রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাজ || সুন্নাতী নামাজ || সুন্নাতী তরীকা ||

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামাজ বা সুন্নাতী নামাজ

  • মসজিদে প্রবেশের সুন্নাতী তরীকা
  • মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নতসমূহ
  • মসজিদে যেসব কাজ নিষিদ্ধ
  • আযান ও ইকামতের সুন্নাতসমূহ
  • আযানের সুন্নাত তরীকা
  • আযানের জওয়াব দেওয়ার সুন্নাত তরীকা
  • ফজরের আযানের পর পালণীয় চারটি সুন্নাত
  • একামত দেওয়ার সুন্নাত তরীকা
  • নামাজের জন্য বের হওয়ার পর সুন্নাত সমুহ
  • জামাতে নামাজ পড়ার সুন্নাতসমূহ
  • নামাজের ফরজসমূহ
  • নামাজের ওয়াজিবসমূহ
  • নামাজের মধ্যে মোট ৫১টি সুন্নাত

মসজিদে প্রবেশের সুন্নাতী তরীকা

১.    বিসমিল্লাহ পড়া।  (মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ২৬৪৭৩ আমলুল্ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, হাঃ নং ৮৮)
২.    দরূদ শরীফ পড়া । (মুসনাদে আহমাদ, হাঃ নং ২৬৪৭২)
৩.    অতঃপর এই দু‘আ পড়া-  اللهم افتح لى ابواب رحمتك  (মুসলিম, হাঃ নং ৭১৩)
উল্লেখিত দু‘আ সমূহ একত্রে এভাবে পড়া যায়-  بسم الله والصلوة والسلام على رسول الله اللهم افتح لى ابواب رحمتك
৪.    মসজিদে ডান পা আগে রাখা। (বুখারী শরীফ, হাঃ নং ৪২৬)
৫.    মসজিদে প্রবেশ করে ই‘তিকাফের নিয়ত করা।  (শামী, ২ : ৪৪৩/ বুখারী শরীফ, হাঃ নং ২০৪২)

বি.দ্র. মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে বাম পায়ের জুতা খুলে জুতার উপর বাম পায়ে দাঁড়াবে অতঃপর ডান পায়ের জুতা খুলে দু‘আসমূহ পড়ে তারপর প্রথমে ডান পা মসজিদের ভিতরে রাখবে।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নতসমূহ

১.    বিসমিল্লাহ বলা। ইবনে মাজাহ- ৭৭১; মুসনাদে আহমাদ- ২৬৪১৭
২.    দুরূদ শরীফ পড়া। তিরমিজী- ৩১৪;বাইহাক্বী- ৪৪৯১
৩.    অতঃপর এই দুআ পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ  মুসলিম- ১৬৮৫; নাসায়ী- ৭২৮
উল্লেখিত তিনটি দুআ একত্রে এভাবে পড়া যায়-
بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِك

৪.    অতঃপর বাম পা দিয়ে বাহির হওয়া। বুখারী- ১৬৮; মুস্তাদরাকে হাকেম- ৭৯১
৫.  আগে ডান পায়ের জুতা পরিধান করা অতঃপর বাম পায়ের জুতা। বুখারী- ১৬৮; মুসনাদে আহমাদ- ২৫৫৪৫

মসজিদে যেসব কাজ নিষিদ্ধ

মসজিদ মুসলমানদের কাছে ইবাদতের স্থান হিসেবে পরিচিত। এর পরও মসজিদে এমন কিছু কাজ হতে দেখা যায়, যা মসজিদের পবিত্রতাকে নষ্ট করে। ইবাদতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মসজিদের পবিত্রতার জন্য নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে মসজিদকে রক্ষা করতে হবে। মসজিদে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম-

