিবর্তন করে ছদ্ম বেশে প্রজাদের খোঁজ খবর নেওয়া। হিসেবে তাদেরকে বলল চল, কিছু সময় লোকদের ভীড়ে কাটিয়ে আসি। যেতে যেতে শহরের এক কোনায় পৌঁছে গেলেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখলেন একজন মানুষ মাটিতে লুটিয়ে আছে। এই অবস্থা দেখে সুলতান মুরাদ লুটিয়ে পড়ে থাকা লোকটিকে নেড়ে চেড়ে দেখলেন। দেখতে পেলেন লোকটি মৃত। আর লোকটির পাশ অতিক্রম করে অনেক লোক আসছে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ লোকটিকে স্পর্শও করে দেখছে না। সুলতান মুরাদ মানুষদেরকে ডেকে বললেন, ভাই এদিকে এসো। মানুষ একত্রিত হল, কিন্তু তারা সুলতানকে চিনতে পারল না। সুলতান জিজ্ঞেস করলেন, কিরে ভাই লোকটি এভাবে মৃত পড়ে আছে আপনারা দেখতেছেন, তারপরও কেউ লোকটিকে উঠাচ্ছেন না কেন? চলুন তাকে উঠিয়ে তার ঘরে পৌঁছে দিই।

 

 

তখন লোকেরা বলে, এই লোক বড় গোনাহগার মানুষ। তখন সুলতান মুরাদ বললেন, ভাই গোনাহগার হলেও সে কি আল্লাহর বান্দা নয়? সে কি আমার নবীর উম্মত নয়? চলো, তাকে উঠিয়ে তার ঘরে দিয়ে আসি। মানুষ সুলতানের কথায় প্রভাবিত হল আর লাশটি ওয়ারিসের কাছে পৌঁছে দিল। যখন ঘরে গেল লাশটি নিয়ে, তার স্ত্রী এই লাশ দেখে অজোরে কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা চলে গেল। সুলতান মুরাদ এবং তাঁর নিরাপত্তাকর্মী দাঁড়িয়ে মহিলাটির কান্না দেখতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে মহিলাটি বলল, আল্লাহর শপথ করে বলছি, নিঃসন্দেহে তোমরা আল্লাহর অলী এবং নেক বান্দা।

 

 

একথা শুনে সুলতান মুরাদ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ইহা কিভাবে সম্ভব? মানুষ তো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি বড়ই পাপী। এমনকি কেউ এর লাশ স্পর্শও করছে না। তখন লোকটির স্ত্রী বললেন, আমিও মানুষের মত এই একই বিষয়ে একমত। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকৃত বিষয় হল আমার স্বামী প্রতি রাতে মদের দোকানে যেতেন। পকেটে যত টাকা থাকত, তা দিয়ে মদ কিনে আনতেন। ঘরে এনে মদগুলো ঢেলে দিতেন। আর বলতেন, দেখ কিছু মুসলমানের গোনাহের বোঝা তো কমাতে পেরেছি।

 

একইভাবে তিনি প্রতি রাতে সরাইখানায় গিয়ে একটি পতিতা নিয়ে আসতেন। আর পতিতাকে এক রাতের উপার্জন দিয়ে কক্ষে বিশ্রামে রাখতেন। আর কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলতেন, কেউ যেন তোমার কাছে না আসে। আর ঘরে এসে বলতেন, আল্লাহর শোকরিয়া, আজ এই মেয়েটিকে এবং একজন মুসলমান যুবকের পাপের বোঝা কিছুটা হালকা করতে পারলাম।

 

 

আর মানুষ তাকে এসব জায়গায় আসতে যেতে দেখে বড়ই পাপী মনে করত। আমিও তাকে বলতাম, মনে রেখ যে, তুমি যেই দিন মরবে সেই দিন কেউ না তোমাকে গোসল দিবে, না তোমার জানাজা পড়বে, না তোমাকে দাফন করবে। আর তিনি মুছকি হেসে বলতেন, চিন্তা কর না। তুমি দেখবে যে, আমার জানাজা যুগের বাদশাহ, উলামায়ে কেরাম এবং আল্লাহর অলীরা পড়বেন।

 

 

ঘটনা শুনে সুলতান মুরাদ দুই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, আমিই তো সুলতান মুরাদ, এই সময়ের বাদশাহ। কাল আমিই নিজ হাতে তোমার স্বামীকে গোসল দিব। আমিই এর জানাজা পড়াব। এর দাফন কার্যও আমি সমাধা করব। সত্যিই পরদিন এই লোকের জানাজা হয়েছিল তুরস্কের রাজদরবারে সুলতান মুরাদের রাজকীয় মসজিদের মাঠে। এতে শরীক হয়েছিল বিখ্যাত উলামায়ে কেরাম এবং যুগের আউলিয়ায়ে কেরাম। সাথে ছিলেন অসংখ্য সাধারণ জনতা।

 

.

শিক্ষাঃ এমন- ছিল মুসলিম শাসক এবং তাঁদের শাসিত জনগণ। তাঁদের মাঝে একমাত্র আল্লাহভীতি ছিল বলেই তাঁদের সোনালী ইতিহাস মানুষকে আজও অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ, আমাদেরও এমন সৌভাগ্য দান করুন। আল্লাহ আমাদেরকেও এমন কাজ করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদের উপরে এমন নেককার শাসক দান করুন। আমিন।। ছুম্মা আমিন ইয়া রাব্বিল আ’লামিন।।।

 

ট্যাগ:

আমিন

একটি শিক্ষনীয় ঘটনা

উসমানীয় খলিফা সুলতান মুরাদের একদিনের ঘটনা

ইসলামিক গল্প

শিক্ষনীয় গল্প

ইসলামের স্বর্ণযুগ

বাদশা মুরাদের ঘটনা

যা দেখা যায় সব তার সত্যি নয়

যা শুনা যায় সব সত্যি নয়

যা জানা যায় সব সত্যি নয়

আল্লাহর অলীর ঘটনা

সৎকর্মশীলরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির কথাই ভাবেন

পাপী বলে কাউকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়

আল্লাহ ভাল জানেন কে পাপী কে নেককার

 


|| ★★সমাপ্ত★★ ||



সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় 
অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url