১.  মসজিদে দ্বীনের কথা বা কাজ ব্যতীত অন্য কথা বা কাজ করা নিষেধ। (মুসলিম : ১২৮৮)
২.  মসজিদে দুর্গন্ধময় কোনো জিনিস নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। (মুসলিম : ১২৮০)
৩.  মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। (তিরমিজি : ৩২৩)
৪.  মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। (মেশকাত : ৬৮৯)
৫.  মসজিদে অপরাধীর শাস্তি ও শাসন করা যাবে না (আবু দাউদ : ৪৪৯২)
৬. মসজিদে রাজনৈতিক মিটিং করা মসজিদের আদবের খেলাপ। (ফাতাওয়া রহিমিয়া : ৬/১০৫)
৭.  মসজিদের ভেতরে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ একই স্থানে আদায় করার জন্য কেউ স্থান নির্দিষ্ট রাখতে পারবে না। যে যেখানে এসে প্রথমে স্থান নেবে, সে সেখানে নামাজ আদায় করবে। একে অন্যকে উঠিয়ে বসা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ১/৬৩০)

আযান ও ইকামতের সুন্নাতসমূহ

১.    আযান ও ইকামত কেবলা মুখী হয়ে দেওয়া। (হেদায়া)
২.  আযানের শব্দগুলো ধীরে সুস্থে এবং ইকামতের শব্দগুলো তাড়াতাড়ি বলা। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৭৬)

আযানের সুন্নাত তরীকা

প্রথমে দুই তাকবীর এক দমে বলা এবং প্রত্যেক তাকবীরের শেষে সাকীন করা। অর্থাৎ আল্লাহু-আক্বার- আল্লাহু-আক্বার বলা। বর্তমানে আল্লা-হু- আকবারুল্লাহু আকবার বলার প্রচলন আছে এটা সুন্নতের খেলাফ।

তারপর আশহাদু আল্লা ইলাহা থেকে হাইয়্যা আলাল ফালাহ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বাক্য এক এক দমে বলা এবং প্রত্যেক বাক্যের শেষে সাকীন করা। শেষের দুই তাকবীর অর্থাৎ শেষের দুই আল্লাহু আকবার এক দমে বলা, কিন্তু উভয় তাকবীরের শেষে সাকীন করা। সর্বশেষে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ একদমে বলে আযান শেষ করা। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৬৯, মিশকাত শরীফ)

৩.  হাইয়্যা আলাস সালাহ বলার সময় ডান দিকে আর হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময় বাম দিকে চেহারা ফিরানো। কিন্তু সিনা ও পা কিবলামুখি থাকবে। মাইকে আযানের সময়ও এ আমল করা। (বুখারী শরীফ, মায়ারিফুস সুনান)

আযানের জওয়াব দেওয়ার সুন্নাত তরীকা

আযানের জওয়াব দেওয়ার ফজীলত

হযরত ওমর (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্তর থেকে (নিম্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে) আযানের জওয়াব দিবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৭৮, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৪৪৩)

১.    মুয়াজ্জিনের আযানের শব্দের ফাঁকে ফাঁকে হুবহু ঐ শব্দগুলো বলে জওয়াব দেওয়া। তবে حَيَّ عَلَي الصَّلَاةِ এবং حَيَّ عَلَي الْفَلَاحِ বলার সময় لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ বলা। ফজরের আযানে اَلصَّلَاةُ خَيْرٌ مِّنَ النَّوْمِ এর জবাবে صَدَقْتَ وَ بَرَرْتَ বলা (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-৫৭৮, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৪৪৩)
২.    অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যে কোন দরুদ শরীফ পড়া। (মুসলিম শরীফ, মেশকাত)
৩.    রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আযানের জওয়াব দিবে। অতঃপর আযানের শেষে নিম্নোক্ত দোয়া পড়বে কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা ‘আত (সুপারিশ) ওয়াজিব হবে অর্থাৎ সে অবশ্যই আমার সুপারিশ এর হকদার হবে। (সহীহ বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৬১৪, জামে তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং- ২১১)

اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَ نِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَاماً مَّحْمُوْدَ نِ الَّذِىْ وَعَدْتَهٗ اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ

ফজরের আযানের পর পালনীয় চারটি সুন্নাত

১.    ফজরের আযানের সাথে সাথে ফজরের সুন্নাত পড়ে নেওয়া।
২.    ফজরের সুন্নাত অন্যান্য সুন্নতের তুলনায় একটু দ্রুত পড়া।
৩.   ফজরের সুন্নতে প্রথম রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়া। (সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস নং- ১০৫০,)
৪.   ফজরের ফরজ ও সুন্নতের মাঝে একটু শোয়া। (তবে না ঘুমানো) (মুসনাদে আবদে ইবনে হুমায়েদ, হাদীস নং-১৪৯০)

একামত দেওয়ার সুন্নাত তরীকা

১.    অজু অবস্থায় একামত দেওয়া। (ফিকহুল মুয়াস্সার, ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৯২)
২.    কিবলা মুখী হয়ে একামত দেওয়া এবং উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা ও পা কেবলা মুখী করে রাখা। (দুররুল মুখতার-১/৩৮৯)
৩.    একামতের শব্দগুলো বিরামহীনভাবে বলে যাওয়া। (তিরমিযী শরীফ)
ক,    প্রথম চার তাকবীর এক শ্বাসে বলা। প্রত্যেক তাকবীরের শেষে সাকীন করা।
খ,    পরবর্তী বাক্যগুলোর ক্ষেত্রে দুই দুই বাক্য এক সাথে বলা এবং শেষে সাকীন করা। আর শেষের দুই তাকবীরের সাথে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ মিলিয়ে একসাথে এক শ্বাসে বলা। (মোট সাত শ্বাসে বলা) উভয় তাকবীরের শেষে সাকীন করা। (মায়ারিফুন সুনান-২/১৯৫, ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৮৬)

একামতের জওয়াব দেওয়ার সুন্নাত তরীকা

১.    আযানের জওয়াবের মতো একামতের জওয়াব দেওয়া সুন্নাত। তবে قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ এর জওয়াবে اَقَامَهَا اللهُ وَاَدَامَهَا বলা সুন্নাত (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-৪৪৪, মায়ারিফুস সুনান, হাদীস নং-৭৪৬)

নামাজের জন্য বের হওয়ার পর সুন্নাত সমুহ

১.    ঘর হতে বের হওয়ার পর এই দোয়া পড়বে- بِسْمِ اللهِ تَوَكّلْتُ عَلى اللهِ، لاَ حَوْلَ وَلاَقُوّةَ اِلاَّ بِاللهِ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওলা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’।
২.    নফল ও সুন্নাত নামাজ নামাজ ঘরে পড়া সুন্নাত।
৩.    ঘর হতে বের হওয়ার সময় নামাজের নিয়ত করা।
৪.   নামাজ আদায়ের জন্য খুবই তাজীমের সাথে ছোট ছোট কদমে চলা। যেহেতু প্রত্যেক পদচি‎হ্ন আমল নামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে এবং প্রতিটি কদমের বিনিময়ে সওয়াব পাওয়া যায়।
৫.    মসজীদে বা অন্য কোন জায়গা থেকে বাড়ী আসলে প্রথমে নিন্মোক্ত দোয়া পড়ে বাড়ীর সকল লোকদের কে সালাম করা।

اَللهُمَّ اِنّيْ اَسْاَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلَجِ وَ خَيْرَ المَخْرَجِ بِسْمِ اللهِ وَ بِسْمِ اللهِ لَجْنَا وخَرَجْنا وَعَلى ربِّنَا تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলূকা খাইরাল মাওলাজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খরাজনা ওয়া আলাল্লাহি রব্বিনা তাওয়াক্কালনা।

জামাতে নামাজ পড়ার সুন্নাতসমূহ

১.    তাকবীরে উলার সাথে নামাজের জামাতে শরীক হওয়া সুন্নাত। ইমাম সাহেব সর্বপ্রথম যে তাকবীর বলে নামাজ শুরু করেন সেটাই হচ্ছে তাকবীরে উলা। (তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৫৫)
২.    জামাত দাঁড়ানোর শুরুতেই একামতের আগেই কাতার সোজা করে নেওয়া সুন্নাত। (তিরমিযী শরী১/৫৩)
৩.    কাতার সোজা করে এবং একে অপরের সাথে মিলি দাঁড়ানো সুন্নাত। কাতার সোজা করার নিয়ম হচ্ছে, সবার পায়ের টাখনু এক বরাবর সোজা করে দাঁড়াবে এবং সবার কাঁধ এক সাথে মিলিয়ে দাঁড়াবে। (বুখরী শরীফ-১/১০০, হাদীস নং-৬৮৩)
৪.    ইমাম ও মুক্তাদী উভয়েই আস্তে আস্তে আমীন বলা। (আহসানুল ফাতাওয়া)
৫.    ইমানম সাহেবের জন্য তাকবীর জোরে বলা, যাতে বিশেষ করে প্রথম কাতারের সকল মুসুল্লী তাকবীরের আওয়াজ শুনতে পান, এভাবে বলা সুন্নাত।
৬.    জামাতে নামাজ পড়া, একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে ২৭গুণ বেশি সওয়াব। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং-১০৩৮)

নামাজের ফরজসমূহ

(এর কোন একটি অসম্পূর্ণ থাকলে নামাজ হয় না।)

নামাজের সর্বমোট ফরজ ১৩টি

নামাজের বাহিরের সাত ফরজ

১.    শরীর পাক : নামাজের পূর্বে অবশ্যই পাক পবিত্রতা অর্জন করিতে হইবে। শরীর নাপাক থাকলে অবশ্যই অজু অথবা গোসলের দ্বারা শরীর পাক করিয়া নিতে হইবে।
২.    কাপড় পাক : নামাজের সময় পরিধেয় কাপড় অবশ্যই পাক-পবিত্র হইতে হইবে। নাপাক পোশাক পরিধান করিয়া নামাজ আদায় করা যাইবে না।
৩.    জায়গা পাক : যে স্থানে নামাজ আদায় করা হইবে সেই স্থান অবশ্যই পাক হইতে হইবে। নাপাক স্থানে নামাজ আদায় হইবে না কেননা নাপাক স্থানে সিজদা করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
৪.    সতর ঢাকা : সতর ঢাকা বলতে শরীর ঢাকিয়া রাখা।
৫.    কিবলামুখী হওয়া : নামাজ আদায় কারী কে অবশ্যই কিবলামুখী হইয়া দাঁড়াইতে হইবে। অন্য কোনো দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইলে নামাজ আদায় হইবে না।
৬.  ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া : প্রতিদিন পাঁচ অক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করা হইয়াছে। নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করিতে হইবে। নামাজের ওয়াক্তে নামাজ আদায় করিতে না পারিলে নামাজের কাজ আদায় করিতে হইবে। পড়ুন- নামাজে রাকাত ছুটে গেলে নামাজের নিয়ম
৭.    নামাযের নিয়ত করা : অন্তরের অনুভূতি দ্বারা অমুক নামাজ পড়ছি বলে ইচ্ছা করলে এতেই যথেষ্ট হবে। মুখে উচ্চারণ বাধ্যতামূলক নয়। কেননা মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ফরজ, ওয়াজিব বা মুস্তাহাবও নয়। তবে মুখে উচ্চারন করা উত্তম এই মর্মে যে এতে হৃদয়ের আকর্ষণ বাড়ে এবং খটকা আসতে পারে না।

নামাজের ভিতরে ছয়টি ফরজ

১.    তাকবীরে তাহরীমা বলা : তাকবীরে তাহরীমা য়বলিয়া নামাজ শুরু করা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলিয়া হাত বাধিয়া নামাজ শুরু করিতে হইবে। শুধু হাত উঠিয়ে হাত বাঁধিয়া নামাজ শুরু করিলে নামাজ হইবে না কেননা আল্লাহু আকবার অর্থাৎ 'তাকবীরে তাহরীমা' বলা ফরজ। ( আল্লাহ পাক বলেন - "তোমরা প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো" ) [সূরা মুদাসসির -:- আয়াত ৩] পড়ুন- নামাজে রাকাত ভুলে গেলে মাসআলা ও করণীয়
২.    কিয়াম করা : কিয়াম করা অর্থ হল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। নামাজের জন্য দাঁড়ানের হুকুম রহিয়াছে। ( আল্লাহ পাক বলেন- "তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনতভাবে দাঁড়াবে" ) [সূরা বাকারা : আয়াত ২৩৮] কেহ দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িতে অক্ষম হইলে ক্ষেত্রবিশেষে বসিয়া অথবা ইশারায় নামাজ আদায় করার বিধান আছে এবং সেটা অবশ্যই শরীয়ত মোতাবেক হইতে হইবে দেখুন- নামাজের ওয়াজিব,ও নামাজের মাকরুহ
৩.    কিরাআত করা : নামাজে কিরাত করা অর্থাৎ কোরআন শরীফের থেকে তেলাওয়াত করা। ( আল্লাহ পাক বলেন- "তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ হয়, ততটুকু পড়" ) [সুরা মুযযাম্মিল : আয়াত ২০] সূরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সূরার সর্বনিম্ন তিন আয়াত মিলাইয়া পড়া। যদি একটি আয়াত অন্য তিন আয়াতের সমপরিমাণ হয় তাহলে এরূপ একটি আয়াতও মিলাইয়া পড়া যাইবে। ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রথম দুই রাকাতে সূরা মিলাতে হইবে। ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামাজে প্রতি রাকাতে সুরা মিলানো ফরজ।
৪.    রুকু করা : রুকু করা হলো দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অর্ধনমিত হওয়া। যেন হাত হাটু পর্যন্ত এবং কোমর, পিঠে কল মাথা সমান্তরালে অবস্থান করে। ( আল্লাহ পাক বলেন-তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।) [সুরা বাক্বারা : আয়াত ৪৩]
৫.    সিজদা করা : রুকু থেকে উঠিয়া সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরে প্রতি রাকাতে দুইটি করে সিজদা করা ফরজ। সিজদায় নাক এবং কপাল জমিনে ঠেকাইতে হইবে। ( আল্লাহ পাক বলেন- "হে ঈমানদারগণ! তোমরা রুকু কর এবং সিজদা কর।" [সুরা হজ : আয়াত ৭৭]
৬.    শেষ বৈঠক করা : নামাজের শেষে আখেরী বৈঠক করা অর্থাৎ শেষ বৈঠক করা নামাজের শেষ রাকাতে বসা। শেষ বৈঠকে তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাঠ করা। তাশাহুদ পাঠ করা ওয়াজিব এবং দুরুদ ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত। ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

নামাজের ওয়াজিবসমূহ

(নামাজের যেকোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে নামাজে ছাহু সিজদা দিতেই হবে।)

নামাজের ওয়াজিব ১৪টি

১.    আলহামদু শরীফ সম্পূর্ণ পড়া।
২.  সূরা ফাতিহার পর যেকোনো একটি সূরা মিলানো। অথবা তিন আয়াত পরা, অথবা ১আয়াত তিন আয়াত সমপরিমাণ পড়া।
৩.    রুকু সিজদায় দেরি করা।
৪.    রুকু হতে সোজা হয়ে খাড়া হয়ে দেরি করা।
৫.    দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে দেরি করা।
৬.    চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে, প্রথম দুই রাকাতের পর বৈঠক করা।
৭.    দোন বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া।
৮.    ইমামের জন্য কেরাত আস্তে এবং জোরে পড়া। (অর্থাৎ ফজর মাগরিব এশার নামাজে কেরাত জোরে পড়তে হবে। আর যোহর ও আসরের নামাজে কেরাত আস্তে পড়া ওয়াজিব।
৯.    বিতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া।
১০.    দুই ঈদের নামাজে ছয় ছয় তাকবীর বলা। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের ও ঈদুল আজহায় দু’রাকাত নামায পড়া ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর তিনবার তাকবীর বলা এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তিনবার তাকবীর বলা ওয়াজিব।
১১.     প্রত্যেক ফরজ নামাযের প্রথম দুই রাকাতকে কেরাতের জন্য নির্ধারিত করা।
১২.    প্রত্যেক রাকাতের ফরজ গুলির তারতিব (ধারাবাহিক ঠিক রাখা
১৩.    প্রত্যেক রাকাতের ফরজ গুলির তারতিব (ধারাবাহিক ঠিক রাখা
১৪.    আসসালামুয়ালাইকুম বলে নামাজ শেষ করা।

নামাযের মধ্যে রয়েছে ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নতসমূহ। ফরজসমূহের যেকোন একটি ছুটে গেলে পূনরায় নামাজ আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত হোক অথবা ভুলবশত হোক ফরজ ছুটে গেলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে নামাজ আদায় করতে হবে। আর ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সিজদা দিলে নামাজ আদায় হয়ে যায়। আর সুন্নাত ছুটে গেলে প্রয়োজন নেই।নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

নামাজের মধ্যে মোট ৫১টি সুন্নাত

দাড়ানো অবস্থায় ১১ টি সুন্নাত

১.       (তাকবীরে তাহরিমার সময়) সোজা দাঁড়ান। অর্থাৎ মাথা নিচু না করা।
২.      পায়ের আঙ্গুলসমূহ কিবলা মুখি রাখা। অবশ্য দু পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখা মুস্তাহাব।
৩.      মুকতাদীর তাকবীরে তাহরীমা ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পর সাথে সাথে হওয়া।
৪.      (পুরুষের জন্য) তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো।
৫.      তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাতের তালু কিবলার দিকে থাকা।
৬.      আঙ্গুল গুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা।
৭.      হাত বাধার সময় ডান হাতের আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর রাখা।
৮.     ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্টা আঙ্গুলের দ্বারা বৃত্ত বানিয়ে বাম হাতের কব্জির জোড়া বেষ্টন করে ধরা।
৯.      মাঝ খানে তিন আঙ্গুল বাহুর উপর রাখা।
১০.    নাভীর নিচে হাত বাধা ।
১১.     ছানা পড়া।

ক্বিরাতের সুন্নাত ৭ টি

১.       “আউযু বিল্লাহ” পূর্ণ পড়া।
২.      “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়া।
৩.      সুরা ফাতেহার শেষে আমীন বলা।
৪.      ফজর ও যোহর নামাযের তিলাওয়াতে “সূরা হুজরাত” হতে “সূরা বুরুজ” পর্যন্ত সূরা সমূহের মধ্য থেকে কোন একটি সূরা পড়া। এবং আছর ও ইশার নামাজে “সূরা তারেক” হতে সূরা “লাম ইয়াকুন” পর্যন্ত সূরা সমূহের যে কোন একটি সূরা পড়া। এবং মাগরিব নামাজে সূরা “যিলযাল” থেকে সূরা “নাস” পর্যন্ত সূরা সমুহের যে কোন একটি সূরা পড়া।
৫.      ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতেহা পড়া।
৬.      মধ্যম গতিতে ক্বিরাত পড়া।
৭.      ফজরের নামাজের প্রথম রাকাতের ক্বেরাত দ্বিতীয় রাকাত অপেক্ষা দীর্ঘ করা।

রুকুর সুন্নাত – ৮ টি

১.  রুকুতে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
২.  (পুরুষের জন্য) রুকুতে গিয়ে উভয় হাত দিয়ে হাটু মজবুত ভাবে ধরা।
৩.  পুরুষের জন্য হাটু ধরার মধ্যে হাতের আঙ্গুল সমূহ ছড়িয়ে রাখা।
৪.  পিঠকে সমতল ভাবে বিছিয়ে দেওয়া।
৫.  রুকুর সময় পায়ের নালাগুলো সোজা রাখা।
৬.  মাথা ও পাছা সমান করে রাখা।
৭.  রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানাল্লাহি রাব্বিয়াল আজিম’ বলা।
৮.  রুকু হইতে উঠিবার সময় ইমামের ইমামের জন্য উচ্ছস্বরে ‘সামিআল্লা হুলিমান হামিদা’ বলা এবং মুকতাদির আস্তে ‘রব্বানা লাকাল হামদু’ বলা। আর যিনি যিনি একা নামাজ পড়েন তার জন্য উভয় বাক্য বলা।

সিজদার সুন্নাত ১২ টি

১.  সিজদায় যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
২.  সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাটুদ্বয় জমিনে রাখা।
৩.  অতঃপর উভয় হাত রাখা।
৪.  অতঃপর নাক রাখ।
৫.  অতপর কপাল রাখা।
৬.  দুই হাতের মাঝখানে সিজদা করা।
৭.  সিজদার সময় পেটকে রান থেকে পৃথক রাখা এবং বাহুদ্বয় হতে পাজর কে পৃথক রাখা।
৮.  কনুদ্বয় জমিন থেকে পৃথক রাখা।
৯.  সিজদার মধ্যে কমপক্ষে তিন বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ বলা।
১০.  সিজদা হইতে উঠিবার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
১১.  সিজদা হইতে উঠিবার সময় প্রথমে কপাল অতঃপর নাক তারপর উভয় হাত তারপর উভয় হাটু উঠানো।
১২.  দুই সিজদার মাঝখানে ধীরস্থির ভাবে বসা।

‘আত্তাহিয়্যাতু’- এর জন্য বসার সুন্নাত ১৩ টি

১.  ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখা এবং বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে তার উপর বসা এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলা মুখি রাখা।
২.  হাত দুটো রানের উপর রাখা।
৩.  আত্তাহিয়্যাতুর মধ্যে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙ্গুলি লম্বা করে উঠানো এবং লা ইলাহা বলার সময় নিচে করে ফেলা।
৪.  শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতুর পর দূরূদ শরীফ পড়া।
৫.  দূরূদ শরীফের পর কোরআন ও হাদীসের সাথে সাদৃশ্য শব্দ বিশিষ্ট দুআ মাছুরা পড়া।
৬.  উভয় দিকে সালাম ফিরানো।
৭.  ডান দিক থেকে সালাম ফিরানো আরম্ভ করা।
৮.  ছালামের মধ্যে পিছনে মুকতাদী ফেরেশতা ও নেককার জ্বিনদের নিয়ত করা।
৯.  (মুকতাদীর জন্য) ইমাম, ফেরেশতা ও নেককার জিন ও ডানবামের অন্য মুকতাদীর নিয়ত করা।
১০.  মুকতাদীগণ ইমামের পরক্ষনই সাথে সাথে ছালাম ফিরান।
১১.  দ্বিতীয় ছালামের আওয়াজকে প্রথম ছালামের তুলনায় ছোট করা।
১২.  মাসবুকের জন্য ইমাম ফারেগ হওয়ার উপেক্ষা করা। (অর্থাৎ ইমাম দ্বিতীয় ছালামের থেকে ফারেগ হওয়ার পর মাসবুক উঠে দাড়াবে এর আগে নয়।

বিশেষ ফায়দাঃ রুকুতে হাতের আঙ্গুলগুলো ছড়ানো ছিল। কিন্তু সেজদাতে সেগুলো মিলিত থাকবে। আর অন্যান্য অবস্থায় তা স্বাভাবিক থাকবে।
নামাজের ভিতরের এই সুন্নাতসংখ্যা তাহাজ্জুত ও অন্যান্য নফল-সুন্নাত নামাজের বৃদ্ধি পায়।


********************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url